লেখক: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
উপন্যাসটি পথের পাচাঁলি উপন্যাসের দ্বিতীয় ভাগ।
অপুর গ্রাম্য জীবনকে সীমাবদ্ধ মনে হয়। পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ থেকে অপু গ্রাম্য এক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। প্রতিদিন দু’ক্রোশ পথ হেঁটে স্কুলে যেত সে। সেখান থেকে বোর্ড পরীক্ষা দিয়ে স্কলারশিপ নিয়ে ভর্তি হয় মহকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে অপুর সামনে নতুন এক জগত উন্মোচিত হয়। সারাদিন সে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বুভুক্ষুর মতো পড়াশোনা করতে থাকে। ফলে অপুর দিগন্ত ক্রমেই বাড়তে থাকে। সারা বিশ্বের সবকিছু সম্পর্কে জানার আগ্রহ জন্মে তার। একইসাথে জাগ্রত হয় দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে যাওয়ার ইচ্ছা। কিন্তু মাঝেমধ্যে তার বাড়ির কথাও মনে পড়ে। বাবার-মায়ের চেহারা, বোনের সাথে দুষ্টুমির কথা তখন অপুর কল্পনায় ভাসে।
কয়েক বছর পড়ার পর অপু হাইস্কুলের পাট চুকায়। কলেজে পড়ার জন্য অপু কোলকাতায় পারি জমায়। রিপন কলেজে ভর্তি হয় সে। এ সময়ে তার বেশ কিছু নতুন বন্ধু হয়; জানকী, মন্মথ, অনিল ও প্রণব। অনিল ছিলো অনেকটা অপুর মতোই। প্রকৃতিকে ভালোবাসলেও তাদের দুজনের মধ্যেই ছিলো শহরের গতিময়তা।
টিউশন পড়িয়ে নিজের খরচ চালাতো অপু। শহরের প্রাণহীন মানুষগুলোকে পড়াতে গিয়ে তার আফসোস হতো; মনে পড়তো গ্রামের নির্মলতার কথা। হঠাৎ করে টিউশন চলে গেলে অপু অথৈ জলে পড়ে; ভীষণ অর্থকষ্ট শুরু হয় তার। খাওয়া-দাওয়ার ঠিক নেই, কী করবে তা বুঝতে পারে না সে। দুয়েকটা টিউশন পাওয়ার আশায় প্রতিদিন গিয়ে বিজ্ঞাপন দেখতে শুরু করে অপু। বাড়িওয়ালার নোটিশে মেস ছেড়ে গিয়ে ওঠে ভাড়াবাড়িতে। মনসাপোতার বাড়িতে ফিরে যাওয়ার চিন্তা করলেও আবার সেই সীমাবদ্ধ গণ্ডির ভেতরে ফিরে যাওয়ার কথা চিন্তা করলেই তার শরীরের প্রত্যেকটা রক্তবিন্দু বিদ্রোহ করে।
ইতোমধ্যে হঠাৎ এক অসুখে পড়ে অনিল মারা যায়। প্রিয় বন্ধুর মৃত্যুতে অপু মুষড়ে পড়ে। কিছুদিন পর অপুর দেখা হয় তার বাল্যকালের বান্ধবী লীলার সাথে। একসময় লীলার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে সে।
সময় গড়াতে থাকে। অপুর মা মারা যায়। অর্থাভাবে অপুকে একসময় পড়াশোনা ছাড়তে হয়। নানাভাবে নানাদিক দিয়ে প্রতারিত হয় অপু। অবশেষে খবরের কাগজে চাকরি হয় তার। এরপর পুরনো বন্ধু প্রণবের সঙ্গে আবার যোগাযোগ ঘটে। ঘটনাক্রমে প্রণবের মামাতো বোন অর্পণার সঙ্গে অপুর বিয়ে হয়। কিন্তু অপু এতে ভয় পায়; সে সকল প্রকার বন্ধনকে ভয় করে। এমনকি যেখানে মায়ের মৃত্যু তার কাছে বন্ধন থেকে নিজের মুক্তি বলে মনে হয়, বিয়ের মতো বন্ধন সেখানে তো আরো প্রবল। অপুর মনে হয় মাকে বাদ দিয়ে জীবনের এ কোন উৎসবে সে?
তবে সময়ের স্রোতে অপু অপর্ণার সঙ্গে সুখের সংসার গড়ে তোলে। অপর্ণা যেন তার জীবনে আশীর্বাদ হয়ে আসে। কিন্তু সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে অপর্ণা মারা গেলে অপুর জীবন আবারও বাঁধনহারা হয়ে পড়ে। শহরের সব ছেড়ে দিয়ে সে পাড়াগাঁয়ে গিয়ে ওঠে।
এরপর অপু দ্রুতই কিছুটা গুছিয়ে ওঠে। সে বেরিয়ে পড়ে অজানার উদ্দেশে। নানা জায়গায় প্রায় পাঁচ বছর ঘোরাঘুরি করে সে আবার ফিরে আসে কোলকাতায়। ছেলে কাজলকে নিয়ে আবারও মগ্ন হয় সংসারজীবনে। তবে কিছুদিন পর আট বছরের ছেলে কাজলকে নিশ্চিন্দিপুরে ছোটবেলার সঙ্গী রাণুদির কাছে দিয়ে সে জাহাজে করে চলে যায় ফিজিতে। সেখান থেকে আবার নতুন কোনো গন্তব্যে যাওয়ার আশা নিয়ে।
অপুর জীবনের চক্র এভাবে চলতে থাকে। উপন্যাসের শেষদিকে দেখা যায় অপু যে নিশ্চিন্দিপুরের বনে-বাদাড়ে একসময় ঘুরে বেড়াতো,অনেক সময় পর আরেকটি বালক তার অবাক বিস্ময়ভরা চোখ নিয়ে সেই একই জায়গা দাপিয়ে বেড়ায়।
অপরাজিত উপন্যাসে জীবন অপুর দু’হাতে হাজার সমস্যা বাড়িয়ে দিলেও অপু হার মানেনি। অপুর এই ‘অপরাজিত’ জীবনই উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু।
(সংগৃহিত ও পরিমার্জিত)
সূত্র: অপরাজিত: জয়-পরাজয়ের মধ্যকার এক অন্য পরিণতির উপন্যাস
আরও সংক্ষিপ্ত কাহিনী
Category: সংক্ষিপ্ত কাহিনী