ন-ব্যয় = অব্যয়। যার ব্যয় বা পরিবর্তন হয়না তাই অব্যয়। অব্যয়ের বৈশিষ্ট্য-
- বিভাক্তিচিহ্ন যুক্ত হয় না
- একবচন বা বহুবচন হয় না
- স্ত্রী ও পুরুষবাচকতা নির্ণয় করা যায় না
- ক্রিয়ার কাল দ্বারা প্রভাবিত হয় না
অব্যয়ের প্রকারভেদ
বাংলা ভাষায় অব্যয় ৩ প্রকার (উৎস হিসেবে)। যথা:
- বাংলা অব্যয় শব্দ: আর, আবার, ও, হ্যাঁ, না ইত্যাদি।
- তৎসম অব্যয় শব্দ: যদি, যথা, সদা, সহসা, হঠাৎ, অর্থ্যাৎ, বরং, পুনশ্চ, আপাতত, বস্তুত ইত্যাদি।
- বিদেশী অব্যয় শব্দ: আলবত, বহুত, খুব, খাসা, মাইরি, খুব, শাবাশ, মারহাবা ইত্যাদি।
অব্যয় শব্দ গঠনের বিবিধ উপায়-
- একাধিক অব্যয় শব্দযোগে
- আনন্দ বা দুঃখ প্রকাশক একই শব্দের দুবার প্রয়োগ
- দুটো ভিন্ন শব্দযোগে
- অনুকার শব্দযোগে
অব্যয় প্রধানত ৪ প্রকার। যথা:
- সমুচ্চায়ী অব্যয়
- সংযোজক অব্যয়
- বিয়োজক অব্যয়
- সংকোচক অব্যয়
- অনুগামী সমুচ্চায়ী অব্যয়
- অনন্বয়ী অব্যয়
- বাক্যালঙ্কার অব্যয়
- অনুসর্গ অব্যয়
- অনুকার/ধ্বন্যাত্মক অব্যয়
সমুচ্চায়ী অব্যয়
একটি বাক্যের সঙ্গে অন্য একটি বাক্যের অথবা বাক্যস্থিত একটি পদের সঙ্গে অন্য একটি পদের সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচন ঘটায়, তাকে সমুচ্চায়ী অব্যয় বা সম্বন্ধবাচক অব্যয় বলে। যেমন:
সংযোজক অব্যয়: ও, এবং, তাই, আর, অধিকন্তু, সুতরাং ইত্যাদি। যেমন: উচ্চপদ ও সামাজিক মর্যাদা সকলেই চায় (উচ্চপদ, সামাজিক মর্যাদা- দুটোই চায়)।
বিয়োজক অব্যয়: কিংবা, কিন্তু, বা, অথবা, নতুবা, না হয়, নয়তো ইত্যাদি। যেমন: আবুল কিংবা আব্দুল এই কাজ করেছে। এখানে আবুল, আব্দুল- এদের একজন করেছে, আরেকজন করেনি। সম্পর্কটি বিয়োগাত্মক, একজন করলে অন্যজন করেনি।
সংকোচক অব্যয়: কিন্তু, অথচ, বরং ইত্যাদি। যেমন: তিনি শিক্ষিত, কিন্তু অসৎ। এখানে ‘শিক্ষিত’ ও ‘অসৎ’ দুটোই সত্য, কিন্তু শব্দগুলোর মধ্যে সংযোগ ঘটেনি। কারণ, বৈশিষ্ট্য দুটো একরকম নয়, বরং বিপরীতধর্মী। ফলে তিনি অসৎ বলে তিনি শিক্ষিত বাক্যাংশটির ভাবের সংকোচ ঘটেছে।
নোট
- ‘কিন্তু’ বিয়োজক ও সংকোচক উভয় প্রকার অব্যয় হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। যেমন: আমি চেষ্টা করেছি, কিন্তু কৃতকার্য হতে পারিনি(বিয়োজক); তিনি বিদ্বান, কিন্তু/অথচ সৎ ব্যক্তি নন (সংকোচক)।
- অথবা, নতুবা বিয়োজক অব্যয়; অথচ সংকোচক অব্যয়।
অনুগামী সমুচ্চায়ী অব্যয়
যে, যদি, যদিও, যেন প্রভৃতি কয়েকটি শব্দ সংযোজক অব্যয়ের কাজ করে থাকে, তাই এদের অনুগামী সমুচ্চায়ী অব্যয় বলে। যেমন: তিনি এত পরিশ্রম করেন যে তার স্বাস্থ্যভঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা আছে।
অনন্বয়ী অব্যয়
যে সব অব্যয় পদ স্বাধীনভাবে ভাব প্রকাশ করে, তাদেরকে অনন্বয়ী অব্যয় বলে। এগুলো বাক্যের অন্য কোন পদের সঙ্গে কোন সম্পর্ক না রেখে স্বাধীনভাবে বাক্যে ব্যবহৃত হয়। যেমন-
- উচ্ছ্বাস প্রকাশে: মরি মরি! কী সুন্দর সকাল!
- স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি প্রকাশে: হ্যা, আমি যাব। না, তুমি যাবে না।
- সম্মতি প্রকাশে: আমি আজ নিশ্চয়ই যাব।
- অনুমোদন প্রকাশে: এতো করে যখন বললে, বেশ তো আমি আসবো।
- সমর্থন প্রকাশে: আপনি তো ঠিকই বলছেন।
- যন্ত্রণা প্রকাশে: উঃ! বড্ড লেগেছে।
- ঘৃণা বা বিরক্তি প্রকাশে: ছি ছি, তুমি এতো খারাপ!
- সম্বোধন প্রকাশে: ওগো, তোরা আজ যাসনে ঘরের বাহিরে।
- সম্ভাবনা প্রকাশে: সংশয়ে সংকল্প সদা টলে/ পাছে লোকে কিছু বলে। কত না হারানো স্মৃতি জাগে আজ মনে।
- বাক্যালংকার হিসেবে: হায়রে ভাগ্য, হায়রে লজ্জা, কোথায় সভা, কোথায় সজ্জা।
অনুসর্গ অব্যয়
যে সকল অব্যয় শব্দ বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের পরে বিভক্তির ন্যায় বসে অন্য পদের অন্বয় বা সম্পর্ক নির্দেশ করে তাকে পদান্বয়ী বা অনুসর্গ অব্যয় বলে। যেমন: দিয়ে, থেকে, চেয়ে বিনা প্রভৃতি। উদাহরণ: ওকে দিয়ে এ কাজ হবে না।
অনুকার/ধ্বন্যাত্মক অব্যয়
যে অব্যয় অব্যক্ত রব, শব্দ বা ধ্বনির অনুকরণে গঠিত হয় তাকে অনুকার বা ধ্বনাত্মক অব্যয় বলে। যেমন: শনশন, চকচক, ছমছম, টনটন প্রভৃতি।
কিছু বিশেষ অব্যয়
অব্যয় বিশেষণ: কোন অব্যয় বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে বিশেষণের কাজ করলে, তাকে অব্যয় বিশেষণ বলে। যেমন: ধিক্ তারে শত ধিক্ নির্লজ্জ যে জন।
- নাম বিশেষণ: অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ।
- ক্রিয়া বিশেষণ: আবার যেতে হবে।
- বিশেষণীয় বিশেষণ: রকেট অতি দ্রুত চলে।
নিত্য সম্বন্ধীয় বিশেষণ: কিছু কিছু যুগ্ম অব্যয় বাক্যে একসাথে ব্যবহৃত হয় এবং তাদের একটির অর্থ আরেকটির উপর নির্ভর করে। এদের নিত্য সম্বন্ধীয় বিশেষণ বলে। যেমন: যথা-তথা, যত-তত, যখন-তখন ইত্যাদি। উদাহরণ: যত গর্জে তত বর্ষে না, যেমন কর্ম তেমন ফল ইত্যাদি।
ত প্রত্যয়ান্ত বিশেষণ: সংস্কৃত তস্ প্রত্যয়ান্ত থেকে বাংলায় ত প্রত্যয়ান্ত হয়ে কিছু তৎসম অব্যয় বাংলায় ব্যবহৃত হয়। যেমন: ধর্মত, দুর্ভাগ্যবশত, অন্তত ইত্যাদি। উদাহরণ: দুর্ভাগ্যবশত করিম এখনো আসে নি।