ম্যাগনাকার্টা চুক্তি (The Great Charter, 1215)
ইংল্যান্ডের অজনপ্রিয় রাজা জন ও বিদ্রোহী ব্যারনদের মধ্যে শান্তি বজায় রাখার জন্য যে চুক্তি করা হয়, সেটিই ম্যাগনাকার্টা বা গ্রেট চার্টার নামে পরিচিত। ফ্রান্সে রাজা জনের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমির অধিকাংশের ওপর ১২০৪ সালে তার কর্তৃত্ব হাতছাড়া হয়ে গেলে সম্পত্তি ফিরে পেতে রাজা জন যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। তিনি রাজ্যে কর বাড়িয়ে দিয়ে যুদ্ধের অর্থ জোগান দেন। যুদ্ধের ব্যয়ভার বহন করতে হয় ব্যারনদের। কিন্তু যুদ্ধে রাজা জন পরাজিত হন। রাজার অন্যায় জবরদখল ও নতুন নতুন কর প্রবর্তনের ফলে একপর্যায়ে ব্যারনরা রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে ও শান্তিচুক্তির প্রস্তাব দেয়। রাজা জন শান্তিপ্রস্তাব মেনে নিতে বাধ্য হন। ১২১৫ সালের ১৫ জুন রানিমেইড নামক স্থানে বসে রাজা জন যে চুক্তিতে স্বাক্ষর করে তাই ম্যাগনাকার্টা নামে পরিচিত।
চুক্তিটিতে চার্চের অধিকার সুরক্ষিত রাখা হয়। চুক্তিটির ফলে ব্যারনদের অন্যায় কারাবাস থেকে সুরক্ষাসহ সকলের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সুরক্ষিত হয়। এছাড়া সামন্তদের রাজকোষাগারে প্রদত্ত করের পরিমাণের ব্যাপারে উল্লেখ ছিল চুক্তিটিতে।
চুক্তিটির মধ্য দিয়েই সংসদীয় গণতন্ত্রের পাশাপাশি আইনের শাসনের ধারণার যাত্রা শুরু হয়। ঐতিহাসিক এ সনদে ঘোষণা করা হয় দেশের সকলেই রাষ্ট্রীয় আইনের অধীন, এমনকি রাজাও। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। যুক্তরাজ্যের প্রথম সাংবিধানিক দলিল বা অলিখিত সংবিধান হলো ম্যাগনাকার্টা চুক্তি। এটি ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের বাইবেল হিসেবে খ্যাত।
বহুপাক্ষিক চুক্তি
Peace of Paris
১৭৮৩ সালের প্যারিসে স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তির সেট যা আমেরিকান স্বাধীনতা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটায়। Treaty of Paris ও দুটি ভার্সাই চুক্তি এর অন্তর্ভুক্ত।
প্রথম ভার্সাই চুক্তি
১৭৮০ সালে ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে ব্রিটেন ও আমেরিকার মধ্যে প্রথম ভার্সাই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এটি ছিল আমেরিকার স্বাধীনতা অর্জনের একটি ধাপ। এর তিন বছর পর ৩ সেপ্টেম্বর ১৭৮৩ সালে আমেরিকা পূর্ন স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
Treaty of Paris
পক্ষ: যুক্তরাষ্ট্র ও গ্রেট ব্রিটেন
আমেরিকার স্বাধীনতা চুক্তি। এ চুক্তির ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। ৩ সেপ্টেম্বর ১৭৮৩ সালে চুক্তিটি ফ্রান্সের প্যারিসে স্বাক্ষরিত হয়।
দ্বিতীয় ভার্সাই চুক্তি
১৯১৯ সালের প্যারিসের ভার্সাই রাজপ্রাসাদে মিত্রবাহিনীর নেতৃবৃন্দের সাথে জার্মানি আলোচনায় অংশগ্রহণ করে। সেদিন মিত্রবাহিনীর কর্তৃক গৃহীত শান্তি চুক্তিপত্রে জার্মানি স্বাক্ষর করে। এটিই দ্বিতীয় ভার্সাই চুক্তি। এটি মূলত জার্মানদের আত্মসমার্পন চুক্তি। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়।
গণহত্যা সনদ
অফিসিয়াল নাম: Convention on the Prevention and Punishment of the Crime of Genocide (CPPCG)
১৯৪৮ সালে স্বাক্ষরিত একটি আন্তর্জাতিক সনদ যার মাধ্যমে সর্বপ্রথম গণহত্যাকে অপরাধ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। এর নিয়ন্ত্রক
. বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালে এ সনদে স্বাক্ষর করে। সনদের অনুচ্ছেদ ২ অনুযায়ী গণহত্যা হচ্ছে –- কোন গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা করা।
- গোষ্ঠীর সদস্যদের গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করা।
- কোন গোষ্ঠী সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে নির্মূল হয়ে যায় এমন কাজ করা।
- গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে জন্ম রোধ করার উদ্দেশ্যে ব্যবস্থা আরোপ করা।
- জোড়পূর্বক এক গোষ্ঠীর শিশুদের অন্য গোষ্ঠীতে স্থানান্তর করা।
Universal Declaration of Human Rights (UDHR)
সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র বা UDHR প্রত্যেক মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতিসংঘের সাধরণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত একটি সনদ। ১৯৪৮ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এ সনদ অনুমোদিত হয়। এটি সমস্ত জাতির সকল মানুষ জন্য মানব উন্নয়নের একটি সাধারণ মান।
জেনেভা কনভেনশন-১৯৪৯
১৯৪৯ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় যুদ্ধকালীন আচরণবিধি সম্বলিত জেনেভা কনভেনশন চুড়ান্ত হয়। এটি চারটি চুক্তি ও তিনটি প্রোটকলের সমন্নয়ে গঠিত কনভেনশন। যুদ্ধে মানবিক আচরণ নিশ্চিত করার লক্ষ্য কনভেনশনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৪৯ সালে পূর্ণতা পেলেও এ কনভেনশনের সূচনা হয়েছিল ১৮৬৪ সালে।
প্রথম জেনেভা কনভেনশন | সম্পাদিত: ১৮৬৪ লক্ষ্য: যুদ্ধক্ষেত্রে আহত ও অসুস্থ সৈন্যদের অবস্থার সার্বিক উন্নতি |
দ্বিতীয় জেনেভা কনভেনশন | সম্পাদিত: ১৯০৬ সমুদ্রস্থ যুদ্ধক্ষেত্রে আহত, অসুস্থ এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত জাহাজের সৈন্যদের অবস্থার সার্বিক উন্নতি |
তৃতীয় জেনেভা কনভেনশন | সম্পাদিত: ১৯২৯ যুদ্ধবন্দিদের প্রতি আচরণ ও তাদের নিরাপত্তা ও চিকিৎসা |
চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন | সম্পাদিত: ১৯৪৯ যুদ্ধাবস্থায় বেসামরিক জনগণের জীবন ও সম্পদ রক্ষা |
১৯৪৯ এর কনভেনশনকে তিনটি সংশোধনী প্রটোকলসহ কিছুটা পরিবর্তন করা হয়-
- প্রটোকল ১ (১৯৭৭): আন্তর্জাতিক সামরিক সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি রক্ষার্থে গৃহীত হয়
- প্রটোকল ২ (১৯৭৭): অ-আন্তর্জাতিক সামরিক সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিবর্গকে রক্ষার সাথে সম্পর্কিত
- প্রটোকল ৩ (২০০৫): অতিরিক্ত স্বাতন্ত্র্যসূচক প্রতীক পরিগ্রহ করা সংক্রান্ত বিষয়ে গৃহীত হয়
জেনেভা কনভেনশন – ১৯৫১
অফিসিয়াল নাম: Convention Relating to the Status of Refugees
শরনার্থী কনভেশন – ১৯৫১ নামেও পরিচিত। এটি জাতিসংঘের একটি বহুপাক্ষিক চুক্তি যা আন্তর্জাতিক পরিসরে ‘শরণার্থী’ কারা তা নির্ধারণ করে এবং শরনার্থী হিসেবে আশ্রয় পাওয়া ব্যক্তিদের অধিকার ও আশ্রয় প্রদানকারী দেশের দায়িত্ব নির্ধারণ করে। কনভেনশন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীরা ‘শরনার্থী’ হতে পারবে না। সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এ কনভেনশনটি তৈরি করা হয়েছে।
অ্যান্টার্কটিকা চুক্তি – ১৯৫৯
১৯৫৯ সালে অ্যান্টার্কটিকায় সামরিক কর্মকাণ্ড এবং খনিজ সম্পদ খনন নিষিদ্ধ, বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে সহায়তা এবং মহাদেশটির ইকোজোন সুরক্ষিত করা হয়েছে। প্রথমে ১২টি দেশ চুক্তির অন্তর্ভুক্ত থাকলেও চুক্তিভুক্ত দেশের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান।
মধ্যে অ্যান্টার্কটিকা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিটি ১৯৬১ সাল থেকে কার্যকর হয় এবং বর্তমানসহ অনির্দিষ্টকালের জন্য কার্যকর আছে। ভৌগলিকভাবে ৬০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশের দক্ষিণের অঞ্চল তথা পুরো অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ এ চুক্তিটির আওতাভুক্ত। চুক্তিটির মাধ্যমে দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিরোধ দুরে সরিয়ে রেখে অ্যান্টার্কটিকায় শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ড পরিচালনার ওপর জোড় দেওয়া হয়েছে। এ চুক্তির মাধ্যমেভিয়েনা কনভেনশন – ১৯৬১
১৯৬১ সালে স্বাক্ষরিত জাতিসংঘের একটি বহুপাক্ষিক চুক্তি যা স্বাধীন দেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের কাঠামো নির্ধারণ করে। এর উদ্দেশ্য হল একটি অভিন্ন কূটনীতিক চর্চা ও নীতির মাধ্যমে সরকারগুলোর মধ্যে “বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিকাশ” সহজতর করা। চুক্তিটির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক মিশনগুলোকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যাতে কূটনীতিকরা কোন দেশের কর্তৃক জবরদস্তি বা হয়রানির ভয় ছাড়াই তাদের কাজ করতে সক্ষম হন।
জীবাণু অস্ত্র সংক্রান্ত চুক্তি
Biological Weapons Convention – 1972
১৯৭২ সালে স্বাক্ষরিত জৈবিক ও বিষাক্ত অস্ত্রের বিকাশ, উৎপাদন, অধিগ্রহণ, স্থানান্তর, মজুদ এবং ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ চুক্তি। এটি প্রথম আন্তর্জাতিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি যা গণবিধ্বংসী অস্ত্রের একটি সম্পূর্ণ ধরণকে নিষিদ্ধ করে। চুক্তিটির উল্লেখযোগ্য অনুচ্ছেদগুলো-
- কোন অবস্থাতেই জৈবিক অস্ত্রের বিকাশ, উৎপাদন, মজুদ, অর্জন বা ধরে রাখা যাবে না।
- বিদ্যমান জৈবিক অস্ত্র ধ্বংস বা শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে সরিয়ে নিতে হবে।
- জৈবিক অস্ত্র হস্তান্তর বা কাউকে জৈবিক অস্ত্র তৈরিতে সহায়তা, উৎসাহিত বা প্ররোচিত করা যাবে না।
- BWC এর লঙ্ঘন তদন্ত করার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে অনুরোধ করা যাবে এবং নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক সূচিত যেকোনো তদন্তে সদস্যরা সহযোগিতা করবে।
CRC – 1989
Convention on the Rights of the Child
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ১৯৮৯ প্রণীত আন্তর্জাতিক শিশু আধিকার বিষয়ক কনভেনশন। এটি কার্যকর হয় ১৯৯০ সাল থেকে। কনভেনশনটি সব ধরনের নির্যাতন, অবহেলা, শোষণ ও নিষ্ঠুরতা থেকে শিশুদের সুরক্ষা দিয়ে থাকে।
Chemical Weapons Convention (CWC) – 1993
১৯৯৩ সালে স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি। এটি ১৯৯৭ সালে কার্যকর হয়। চুক্তিটির প্রশাসক নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত Organization for the Prohibition of Chemical Weapons (OPCW). জতিসংঘভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ইসরাইল চুক্তিটি স্বাক্ষর করলেও অনুমোদন করে নি; এছাড়া মিশর, উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ সুদান চুক্তিটি স্বাক্ষর করে নি।
কনভেনশনটির লক্ষ্য হল রাষ্ট্র কর্তৃক রাসায়নিক অস্ত্রের বিকাশ, উৎপাদন, অধিগ্রহণ, মজুদ, ধারণ, স্থানান্তর বা ব্যবহার নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক অস্ত্রের এই ধরণটিকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা। কনভেনশনের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হল এতে ‘চ্যালেঞ্জ পরিদর্শন’-এর অন্তর্ভুক্তি, যার মাধ্যমে যে কোনো রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের সম্পর্কে সন্দেহ হলে ‘আশ্চর্যজনক পরিদর্শনের’ অনুরোধ করতে পারে। এ পদ্ধতির অধীনে রাষ্ট্রগুলো ‘যেকোনো সময়, যে কোনও জায়গায়’ পরিদর্শনের নীতিতে নিজেদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করেছে। ফলে কনভেনশনভুক্ত কোন রাষ্ট্র এরূপ পরিদর্শনের দাবি প্রত্যাখ্যান করতে পারে না। চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো –
- রাসায়নিক অস্ত্র উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ
- রাসায়নিক অস্ত্র উৎপাদন ব্যবস্থা ধ্বংস (বা অন্যান্য ফাংশনে রূপান্তর)
- বিদ্যমান সমস্ত রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস
- রাসায়নিক অস্ত্রে রূপান্তরিত হতে পারে এমন রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন ব্যবস্থায় OPCW-এর পরিদর্শন ব্যবস্থা
ভিয়েনা কনভেশন – ১৯৯৩
১৯৯৩ সালে ভিয়েনায় বিশ্ব মানবাধিকার সম্মেলনে Vienna Declaration and Programme of Action গৃহীত হয়। এটি মানবাধিকার বিষয়ক বিধি। এ কনভেনশনের আলোকে গঠিত হয় United Nations High Commissioners for Human Rights.
Outer Space Treaty
মহাকাশ ও পানির নিচে অস্ত্র পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি। ১৯৬৭ সালে স্বাক্ষরিত চাঁদ ও অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তুসহ মহাকাশের অন্বেষণ এবং ব্যবহারে রাষ্ট্রগুলোর কার্যকলাপ বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি। এর মাধ্যমে মহাকাশ বা পৃথিবীর কক্ষপথে পারমাণবিক অস্ত্র বা ব্যাপক গণবিদ্ধংসী অস্ত্র স্থাপন নিষিদ্ধ করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী মহাকাশ সকল দেশের জন্য উনমুক্ত থাকবে এবং চুক্তিটির আওতায়ভুক্ত কোনো দেশ মহাকাশ বা মহাকাশের কোনো বস্তুর ওপর সার্বভৌমত্ব দাবি করা থেকে বিরত থাকবে। এছাড়া চুক্তি অনুযায়ী সরকারী বা বেসরকারী সত্ত্বা দ্বারা সম্পাদিত জাতীয় মহাকাশ কার্যক্রমের জন্য সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলি দায়ী থাকবে।
Nuclear Non-Proliferation Treaty (NPT)
১৯৬৮ সালে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তাররোধ চুক্তি। চুক্তিটি ১৯৭০ সালে কার্যকর হয়। পারমাণবিক অস্ত্র এবং অস্ত্র প্রযুক্তির বিস্তার রোধ, পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে পারস্পারিক সহযোগিতার প্রসার এবং পারমাণবিক অস্ত্রের সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ অর্জনের লক্ষ্যকে আরও এগিয়ে যাওয়া চুক্তিটির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। চুক্তিটি অনুযায়ী একটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র হল ১ জানুয়ারী ১৯৬৭ এর আগে একটি পারমাণবিক অস্ত্র বা অন্যান্য পারমাণবিক বিস্ফোরক যন্ত্র তৈরি এবং বিস্ফোরিত করেছে এমন রাষ্ট্র। চুক্তিটির উল্লেখযোগ্য দিকগুলো –
- পারমাণবিক অস্ত্রধর রাষ্ট্রগুলো অন্য কোনো অ-পারমাণবিক রাষ্ট্রের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র স্থানান্তর বা অ-পারমাণবিক রাষ্ট্রেকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে সহায়তা করতে পারবে না।
- প্রতিটি পারমাণবিক অস্ত্রহীন রাষ্ট্র কোনো উৎস থেকে পারমাণবিক অস্ত্র গ্রহণ করবে না বা নিজে এই ধরনের অস্ত্র তৈরি করবে না বা এরূপ অন্ত্র উৎপাদনে কোন সাহায্য গ্রহণ করবে না।
- প্রতিটি পারমাণবিক অস্ত্রহীন রাষ্ট্রের সমস্ত শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মকাণ্ডে পারমাণবিক উপাদানের সুরক্ষিত প্রয়োগের জন্য এবং এই জাতীয় উপাদান পারমাণবিক অস্ত্রে রূপান্তর রোধ করতে IAEA-এর সাথে চুক্তি সম্পাদন করবে।
- NPT-এর কোন কিছুই নিউক্লিয়ার শক্তির গবেষণা, উৎপাদন ও বিকাশের জন্য চুক্তিভুক্ত সমস্ত পক্ষের অধিকারকে প্রভাবিত করবে না।
- চুক্তির সমস্ত পক্ষ পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের জন্য সরঞ্জাম, উপকরণ এবং বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত তথ্যের পূর্ণতম সম্ভাব্য বিনিময়ের সুবিধার্থে এবং অংশগ্রহণের অধিকারের প্রতিশ্রুতি দেয়।
- চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করতে ইচ্ছুক রাষ্ট্রকে অবশ্যই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিন মাসের নোটিশ দিতে হবে এবং নিরাপত্তা পরিষদকে এই প্রত্যাহারের কারণ জানাতে হবে।
Comprehensive Nuclear Test Ban Treaty (CTBT)
১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত পারমাণবিক পরীক্ষারোধ চুক্তি। চুক্তিটি বেসামরিক এবং সামরিক উভয় উদ্দেশ্যে যেকোন পরিবেশে (আকাশ, মাটি বা পানি) পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার বিস্ফোরণ এবং অন্য কোনো পারমাণবিক বিস্ফোরণ নিষিদ্ধ করে। ভারত, পাকিস্তা ও উত্তর কোরিয়া চুক্তিটিতে এখনও স্বাক্ষর করেনি। চুক্তির লক্ষ্য অর্জনে গঠিত সংগঠন Preparatory Commission for the Comprehensive Nuclear Test-Ban Treaty Organization (CTBTO).
Ottwa Convention
১৯৯৭ সালে কানাডার অটোয়ায় স্বাক্ষরিত স্থল মাইন নিষিদ্ধকরণ চুক্তি। চুক্তিটির প্রধান লক্ষ্য হল বিশ্বব্যাপী Anti-Personnel Mine এর ব্যাবহার বিলুপ্ত করা।
এক নজরে বহুপাক্ষিক চুক্তিগুলো –
চুক্তি | স্বাক্ষর | মূল বিষয়বস্তু |
---|---|---|
ম্যাগনাকার্টা | ১২১৫ | রাজার ক্ষমতা সীমিতকরণ |
প্রথম ভার্সাই চুক্তি | ১৭৮০ | আমেরিকার স্বাধীনতা |
Treaty of Paris | ১৭৮৩ | আমেরিকার স্বাধীনতা |
দ্বিতীয় ভার্সাই চুক্তি | ১৯১৯ | প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি |
গণহত্যা সনদ | ১৯৪৮ | গণহত্যার সংজ্ঞা |
সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র | ১৯৪৮ | মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিতকরণ |
জেনেভা কনভেনশন | ১৯৪৯ | যুদ্ধকালীন আচরণবিধি |
জেনেভা কনভেনশন | ১৯৫১ | শরনার্থী বিষয়ক আচরণবিধি |
অ্যান্টার্কটিকা চুক্তি | ১৯৫৯ | অ্যান্টার্কটিকায় শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ড পরিচালনা |
Outer Space Treaty | ১৯৬৭ | মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যাবহার |
Nuclear Non-Proliferation Treaty | ১৯৬৮ | পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তাররোধ |
Biological Weapons Convention | ১৯৭২ | জীবাণু অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ |
ভিয়েনা কনভেনশন | ১৯৮১ | কূটনৈতিক মিশনগুলোর অধিকার |
Child Rights Rights | ১৯৮৯ | শিশু অধিকার |
Chemical Weapons Convention | ১৯৯৩ | রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ |
ভিয়েনা কনভেশন | ১৯৯৩ | মানবাধিকার বিষয়ক বিধি |
Comprehensive Nuclear Test Ban Treaty | ১৯৯৬ | পারমাণবিক পরীক্ষারোধ |
Ottwa Convention | ১৯৯৭ | স্থল মাইন নিষিদ্ধকরণ |
দ্বিপাক্ষিক চুক্তি
তাসখন্দ চুক্তি
১৯৬৬ সালে উজবেকিস্তানের রাজধানী তাশখন্দে পাকিস্তান ও ভারত এর মধ্যে সম্পাদিত শান্তি চুক্তি। এর মাধ্যমে ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সমাপ্তী ঘটে। এর ফলে ভারত ও পাকিস্তান ঐ সমান একে অপরের দখলকৃত এলাকাগুলো ছেড়ে দেয় এবং উভয় পক্ষ কাশ্মীরের ১৯৪৯ সালের যুদ্ধবিরতির সীমান্ত চুক্তি মেনে চলতে সম্মত হয়।
ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি
মিশর ও ইজরায়েলের মধ্যে স্বাক্ষরিত দুটি রাজনৈতিক চুক্তি ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি নামে পরিচিত। এছাড়া এটি আরব ইসরাইল চতুর্থ যুদ্ধ সমাপ্তি চুক্তি হিসেবেও পরিচিত। ১৯৭৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে অঙ্গরাজ্যের ক্যাম্পডেভিডে মার্কিন রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টারের মধ্যস্ততায় ১২দিন আলোচনার পর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ক্যাম্প ডেভিড যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অবকাশযাপন কেন্দ্র। চুক্তির ফলে মিশর দখলকৃত সিনাই উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়। বিনিময়ে মিশর ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। উল্লেখ্য চুক্তিটির প্রতিক্রয়ায় মিশরকে OIC ও আরব লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
Strategic Arms Limitation Talk 1 (SALT – 1)
১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার কৌশলগত অস্ত্র সীমাবদ্ধতা আলোচনার প্রথম সিরিজ। দীর্ঘ আলোচনার পর উভয় দেশের মধ্যে ১৯৭২ সালে ১৯৭২ সালে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ফলে উভয় দেশ নিজেদের ভান্ডারে থাকা কৌশলগত অস্ত্র হ্রাস করে।
Strategic Arms Limitation Talk 2 (SALT – 2)
১৯৭২ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের উৎপাদন কমানোর আলোচনা। আলোচনার পর ১৯৭৯ সালে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এটি ছিল প্রথম পারমাণবিক অস্ত্র চুক্তি যা উভয় দেশের কৌশলগত অস্ত্র হ্রাস করে ২,২৫০-তে নিয়ে আসে এবং উভয়ের নতুন ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে।
সিমলা চুক্তি – ১৯৭২
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ভারতের হাতে আটক যুদ্ধবন্দিদের বিষয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি। ২৮ জুন ১৯৭২ হতে ২ জুলাই ১৯৭২ পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সিমলায় এক শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হয়ে যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেন তাই সিমলা চুক্তি নামে পরিচিত। এই চুক্তির অধীনে ভারত সকল যুদ্ধবন্দিকে বিনাবিচারে পাকিস্তানে ফেরত পাঠায়। চুক্তির উল্লেখযোগ্য দিক –
- কাশ্মীর সীমান্তে যাদের সৈনিক যে অবস্থান গ্রহণ করেছে সেই সেই দেশের সীমানা মানা হবে । এই সীমানাকে ভারত পাকিস্তান এল.ও.সি বা লাইন আব কন্ট্রোল হিসেবে মেনে নেয় এবং অঙ্গীকার করে দুই দেশের সেনারা কোন ভাবেই এল.ও.সি সীমানা অতিক্রম করবেনা।
- শিমলা চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তানি ৯৩ হাজার যুদ্ধবন্দী সেনাকে ভারত ছেড়ে দেয়। তবে শর্ত থাকে যে, তাদের বিচার পাকিস্তান নিজেই করবে।
- পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে ভারতীয় সৈনিক দ্বারা কজ্বাকৃত সীমানা ভারত বিনা শর্তে ছেড়ে দেয়।
- ভবিষ্যতে ভারত পাকিস্তান কোন সমস্যা সমাধানে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা থেকে দুই দেশই বিরত থাকার অঙ্গীকার করে।
শেনঝেন চুক্তি
১৯৮৫ সালে বেলজিয়াম, ফ্রান্স, জার্মানি, লুমেন্সবার্গ ও নেদারল্যান্ডের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি। এ চুক্তি দেশগুলোর নাগরিকদের মধ্যে সীমান্ত বিলুপ্ত করে অবাধ চলাচল নিশ্চিত করে। ফলে সীমান্তহীন ইউরোপের যাত্রা শুরু হয়।
Strategic Arm Reduction Treaty 1 (START – 1)
১৯৯১ সালে স্বাক্ষরিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে কৌশলগত আক্রমণাত্মক অস্ত্রের হ্রাস এবং সীমাবদ্ধকরণের একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি। চুক্তিটির মেয়াদ ছিল ১৮ বছর।
Strategic Arm Reduction Treaty 2 (START – 2)
১৯৯৩ সালে স্বাক্ষরিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে কৌশলগত আক্রমণাত্মক অস্ত্রের হ্রাস এবং সীমাবদ্ধকরণ চুক্তি। চুক্তির ফলে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে (ICBMs) একাধিক স্বাধীনভাবে লক্ষ্যযোগ্য রি-এন্ট্রি যানের (MIRVs) ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।
New Start
২০১০ সালে স্বাক্ষরিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র হ্রাস চুক্তি। এর মেয়াদ ১০ বছর।
ডেটন শান্তি চুক্তি
১৯৯৫ সালের ১ নভেম্বর যুক্তরাষ্টের ওহিও অঙ্গরাজ্যের ডেটনে প্রথশ এবং ১৯৯৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ফ্রান্সের প্যারিসে স্বাক্ষরিত হয়। নব্বই দশকের গোড়ার দিকের বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার যুদ্ধ ছিল ১৯৪৫ সালের পর থেকে ইউরোপ অঞ্চলে হওয়া সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ। এ চুক্তিটি বসনিয়া যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটায়। চুক্তিতে স্বাক্ষরকৃত দেশ – বসনিয়া, সার্বিয়া, হার্জেগোভিনা ও ক্রোয়েশিয়া।