ইউক্রেন সংকট

Estimated Reading Time: 8 Minutes

১৯৯১ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিনা রক্তপাতে সোভিয়েত ভূখণ্ডে রাশিয়াসহ ১৫টি স্বাধীন দেশ গঠিত হয়। পরবর্তীতে অঞ্চলটিতে আরো ৬টি নতুন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূখণ্ডের ওপর বর্তমানে মোট ২১টি স্বাধীন রাষ্ট্র রয়েছে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইউরোপে রাশিয়ার আগ্রাসণের ভয়ে ন্যাটো গঠন করে। ১৯৪৯ সালে মাত্র ১২টি দেশ নিয়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং তার সমাজতান্ত্রিক আদর্শকে প্রতিহত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো প্রতিষ্ঠিত হয়।

পটভূমি: ন্যাটোর সম্প্রসারণ

স্নায়ুযুদ্ধ শেষে বিশ্বরাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় মিত্ররা ইউরোপের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যাটোর পরিধি বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট হয়। ফলে যে সোভিয়েত ইউনিয়নকে মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে ন্যাটোর সৃষ্টি পৃথিবীতে সেই সোভিয়েত ইউনিয়নের অস্তিত্ব না থাকা সত্ত্বেও ন্যাটোর সম্প্রসারণ ঘটতে থাকে। পশ্চিম গোলার্ধের বাইরে যুদ্ধ ছাড়াই ন্যাটো হল একমাত্র সামরিক চুক্তি যার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে তার সামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করছে।

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর সোভিয়েত সামরিক জোট ওয়ারশ প্যাক্টভুক্ত দেশগুলোকে (আলবেনিয়া, বুলগেরিয়া, চেকোশ্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, পূর্ব জার্মানি) ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আবার সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীন হওয়া দেশগুলোকেও ক্রমান্নয়ে ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্নায়ুযুদ্ধের পর ১৪টি (চেক রিপাবলিক, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া, এসতোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুউনিয়া, রোমানিয়া, স্লোভাক প্রজাতন্ত্র, স্লোভেনিয়া, আলবেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, মন্টেনিগ্রো, উত্তর মেসিডোনিয়া) সাবেক সোভিয়েত রিপাবলিককে বিভিন্ন সময় ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে ন্যাটোর সদস্য সংখ্যা ৩০। সম্প্রতি ইউক্রেনকেও ন্যাটোভুক্ত করার বিষয়টি সামনে আসলে রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট দেখা দেয়।

আরও দেখুন: ক্রিমিয়া অধিগ্রহণ

সংকটের কারণ

রাশিয়া মনে করে ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করে সেখানে ন্যাটোর সামরিক স্থাপনা তৈরি করা তার জন্য হুমকিস্বরূপ। রাশিয়ার এর বিরুদ্ধে বরাবরই প্রতিবাদ জানিয়েছে। ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। ইতোমধ্যে ন্যাটোর সম্প্রসারণের ফলে সামরিক জোটটির সীমানা রাশিয়ার সীমান্তের কাছাকাছি এসে পৌঁছেছে। ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিলে ন্যাটোর সীমানা রাশিয়া সীমান্ত স্পর্শ করবে। রাশিয়া একে নিজের জন্য নিরাপত্তা হুমকি বলে মনে করে।

ঐতিহাসিকভাবে রাশিয়াকে পশ্চিম দিক থেকে বারবার আক্রমণ করা হয়েছে। বিংশ শতাব্দীতে, ১৯১৭ সাল থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত গৃহযুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু বলশেভিক বিরোধী মিত্র শক্তি এপথে রাশিয়া আক্রমণ করেছিল। জার্মানিও এপথে দুবার আক্রমণ করেছিল। রুশ সীমান্তের কাছাকাছি ন্যাটোর অবকাঠামো নিয়ে তাই রাশিয়ার উদ্বিগ্ন। রাশিয়া তার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চায়। তার দাবি ন্যাটোকে ১৯৯০ সালের পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে হবে, ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য পদ দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এবং ন্যাটোর সম্প্রসারণ বন্ধ করতে হবে। অপরদিকে ইউক্রেন ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দিতে আগ্রহী হওয়ায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সংকটময় পরিস্থির সৃষ্টি হয়েছে।

Leave a Reply