ইনপুট ডিভাইস

Estimated Reading Time: 31 Minutes

কম্পিউটার দ্বারা যেকোন কাজ করার জন্য তাকে প্রথমে ঐ কাজের তথ্য বা নির্দেশ দিতে হয়। এই তথ্যগুলোকে ইনপুট বলে। যেসব ডিভাইসের মাধ্যমে কম্পিউটারে ডাটা বা তথ্য ইনপুট দেওয়া যায়, সেগুলোই ইনপুট ডিভাইস। যেমনঃ

  • কী-বোর্ড
  • মাউস
  • জয়স্টিক
  • ডিজিটাইজার
  • টাচস্ক্রিন
  • লাইটপেন
  • স্ক্যানার
  • ডিজিটাল ক্যামেরা
  • চৌম্বক টেপ ড্রাইভ
  • MICR
  • OCR
  • OMR
  • Barcode Reader
  • Sensor
  • মাইক্রোফোন
  • ওয়েবক্যাম
  • পাঞ্চকার্ড

কী-বোর্ড

কীবোর্ড বা কন্টোল বোর্ড হলো কম্পিউটারের প্রধান ইনপুট ডিভাইস। কীবোর্ডের বোতামসমূহে কী ছাপানো থাকে। কোনো চিহ্ন তৈরি করতে হলে এক বা একাধিক কী চাপতে অথবা চেপে ধরে রাখতে হয়। বর্তমানে প্রচলিত কী-বোর্ডগুলোয় ৮৫ থেকে সর্বোচ্চ ১০৫ টি কী থাকে।

ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে কী-বোর্ডকে মোটামুটি ৫টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

  • ফাংশন কী
  • অ্যারো কী
  • আলফানিউমেরিক বা আলফাবেটিক কী
  • নিউমেরিক কী বা লজিক্যাল কী
  • বিশেষ কী

ফাংশন কীঃ তথ্য সংযোজন, বিয়োজন বা বিশেষ নির্দেশ প্রদানের জন্য ফাংশন কী ব্যবহার করা হয়। সাধারণত কী-বোর্ডে ১২টি ফাংশন কী থাকে। 

কী-বোর্ডের উপরের দিকে বাম পার্শ্বে F1 থেকে F12 নামে কী-গুলো বিন্যস্ত থাকে। প্রত্যেকটি ফাংশন কী এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু কাজ করা যায়। যেমন-

আলফানিউমেরিক কীঃ কীবোর্ডের যে অংশে বর্ণ এবং অক্ষর দিয়ে সাজনো থাকে সেই অংশের কীগুলোকে আলফানিউমেরিক কী বলে।

 

নিউমেরিক কীঃ কীবোর্ডের যে অংশে ০-৯ এবং +, -, *,/ ইত্যাদি চিহ্নিত থাকে সেই অংশকে নিউমেরিক কী বলে।এছাড়াও <, >, = লজিক্যাল অপারেটরগুলো কী বোর্ডে থাকে।

মডিফাইয়ার কীঃ কী-বোর্ডের যে সকল বোতাম চেপে কোন অক্ষর বা বর্ণ টাইপ করা হয় না, কিন্তু অক্ষর বা বর্ণ বিন্যাসের কাজ ও অন্যান্য ধরনের কাজ করা হয়, সে সব বোতামকে বলা হয় মডিফাইয়ার কী। যেমন: শিফট, কন্ট্রোল ইত্যাদি।

  • Shift: বড় ও ছোট অক্ষর টাইপ করতে এই কী ব্যবহার করা হয়। যেমন: Dhaka, Khulna শব্দ দু’টি লিখতে প্রথম অক্ষর শিফ্ট কী চেপে ধরে এবং পরের অক্ষরগুলো শিফ্ট কী ছেড়ে দিয়ে লিখতে হবে। আর বাংলা বর্ণমালা লেখার ক্ষেত্রে অক্ষর বিন্যাস্ত কী এর উপরের ও নিচের লেখা টাইপের জন্য এই কী ব্যবহার করা হয়। এছাড়া শিফ্ট কী এর সাথে ফাংশন কী চেপে কম্পিউটারকে বিভিন্ন কমান্ড দেওয়া হয়।
  • Ctrl: এই কী এর সাথে বিশেষ কী একসাথে চেপে কমান্ড দেওয়া হয়। ব্যবহারকারীর সুবিধার জন্য কীবোর্ডের ডানে ও বামে ২টি কী থাকে।
  • Alt: বিভিন্ন প্রোগ্রামে বিভিন্ন নির্দেশ দেওয়ার জন্য এই কী ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ব্যবহৃত হয় এবং এর মাধ্যমে বিভিন্ন কমান্ড তৈরী করা যায়।
  • Enter: কম্পিউটারকে কোন নির্দেশ দিয়ে তা কার্যকর করতে এই কী ব্যবহৃত হয়। লেখালেখির জন্য নতুন প্যারা তৈরী করতেও এই কী ব্যবহার করা হয়।

অ্যারো কী বা Cursor control key: কী-বোর্ডের ডান দিকে নিচে পৃথক ভাবে চারটি কী আছে। কোন কোন কী বোর্ডে উপরের দিকেও থাকে। কী-গুলোর উপরে অ্যারো বা তীর চিহ্ন দেওয়া থাকে। যা দিয়ে খুব সহজেই কার্সরকে ডানে, বামে, উপরে এবং নিচে সরানো যায়। এগুলোকে অ্যরো কি বলে। এগুলো আবার এডিট কী নামেও পরিচিত। কারণ টেক্সট এডিট করার কাজেও এ কীগুলো ব্যবহার করা হয়।

বিশেষ কীঃ কম্পিউটারের প্রতিটা কী-ই কোন না কোন কাজ করে। উপরে উল্লখিত কী-গুলো ছাড়াও আরও কিছু কী হল ESC, Delete, Home, Insert ইত্যাদি । এগুলো প্রত্যেকটি বিশেষ কিছু কাজের জন্য কী-বোর্ডে অন্তরভুক্ত করা হয়। আবার চাহিদার ওপর ভিত্তি করে সব কি-বোর্ডে এসব কী নাও থাকতে পারে। যেমন- অধিকাংশ ল্যাপটপ কম্পিউটারে Insert কী থাকে না। এ কী-গুলোকে বিশেষ কী বলে।

Mouse

মাউস একটি সর্বাধিক জনপ্রিয় পয়েন্টিং ডিভাইস। ১৯৬৩ সালে ডগলাস এঞ্জেলবার্ট মাউস আবিষ্কার করেন। ১৯৮৪ সালে মেকিন্টস কম্পিউটারে প্রথম মাউস ব্যবহৃত হয়। এটি খুব বিখ্যাত কার্সর-কন্ট্রোল ডিভাইস যা দ্বিমাত্রিক গতি সনাক্ত করতে পারে। মাউসের গতি সাধারণত ডিসপ্লেতে পয়েন্টারের গতিতে অনুবাদ করা হয়, যা একটি কম্পিউটারের Graphical User Interface মসৃণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। মাউস নারালে কম্পিউটারে যে তীর চিহ্নটি নড়াচড়া করে তাকে কার্সর বা পয়েন্টার বলে।

computer mouse

মাউসের বোতামগুলি চাপলে CPU-তে সম্পর্কিত সংকেত প্রেরণ করা হয়। সাধারণত, মাউসে দুটি বোতাম রয়েছে: ডান বোতাম ও বাম বোতাম এবং বোতামগুলির মধ্যে একটি চাকা রয়েছে। বাম বোতামটি মূলত ক্লিক, ড্রাগ এন্ড ড্রপ ও সিলেক্ট করার কাজে ব্যবহৃত হয় আর ডান বোতামে কিছু অতিরিক্ত বিশেষ সুবিধা যুক্ত থাকে যা সফ্টওয়্যার অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়। চাকাটি ঘুরিয়ে একটি পৃষ্ঠাকে উপরে বা নিচে করা যায়। মাউসের মূল ব্যবহারগুলো হল-

  • Pointing
  • Click
  • Drag & Drop
  • Select

জয়স্টিক

joystick

এটিও একটি পয়েন্টিং ডিভাইস। এতে আয়তাকার বেসের ওপর একটি স্টিক বা লাঠি সদৃশ বস্তু বসানো থাকে যা দিয়ে বিভিন্ন অভিমুখে এর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কোন যন্ত্রকে পরিচালনা করা যায়। জয়স্টিকের কাজ একটি মাউসের মতোই। এটি মূলত কম্পিউটার Designing এবং কম্পিউটার গেম খেলতে ব্যবহৃত হয়। প্রায় সমস্ত সামরিক ও বেসামরিক বিমানের ককপিটে জয়স্টক ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ভার্চুয়াল রিয়ালিটি এবং সিমুলেশনের কাজেও জয়স্টিকের ব্যবহার রয়েছে।

ডিজিটাইজার বা গ্রফিক্স ট্যাবলেট

এটি একটি কম্পিউটার ইনপুট ডিভাইস যা ব্যবহারকারীর হাতে আঁকা ছবি, এ্যানিমেশন এবং গ্রাফিক্সকে বিশেষ কলম সদৃশ স্টাইলাস দিয়ে আঁকার সুবিধা দেয়। বাস্তব কাগজ, কলম, তুলি, পেন্সিল ইত্যাদি দিয়ে ছবি আঁকার মতই গ্রাফিক্স ট্যাবলেটে ছবি আঁকা যায়। তবে এই ছবিটি হয় ডিজিটাল। এই সমস্ত ট্যাবলেট দিয়ে হাতে লিখা স্বাক্ষর ডেটা ইনপুট হিসেবে কম্পিউটারে দেয়া সম্ভব হয়। এটি দিয়ে কোন ছবিকে একটি কাগজ হতে ট্রেস করা যায়। বাংলাদেশ ভূমি জরিপ অধিদপ্তর ডিজিটাইজার ব্যবহার করে।

যন্ত্রটিতে একটি সমতল বর্গাকার উপরিভাগ থাকে যাতে ব্যবহারকারীরা স্টাইলাস পেন বা কলমের সদৃশ যন্ত্র দ্বারা আঁকতে পারেন বা ট্রেস করতে পারেন। অঙ্কিত ছবিটি কম্পিউটারের মনিটরে দেখা যায়। কিছু ট্যাবলেট মাউসের পরিবর্তে প্রাথমিক পয়েন্টার বা নির্দেশক এবং নেভিগেশন যন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

লাইট পেন

এটি দেখতে কলমের মত। এর মাথায় লাইট সেন্সর থাকে যা আলো অনুভব করতে পারে। এটি ব্যবহারকারীকে পর্দায় দেখতে পাওয়া বস্তু নির্দেশ করতে বা আঁকতে সাহায্য করে যেমনটা টাচস্ক্রীনে করা হয়। কিন্তু এটির মাধ্যমে কাজটি আরও অধিক সুক্ষতার সাথে করা যায়। প্রকৌশল নকশা, ডায়াগ্রাম ইত্যাদি তৈরিতে লাইট পেন ব্যবহৃত হয়।

স্ক্যানার

এর মাধ্যমে যে কোন লেখা, ছবি, ড্রইং অবজেক্ট ইত্যাদি স্ক্যান করে কম্পিউটারে ডিজিটাল ইনপুট হিসেবে কনভার্ট করা যায়। যখন কোনও নথি স্ক্যান করা হয়, তখন এটি ডিজিটাল ফর্ম্যাটে রূপান্তরিত হয়। নথির একটি বৈদ্যুতিক সংস্করণ তৈরি হয় যা কম্পিউটারে দেখা এবং সম্পাদনা করা যায়। বিভিন্ন সফটওয়্যার যেমন Adobe Photoshop এর মাধ্যমে ডিজিটাল ইমেজকে ইচ্ছেমত সম্পাদনা করা যায়।

MICR (Magnetic Ink Character Recognition)

এই প্রযুক্তিটি পাঠকদের সরাসরি ডেটা সংগ্রহের ডিভাইসে তথ্য স্ক্যান করতে এবং পড়তে দেয়। বারকোড এবং অনুরূপ প্রযুক্তির বিপরীতে, MICR অক্ষরগুলি সহজেই মানুষ পড়তে পারে। MICR এনকোডযুক্ত নথিগুলোকে প্রচলিত OCR এনকোডেড নথিগুলির চেয়ে অনেক দ্রুত এবং আরও সঠিকভাবে প্রক্রিয়া করা যেতে পারে। চৌম্বক কালি বা ফরোসোফেরিক অক্সাইডযুক্ত কালির সাহায্যে MICR লেখা হয়। এই কালির লেখা কাগজ শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্রে রাখলে কালির ফেরোসোফেরিক অক্সাইড চুম্বকে পরিণত হয়। এরপর এই বর্ণচৌম্বকগুলো তড়িৎ চুম্বকীয় আবেশের দ্বারা তড়িৎপ্রবাহ উৎপন্ন করে। এই আবিষ্ট তড়িৎপ্রবাহের মান থেকে কোন বর্ণ পড়া হচ্ছে কম্পিউটার তা বুঝতে পারে ও সঞ্চিত রাখে।

ব্যাংকের চেকের চেক নম্বর পড়ার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক সকল তফসিলি ব্যাংকে MICR যুক্ত চেক ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করেছে।

OMR (Optical Mark Recognition)

এটি এমন একটি যন্ত্র যা পেন্সিল বা কালির দাগ বুঝতে পারে। পেন্সিলের দাগ বোঝা যায় গ্রাফাইটের বিদ্যুৎ পরিবাহিতা বিচার করে এবং কালির দাগ বোঝা যায় কালির দাগে আলোর প্রতিফলন বিচার করে। সাধারণত নথি বা ফর্মগুলি থেকে মানব-চিহ্নিত ডেটা নেওয়ার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ উত্তরপত্র পরীক্ষা, বাজার সমীক্ষা, জনগননা ইত্যাদি কাজে OMR ব্যবহৃত হয়।

OCR (Optical Character Recognition)

OCR হল হাতে লেখা বা টাইপরাইটারে টাইপকৃত লেখার ছবিকে (সাধারণত স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যান করা) কম্পিউটারে সম্পাদনাযোগ্য লেখায় অনূদিত করার যান্ত্রিক বা ইলেকট্রনিক পদ্ধতি। এই যন্ত্র বিভিন্ন বর্ণের পার্থক্য বুঝতে পারে। যন্ত্রটি কোন বর্ণ পড়ার সময় সেই বর্ণের গঠন অনুযায়ী কতকগুলো বৈদ্যুতিক সংকেত সৃষ্টি করে। এর সাথে আগে থেকে সঞ্চিত থাকা বিভিন্ন বর্ণের বৈদ্যুতিক সংকেত মিলিয়ে কোন বর্ণ পড়া হচ্ছে OCR তা বুঝতে পারে। চিঠির পিন কোড, ইলেকট্রিক বিল, ইন্স্যুরেন্স বিল, ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম, নোটিস ইত্যাদি পড়ার জন্য OCR ব্যবহৃত হয়।

বারকোড রিডার

barcode reader

এটি একটি অপটিক্যাল বা আলোক ইনপুট ডিভাইস। বারকোডে চওড়াভাবে পর্যাযক্রমে কতগুলো বিভিন্ন প্রস্থের বার বা রেখা থাকে। একে Universal Product Codeও বলা হয়। দোকান থেকে পন্য কেনার সময় পন্যের গায়ে যে বারকোড থাকে তার সাহায্য জিনিসের নাম, উৎপাদকের নাম, মূল্য ইত্যাদি তথ্যসম্বলিত বিল তৈরি করা যায় এবং বিক্রিত জিনিসের স্টকও আপডেট করা হয়।

সেন্সর

এটি কোন সংকেতকে সনাক্ত করতে পারে এমন একটি যন্ত্র। বিভিন্ন ধরনের সেন্সর ভিন্ন ভিন্ন সংকেত সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমনঃ লাইট সেন্সর, সাউন্ড সেন্সর ইত্যাদি।

ওয়েবক্যাম

এটি একটি ভিডিও ক্যামেরা যা কম্পিউটারে Read Time ছবি বা ভিডিও ইনপুট দিতে পারে। ইন্টারনেটে ভিডিও চ্যাটিং, ভিডিও রেকর্ড ইত্যাদির কাজে ব্যবহৃত হয়।

ডিজিটাল ক্যামেরা

চলন্ত এবং স্থির ছবি তুলে তা কম্পিউটারে ইনপুট দেওয়ার জন্য ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহৃত হয়। এতে Charge Coupled Device (CCD) নামক একটি চিপ থাকে। CCD ফোকাসের মাধ্যমে প্রাপ্ত লাইটকে ইলেকট্টন চার্জে পরিণত করে। এর পৃষ্ঠে ছোট ছোট অনেক বর্গাকার পিক্সেল থাকে। প্রতিটি পিক্সেল একটি ছবির একটি অংশ ধরে রাখে। তাই যত বেশি পিক্সেল থাকবে সেটি তত সূক্ষভাবে ছবি ধরে রাখতে পারবে।

মাইক্রোফোন

এটি শব্দ রেকর্ডিং এক জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র। এটি এক ধরনের সেন্সর হিসেবে কাজ করে, যা শব্দ শক্তিকে তড়িৎশক্তিতে রুপান্তর করে। কম্পিউটার এই শক্তিকে তার মেমরিতে সংরক্ষণ করতে পারে।

Download as pdf

Quiz: ইনপুট ডিভাইস, কী-বোর্ড.

Click Next to start quiz.

Leave a Reply