ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তকে বলা হয় যুগসন্ধিক্ষণের কবি। তার ছদ্মনাম “ভ্রমণকারী বন্ধু”। তিনি ১৮১২ সালে পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার কাঞ্চনপল্লী বা কাঁচড়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা সংবাদপত্রের বিকাশে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। তার সম্পাদিত সংবাদ প্রভাকর বাংলা ভাষার প্রথম দৈনিক পত্রিকা। রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দীনবন্ধু মিত্র প্রমূখ এ পত্রিকায় লেখালেখি করতেন। এছাড়া তার অন্যতম কীর্তি হলো ভারতচন্দ্র রায়, রামপ্রসাদ সেন, নিধুগুপ্ত, হরু ঠাকুর ও কয়েকজন কবিয়ালের লুপ্তপ্রায় জীবনী উদ্ধার করে প্রকাশ করা।
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তকে কেন যুগসন্ধিক্ষণের কবি বলা হয়? (৩১ তম বিসিএস)
১৭৬০ সালে ভারতচন্দ্র রায়গুণকরের মৃত্যুর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগের সমাপ্তি ঘটে। ১৮০১ সালে সাহিত্যের আধুনিক যুগের সূচনা হলেও ১৮৬১ সালে ‘মেঘনাদবদ কাব্য’ প্রকাশিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রকৃত আধুনিকতা আসে নি। অর্থ্যাৎ ১৭৬০-১৮৬০ পর্যন্ত সাহিত্যে আধুনিকতায় পৌঁছার প্রচেষ্টা চলেছে মাত্র। এসময় ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত মধ্যযুগের দেবদেবী নির্ভর কাহিনী বর্জন করে মানবতাকে কেন্দ্র করে কবিতা লেখা শুরু করেন। মঙ্গলকাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি ভারতচন্দ্রের সাহিত্যাদর্শ যখন লুপ্ত হয়ে আসছিল, তখন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত সমকালীন বিভিন্ন বিষয় অবলম্বনে খণ্ডকবিতা রচনা করেছেন। তাঁর রচনার বিশেষত্ব ছিল ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ, যা তিনি আয়ত্ত করেছিলেন মধ্যযুগের কবিয়ালদের কাছ থেকে। তিনি সমকালের সামাজিক ও ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে কবিতা রচনা করলেও তাঁর ভাষা, ছন্দ ও অলঙ্কার ছিল মধ্যযুগীয়। ফলে তার রচনায় মধ্যযুগের কাব্য-বৈশিষ্ট্য ও আধুনিকযুগের সূচনা বৈশিষ্ট্য সমানভাবে লক্ষ্যণীয়। এজন্য তাকে যুগসন্ধিক্ষণের কবি বলা হয়।
উল্লেখ্য যুগসন্ধিকালের সময়কাল ১৭৬০-১৮৬০।
পত্রিকা সম্পাদনা:
- সংবাদ প্রভাকর (১৮৩১ সালে সাপ্তাহিক ও ১৮৩৯ সালে দৈনিক পত্রিকা)
- সংবাদ রত্নাবলী
বিখ্যাত কবিতা: স্বদেশ, মানুষ কে, নীলকর, আনারস, তপসে মাছ
সাহিত্যকর্ম:
- প্রবোধ প্রভাকর (কবিতা সংকলন)
- হিত প্রভাকর (গদ্যে পদ্যে রচিত গল্প)
- বোধেন্দু বিকাশ (নাটক)
বিখ্যাত পঙক্তি:
- “কতরূপ স্নেহ করি, দেশের কুকুর ধরি, বিদেশের ঠাকুর ফেলিয়া” – স্বদেশ
- “নগরের লোক সব এই কয়মাস, তোমার কৃপায় করে মহাসুখে বাস” – তাপসে মাছ
- “চেষ্টার সুসিদ্ধ করে জীবনের আশা”– মানুষ কে
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
পদ্ধতিতে কাব্য রচনা করেছিলেন। যেমন:- “ দরে যায় কত আনারস” – আনারস
- “অতনু শাসনে অণুদিন”
- “ভাবে নাহি
- “মিথ্যার কাননে কভু নাহি “