কর-জিডিপি অনুপাত হল দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (GDP) তুলনায় দেশের কর রাজস্ব বা কর আদায়ের অনুপাত। মূলত অনুপাতটি একটি দেশের অর্থনীতির আকারের সাথে কর রাজস্বের তুলনামূলক অবস্থা পরিমাপে ব্যবহৃত হয়। সরকার দেশের অর্থনৈতিক সম্পদকে কতটা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করে তার পরিমাপ হিসেবে এই অনুপাতটি ব্যবহার করা হয়।
করের হার একটি দেশের উন্নয়ন এবং শাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপক। উচ্চ কর রাজস্ব মানে দেশ অবকাঠামো, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার উন্নতিতে আরও বেশি ব্যয় করতে সক্ষম যা দেশের অর্থনীতি এবং জনগণের জন্য দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের চাবিকাঠি। বিশ্বব্যাংকের মতে, একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য হ্রাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৫% এর উপরে কর রাজস্ব আদায়; অর্থ্যাৎ কর জিডিপি অনুপাত ১৫% বা তার বেশি রাখা। করের এই হার নিশ্চিত করে যে দেশটির কাছে ভবিষ্যতে বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ রয়েছে। ফলে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হয়।
উন্নত দেশগুলিতে সাধারণত কর জিডিপি অনুপাত অনেক বেশি থাকে। যেমন: ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর গড় কর-জিডিপি অনুপাত প্রায় ৪০%, যুক্তরাষ্ট্রের কর-জিডিপি অনুপাত প্রায় ৩০%। অন্যদিকে স্বল্পন্নোত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর কর-জিডিপি অনুপাত তুলনামূলক কম। যেমন: ২০১৬-২০ পাঁচ বছরের বাংলাদেশের কর-জিডিপির অনুপাত গড়ে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ ছিল।
বাংলাদেশের নিম্ন কর-জিডিপি অনুপাতের কারণ –
বাংলাদেশের কর-জিডিপির হার সার্ক দেশগুলোর মধ্যে তলানিতে। এটি নেপালের অর্ধেকের চেয়ে কম; এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের কর-জিডিপি অনুপাতও বাংলাদেশের চেয়ে ভালো। বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাতের উল্লেখযোগ্য কারণগুলো নিম্নরূপ –
- কর আদায়ের আওতার সীমাবদ্ধতা ও পরিধিগত ঘাটতি।
- ব্যাপক করছাড়, কর রেয়াত, কর ফাঁকি, মামলায় আটকানো, কর্তন কিংবা আদায়কৃত কর-রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা না হওয়া।
- রাজস্ব বিভাগের দক্ষ লোকবলের অভাব, অদক্ষতা, অপারগতা, মনিটরিংয়ের দুর্বলতা, কর আইন এবং আহরণ ও প্রদান পদ্ধতির জটিলতা।
- রাজস্ব বিভাগের আধুনিকায়ন প্রকল্পের ত্রুটি ও দুর্নীতি।
- চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির কারণে ব্যবসায়ীদের আয়কর না দিতে চাওয়া।
কর রাজস্ব অর্থনৈতিক কার্যকলাপের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সময়কালে অনুপাতটি সাধারণত বৃদ্ধি পায় এবং মন্দার সময় হ্রাস পায়। করের রাজস্ব সাধারণত জিডিপির তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধি পায় বা কমে যায়। তবে প্রবৃদ্ধির চরম উন্নতি বা অবনতি ব্যতীত অনুপাতটি তুলনামূলকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখা উচিত। বাংলাদেশের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ অনুযায়ী কর-জিডিপি অনুপাত ২০৪১ সালের মধ্যে ১৭% এ নিয়ে যাওয়া হবে।