ক্রিমিয়া কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী একটি উপদ্বীপ। এর আয়তন ২৬ হাজার ১০০ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। ক্রিমিয়া ঐতিহাসিকভাবে রাশিয়ার অংশ ছিল। ক্রিমিয়ায় বসবাসকারী অধিকাংশ জনগণই রুশ ভাষাভাষী। ১৯ ফেব্রুয়ারী ১৯৫৪ সালে তৎকালীন সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট ক্রুশ্চেভ একটি ডিক্রি জারি করে ক্রিমিয়াকে রাশিয়া (তখন ‘রাশিয়া সোভিয়েত রিপাবলিক’) থেকে বের করে ইউক্রেনে (তখন ‘ইউক্রেন সোভিয়েত রিপাবলিক’) স্থানান্তর করেছিলেন। ফলে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে ক্রিমিয়া ইউক্রেনের অংশ হয়ে যায়। এরপর ক্রিমিয়া ইউক্রেনের একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র হিসেবে ছিল। তবে ক্রিমিয়া দীর্ঘ মেয়াদে রাশিয়ার কাছে লিজ দেয়া হয়েছিল।
২০১৩ সালে ইউক্রেনের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে একটি অর্থনৈতিক অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি বাস্তবায়নের প্রস্তুতি স্থগিত করেন। তার পরিবর্তে তিনি রাশিয়ার দেয়া অনুরূপ একটি অর্থনৈতিক প্রস্তাব সমর্থন করেন। এসিদ্ধান্ত ইউক্রেনে ইইউ চুক্তির সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দেয়। ফলশ্রুতিতে পার্লামেন্টারি ক্যু এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। ফলে পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থনপুষ্ট গোষ্ঠী ক্ষমতা দখল করে। ক্ষমতাচ্যুত ইয়ানুকোভিচের সমর্থনে ইউক্রেনে অধিকাংশ রুশ ভাষী পূর্ব এবং দক্ষিণ অঞ্চলে অস্থিরতার জন্ম হয়।
২০১৩ সালে ইউক্রেনের রাশিয়া সমর্থিত প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচের ক্ষমতাচ্যুত হওয়া এবং পশ্চিম সমর্থিত সরকার ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপটে রাশিয়া ক্রিমিয়ায় প্রতিক্রিয়া দেখায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্রিমিয়ার প্রাদেশিক সরকার গণভোটের মাধ্যমে ইউক্রেন থেকে বের হয়ে রাশিয়ার সাথে একীভূত হওয়ার অনুমোদন লাভ করে। ২০১৪ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন রুশ পার্লামেন্টের অনুমোদন নিয়ে ক্রিমিয়া অধিগ্রহণ আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন করেন। ইউক্রেনের ক্রিমিয়ার সন্নিকটে সেভাস্তোপোলে রাশিয়ার কৃষ্ণ সাগর ফ্লিটের প্রধান নৌ ঘাঁটি অবস্থিত। সেভাস্তোপোলের নৌ ঘাঁটিতে অবস্থানরত সেনারা ক্রিমিয়ার দখল নিয়ে নেয়। ফলে ক্রিমিয়ায় পুনরায় জারি হয় রুশ শাসন।