ক্রিয়া সংঘটনের সময়কে কাল বা ক্রিয়ার কাল বলে। সাধারণভাবে ক্রিয়া বর্তমানে, অতীতে বা ভবিষ্যতে সংঘটিত হতে পারে। ক্রিয়ামূল অর্থ্যাৎ ধাতুর সঙ্গে কাল, সময় ও পুরুষ জ্ঞাপক (ক্রিয়া) বিভক্তিযোগে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়।
ক্রিয়ার রূপভেদ
- পুরুষভেদে ক্রিয়ার রূপের পার্থক্য দেখা যায়। যেমন: আমি যাই; তুমি যাও; আপনি যান।
- বচনভেদে ক্রিয়ার রূপের কোনো পার্থক্য হয় না। যেমন: আমি (বা আমরা) যাই; তুমি (বা তোমরা) যাও; তিনি (বা তারা) যান।
- সাধারণ, সম্ভ্রমাত্মক, তুচ্ছার্থভেদে মধ্যম ও নাম পুরুষের ক্রিয়ার রূপের পার্থক্য হয়ে থাকে। কিন্তু উত্তম পুরুষে কোন পার্থক্য হয় না। (see more – পুরুষ) যেমন: মধ্যম পুরুষের ক্ষেত্রে – তুমি(সাধারণ) যাও, আপনি (সম্ভ্রমাত্মক) যান, তুই(তুচ্ছার্থক) যা ইত্যাদি। নাম পুরুষের ক্ষেত্রে – সে(সাধারণ) যায়, তিনি(সম্ভ্রমাত্মক) যান, এটা(তুচ্ছার্থক) যায় ইত্যাদি।
কালের প্রকারভেদ
ক্রিয়ার কাল প্রধানত তিন প্রকার। তবে প্রধান তিন কালকেও আবার ভাগ করা যায়। যেমন –
- বর্তমান কাল
- সাধারণ বর্তমান বা নিত্যবৃত্ত বর্তমান
- ঘটমান বর্তমান
- পুরাঘটিত বর্তমান
- অতীত কাল
- সাধারণ অতীত
- নিত্যবৃত্ত অতীত
- ঘটমান অতীত
- পুরাঘটিত অতীত
- ভবিষ্যৎ কাল
- সাধারণ ভবিষ্যৎ
- ঘটমান ভবিষ্যৎ
- পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ
বর্তমান কাল
সহজ ভাষায়, যে ক্রিয়া বর্তমানে সংঘটিত হয় তাই বর্তমান কাল। যেমন: আমি ভাত খাই। একে আবার সাধারণ বা নিত্যবৃত্ত, ঘটমান ও পুরাঘটিত বর্তমান কালে ভাগ করা যায়।
সাধারণ বর্তমান বা নিত্যবৃত্ত বর্তমান
যে ক্রিয়া বর্তমানে সাধারণভাবে বা স্বাভাবিকভাবে ঘটে তার কালকে সাধারণ বর্তমান কাল বলে। যেমন: সে ভাত খায়। সাধারণ বর্তমান কালের ক্রিয়া স্বাভাবিক বা অভ্যস্ততা বোঝালে তাকে নিত্যবৃত্ত বর্তমান কাল বলে। যেমন: সকালে সূর্য ওঠে (স্বাভাবিকতা), সন্ধ্যায় সূর্য অস্ত যায় (স্বাভাবিকতা), দুই আর দুইয়ে চার হয় (স্বাভাবিকতা), আমি রোজ সকালে বেড়াতে যাই (অভ্যস্ততা)।
আরও উদাহরণ-
- বাবরের মৃত্যুর পর হুমায়ুন দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। (ঐতিহাসিক বর্তমান)
- মহাভারতের কথা অমৃত সমান, কাশীরাম দাস তনে শুনে পুণ্যবান। (কাব্যের ভনিতা)
- কে জানে দেশে আবার সুদিন আসবে কি না। (অনিশ্চয়তা প্রকাশে)
- বৃষ্টি যদি আসে (বর্তমান কাল), আমি বাড়ি চলে যাব (ভবিষ্যৎ কাল)।
- চণ্ডীদাস বলেন, “সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।”
- এখন তবে আসি।(ভবিষ্যৎ কালের অর্থে)
- আমি দেখেছি, বাচ্চাটি রোজ রাতে কাদে। (এখানে অতীতের জায়গায় বর্তমান ব্যবহৃত হয়েছে।)
- তিনি গতকাল হাটে যাননি। (এখানে ঘটনা অতীতে ঘটেছে কিন্তু ঘটনার বর্ণনা করা হচ্ছে বর্তমান কালে।)
ঘটমান বর্তমান কাল
যে ক্রিয়ার দ্বারা বর্তমানে চলমান কাজকে বোঝায় তার কালকে ঘটমান বর্তমান কাল বলে। অর্থ্যাৎ এক্ষেত্রে ক্রিয়ার দ্বারা বর্ণিত কাজটি শেষ হয়নি, এখনও চলছে। যেমন: হাসান বই পড়ছে, নীরা গান গাইছে।
আরও উদাহরণ-
- তিনি বললেন, “শত্রুর অত্যাচারে দেশ আজ বিপন্ন, ধন-সম্পদ লুঠিত হচ্ছে, দিকে দিকে আগুন জ্বলছে।”
- চিন্তা করো না, কালই আসছি।
পুরাঘটিত বর্তমান কাল
ক্রিয়ার দ্বারা প্রকাশিত কাজটি পূর্বে শেষ হয়ে গেছে কিন্তু তার ফল এখনও বর্তমান আছে এমন বোঝালে ক্রিয়ার কালকে পুরাঘটিত বর্তমান কাল বলা হয়। যেমন: এবার আমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি; এতক্ষণ আমি অঙ্ক করেছি।
অতীত কাল
যে ক্রিয়া দ্বারা অতীতে কোন কাজ সংঘটিত হওয়া বোঝায় তার কালকে অতীত কাল বলে। যেমন: আমি কাজটি করেছিলাম। একে আবার সাধারণ বা নিত্যবৃত্ত, ঘটমান ও পুরাঘটিত অতীত কালে ভাগ করা যায়।
সাধারণ অতীত কাল
বর্তমান কালের পূর্বে যে ক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে, তার সংঘটন কালই সাধারণ অতীত কাল। যেমন: প্রদীপ নিতে গেল। আরও উদাহরণ-
- শিকারি পাখিটিকে গুলি করল
- এক্ষণে জানিলাম, কুসুমে কীট আছে।
- তোমরা যা খুশি কর, আমি বিদায় হলাম।
নিত্যবৃত্ত অতীত কাল
যে ক্রিয়া অতীত কালের সাধারণ অভ্যস্ততা অর্থে ব্যবহৃত হয়, তার কালই নিত্যবৃত্ত অতীত কাল। যেমন: আমরা তখন রোজ সকালে নদী তীরে ভ্রমণ করতাম। আরও উদাহরণ-
- ছুটিতে প্রতিবছর গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যেতাম।
- আজ যদি করিম আসত, কত মজা হত।
- দশ হতো যদি একশ দশ
- তুমি যদি যেতে, তবে ভালোই হতো।
ঘটমান অতীত কাল: অতীত কালে একটি কাজ চলছিল এবং যে সময়ের কথা বলা হয়েছে, তখনও কাজটি সমাপ্ত হয়নি- ক্রিয়া সংঘটনের এরূপ ভাব বোঝালে ক্রিয়ার ঘটমান অতীত কাল হয়। যেমন: কাল সন্ধ্যায় বৃষ্টি পড়ছিল; আমরা তখন বই পড়ছিলাম; বাবা আমাদের পড়াশুনা দেখছিলেন।
পুরাঘটিত অতীত কাল
যে ক্রিয়া অতীতের বহু পূর্বেই সংঘটিত হয়ে গিয়েছে এবং যার পরে আরও কিছু ঘটনা ঘটে গেছে, তার কালকে পুরাঘটিত অতীত কাল বলা হয়। যেমন: সেবার তাকে সুস্থই দেখেছিলাম। আরও উদাহরণ-
- কাজটি কি তুমি করেছিলে?
- পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে এক লক্ষ সৈন্য মারা গিয়েছিল।
- আমি সমিতিতে সেদিন পীচ টাকা নগদ দিয়েছিলাম ।
- বৃষ্টি শেষ হওয়ার পূর্বেই আমরা বাড়ি গৌছেছিলাম।
ভবিষ্যৎ কাল
কাজ পরবর্তীতে হবে এমন ভাব প্রকাশ করলে ক্রিয়ার কালকে ভবিষ্যৎ কাল বলা হয়। যেমন: আমি ভাত খাব।
সাধারণ ভবিষ্যৎ কাল
যে ক্রিয়া পরে বা অনাগত কালে সংঘটিত হবে, তার কালকে সাধারণ তবিষ্যৎ কাল বলে। যেমন: আমরা মাঠে খেলতে যাব ইত্যাদি। আরও উদাহরণ –
- শীঘ্রই বৃষ্টি আসবে
- কে জানত, আমার ভাগ্য এমন হবে?
- সেদিন কে জানত যে ইউরোপে আবার মহাযুদ্ধের ভেরি বাজবে?
- ভাবলাম, তিনি এখন বাড়ি গিয়ে থাকবেন।
- তোমরা হয়তো “বিশ্বনবী” পড়ে থাকবে।
ঘটমান ভবিষ্যৎ কাল
যে কাজ ভবিষ্যৎ কালে চলতে থাকবে তার কালকে ঘটমান ভবিষ্যৎ বলে। যেমন: সুমন হয়তো তখন দেখতে থাকবে। জ্ঞাতব্য : অনেকে ঘটমান ভবিষ্যতের ক্রিয়াপদের রূপ আছে বলে স্বীকার করেন না।
পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ কাল
যে ক্রিয়া সম্ভবত ঘটে গিয়েছে, সাধারণ ভবিষ্যৎ কালবোধক শব্দ ব্যবহার করে তা বোঝাতে পুরাঘটিত তবিষ্যৎ কাল হয়। যেমন: সম্ভবত পরীক্ষার ফল বের হয়ে থাকবে।
ক্রিয়ার ভাব
ক্রিয়ার ভাব দ্বারা ক্রিয়া সংঘটিত হওয়ার বিভিন্ন রীতি বোঝা যায়। ক্রিয়ার ভাব ৪ প্রকার। যথা-
- নির্দেশক ভাব
- অনুজ্ঞা ভাব
- সাপেক্ষ ভাব
- আকাঙ্ক্ষা প্রকাশক ভাব
নির্দেশক ভাব
সাধারণ ঘটনা নির্দেশ বা কিছু জিজ্ঞাসা করলে। যেমন: মন দিয়ে পড়, অন্যায় কাজ করো না, মিথ্যা বলবে না ইত্যাদি।
অনুজ্ঞা ভাব
আদেশ, অনুরোধ, উপদেশ, নিষেধ, আশীর্বাদ ইত্যাদি নির্দেশ করলে। যেমন: কাজটি করে ফেল, আমার কাজটি এখন করুন ইত্যাদি।
সাপেক্ষ ভাব
বাক্যে একটি ক্রিয়ার সংঘটন অন্য ক্রিয়ার উপর নির্ভর করলে। যেমন: ভালো করে পড়লে সফল হবে।
আকাঙ্ক্ষা প্রকাশক ভাব
বক্তা সোজাসুজি কোন ইচ্ছা বা আকাঙ্খা প্রকাশ করলে। যেমন: রহিম যাক।