ভূ-পৃষ্ঠে অথবা ভূগর্ভে সঞ্চিত খনিজ সম্পদের অবস্থান মূলত সংশ্লিষ্ট স্থানের ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য ও সময়কাল দ্বারা নির্ণীত হয়ে থাকে। ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ভূতাত্ত্বিক পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের খনিজ সম্পদ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য খনিজ সম্পদগুলো হলো-প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, চুনাপাথর, কঠিন শিলা, নুড়িপাথর, কাচবালি, নির্মাণকার্যে ব্যবহৃত বালু, চীনামাটি, ইটের মাটি, পিট এবং সৈকত বালি ইত্যাদি।

গ্যাস
বাংলাদেশের প্রধান খনিজ সম্পদ প্রাকৃতিক গ্যাস। ১৯৫৫ সালে সিলেটের হরিপুরে দেশের প্রথম গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কৃত হয়। গ্যাস উত্তোলন শুরু হয় ১৯৫৭ সালে। প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান হল মিথেন। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক গ্যাসে মিথেনের পরিমাণ প্রায় ৯৫-৯৯%।
বর্তমানে বাংলাদেশে ২৮টি গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া গেছে সিলেটের জকিগঞ্জে। ১৯৬২ সালে তিতাস গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়। ঢাকা শহরে তিতাস গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস সরবরাহ করা হয়।
বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য গ্যাসক্ষেত্র-
গ্যাসক্ষত্র | অবস্থান | তথ্য |
---|---|---|
হরিপুর | সিলেট | প্রথম আবিষ্কৃত |
মাগুড়ছড়া বা কমলগঞ্জ | মৌলভীবাজার | প্রথম অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে (১৯৯৭)। অগ্নিকান্ডের সময় দ্বায়িত্বে ছিল অক্সিডেন্টাল (যুক্তরাষ্ট্র) |
ছাতক | সুনামগঞ্জ | – |
বিবিয়ানা, হবিগঞ্জ | হবিগঞ্জ | |
তিতাস | ব্রাক্ষণবাড়িয়া | সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র |
সলদা নদী | ব্রাক্ষণবাড়িয়া | |
বাঙ্গুরা, বাখরাবাদ, শ্রীকাইল, মেঘনা | কুমিল্লা | |
সেমুতাং | খাগড়াছড়ি | |
কুতুবদিয়া | কক্সবাজার | উপকূলীয় অঞ্চলের গ্যাসক্ষেত্র |
সাঙ্গু | বঙ্গোপসাগর | সমুদ্র এলাকার প্রথম গ্যাসক্ষেত্র |
গ্যাস অনুসান্ধানের জন্য ১৯৮৮ সালে সমগ্র বাংলাদেশকে ২৩ টি ব্লকে ভাগ করা হয়। ১৯৮৯ সালে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয় পেট্রোবাংলাকে। পেট্রোবাংলা ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান। এর অধিনে মোট ১১ টি কোম্পানি রয়েছে।
অগ্নিকান্ড
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে ১৯৯৭ সালে। অগ্নিকান্ডের সময় গ্যাসক্ষেত্রটির দ্বায়িত্বে ছিল অক্সিডেন্টাল (যুক্তরাষ্ট্র)। ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে অগ্নিকান্ডে ঘটনা ঘটে। এসময় গ্যাসক্ষেত্রটির দ্বায়িত্বে ছিল নাইকো (কানাডা)।
খনিজ তেল
বাংলাদেশে ১৯৮৬ সালে সিলেটের হরিপুরে প্রথম খনিজ তেল ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়। ১৯৮৭ সালে হরিপুর থেকে দেশে প্রথম বানিজ্যিক ভিত্তিতে তেল উৎপাদন শুরু হয়। ১৯৪৪ সালে তেল উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। দেশের একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারী লিঃ। এটি চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় অবস্থিত।
কয়লা
বাংলাদেশের প্রথম কয়লা খনি পাওয়া যায় জয়পুরহাট জেলার জামালগঞ্জে। এ খনিতে হীরক ও স্বর্ণের সন্ধান পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ১৮৮৫ সালে আবিষ্কৃত হয় বড়পুকুড়িয়া কয়লা খনি। খনিটির আয়তন ৩.২ বর্গ কি.মি.। এখানে বাংলাদেশে প্রথম কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
কঠিন শিলা
রংপুরের বদরগঞ্জ, মিঠাপুকুর এবং দিনাজপুরের পার্বতীপুরের মধ্যপাড়ায় কঠিন শিলার সন্ধান পাওয়া গেছে।
চীনা মাটি
এটি কেওভিন কর্দম মনিক দ্বারা গঠিত উন্নতমানের কর্দম। ১৯৫৭ সালে নেত্রকোনায় প্রথম চীনা মাটির সন্ধান পাওয়া যায়।
সিলিকা বালি বা কাঁচ বালি
কাঁচ বালির সর্বাধিক মজুদ আছে সিলেট অঞ্চলে।
এছাড়াও বাংলাদেশে নুড়িপাথর, গন্ধক, তামা, ইউরেনিয়াম ও খনিজ বালি পাওয়া যায়।
কোন জেলায় কি খনিজ পাওয়া যায়?
প্রাপ্তিস্থান | খনিজ | তথ্য |
---|---|---|
সিলেট | গ্যাস, তেল, পিট কয়লা, চুনাপাথর, নুড়িপাথর | > গ্যাস ও তেল- হরিপুর > চুনাপাথর – জাফলং – এ পাওয়া গেছে |
মৌলভীবাজার | গ্যাস, সিলিকা বালি / কাঁচ বালি, ইউরেনিয়াম | > কুলাউড়া – এ সিলিকা বালি / কাঁচ বালি ও ইউরেনিয়াম |
সুনামগঞ্জ | গ্যাস, কয়লা, চুনাপাথর, সিলিকা বালি / কাঁচ বালি | > টাকের হাট, লালহাট – এ কয়লা ও চুনাপাথর পাওয়া যায় > টাকের হাট – এ সিলিকা বালি / কাঁচ বালি পাওয়া যায় |
হবিগঞ্জ | গ্যাস, সিলিকা বালি / কাঁচ বালি, | > নয়াপাড়া, ছতিয়ানা, শাহবাজার – কাঁচ বালি |
কুমিল্লা | গ্যাস, সিলিকা বালি / কাঁচ বালি, | > চৌদ্দগ্রাম – এ সিলিকা বালি / কাঁচ বালি পাওয়া যায় |
ব্রাক্ষণবাড়িয়া | গ্যাস, পিট কয়লা, | |
রংপুর | কয়লা, কঠিন শিলা, তামা | > ‘খালাসপীর’ – এ কয়লা আছে > বদরগঞ্জ, মিঠাপুকুর -এ কঠিন শিলা পাওয়া যায় |
দিনাজপুর | কয়লা, কঠিন শিলা, চীনা মাটি / শ্বেতমৃত্তিকা, সিলিকা বালি / কাঁচ বালি, তামা | > বড়পুকুরিয়া -এ কয়লা, শ্বেতমৃত্তিকা পাওয়া যায় > পার্বতীপুরের মধ্যপাড়ায় কঠিন শিলা ও তামা পাওয়া যায় > পার্বতীপুরে সিলিকা বালি / কাঁচ বালি পাওয়া যায় > দীঘিপাড়া – এ শ্বেতমৃত্তিকা পাওয়া যায় |
পঞ্চগড় | নুড়িপাথর | |
লালমনিহাট | নুড়িপাথর | > পাটগ্রামে নুড়িপাথর পাওয়া যায় |
জয়পুরহাট | চুনাপাথর, চীনা মাটি / শ্বেতমৃত্তিকা | > পাঁচবিবি – শ্বেতমৃত্তিকা |
নওগা | কয়লা, চীনা মাটি / শ্বেতমৃত্তিকা, | > পত্নীতলায় কয়লা ও শ্বেতমৃত্তিকা পাওয়া যায় |
জামালপুর | সিলিকা বালি / কাঁচ বালি, | > গাড়োপাহাড় – এ সিলিকা বালি / কাঁচ বালি পাওয়া যায় |
নেত্রকোনা | চীনা মাটি / শ্বেতমৃত্তিকা, | |
ময়মনসিংহ | পিট কয়লা, | |
চট্টগ্রাম | গন্ধক, খনিজ বালি | > কুতুবদিয়ায় গন্ধক ও খনিজ বালি পাওয়া যায় |
কক্সবাজার | তেজস্ক্রিয় বালু, খনিজ বালি | > সমুদ্র সৈকতে তেজস্ক্রিয় বালু, > টেকনাফে খনিজ বালি পাওয়া যায় |
সেন্ট মার্টিন | চুনাপাথর | |