উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কৃষ্ণদয়ালের পুত্র গৌরিমোহন ওরফে গোরা। কৃষ্ণদয়াল প্রথম জীবনে ব্রহ্মধর্মে দীক্ষা লাভ করেছিলেন। তিনি ছিলেন প্রচণ্ড হিন্দু বিদ্যেষী। কিন্তু পরবর্তী জীবনে তার মন পরিবর্তন হয়। তিনি একজন গোড়া হিন্দু হয়ে ওঠেন। কৃষ্ণদয়ালের স্ত্রী আনন্দময়ী। আনন্দময়ী নিঃসন্তান ছিল। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সময় কৃষ্ণদয়াল ইংরেজ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের রক্ষা করেন। তার বাড়িতে আশ্রয়প্রাপ্ত এক আইরিশ নারী একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেই মারা যান। নিঃসন্তান আনন্দময়ী ঐ সন্তানকে আপন করে নেয়। তার নাম রাখে গোরা।
গোরাও কৃষ্ণদয়ালের প্রথম জীবনের মত হিন্দু বিদ্বেষী হয়ে উঠতে শুরু করলে কৃষ্ণদয়াল তাকে প্রকৃত হিন্দুত্ব শেখানোর জন্য শিক্ষক নিয়োগ করেন। ধীরে ধীরে গোরার মন পরিবর্তন হয় এবং একসময় গোরা কৃষ্ণদয়ালের চেয়েও রক্ষণশীল হিন্দু হয়ে ওঠে। গোরার অতি রক্ষণশীলতা কৃষ্ণদয়াল ও আনন্দময়ীকে চিন্তিত করে তোলে। গোরার বাল্যবন্ধু বিনয়। সেও গোরার অতি রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি মেনে নিতে পারে না। গোরাকে ঠিক করার জন্য কৃষ্ণদয়াল সিদ্ধান্ত নেয় গোরাকে বিয়ে করানোর। কিন্তু গোরাতো একজন বিদেশীর ছেলে। তাই কৃষ্ণদয়াল তাকে ব্রহ্মধর্মের অনুসারী মেয়ের সাথে বিবাহ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
কৃষ্ণদয়াল একটি চিঠি গোরার হাতে দিয়ে তার একসময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ব্রহ্মধর্মের অনুসারী পরেশবাবুর সাথে দেখা করতে বলে। পরেশবাবুর স্ত্রী বারদাসুন্দরী। তাদের তিন মেয়ে: লাবন্য, ললীতা ও লীলা। এছাড়াও তাদের পালিত মেয়ের নাম সুচরিতা। ঘটনাক্রমে গোরার বন্ধু বিনয়ের সাথে ললীতার প্রণয় হয়।
একসময় গোরা তার চার বন্ধুসহ গ্রাম দর্শনে বের হয়। সেখানে গোরা নিম্নবর্গের হিন্দুদের ওপর ব্রহ্মণদের অত্যাচার প্রত্যক্ষ করে। এছাড়া সে দেখতে পায় হিন্দু নাপিতের ঘরে মুসলমান শিশু প্রতিপালনের চিত্র। গ্রামে ইংরেজ পুলিশের অত্যাচারের প্রতিবাদ করায় গোরার জেল হয়।
ইতোমধ্যে বিনয়ের সাথে ললীতার বিয়ে ঠিক হয়। গোরা বিনয়ের এ বিয়ে মেনে নিতে পারে নি। এমনকি সে মা আনন্দময়ীকেও বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলে।
একসময় কৃষ্ণদয়াল প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পরলে সে গোরাকে তার পিতৃপরিচয়ের কথা জানায়। নিজ পরিচয় জানার পর গোরার সমস্ত অহংকার চূর্ণ হয়ে যায় এবং তার সুবোধ জাগ্রত হয়। নবচেতনায় উদ্ভাসিত গোরার সাথে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কারও আর বিরোধ থাকে না। সে হয়ে ওঠে একজন ভারতবর্ষীয়।
উপন্যাস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর