গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সংঘ/জোট সমূহ

Estimated Reading Time: 20 Minutes

বিংশ শতাব্দীজুড়ে বিশ্ব বেশ কিছু আন্তর্জাতিক জোট দেখেছে যার অধিকাংশই রাজনৈতিক বা কৌশলগত জোট। কিন্তু এ শতাব্দীর শেষ ভাগে এসে অর্থনৈতিক জোটগুলো বেশ গুরুত্ববহ হয়ে উঠেছে। ক্রমবর্ধমান এসব অর্থনৈতিক জোটগুলো বিশ্ব বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নির্ণয়কের ভূমিকা পালন করছে। গত কয়েক বছরে এই প্রবণতা এতটা গতি অর্জন করেছে যে অনেক দেশ নতুন জোট গঠন, বিদ্যমান ব্লকগুলি সম্প্রসারণ বা পুরাতনগুলিকে পুনরুদ্ধার করতে উঠেপড়ে লেগেছে। নিচে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক জোটের বর্ণনা দেওয়া হল।

জি-৭

G-7 or Group of 7

পৃথিবীর ধনী ও শিল্পায়িত ৭ টি দেশের জোট। প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৫ সালে। এই জোটের সদস্য হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি জাপান। শিল্প, বাণিজ্য, অর্থ ও প্রযুক্তিগত পারস্পারিক সমস্যাদি আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা এবং সর্বপরি বিশ্বের ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখাই এ জোটের প্রধান উদ্দেশ্য।

Image source: Wikipedia.org G-7 Countries

জি-১৫

G-15 or Group of 15

তৃতীয় বিশ্বের কিছু দেশের একটি অর্থনৈতিক জোট। এটি ১৯৮৯ সালে গঠিত হয়। এর উদ্দেশ্য হল সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতা ও বাণিজ্যিক লেনদেন বৃদ্ধি করা। ১৫ টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত হলেও বর্তমানে এর সদস্য রাষ্ট্র ১৮টি। সদস্য রাষ্ট্রগুলো এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশ।

জি-২০

G-20 or Group of 20

জ়ি-২০ বা জি২০ হল বিশ্বের ২০টি দেশ ও সংস্থার অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সমন্বয়ে গঠিত একটি জোট বা গ্রুপ। গ্রুপের সদস্য ১৯টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৯ সালে। কানাডার সাবেক অর্থমন্ত্রী পল মার্টিন প্রথম জি২০ গঠনের প্রস্তাব করেন। জি২০ দেশসমূহের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকারপ্রধানও গ্রুপের সম্মেলনে তাদের নিজ নিজ দেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন। জি-২০ সদস্যরা বিশ্বের মোট জিডিপির প্রায় ৯০%-র প্রতিনিধিত্ব করে।

Source: Wikipedia G-20 Countries

বিশ্বের প্রধান ও উদীয়মান অর্থনৈতিক পরাশক্তি সম্পন্ন দেশসমূহের মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতা, আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ইত্যাদি ছিল জি২০ গঠনের উদ্দেশ্য।

সদস্য রাষ্ট্রগুলো –

জি-৭ এর ৭টি দেশ + অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও তুরস্ক + ইউরোপীয় ইউনিয়ন

জি-৭৭

G-77 or Group o f 77


জাতিসংঘের উন্নয়নশীল দেশসমূহের একটি জোট। সদস্যদের সম্মিলিত অর্থনৈতিক স্বার্থকে উন্নীত করতে এবং জাতিসংঘে বর্ধিত যৌথ আলোচনার সক্ষমতা তৈরির লক্ষ্যে নিয়ে ১৯৬৪ সালে এই জোট প্রতিষ্ঠা করা হয়। ৭৭ টি প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য নিয়ে গঠিত হলেও বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ১৩৪ (২০২১)। বিশাল অর্থনীতির অধিকারী হলেও চীন এখনো জি-৭৭ এর সদস্য (২০২০)। বাংলাদেশও জি-৭৭ এর সদস্য রাষ্ট্র।

BRICS

Brazil, Russia, India, China, South Africa শব্দের আদ্যক্ষর নিয়ে গঠিত নাম।

ব্রিক্‌স হলো পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের- ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা, আদ্যক্ষরের সমন্বয়ে নামকরণকৃত উদীয়মান একটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংগঠন। ব্রিক্‌সে অন্তর্ভুক্ত সব রাষ্ট্র উন্নয়নশীল বা সদ্য শিল্পোন্নত, কিন্তু তাদের উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ঘটনাবলীর উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালে।

নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ব্রিক্ স দেশসমূহ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি বহুমুখী উন্নয়ন ব্যাংক। ২০১৪ সালে ব্রিক্‌স রাষ্ট্রগুলোর চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্যে দিয়ে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা গঠিত হয়। চীনের সানহাইয়ে এর সদর দপ্তর অবস্থিত।

D-8

Developing-8 or D-8

৮টি উন্নয়নশীল মুসলিম প্রধান দেশ নিয়ে গঠিত একটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন জোট। উন্নয়নশীল-৮ বা ডি-৮ তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী নাজমদ্দিন (তুর্কিতে যাকে নেচমেত্তিন এরবাকান বলা হয়) প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ১৯৯৭ সালে জুনে ‘ইস্তাম্বুল ঘোষণার’ মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো হল-বাংলাদেশ, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ইরান, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান এবং তুরস্ক।

এর উদ্দেশ্য হল উন্নয়নশীল সদস্য দেশগুলোর উন্নতি সাধন ও বিশ্ব অর্থনীতিতে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করা, পারস্পরিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও সুবিধা বৃদ্ধ করা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সকলের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা ও মানসম্মত জীবন যাপন নিশ্চিত করা।

ECO

Economic Cooperation Organization

এশীয় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্থা যা ইরান, পাকিস্তান এবং তুরস্কের নেতাদের দ্বারা ১৯৮৫ সালে তেহরানে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদস্য রাষ্ট্র ১টি দেশ: ইরান, তুরস্ক, পাকিস্তান, আজারবাইজান, কিরগিজিস্তান, আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও তাজিকিস্তান।

APEC

Asia-Pacific Economic Co-operation

এশিয়া-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা বা এপেক প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২১ সদস্য দেশ নিয়ে গঠিত। এটি পুরো এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে মুক্ত বাণিজ্যের প্রচার/ প্রসারে কাজ করে। জোটটি ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর সদর দপ্তর সিংগাপুরে অবস্থিত।

ACU

Asian Clearing Union

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকু হচ্ছে একটি আন্ত-আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিকারী সংস্থা। এটি এর সদস্য রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসমূহ এবং উক্ত অঞ্চলের আন্ত-আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তি করে থাকে। জাতিসংঘের এশিয়া অঞ্চলের অর্থনীতি ও সামাজিক কমিশন (ইসক্যাপ)-এর উদ্যোগে ডিসেম্বর ৯, ১৯৭৪ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদরদপ্তর তেহরানে (ইরান) অবস্থিত। সদস্যরা হল বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, মায়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং ইরান। ACU-এর প্রতিষ্ঠাকালীন সময় প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল বহুপাক্ষিক ভিত্তিতে সদস্য দেশগুলির মধ্যে অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা করার জন্য ইউনিয়ন সদস্যদের মধ্যে উপযুক্ত আর্থিক লেনদেন নিষ্পত্তি সম্পর্কিত আঞ্চলিক সহযোগিতাকে সুরক্ষিত করা।

BIMSTEC

Bay of Bengal Initiative for Multi-Sectoral Technical and Economic Cooperation

বিম্‌সটেক দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ৭টি দেশকে নিয়ে গঠিত একটি আঞ্চলিক জোট। এটি গঠিত হয় ১৯৯৭ সালে। এর সদরদপ্তর বাংলাদেশের ঢাকায় অবস্থিত। সদস্য রাষ্ট্রগুলো হলঃ  বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, নেপাল, মায়ানমার, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ড।

বিমসটেক এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং বঙ্গোপসাগর উপকূলের দেশগুলোর মধ্যে প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পারষ্পরিক সহযোগীতার ক্ষেত্র তৈরি করা। ব্যবসা, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, পর্যটন, মানব সম্পদ উন্নয়ন, কৃষি উন্নয়ন, মৎস্য সম্পদ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পোশাক ও চামড়া শিল্প সহ আরো অনেকগুলো ক্ষেত্র বিমসটেক এর মূল উদ্দেশ্যভুক্ত।

BENELUX

Belgium, Netherlands and Luxemburg Economic Co-operation

বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড ও লুক্সেমবার্গের মধ্যকার অর্থনৈতিক সহযোগীতার লক্ষ্যে ১৯৪৪ সালে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর সদর দপ্তর ব্রসেলস, বেলজিয়ামে।

BCIM

Bangladesh, China, India, Myanmar Forum for Regional Cooperation

বাংলাদেশ, চীন, ভারত এবং মায়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর (বিসিআইএম) একটি প্রস্তাবিত করিডোর যা মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মাধ্যমে ভারত ও চীনকে একটি করিডোর হিসাবে সংযুক্ত করে।  বিসিআইএম পণ্য, পরিষেবা ও জ্বালানি, বাজারজাতকরণ বাধা নির্মূল, উন্নত বাণিজ্যের সহজলভ্যতা, অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ এবং খনিজ, জল এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের যৌথ অনুসন্ধান ও বিকাশের জন্য বৃহত্তর বাজার প্রবেশের কল্পনা করে।

এক নজরে জোটগুলো –

জোটপ্রতিষ্ঠা ও সদর দপ্তরসদস্য দেশতথ্য
G-7১৯৭৫
সদর দপ্তর নেই
৭টিরাশিয়া একসময় জি-৭ এর সদস্য ছিল। পরে বহিষ্কৃত হয়।
G-15১৯৮৯
জেনেভা
১৮টি
G-20১৯৯৯
সদর দপ্তর নেই
২০টি১৯টি দেশ ও ১টি সংস্থা (EU) নিয়ে গঠিত
G-77১৯৬৪
জাতিসংঘ হেডকোয়াটার্স, নিউইয়র্ক
১৩৪টিউন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থ ও বাণিজ্যিক সার্থরক্ষার্থে প্রতিষ্ঠিত।
D-8১৯৯৭
ইস্তাম্বুল, তুরস্ক
৮টিDeveloping-8 থেকে D-8 নামকরণ করা হয়েছে।
APEC১৯৮৯
সিঙ্গাপুর
২১টি
ACU১৯৭৪
তেহরান, ইরান
৯টি
BRICS ২০০৯
সানহাই, চীন
৫টি
BIMSTEC ১৯৯৭
ঢাকা, বাংলাদেশ
৭টি
BENELUX ১৯৪৪
ব্রসেলস, বেলজিয়াম
৩টি

2 thoughts on “গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সংঘ/জোট সমূহ”

  1. Pingback: Build Back Better World or B3W - Job Preparation BD

Leave a Reply