ছয় দফা আন্দোলন

Estimated Reading Time: 11 Minutes

১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে “৬ দফা দাবি” পেশ করেন। দফাগুলো রচিত হয়েছিল ‘লাহোর প্রস্তাব’ অনুযায়ী। সিএসপি অফিসার রুহুল কুদ্দুস দফাগুলোর খসরা প্রস্তুত করেন। ছয় দফাকে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বা ম্যাগনাকার্টা বলা হয়।

আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন

তারিখ: ১৮-২০ মার্চ, ১৯৬৬

সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি হন বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান। এ সম্মেলনের পূর্বে তিনি সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ সম্মেলনে তাজউদ্দীন আহমদ দলেন সাধারণ সম্পাদক হন। অধিবেশনে রবীন্দ্রনাথের “আমার সোনার বাংলা” গানটি গাওয়া হয়।

সংক্ষেপে দফাগুলো

দফা-০১

শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি

পাকিস্তানকে ফেডারেশন করতে হবে, সংসদীয় পদ্ধতির সরকার থাকবে এবং আইন পরিষদ সার্বভৌম হবে।

দফা-০২

কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা

কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) সরকারের ক্ষমতা কেবল দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকবে।

দফা-০৩

মুদ্রা বা অর্থ-সম্বন্ধীয় ক্ষমতা

দু’টি পৃথক, অথচ অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু থাকবে। তবে সমগ্র দেশের জন্যে কেবল মাত্র একটি মুদ্রা চালু থাকলে শাসনতন্ত্রে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলির মধ্যে মূলধন পাচার বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক ব্যাংকিং রিজার্ভেরও (বাংলাদেশ ব্যাংক) পত্তন করতে হবে।

দফা-০৪

রাজস্ব, কর, বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা

কর বা শুল্ক ধার্যের ব্যাপারে অঙ্গরাজ্যগুলির সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকারের কর ধার্যের ক্ষমতা থাকবে না।

দফা-০৫

বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা

বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অঙ্গরাজ্যগুলির এখতিয়ারে থাকবে। এছাড়া অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর স্ব-স্বার্থে অন্যরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা থাকবে।

দফা-০৬

আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা

অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলির নিজ কর্তৃত্বাধীনে আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা থাকবে।

ঘঠনাপ্রবাহ

৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬

প্রথম ৬ দফা পেশ

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মজিবুর রহমান প্রথম ৬ দফা পেশ করেন।

১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬

বিমানবন্দরে ৬ দফা উত্থাপন

আগারগাঁও বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের সামনে ৬ দফা তুলে ধরেন।

২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬

৬ দফা অনুমোদন

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটিতে ৬ দফা অনুমোদিত হয়।

২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬

পুস্তিকা প্রকাশ

আমাদের বাঁচার দাবি: ‘ছয় দফা’ নামক পুস্তিকা প্রকাশিত হয়।

২৩ মার্চ, ১৯৬৬

আনুষ্ঠানিক ৬ দফা ঘোষণা

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের নব্য সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান লাহোরে সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দফা ঘোষণা করেন।

১৭ এপ্রিল, ১৯৬৬

বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার

ছয় দফার জন্য বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছয় দফার জন্য তিনি মোট ৮ বার গ্রপ্তার হয়েছেন।

০৭ জুন, ১৯৬৬

হরতাল পালন

৬ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে সারাদেশে হরতাল পালিত হয়। হরতালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মনু মিয়া, মুজিবুল্লাহ, শামসুল হকসহ অনেকে।

গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

০৭ জুন। ১৯৬৬ সালের এদিন আওয়ামী লীগের ডাকে হরতাল চলাকালে নিরস্ত্র জনতার ওপর পুলিশ ও তৎকালীন ইপিআর গুলিবর্ষণ করে। এতে ১১ জন মৃত্যুবরণ করেন।

আমাদের বাঁচার দাবি: ‘ছয় দফা’। পুস্তিকাটি বঙ্গবন্ধুর নামে প্রকাশিত হয়। পুস্তিকাতি ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত হয় এবং ১৮-২০ ফ্রেব্রুয়ারির আওয়ামী লীগের অধিবেশনে গৃহিত হয়।

পাকিস্তানের লাহোরে এক সম্মেলনে প্রথম ছয় দফা উত্থাপিত হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হয় ২৩ মার্চ ১৯৬৬।

পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাঙালিরা শুরু থেকেই বৈষম্যের শিকার হয়। শুরু থেকেই পূর্ব বাংলার ওপর পশ্চিমের শাসকদের একধরনের ঔপনিবেশিক শোষন চলতে থাকে। ওই রাষ্ট্রে বাঙালি সমস্যার প্রকৃতি ছিল জাতিসত্তাগত। এ সমস্যা থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্তি দিতে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এতে দ্রুত বাঙালিদের মধ্যে জাতীয় মুক্তির নবচেতনা জেগে ওঠে যা বাঙালি জাতির স্বাধীনতাকে ত্বরান্নিত করে। তাই ছয় দফাকে বাঙালির মুক্তির সনদ বলা হয়।

Leave a Reply