প্রতিষ্ঠা: ২৪ অক্টোবর, ১৯৪৫ | সদর দপ্তর: নিউইয়র্ক (যুক্তরাষ্ট্র), ইউরোপীয় সদর দপ্তর: জেনেভা (সুইজারল্যান্ড) | প্রস্তাবক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট
জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রপুঞ্জ বিশ্বের জাতি বা রাষ্ট্রসমূহের একটি সংগঠন। এর লক্ষ্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা রক্ষার মাধ্যমে রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করা। ১৯৪৫ সালে ৫১টি রাষ্ট্র জাতিসংঘ সনদ স্বাক্ষর করার মাধ্যমে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বিলুপ্ত হওয়া লীগ অব নেশন্সের স্থলাভিষিক্ত আন্তর্জাতিক সংগঠন। জাতিসংঘ মূলত একটি রাজনৈতিক আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংগঠন, এটি কোনো বিশ্ব সরকার নয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বিজয়ী মিত্রশক্তি পরবর্তীকালে যুদ্ধ ও সংঘাত এড়ানোর উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী হয়। জাতিসংঘের মোট সদস্য ১৯৩টি দেশ। ইন্দোনেশিয়া ১৯৬৫ সালে মালোয়শিয়ার সাথে কোন্দলের জেরে জাতিসংঘ ত্যাগ করলেও পরের বছরই পুনরায় যোগদান করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী ৫ দেশ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও গণচীন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য।

প্রতিষ্ঠা
লন্ডন ঘোষণা, ১৯৪১
১২ জুন, ১৯৪১। জার্মানি ব্রিটেনকে আক্রমণ করার পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপের ৯টি দেশের সরকার পৃথিবীতে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য লন্ডনের জেমস প্রাসাদে যে ঘোষণা দেয় তাই লন্ডন ঘোষণা। এটি জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ১ম পদক্ষেপ।
আটলান্টিক সনদ, ১৯৪১
১৪ আগষ্ট, ১৯৪১। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইন্সটন চার্চিল আটলান্টিক মহাসাগরে ব্রিটিশ রণতরী প্রিন্সেস অব ওয়েলস এবং মার্কিন রণতরী ইউএসএস অগাস্টাতে মিলিত হয়ে বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য যে ঘোষণাপত্র স্বাক্ষর করেন তাই আটলান্টিক সনদ। এর মূলনীতি ৮টি। যথা:
- কোনো দেশ ভবিষ্যতে সম্প্রসারণ নীতি গ্রহণ করবে না
- যেকোন স্বনির্ভর জাতি তার জনগণের ইচ্ছা অনুসারে স্বাধীন সরকার গঠন করতে পারবে
- প্রতিবেশী দেশের সম্মতি ছাড়া কোনো দেশের সীমারেখা চিহ্নিত করা যাবে না
- বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রের সমান বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক অধিকার থাকবে
- নাত্সী ও ফ্যাসিস্ট শক্তির পতনের পর প্রতিটি দেশ নিজেদের উন্নতির জন্য দারিদ্র দূরীকরণ ও বিদেশি আক্রমণ মোকাবিলার জন্য কাজ করবে
- প্রতিটি দেশ উন্নত জীবনযাত্রা ও সামাজিক নিরাপত্তার প্রয়োজনে কাজ করবে
- প্রতিটি দেশ সৈন্য, যুদ্ধজাহাজ, বিমান ও যুদ্ধের অন্যান্য উপকরণ কমাবে
- সমুদ্রপথ ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশের সুযোগ থাকবে
মস্কো সম্মেলন, ১৯৪৩
১৯-৩০ অক্টোবর, ১৯৪৩। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের জন্য আন্তর্জাতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার জন্য ৭ দফা ঘোষণা করেন।
তেহরান সম্মেলন, ১৯৪৩
নভেম্বর-ডিসেম্বর, ১৯৪৩ সাল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল এবং সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট স্ট্যালিন ১ ডিসেম্বর, ১৯৪৩ সালে তেহরান আন্তর্জাতিক সংগঠন গড়ে তোলার জন্য সকল দেশকে সদস্য হওয়ার আহ্বান করেন।
ব্রিটন উডস সম্মেলন, ১৯৪৪
১-২২ জুলাই, ১৯৪৪, নিউহ্যাম্পশায়ার (যুক্তরাষ্ট্র)। সম্মেলনে বিশ্বের ৪৪টি দেশের ৭৩০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ব্যবস্থা গঠন, যুদ্ধোত্তর রাষ্ট্রসমূহের পুণর্গঠন ও উন্নয়ন সাধন এবং বাণিজ্য ব্যবস্থা সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
সম্মেলনে এ মর্মে প্রস্তাব গৃহীত হয় যে, উক্ত বিষয়গুলোর প্রয়োগকল্পে সঠিক কাঠামোনির্মাণের উদ্দেশ্যে ৩টি আন্তর্জাতিকসংস্থা গঠন করা যুক্তিযুক্ত হবে। প্রস্তাবিত ৩ টি বহুজাতিক ব্যবস্থা ছিল: বিশ্বব্যাংক (IBRD), আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF), আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা (ITO) । এদের প্রধান কাজ হবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সমস্যা সমূহ পর্যবেক্ষণ ও সমাধানের উপায় বের করা।
ডাম্বারটন ওকস্ সম্মেলন
২১ আগস্ট- ২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৪। ওয়াশিংটনের ডাম্বারটন ওকস্ ভবনে জাতিসংঘের রূপরেখা, নিরাপত্তা পরিষদ ও ইকোসক গঠন, নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য নির্বাচন এবং সংগঠনের (জাতিসংঘ) নামকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীন সম্মেলনে মিলিত হয়।
ইয়াল্টা সম্মেলন
ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৫ সাল। ইউক্রেনের ইয়াল্টায় ডাম্বারটন সম্মেলনের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত হয়। ৫টি স্থায়ী সদস্যের Veto ক্ষমতা দেয়া হয়।
সানফ্রান্সিসকো সম্মেলন
২৬ জুন, ১৯৪৫। ৫০টি দেশের প্রতিনিধিরা ১১১ ধারা সম্বলিত জাতিসংঘ সনদ স্বাক্ষর করেন। কিছুদিন পর ৫১তম দেশ হিসেবে পোল্যান্ড জাতিসংঘ সনদে স্বাক্ষর করে। ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর এ সনদ কার্যকরী হয়।
সনদ –
- স্বাক্ষরিত হয়: ২৬ জুন,১৯৪৫ সালে;
- কার্যকর হয়: ২৪ অক্টোবর, ১৯৪৫
- জাতিসংঘের সনদের রচয়িতা আর্চিবাল্ড ম্যাকলেইশ।
পতাকা ও প্রতীক

নীল আয়তাকার জমি, মাঝখানে পৃথিবীর মানচিত্র (অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশসহ) এবং মানচিত্রের দুপাশে সাদা রঙ্গের জলপাই গাছের দুটি ডাল/পাতা। নীল দ্বারা বিশালতা বোঝায় এবং জলপাই পাতা শান্তির প্রতীক।

মাঝখানের পৃথিবীর উপরিভাগ থেকে নেওয়া অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশসহ মানচিত্র এবং দুপাশে দুটি জলপাই পাতা। জাতিসংঘের প্রতীক ও পতাকার ডিজাইনার ডোনাল্ড ম্যাগলিন (যুক্তরাষ্ট্র)।
অঙ্গ সংগঠন
জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন ৬টি। যথা:
- সাধারণ পরিষদ (General Assembly)
- নিরাপত্তা পরিষদ (Security Council)
- অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ (Economic and Social Council-ECOSOC)
- আন্তর্জাতিক বিচারালয় (International Court of Justice)
- জাতিসংঘ সচিবালয় (UN Secretariat) ও
- অছি পরিষদ (Trusteeship Council)
সাধারণ পরিষদ
সাধারণ পরিষদকে জাতিসংঘের আইনসভার সাথে তুলনা করা যায়। জাতিসংঘের প্রত্যেক সদস্য দেশ এ পরিষদের সদস্য। এর প্রতিটি অধিবেশনের জন্য ১ জন সভাপতি এবং ২১ জন সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের নিয়মিত বার্ষিক অধিবেশন শুরু হয় সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় মঙ্গলবার। অধিবেশনে সদস্য দেশগুলোর ২/৩ অংশ ভোটে প্রস্তাব পাশ হয়।
উল্লেখ্য লন্ডনের ওয়েস্ট মিনিস্টার হলে সাধারণ পরিষদের ১ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

কার্যাবলি
- জাতিসংঘ সনদের আওতাভুক্ত যেকোন বিষয় নিয়ে সাধারণ পরিষদ আলোচনা করতে পারে। তবে নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনাধীন কোনো বিষয় সম্পর্কে সাধারণ পরিষদ আলোচনায় বসতে পারে না।
- জাতিসংঘের মহাসচিব নির্বাচন করে নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদনের জন্য পাঠায়।
- এ পরিষদ নতুন কোন সংস্থা গঠন করতে পারে
- সদস্য কোন দেশকে বহিষ্কার করতে পারে
- সদস্য দেশগুলোর চাঁদার পরিমাণ নির্ধারণ করে থাকে।
- নির্বাচনমূলক কাজ:
- সাধারণ পরিষদের সভাপতি নির্বাচন করে। সাধারণ পরিষদের সভাপতি ১ বছরের জন্য নির্বাচিত হন।
- নিরাপত্তা পরিষদের ১০ টি অস্থায়ী সদস্য নির্বাচন করে।
- অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের ৫৪ সদস্যকে নির্বাচন করে
- আন্তর্জাতিক আদালতের ১৫ জন বিচারকের নির্বাচনে নিরাপত্তা পরিষদের সাথে যৌথভাবে অংশ নেয়।
- মহাসচিব নির্বাচন করে
- জাতিসংঘের বাজেট প্রণয়ন ও অনুমোদন করে।
- আন্তর্জাতিক আইনের নীতিমালা ঘোষণা করে থাকে।
- এছাড়া সাধারণ পরিষদ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে থাকে। যেমন: Sea Law Convention-1982, Genocide Convention-1948, Human Rights Convention-1948 সাধারণ পরিষদের উদ্যোগের ফসল।
কমিটি
সাধারণ পরিষদ তার দায়িত্ব ও কার্যাবলি বিভিন্ন কমিটির মাধ্যমে সম্পাদন করে থাকে। কমিটিগুলো-
- প্রথম কমিটি: নিরস্ত্রীকরণ ও আন্তর্জাতিক সুরক্ষা বিষয়ক কমিটি
- দ্বিতীয় কমিটি: অর্থনীতি ও আর্থিক বিষয়ক কমিটি
- তৃতীয় কমিটি: সামাজিক, মানবকল্যাণ ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক কমিটি
- চতুর্থ কমিটি: বিশেষ রাজনৈতিক ও উপনিবেশ বিলোপ কমিটি
- পঞ্চম কমিটি: প্রশাসনিক ও বাজেট বিষয়ক কমিটি
- ষষ্ঠ কমিটি: আইন বিষয়ক কমিটি
নিরাপত্তা পরিষদ
জাতিসংঘের ৬টি শাখার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাসম্পন্ন শাখা হল নিরাপত্তা পরিষদ। ৫টি স্থায়ী সদস্য ও সাধারণ পরিষদ কর্তৃক নির্বাচিত ১০ টি অস্থায়ী সদস্যসহ মোট ১৫ সদস্য দেশ নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ গঠিত হয়। অস্থায়ী সদস্য দেশগুলো ২ বছরের জন্য সাধারণ পরিষদ কর্তৃক নির্বাচিত হয়। প্রত্যেক সদস্য দেশের ১টি করে ভোট প্রদানের ক্ষমতা আছে, তবে এ পরিষদে কোন স্বীদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ৫টি স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রের একমত হওয়াসহ মোট ৯টি (৩/৫ অংশ ভোট) সদস্য দেশের সমর্থন প্রয়োজন।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশ
যুক্তরাষ্ট্র
ব্রিটেন
রাশিয়া
ফ্রান্স
চীন
পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের ভেটো ক্ষমতা রয়েছে। স্থায়ী সদস্যদের মধ্যে কোন রাষ্ট্র দ্বিমত প্রোষণ করলে নিরাপত্তা পরিষদ কোন স্বীদ্ধান্তে পৌছাতে পারে না। এরূপ ক্ষেত্র ১৯৫০ সালের ‘শান্তির জন্য ঐক্য’ প্রস্তাব অনুযায়ী নিরাপত্তা পরিষদ যদি কোনো আগ্রাসী কার্যকলাপ রোধ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে সাধারণ পরিষদ ২৪ ঘন্টার মধ্যে সভা আহ্বান করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।
অঞ্চল অনুযায়ি অস্থায়ী সদস্য-
- এশিয়া ও আফ্রিকা – ৫টি। সাধারণত এশিয়া থেকে ২টি ও আফ্রিকা থেকে ৩টি সদস্য নির্বাচন করা হয়।
- পূর্ব ইউরোপ – ১টি
- ল্যাটিন আমেরিকা – ২টি
- পশ্চিম ইউরোপ ও অন্যান্য – ২টি

কার্যাবলি
- নিরাপত্তা পরিষদ আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষার জন্য শান্তি বিনষ্টকারী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবরোধ বা অন্য কোন উপায়ে চাপ সৃষ্টি বা চুড়ান্ত ব্যবস্থা হিসেবে সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে।
- কোন সদস্য রাষ্ট্রকে বহিষ্কারের জন্য সাধারণ পরিষদের কাছে সুপারিশ করতে পারে। নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশ ব্যতিত সাধারণ পরিষদ কোন সদস্য রাষ্ট্রকে বহিষ্কারের প্রস্তাব গ্রহণ ও কার্যকর করতে পারে না।
- সাধারণ পরিষদের মহাসচিব নিয়োগ অনুমোদন করে।
- জাতিসংঘ সনদ সংশোধন করতে পারে।
- সাধারণ পরিষদের সম্মতিতে আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারক নিয়োগ করে।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ (ECOSOC)
প্রতিষ্ঠা: ১৯৪৫ | সদস্য: ৫৪টি দেশ |
সংস্থাটি জাতিসংঘ পরিবার বা UN Family নামে পরিচিত। ECOSOC মূলত ১৪টি জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা, তাদের কার্যকরী কমিশন এবং পাঁচটি আঞ্চলিক কমিশনের মধ্যে সমন্বয়ের কাজ করে। এই পরিষদের কাজ হলো বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের দরিদ্র, নিপীড়িত ও পশ্চাৎপদ জাতিসমুহের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকার আর্থসামাজিক কর্মসূচি গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করা। এর সদস্যরা সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ৩ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়। বাংলাদেশ ২০২০-২০২২ বছরের জন্য ECOSOC এর সদস্য নির্বাচিত হয়েছে।

ECOSOC এর অধীনে কাজ করে এমন ১৪টি সংস্থা-
- Food and Agriculture Organization (FAO)
- International Civil Aviation Organization (ICAO)
- International Fund for Agricultural Development (IFAD)
- International Labour Organization (ILO)
- International Maritime Organization (IMO)
- International Monetary Fund (IMF)
- International Telecommunication Union (ITU)
- United Nations Educational, Scientific and Cultural Organization (UNESCO)
- United Nations Industrial Development Organization (UNIDO)
- Universal Postal Union (UPU)
- World Bank Group (WBG)
- International Bank for Reconstruction and Development (IBRD)
- International Finance Corporation (IFC)
- International Development Association (IDA)
- World Health Organization (WHO)
- World Intellectual Property Organization (WIPO)
- World Meteorological Organization (WMO)
আঞ্চলিক কমিশনগুলো-
- ইউরোপীয় অর্থনৈতিক কমিশন (Economic Commission for Europe-ECE)
- আফ্রিকান অর্থনৈতিক কমিশন (Economic Commission for Africa-ECA)
- ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয় অর্থনৈতিক কমিশন (Economic Commission for Latin America and the Caribbean-ECLAC)
- এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন (Economic and Social Commission for Asia and the Pacific-ESCAP)
- পশ্চিম এশিয়া অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন (Economic and Social Commission for Western Asia-ESCWA)
আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত
প্রতিষ্ঠা: ১৯৪৫ | বিচারক: ১৫জন | সদর দপ্তর: হেগ (নেদারল্যান্ড)
সংস্থাটি মূলত আন্তর্জাতিক আদালত নামে পরিচিত। এটির প্রধান কাজ স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে আইনি বিরোধ নিষ্পত্তি করা (মূলত সন্ধি ও চুক্তির ব্যাখ্যা দেওয়া) এবং বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে আইন বিষয়ে পরামর্শ মতামত দেয়া। আদালতের ১৫ জন বিচারক ৯ বছরের জন্য সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক নির্বাচিত হন। বিচারকদের মধ্য থেকে ৩ বছরের জন্য একজন সভাপতি নির্বাচিত হন।

জাতিসংঘ সচিবালয় (UN Secretariat)
জাতিসংঘের প্রশাসনিক বিভাগ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। সংস্থার প্রধান হিসেবে রয়েছেন একজন মহাসচিব। তাকে সাহায্য করার জন্য থাকে ১১ জন উপ-সচিব এবং ৬ জন সহকারী সচিব।
অছি পরিষদ (Trusteeship Council)
এটি বিশ্বের বিরোধপূর্ণ এলাকার দায়িত্ব নেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত। ১৯৯৪ সাল থেকে এর কার্যক্রম স্থগিত আছে। বর্তমানে একমাত্র অছিভুক্ত অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে থাকা প্যাসিফিক আইল্যান্ড।
জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ বিশেষায়িত সংস্থা
জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থাগুলি হল আন্তর্জাতিক সংস্থা যা চুক্তি অনুযায়ী জাতিসংঘের সাথে কাজ করে। জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা ১৭টি (মতান্তরে ১৫টি)।
ILO
পূর্ণরূপ: International Labour Organization; প্রতিষ্ঠা: ১৯১৯;
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বা ILO ভার্সাই চুক্তির আওতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি শ্রমিক-কর্মচারীদের কর্মক্ষেত্রে উন্নতি ও তাদের সুযোগ-সুবিধার সমতা বিধানের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সংস্থা। ১৯৪৬ সালে সংস্থাটি জাতিসংঘের সহায়ক সংস্থা হিসাবে স্বীকৃতি পায়। এটি জাতিসংঘের সবচেয়ে পুরনো ও প্রথম বিশেষায়িত সংস্থা। সংস্থার সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থিত। বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে ILO-র সদস্য হয়। সংস্থাটি উন্নয়নশীল দেশে শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কারণে ১৯৬৯ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করে। আইএলওর সাধারণ সম্মেলনে সরকারী প্রতিনিধিদের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটসহ সমস্ত প্রতিনিধিদের দুই-তৃতীয়াংশ ভোট অর্জনের মাধ্যমে কোন রাষ্ট্র ILO-র সদস্য হতে পারে।
৫৬টি titular member (28 Governments, 14 Employers and 14 Workers) এবং ৬৬টি deputy member এর সমন্নয়ে ILO এর পরিচালনা পরিষদ গঠিত। দশটি titular member (Government) পদ স্থায়ীভাবে প্রধান শিল্প গুরুত্বের রাষ্ট্রগুলির দ্বারা অধিষ্ঠিত। এগুলো হলো ব্রাজিল, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইতালি, জাপান, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। বাকি ১৮টি titular member (Government) পদ প্রতি তিন বছর অন্তর সম্মেলনে নির্বাচিত হয়। ILO এর পরিচালনা পরিষদ বছরে তিনবার মিলিত হয় (মার্চ, জুন ও নভেম্বর)।
UNESCO
পূর্ণ রূপ- United Nations Educational Scientific and Cultural Organization. প্রতিষ্ঠা: ১৯৪৬; সদর দপ্তর- প্যারিস, ফ্রান্স। বর্তমান সদস্য – ১৯৩ টি।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা। বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে এর সদস্যপদ লাভ করে। UNESCO এর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় বাংলাদেশি স্থান –
ঐতিহ্য | অবস্থান |
---|---|
সোমপুর বিহার | পাহাড়পুর (নওগাঁ) |
ষাট গম্বুজ মসজিদ | বাগেরহাট |
সুন্দরবর |
Word Bank Group
সদর দপ্তর: ওয়াশিংটন ডিসি (যুক্তরাষ্ট্র); প্রতিষ্ঠা: ১৯৪৪; কার্যক্রম শুরু: ১৯৪৬; মোট সদস্য: ১৮৯; Moto: Working for a world free of poverty
ব্রেটন উডস্ সম্মেলনের ফলশ্রুতিতে ১৯৪৪ সালে বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। এর নিয়ন্ত্রক সংস্থা ECOSOC। বিশ্বব্যাংক গ্রুপ উন্নয়নের প্রতিটি বড় ক্ষেত্রে কাজ করে। এটি বিস্তৃত আর্থিক পণ্য এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করে এবং দেশগুলিকে তাদের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলির উদ্ভাবনী জ্ঞান এবং সমাধানগুলি ভাগ করে নিতে এবং প্রয়োগ করতে সহায়তা করে। বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে বিশ্বব্যাংকের সদস্যপদ লাভ করে। সাধারণত বিশ্বব্যাংকের প্রধান হন একজন আমেরিকান।
বিশ্বব্যাংক গ্রুপ পাঁচটি সংস্থা নিয়ে গঠিত। যথা:
International Bank for Reconstruction and Development (IBRD): এটি বিশ্বব্যাংকের মূল কার্যক্রম পরিচালনা করে। এটি মধ্যম আয়ের এবং ঋণযোগ্য নিম্ন আয়ের দেশগুলির সরকারকে ঋণ দেয়। এটি তুলনামূলক কঠোর নীতির ভিত্তিতে ঋণ প্রদান করে। এজন্য একে IDA এর বিপরীত সংগঠন বলা হয়।
International Development Association (IDA): সুদ-মুক্ত ঋণ প্রদান করে এবং সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর সরকারকে অনুদান দেয়। তুলনামূলক সহজ শর্তের ঋণ প্রদান করে।
উল্লেখ্য বিশ্বব্যাংক গ্রুপে পাঁচটি সংস্থা থাকলেও শুধু IBRD ও IDA কে একত্রে বিশ্বব্যাংক বলে।
International Finance Corporation (IFC): বেসরকারী খাতকে প্রাধান্য দেওয়া সর্ববৃহৎ বৈশ্বিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান। এটি ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করে। উন্নয়নশীল দেশগুলিকে বিনিয়োগে অর্থায়ন, আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজারে পুঁজি সংগ্রহ এবং ব্যবসা ও সরকারকে উপদেষ্টা পরিষেবা প্রদানের মাধ্যমে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করে।
Multilateral Investment Guarantee Agency (MIGA): অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য হ্রাস এবং জনগণের জীবনকে উন্নত করতে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের প্রচার করুন। বিনিয়োগকারী এবং ঋণদাতাদের রাজনৈতিক ঝুঁকি বীমা (গ্যারান্টি) প্রদানের মাধ্যমে তারা এটি করে।
International Centre for Settlement of Investment Disputes (ICSID): বিনিয়োগ বিরোধ সমঝোতা এবং সালিশের জন্য আন্তর্জাতিক ব্যাবসা-বাণিজ্যিকে সহায়তা প্রদান করে।
অন্যান্য –
ITU | International Telecommunication Union প্রতিষ্ঠা কাল: ১৮৬৫ (প্যারিস) সদর দপ্তর: জেনেভা (সুইজারল্যান্ড) বর্তমান সদস্য: ১৯৩টি |
ICAO | International Civil Aviation Organization (ICAO) বিশ্ব বেসামরিক বিমান সংস্থা। সদর দপ্তর: মন্ট্রিল (কানাডা)। |
IFAD | Food and Agricultural Organization প্রতিষ্ঠা: ১৯৪৫ সদর দপ্তর: রোম (ইতালি) বর্তমান সদস্য: ১৯৭টি |
FAO | Food & Agriculture Organization জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা। প্রতিষ্ঠা: ১৯৪৫ সদর দপ্তর: রোম (ইতালি) |
WHO | World Health Organization জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থা। বিশ্বজুড়ে এর ৬টি আঞ্চলিক অফিস রয়েছে। প্রতিষ্ঠা কাল: ৭ এপ্রিল,১৯৪৭ সদর দপ্তর: জেনেভা (সুইজারল্যান্ড) বর্তমান সদস্য: ১৯৪ টি |
WMO | World Meteological Organization বৈশ্বিক আবহাওয়া বিষয়ক সংস্থা সদর দপ্তর: জেনেভা (সুইজারল্যান্ড) |
WIPO | World Intellectual Property Organization জাতিসংঘের মেধা সংরক্ষণ সংস্থা সদর দপ্তর: জেনেভা (সুইজারল্যান্ড) |
UNWTO | United Nations World Tourism Organization |
UNIDO | United Nations Industrial Development Organization দারিদ্র্য হ্রাস, অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্বায়ন এবং পরিবেশগত স্থায়িত্বের জন্য শিল্প উন্নয়নকে উৎসাহিত করে। প্রতিষ্ঠা: ১৯৬৬ |
তহবিল ও প্রোগ্রাম
UNDP | United Nations Development Programme জাতিসংঘের উন্নয়ন বিষয়ক প্রোগ্রাম। এটি মানব উন্নয়ন সূচক বা Human Development Index প্রকাশ করে। প্রতিষ্ঠা: ১৯৬৫ সদর দপ্তর: নিউইয়র্ক (যুক্তরাষ্ট্র) |
UNEP | United Nations Environment Programme জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক প্রোগ্রাম। প্রতিষ্ঠা: ১৯৭২ সদর দপ্তর: ভিয়েনা (অস্ট্রিয়া) |
UNFPA | United Nations Population Fund জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিষয়ক তহবিল। প্রতিষ্ঠা: ১৯৬৯ সদর দপ্তর: নিউইয়র্ক (যুক্তরাষ্ট্র) |
UNICEF | United Nations Children’s Fund জাতিসংঘের শিশু তহবিল। প্রতিষ্ঠা: ১৯৪৬ সদর দপ্তর: নিউইয়র্ক (যুক্তরাষ্ট্র) |
UNCTAD |
অন্যান্য
UNAIDS | United Nations Programme on HIV/AIDS |
UNRWA | United Nations Relief and Works Agency for Palestine Refugees in the Near East |
UNHCR | United Nations High Commissioner for Refugees |
UNU | United Nations University |
UN WOMEN | |
UNCTAD | United Nations Conference on Trade and Development বিশ্ব বাণিজ্যে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর স্বার্থ প্রসার বিষয়ক কনফারেন্স। প্রতিষ্ঠা: ১৯৬৪ সদর দপ্তর: জেনেভা (সুইজারল্যান্ড) |
সম্পর্কযুক্ত সংস্থা
CTBTO | Comprehensive Nuclear-Test-Ban Treaty Organization |
UNFCCC | United Nations Framework Convention on Climate Change |
IAEA | International Atomic Energy Agency প্রতিষ্ঠা: ১৯৫৭ সদর দপ্তর: ভিয়েনা (অস্ট্রিয়া) |
WTO | World Trade Organization সরকারগুলির বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করার একটি ফোরাম। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে সদস্য সরকারগুলি একে অপরের সাথে তাদের পারস্পারিক বাণিজ্য সমস্যাগুলি সমাধান করার চেষ্টা করে৷ প্রতিষ্ঠা: ১৯৯৫ সদর দপ্তর: জেনেভা (সুইজারল্যান্ড) |
IOM | International Organization for Migration |
ITC | International Trade Centre ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যাবসাগুলোকে আন্তর্জাতিকীকরণে সহযোগী একমাত্র প্রতিষ্ঠান। এটি World Trade Organization এবং the United Nations এর joint agency. প্রতিষ্ঠা: ১৯৬৪ |
OPCW | Organization for the Prohibition of Chemical Weapons রাসায়নিক অস্ত্র কনভেনশনের বাস্তবায়নকারী সংস্থা। |