ভাষাতত্ত্ববিদ
জন্ম: ১৮৮৫, চব্বিশ পরগোনা; মৃত্যু: ১৯৬৯, ঢাকা
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন
, বিশিষ্ট শিক্ষক ও দার্শনিক। বাংলা সাহিত্য সম্পর্কিত গবেষণার জন্য তাকে ‘জ্ঞানতাপস’ অভিধায় ভূষিত করা হয়। এছাড়া ভাষা বিষয়ক পাণ্ডিত্যের জন্য তাকে ‘চলিষ্ণু অভিধান’ বলা হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা বিতর্কে তিনি বাংলার পক্ষে জোড়ালো অবস্থান নিয়েছিলেন। আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন আহমদ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ‘দৈনিক আজাদ’ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে এর কঠোর প্রতিবাদ জানান।পত্রিকা সম্পাদনা: আঙুর, দি পিস, বঙ্গভূমিক, তকবীর, আল-এসলাম (সহ-সম্পাদক)
কর্মজীবন
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ যশোর জেলা স্কুলের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯১৫ সালে তিনি আইন ব্যবসায়ে নিযুক্ত হন। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদান করেন। এখানে শিক্ষাদান কালে তিনি বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে মৌলিক গবেষণা করেন এবং ১৯২৫ সালে প্রমাণ করেন যে, গৌড়ী বা মাগধী প্রাকৃত থেকে বাংলা ভাষার উৎপত্তি হয়েছে। ১৯৪৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি বগুড়া আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৫-৫৮ সাল পর্যন্ত তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম প্রফেসর ইমেরিটাস নিযু্ক্ত হন।
উপাধি/পদক
- ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ‘নাইট অব দ্য অর্ডার অব আর্টস অ্যান্ড লেটার্স’
- ঢাকা সংস্কৃত পরিষদ কর্তৃক ‘বিদ্যাবাচস্পতি’
- ‘প্রাইড অব পারফরম্যান্স পদক’ (১৯৫৮)
- মরণোত্তর ‘হেলাল ই ইমতিয়াজ খেতাব’
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মরণোত্তর ‘ডি লিট’
- ১৯৮০ সালে মরণোত্তর ‘স্বাধীনতা পদক’
উল্লেখযোগ্য অবদান
- ১৯৬৩ সালে ‘পূর্ব পাকিস্তানি ভাষার আদর্শ অভিধান’ এর কাজ সম্পন্ন করেন।
- ১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমি কর্তৃক ‘বাংলা পঞ্জিকা তারিখ বিন্যাস’ কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
- ১৯৬৪ সালে বাংলা একাডেমির ইসলামি বিশ্বকোষ প্রকল্পের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
- প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ ও অধ্যাপক আবুল হোসেনের সাথে মিরপুর বাংলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
গবেষণামূলক গ্রন্থ
বাংলা আঞ্চলিক ভাষার অভিধান (১৯৬৫)
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উপভাষার একটি সংকলন গ্রন্থ। বাংলা ভাষার বিভিন্ন আঞ্চলিক রূপ নিয়ে প্রথম গবেষণার পরিচয় পাওয়া যায় গ্রিয়ারসনের The Linguistic Survey of India (১৯০৩-১৯২৮) নামক গ্রন্থে। এর প্রথম খন্ডে বাংলাদেশের উপভাষা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। বাংলা আঞ্চলিক ভাষার অভিধানটি মূলত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যবহূত শব্দাবলির সংগ্রহ।
অন্যান্য গবেষণাগ্রন্থ
- ভাষা ও সাহিত্য
- বাংলা ব্যাকরণ
- বাংলা সাহিত্যের কথা
- বৌদ্ধ মর্মবাদীর গান
- বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত (১৯৬৫)
প্রবন্ধ
- ইকবাল
- Essay on Islam
- বাংলা আদব কি তারিখ
অন্যান্য রচনা
- অনুবাদ গ্রন্থ: রুবাইয়াত-ই-ওমর খ্যায়াম, বাণী শিক্ওয়াহ ও জওয়াব-ই-শিক্ওয়াহ
- সম্পাদিত গ্রন্থ: পদ্মাবতী
- গল্পগ্রন্থ: রকমারি
বিখ্যাত উক্তি
আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙ্গালী।
দেশে একটি রাষ্ট্রভাষা হলে সে সম্মান বাংলার, দুটি রাষ্ট্রভাষা হলে বাংলার সঙ্গে উর্দুর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।
যে জাতি তার ভাষাকে শ্রদ্ধা করে না, সে জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়।