গাঁয়ের ছেলে রূপাই। সে বলবান বীর, সেরা লাঠিয়াল। রূপাইয়ের সঙ্গে পাশের গ্রামের মেয়ে সাজুর প্রেম, অতঃপর বিয়ে হয়। একদিন হঠাৎ খবর আসে, বনগেঁয়োরা তাদের গাজনা-চরের পাকা ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে। রূপাই ছুটে যায় লড়কি-সড়কি হাতে বনগেঁয়োদের প্রতিরোধ করতে। সেখানে লড়াই হয় (স্থানীয় ভাষায় কাইজ্জা), কয়েকটি খুন হয় এবং ফলশ্রুতিতে রূপাই ফেরারি হয়ে যায়। সাজু রোজ একটা পিদিম বা মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে বসে থাকে রূপাইয়ের পথ চেয়ে। একদিন গভীর রাতে রূপাই এসে দাঁড়ায় সাজুর সামনে। সাজু রূপাইকে যেতে বাধা দিলেও রূপাইয়ের না যেয়ে উপায় থাকে না। কারণ ধরা পড়লে, রূপাইয়ের হয় ফাঁসি অথবা কালাপানি হবে। ইহলোকে রূপাইয়ের সঙ্গে সাজুর এই ছিল শেষ দেখা। বিরহীনি সাজু অতীত স্মৃতি একটি কাঁথার ওপর সুঁই-সুতা দিয়ে ফুটিয়ে তুলতে থাকে। যেদিন সেই কাঁথা বোনা শেষ হয়ে গেলো, সাজু তার মায়ের কাছে দিয়ে বলে. “‘মা, আমার মরণের পরে যেখানে কবর দেওয়া হবে, সেই কবরের ওপরে যেন এই নকশী কাঁথাখানা বিছিয়ে দেওয়া হয়। আর যদি কোনোদিন রূপাই এসে আমার খোঁজ করে, তাকে বোলো, তোমার আশায় সাজু ওই কবরের নিচে আছে”। বহুদিন পরে গাঁয়ের কৃষকেরা গভীর রাতে বেদনার্ত এক বাঁশির সুর শুনতে পায়। ভোরে সবাই এসে দেখে, সাজুর কবরের পাশে এক ভিনদেশি লোক মরে পড়ে আছে।
তথ্য: নকশী কাঁথার মাঠ (আখ্যানকাব্য, ১৯২৯)। রচয়িতা: জসীমউদ্দিন।
আরও পোস্ট
আরও দেখুন: সংক্ষিপ্ত কাহিনী