বাংলার গ্রামে দুই ভাইবোন অপু আর দুর্গার বেড়ে ওঠা এবং তাদের পরিবারের গল্প এ উপন্যাসের মূল উপজীব্য। ইন্দির ঠাকুরনের বিয়ে দেয়া হয় অল্পবয়সে। কিন্তু তার স্বামী বেশি যৌতুকের লোভে অন্যত্র বিয়ে করে এবং আর কখনও ফিরে আসে না। ফলে আয়হীন ইন্দির ঠাকুরনের আশ্রয় হয় পিতৃগৃহে। পিতা ও ভাইয়ের মৃত্যুর পর দূরসম্পর্কের আত্মীয় হরিহরের বাড়িতে স্থান হয় তার।
হরিহর রায়, নিশিন্দিপুর গ্রামের বাসিন্দা। খুব ভাল ব্রাহ্মণ নন। তার বাড়িতে আশ্রিত বৃদ্ধা ইন্দিরা ঠাকুরণ। বৃদ্ধাকে বসবাসের জন্য একটি কুঁড়েঘর দেওয়া হয়। হরিহরের স্ত্রী সর্বজয়া বৃদ্ধা ইন্দিরাকে দেখতে পারে না। হরিহরের বাড়িতে ইন্দিরাকে প্রতিমুহূর্তে মনে করিয়ে দেয়া হত সে একজন আশ্রিতা, করুণার পাত্রী ছাড়া আর কিছুই না। তবে, সর্বজয়ার ছয় বছরের মেয়ে দুর্গা, ইন্দিরা ঠাকুরকে খুব ভালবাসে এবং রূপকথা শোনার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা তার সাথে বসে থাকে।
ইন্দিরা প্রায়শই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়, কিন্তু দিন শেষে তার পথ এসে শেষ হয় হরিহরের বাড়িতেই। ঘটনাক্রমে একদিন তুচ্ছ কারণে সর্বজয়া বৃদ্ধা ইন্দিরাকে বাড়ি থেকে একেবারে বের করে দেয়। ফলে মর্মান্তিকভাবে ইন্দিরার জীবনের ইতি ঘটে, সাথে মৃত্যু হয় তার অসহায়ত্বেরও।
হরিহরের দুটি সন্তান; বড়মেয়ে দূর্গা ও ছোট ছেলে অপু। তাদের মধ্যের টক-মিষ্টি সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েছে উপন্যাসে। যেমন দূর্গা অপুকে মারে, কারণ সে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে চুরি করে আম খাওয়ার ঘটনা বলে দেয়। এই কারণে তাকে প্রতিবেশীর কথাও শুনতে হয়। রাগের মাথায় মা সর্বজায়া ওকে বকাবকি করেন। উপন্যাসের এক পর্যায়ে ম্যালেরিয়া জ্বরে দুর্গা মারা যায়। দুর্গার হঠাৎ মৃত্যু পুরো পরিবারকে শোকে ডুবিয়ে দেয় এবং ছোট ভাই অপুকে একা করে দেয়। দুর্গার মৃত্যুর পর তারা গ্রাম ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়। সেখানে এক পর্যায়ে জ্বরে হরিহরও মারা যায়।
উপন্যাসের শেষ অংশে চিরাচরিত বাংলার বড়লোক-গরীবের বৈষম্যের কথা তুলে ধরা হয়েছে। ব্রাক্ষ্মণ নারী হয়েও সর্বজয়ার করুণ অবস্থা হয়, যখন অর্থের জন্য তাকে কাজের লোকের কাজ করতে হয়। তার চোখের অশ্রু মোছার জন্যও কেউ থাকে না। সবাই তার কষ্টের সুযোগ নিতে চায়। অবশেষে অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সর্বজয়া ছেলে অপুকে নিয়ে তার নিজ গ্রাম নিশ্চিন্দিপুরের পথে রওনা হয়। কিন্তু সে তার সঠিক পথ খুঁজে পায় না।
অর্থ্যাৎ অপু-দুর্গার একসাথে বেড়ে ওঠা, চঞ্চল শৈশব, দুর্গার মৃত্যু, অপুর সপরিবারে কাশীযাত্রা এবং তাদের কাশীজীবন, হরিহরের মৃত্যু, সর্বজয়ার কাজের জন্য কাশীত্যাগ এবং পরিশেষে নিশ্চিন্দিপুরে ফিরে আসার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে উপন্যাসটিতে।
উপন্যাস, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়