ফজল, জরিনার প্রাক্তন এবং রূপজানের বর্তমান স্বামী। ফজলের বাবা এরফান মাতবর। জঙ্গুরুল্লা হল এরফান-ফজলদের প্রধান শক্র। দাঙ্গাবাজ জঙ্গুরুল্লা চর দখলের কাজে ওস্তাদ।
লাটাবানিয়া চরের দখল নিয়ে প্রচণ্ড বিবাদ হয়। এতে পাঁচজন লোক মারা যায়। তারপর ধীরে ধীরে লাটাবানিয়ার নাম হয়ে যায় খুনের চর। মারামারিতে জয়ী এরফান মাতবর ও তার অনুগতরা চর দখল করে নেয়। তবে দুই মাস যেতে না যেতেই চেরাগ সর্দার তার লোকজন নিয়ে হঠাৎ এরফানদের আক্রমণ করে। এরফানের বড় ছেলে রশীদ নিহত হয়। এতে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। সরকার চর ক্রোক করে এবং থানা-পুলিশের ঝামেলা শুরু হয়। চেরাগ সর্দার চর দখল করে নিতে ব্যর্থ হয় এবং শেষে এরফান মাতবরই চরের জমি ফিরে পায়। কিন্তু বছর তিনেকের মধ্যে সেই চর পদ্মার গ্রাসে চলে যায়।
সরকারী খাতাপত্রে খুনের চরের মালিকানা আছে এরফান মাতবরের নামে। কাজেই ওই চর জেগে ওঠার পর এরফান ও তার লোকজন সেই জায়গার দখল নেয়। ইতোমধ্যে জঙ্গুরুল্লার আবির্ভাব ঘটে। ধনী কিন্তু লোভী ব্যক্তি জঙ্গুরুল্লা এক দুর্ধর্ষ দাঙ্গাবাজ। জমিদারের নায়েবের পেয়াদা থাকার সময় সে জমিজমা সংক্রান্ত নানা ফন্দি-ফিকির রপ্ত করেছিল। ইতোমধ্যে পদ্মার বুকে অল্প কিছু দিনের ব্যবধানে অনেকগুলো চর জেগে উঠলে জঙ্গুরুল্লার লোকজন তার কয়েকটা দখল করে নেয়। জমিদারের কাছারি থেকে অনুমতি এনে সেই জায়গাগুলোতে নিজেদের লোক বসিয়ে দেয়।
লোভী জঙ্গুরুল্লা এক সময় খুনের চরও ছিনিয়ে নেয়ার কৌশল আঁটে। সে ডাকাতির মিথ্যা অভিযোগে ফজলকে ফাঁসিয়ে দেয়। ফলে মারামারি ছাড়াই সে খুনের চর দখলে নিয়ে নেয়।
কারাবাস ও আরও নানা দুর্ভোগ শেষে ফজল ও তার সঙ্গীরা খুনের চর পুনর্দখলের পরিকল্পনা করে। প্রচণ্ড লড়াই হয় দুই দলের মধ্যে। জঙ্গুরুল্লার দল পালাতে বাধ্য হয়। ফজলরা আবার ফিরে পায় খুনের চর। এভাবে দখল-পুর্নদখলের অনিঃশেষ যুদ্ধ চলে ‘পদ্মার পলিদ্বীপ’-এ।
ফজল যখন জেলে, সেই সময় মতি ভাইয়ের সঙ্গে তার সাক্ষাত ঘটে। মতি একজন রাজনৈতিক কর্মী। ফজল তার কাছ থেকে উদারতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও মানবিকতার দীক্ষা পায়। ভিনদেশী শোষকদের (তারা শাসকও বটে) বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারে। উপলব্ধি করে নিজের ভেতরের সদর্থক পরিবর্তন। আর এসব কিছুই ঘটে চল্লিশের দশকের গোড়ার দিকে। ততদিনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঢেউ ভারতবর্ষ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
এদিকে দুঃখী নারী জরিনা ফজলের আশ্রয় পায়। কিন্তু বিরূপ পরিস্থিতি তাদের একত্রে থাকতে দেয় না। আবার ফজলের বর্তমান স্ত্রী রূপজানকে তার পিতা ও শ্বশুরের দ্বন্দ্বজনিত মনোমালিন্যের কারণে ফজলের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। রূপজান যখন স্বামী থেকে আলাদা সেই সময় জঙ্গুরুল্লা রূপজানকে বিয়ে করার জন্য এক পীর বাবাকে ব্যবহার করার চেষ্টা করে। কাহিনীর শেষ দিকে ফজল ছদ্মবেশে রূপজানকে তারই পিতৃগৃহ থেকে ডাকাতি করে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে। শেষ পর্যন্ত ফজল-রূপজান শান্তিপূর্ণ মিলনের পরিবেশ ফিরে পায়।
তথ্য: উপন্যাস। রচয়িতা: আবু ইসাহাক।
আরও পোস্ট
আরও দেখুন: সংক্ষিপ্ত কাহিনী