পিঙ্গল আকাশ (উপন্যাস)

Estimated Reading Time: 7 Minutes

উপন্যাসের নায়িকা মঞ্জু। মঞ্জুর বাবা মারা যাওয়ার পর তার মা সালেহা আরেকটি বিয়ে করেন। সেই ঘরে প্রথমে মঞ্জুর ঠাঁই না হলেও পরে তাকে ডেকে নেন মা। তবে ভালোবেসে নয় বরং তাকে নিয়ে আসা হয় ঘরের কাজ সামলানোর জন্য। বাকি পাঁচ ভাইবোনও মঞ্জুকে সেভাবেই দেখে। সাংসারিক কাজের চাপে স্কুল ত্যাগ করেতে হয় মঞ্জুকে, কিন্তু সৎ বাবার প্রথম পক্ষের সন্তান আনিসের পরামর্শে সে গোপনে ইংরেজি গল্পের বই পড়ত।

মঞ্জুর সৎ বাবার বাড়ীটি এক আশ্চর্য বাড়ী; যেন শহরের হােটেল। পাশাপাশি থাকছে সবাই, এক সঙ্গে বাস করছে, কিন্তু কেউ কাউকে যেন চেনে-জানে না। সংসারের প্রতি মায়ের উদাসীনতা এবং অনেকাংশে বাবার নিষ্ক্রিয়তায় পারিবারিক শৃঙ্খলা ভেঙে যায়। এই বিকারগ্রস্ত পারিবারিক পরিস্থিতিতে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তার মায়ের প্রেম মমতা-স্নেহের জগত থেকেও। এ সবই স্থান পায় মঞ্জুর ডায়েরির পাতায়।

সৎ মায়ের দায়বোধহীনতা এবং বাবার প্রতি অভিমান থেকে সংসারের প্রতিটি মানুষ আনিস, রাহুল, ছােট আপা প্রত্যেকেই পরস্পরের কাছ থেকে দূরে সরে যায়। মঞ্জুর বর্তমান বাবা বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে জমিদারী হারিয়েছেন। জমিজমার সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে তিনি নেমেছিলেন ব্যবসায়, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। মঞ্জুর মা সালেহা এক অদ্ভুত চরিত্র। তার মধ্যে মাতৃত্ব ও স্নেহের পরিবর্তে জেগে ওঠে বিকৃতি ও উন্মাদনা। বস্তুত সেই সংসারটিকে ঠেলে দেয় চূড়ান্ত সর্বনাশের দিকে। মঞ্জুর মধ্যে বিদ্রোহ থাকলেও নির্বিকার থাকতে হয় তাকে।

গােটা পরিবারটি তলিয়ে যেতে থাকে ধ্বংসের স্রোতে। অন্য পুরুষের সঙ্গে সালেহার সম্পর্কের ফলশ্রুতিতে আকস্মিক মৃত্যু ঘটে তার স্বামীর। মূলত সৎপিতার মৃত্যুর পরই শেকড়শূন্য হয়ে যায় মঞ্জু। এক নিরবলম্ব শূন্য জীবনে অবলম্বন প্রত্যাশায় সে মন প্রসারিত করেছিল আনিসের দিকে। কিন্তু এক সময় মঞ্জু অনুভব করেছে: ‘সবাইতাে আমার এই রক্তমাংসের শরীরটার দিকেই হাত বাড়িয়েছে। আমার এই আঠারাে বছরের বয়সটাকে অভিশপ্ত করে তুলতে চেয়েছে। কাকে আমি শ্রদ্ধা করবাে, কাকে আমার ভালাে লাগবে।’

প্রকৃতপক্ষে মা সালেহার কারণেই মঞ্জু ক্লেদপিচ্ছিলতার মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। দুঃসহ বেদনায় সমগ্র বিশ্বসংসারের বিরুদ্ধে মঞ্জুর অভিযােগ: ‘মা বাবাকে হত্যা করেছে আর আমাকে হত্যা করলাে এরা সবাই মিলে।’ বস্তুত মঞ্জুর এই যন্ত্রণা পারিবারিক পরিস্থিতির অসঙ্গতিজাত। স্বগত এই যন্ত্রনায় নিজের মনের সঙ্গে বােঝাপড়া চলে মঞ্জু।

উপন্যাস, শওকত আলী

Leave a Reply