রাশি
ভৌত জগতে যা কিছু পরিমাপ করা যায় তাকে রাশি বলে। যেমন: দৈর্ঘ্য, ভর ইত্যাদি পরিমাপ করা যায়, তাই এগুলোকে রাশি বলে। দিকের বিবেচনায় বিষ্ণু জগতের সকল রাশিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
- স্কেলার রাশি: যে রাশিকে শুধু মান দ্বারা প্রকাশ করা যায়।
- ভেক্টর রাশি: যে রাশিকে শুধু মান দ্বারা সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করা যায়, দিক নির্দেশের প্রয়োজন হয়।
স্কেলার রাশি | ভেক্টর রাশি |
---|---|
দ্রুতি, সময় | বেগ, ভরবেগ, সরণ, ত্বরণ, মন্দন |
কাজ, ক্ষমতা, শক্তি | বল, বলের ঘাত |
ভর | ওজন |
চৌম্বক বিভব, বৈদ্যুতিক বিভব, দীপনমাত্রা, দীপন ক্ষমতা, বিদ্যুৎ প্রবাহমাত্রা, রোধ, চার্জ | চৌম্বক ভ্রামক, চৌম্বক দৈর্ঘ্য, চৌম্বক প্রাবল্য, বিদ্যুতিক প্রাবল্য |
ঘনত্ব, তাপ, তাপমাত্রা, আয়তন, তরঙ্গদৈর্ঘ্য, কম্পাংক, বিস্তার, , জনসংখ্যা, প্রতিসরাঙ্ক, গলনাঙ্ক, স্ফুটনাংক, বিচ্যুতি ইত্যাদি। | পৃষ্ঠটান, সান্দ্রতা ইত্যাদি |
স্কেলার রাশি ও ভেক্টর রাশির মধ্যে পার্থক্য:
- শুধু মানের পরিবর্তনে স্কেলার রাশির পরিবর্তন হয়, কিন্তু মান বা দিক বা উভয়ের পরিবর্তনে ভেক্টর রাশির পরিবর্তন হয়।
- স্কেলার রাশির যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগ বীজগণিতের নিয়মানুসারে হয়। ভেক্টর রাশির ক্ষেত্রে তা হয় না।
কিছু রাশি-
- সরণ: পারিপার্শ্বিক এর সাপেক্ষে নির্দিষ্ট দিকে বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তনই সরণ।
- বেগ: সময়ের সাথে বস্তুর সরণের হারই বেগ।
- ত্বরণ: সময়ের সাথে বস্তুর অসম বেগের পরিবর্তনের (বৃদ্ধি) হার।
- মন্দন: সময়ের সাথে বস্তুর অসম বেগ পরিবর্তনের (হ্রাস) হার।
নিউটনের গতিসূত্র
প্রথম সূত্র: বাইরে থেকে কোন বস্তুর উপর বল প্রয়োগ না করলে, স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকবে এবং গতিশীল বস্তু চিরকাল সমবেগে সরলরেখায় বা সরল পথে চলতে থাকে।
সুতরাং, কোন বস্তুর উপর সার্বিক (total) বলের পরিমাণ শূন্য হলে, বস্তুর ভরকেন্দ্র হয় স্থির নয়তো সমবেগে গতিশীল থাকবে।
দ্বিতীয় সূত্র: কোন বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যে দিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তন সেদিকেই ঘটে।
অর্থাৎ কোনো বস্তুর ভর যদি অপরিবর্তিত থাকে,তবে বস্তুটির ওপর প্রযুুক্ত বাহ্যিক নেট বল বস্তুটির ভর ও ত্বরণের গুণফল হয়।
তৃতীয় সূত্র: প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে৷
বন্দুক থেকে গুলি ছুড়লে বন্দুক পিছনের দিকে যাওয়া, মাঝির নৌকা চালানো, মহাকাশযানের উৎক্ষেপ ইত্যাদি নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুযায়ি হয়।
ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র
একাধিক বস্তুর মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ভিন্ন অন্য কোনো বল ক্রিয়া না করলে যে কোনো একদিকে তাদের মোট ভরবেগের কোনো পরিবর্তন ঘটে না, অর্থাৎ ভরবেগ সংরক্ষিত থাকে। যেমন: নৌকা থেকে লাফ দিলে নৌকা পিছনে সরে যায় যাতে ভরবেগ সংরক্ষিত হয়।
জড়তা
বস্তু যে অবস্থায় আছে চিরকাল সে অবস্থায় থাকার প্রবণতাকে জড়তা বলে। বস্তুর ভর হচ্ছে জড়তার পরিমাপ। অর্থ্যাৎ বস্তুর জড়তা কত হবে তা তার ভরের উপর নির্ভর করে। ভারী বস্তুর জড়তা বেশি এবং তুলনামূলক হালকা বস্তুর জড়তা কম হয়।
উদাহরণ: স্থির অবস্থা থেকে বাস হঠাৎ চলতে শুরু করলে যাত্রীরা পেছনে হেলে পড়ে (যদি যাত্রির শরীরের উপরের অংশে চেয়ারের সাথে স্পর্শ করে না থাকে) জড়তার কারণে। আণুরুপভাবে চলন্ত বাস ব্রেক করলে যাত্রীরা সামনে হেলে পড়ে।
বল
বল একটি বাহ্যিক কারণ যা বস্তুর অবস্থার (স্থিতিশীল বা গতিশীল) পরিবর্তন করে।
বল = ভর \times ত্বরণ
অর্থ্যাৎ ১ কেজি ভর ৯.৮ নিউটনের সমান। বিভিন্ন প্রকার বল-
- কেন্দ্রমুখী বল: বৃত্তাকার পথে ঘূর্ণনশীল বস্তুর উপরে ঔ বৃত্তের কেন্দ্র অভিমুখে ক্রিয়াশীল বল। বাঁকা পথে গাড়ী উল্টে যায় এই বলের অভাবে।
- কেন্দ্রবিমুখী বল: বৃত্তাকার পথে ঘূর্ণনশীল বস্তুর উপরে ঔ বৃত্তের কেন্দ্রের বিপরীত অভিমুখে ক্রিয়াশীল বল। বাঁকা পথে গাড়ী উল্টে যায় এই বলের প্রভাবে।
- ঘর্ষণ বল: দুটি বস্তু পরস্পরের সংস্পর্শে থেকে যদি একের উপর দিয়ে অপরটি চলতে চেষ্টা করে তাহলে বস্তুদ্বয়ে স্পর্শতলে যে বাধার উৎপত্তি হয় তাকে ঘর্ষণ বল বলে। এ বল না থাকলে আমরা হাটতে পারতাম না বা দড়িতে গিড়া দওয়া যেত না। আবার এ বলের প্রভাবে যন্ত্র ক্রমশ ক্ষয় হয়ে যান্ত্রিক দক্ষতা কমে যায়।