বাংলাদেশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১

Estimated Reading Time: 34 Minutes

১৯৪৭: দেশভাগ

৩রা জুন, ১৯৪৭: ভারতে ব্রিটেনের সর্বশেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের নেতাদের সাথে বৈঠকে দেশভাগ সংক্রান্ত ব্রিটিশ সরকারের পরিকল্পনা সম্বলিত ‘হোয়াইট পেপার’ বা ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশ করেন। এতে ভারতবর্ষ বিভক্তির রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছিল। ওই বৈঠকে সব দলের নেতৃবৃন্দ পরিকল্পনাটি মেনে নেন।
১৫ ই আগস্ট, ১৯৪৭: দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দুইটি পৃথক রাষ্ট্র ভারত এবং পাকিস্তান গঠন করা হয়।

১৯৪৭-১৯৫২/১৯৫৬: ভাষা আন্দোলন

১৮৩৫ সাল থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে সরকারি ভাষা হিসেবে ইংরেজী ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর রাষ্ট্রভাষা কি হবে এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ চেয়েছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তোলা হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এ দাবিকে শুরু থেকেই সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে। ফলে বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদার দাবিতে যে গণআন্দোলন সংগঠিত হয় তাই ভাষা আন্দোলন। বিস্তারিত

১৯৪৮: ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা

০৪ জানুয়ারি, ১৯৪৮ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের অ্যাসেম্বলি হলে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫৫ সালে মূল নাম থেকে মুসলিম অংশটি বাদ দেয়া হয়েছিল।

১৯৪৯: আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা

২৩ জুন, ১৯৪৯ ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে অনুষ্ঠিত এক সভায় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা ভাসানীর প্রস্তাব অনুযায়ী দলের নামকরণ করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ (আঞ্চলিক শাখা)। পুরো পাকিস্তানের ক্ষেত্রে নাম রাখা হয় ‘নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ যার সভাপতি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। তখনকার তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরবর্তীতে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর দলের নাম পরিবর্তন করে “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ” রাখা হয়।

১৯৫৪: প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন ও যুক্তফ্রন্ট

১৯৫৪ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রাদেশিক নির্বাচনে মুসলিক লীগকে মোকাবিলার জন্য ৪টি রাজনৈতিক দল ‘যুক্তফ্রন্ট’ নামে জোট গঠন করে। প্রধান তিন নেতা ছিলেন মওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। নির্বাচনে পূর্ববঙ্গে যুক্তফ্রন্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করে। বিস্তারিত

১৯৫৫: বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা

ভাষা আন্দোলনের অন্যতম দাবি ছিল বাংলা ভাষার প্রসার ও গবেষণার জন্য স্বতন্ত্র একাডেমি স্থাপন করা। ১৯৫৫ সালের ৩রা ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা একাডেমী যাত্রা শুরু করে।

১৯৫৬: পাকিস্তানের প্রথম শাসনতন্ত্র ও কোয়ালিশন সরকার

১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম শাসনতন্ত্র প্রবর্তিত হয়। এর মাধ্যমে পাকিস্তান একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং পাকিস্তানের দুটি অংশের নাম “পূর্ব পাকিস্তান” ও “পশ্চিম পাকিস্তান” করা হয়।

১৯৫৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কোয়ালিশন সরকার গঠিত হয়। এ সরকার পাকিস্তানের ক্ষমতায় ছিল মাত্র ১৩ মাস (১২ সেপ্টেম্বর ১৯৫৬- ১১ অক্টোবর ১৯৫৭)। শেখ মুজিবুর রহমান এ সরকারে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।

১৯৫৭: কাগমারী সম্মেলন

৬-১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৭ টাঙ্গাইল জেলার সন্তোষে আওয়ামী লীগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ত্ব করেন মওলানা ভাসানী। উক্ত সম্মেলনে ভাসানী বলেন, “যদি পূর্ব পাকিস্তানে শোষণ অব্যাহত থাকে তবে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানকে “আসসালামু আলাইকুম ” জানাতে বাধ্য হবেন।”

১৯৫৮: সামরিক শাসন জারি

১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি ইস্কান্দার মির্জা পাকিস্তানে প্রথম সামরিক শাসন জারি করেন এবং প্রধান সেনাপতি আইয়ুব খানকে প্রধান সামরিক কর্মকর্তা নিয়োগ করেন। পরবর্তীতে ২৭ অক্টোবর ইস্কান্দার মির্জাকে সরিয়ে আইয়ুব খান ক্ষমতা দখল করেন।

১৯৬২: শিক্ষা আন্দোলন, নতুন সংবিধান ও সামরিক আইন প্রত্যাহার

১৯৬০ সালের প্রথম দিকে শরিফ শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এতে শিক্ষা বিষয়ে যেসব প্রস্তাবনা ছিল তা প্রকারান্তরে শিক্ষা সংকোচনের পক্ষে। প্রস্তাবিত প্রতিবেদনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে ছাত্র বেতন বর্ধিত করার প্রস্তাব ছিল। উচ্চশিক্ষা ধনিকশ্রেণীর জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এজন্য পাস নম্বর ধরা হয় শতকরা ৫০, দ্বিতীয় বিভাগ শতকরা ৬০ এবং প্রথম বিভাগ শতকরা ৭০ নম্বর। এই কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসনের পরিবর্তে পূর্ণ সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, ছাত্র-শিক্ষকদের কার্যকলাপের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখার প্রস্তাব করে। শিক্ষকদের কঠোর পরিশ্রম করাতে ১৫ ঘণ্টা কাজের বিধান রাখা হয়েছিল। রিপোর্টের শেষ পর্যায়ে বর্ণমালা সংস্কারেরও প্রস্তাব ছিল।

১৯৬২ সালে কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন শুরু হলে এ বৈষম্যমূলক শিক্ষানীতি প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন শুরু করে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। ১৪৪ ধারার মধ্যে ১৭ই সেপ্টেম্বর পূর্বপাকিস্তানে দেশব্যাপী হরতাল আহ্বান করা হয়। সেদিন ঢাকায় হাইকোর্টের সামনে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে নিহত হন ওয়াজিউল্লাহ, গোলাম মোস্তফা এবং বাবুল। উল্লেখ্য ১৭ই সেপ্টেম্বর জাতীয় শিক্ষা দিবস।

আইয়ুব খান ১৯৫৬ সালে প্রণিত সংবিধান বাতিল করে ১ মার্চ নতুন সংবিধান ঘোষণা করেন।

৮ জুন সামরিক আইন প্রত্যাহার করা হয়।

১৯৬৬: ছয় দফা আন্দোলন

১৯৬৬ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাঙালিরা সমান নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। শুরু থেকেই পূর্ব পাকিস্তানীদের ওপর পশ্চিম অংশের একধরনের ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ কায়েম হয়। ছয় দফার দাবির মধ্যে দিয়ে বাঙালী জাতি মুক্তির পথ দেখতে পায়। ‌একে তাই বাঙালী জাতির মুক্তির সনদ বলা হয়। কিন্তু তখন ছয় দফা গৃহীত হয়নি। বিস্তারিত

১৯৬৮: আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা

রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে “আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা” নামক মামলাটি দায়ের করা হয়। এ মামলার আনুষ্ঠানিক নাম ছিল “রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য”। মামলায় ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন মামলার প্রধান আসামি। মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তারা ভারত সরকারের সহায়তায় সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। ভারতের ত্রিপুরার আগরতলা শহরে ভারতীয় পক্ষ ও আসামি পক্ষের মধ্যে এ ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে মামলায় উল্লেখ থাকায় একে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বলা হয়। মামলার প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটিশ আইনজীবী ও পার্লামেন্ট সদস্য টমাস উইলিয়ম শেখ মুজিবের পক্ষে ট্রাইব্যুনাল গঠন সংক্রান্ত বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন পেশ করেন।

১৯৬৯: আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান

সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এবং মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবসহ সকল বন্দির মুক্তির দাবিতে গণআন্দোলন গড়ে তোলেন। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা সেনানিবাসে মামলার ১৭নং আসামী সার্জেন্ট জহুরুল হককে গুলি করে হত্যা করা হয়। ফলে আন্দোলন আরও তীব্র আকার ধারণ করে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের তীব্র আন্দোলনের মুখে পাকিস্তান সরকার ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মামলাটি প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। শেখ মুজিবসহ সকল বন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া হয়। পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এক বিশাল জনসভায় মামলায় অভিযুক্তদের গণসম্বর্ধনা দেয়া হয় এবং শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। উপাধি ঘোষণা দিয়েছিলেন তোফায়েল আহমেদ।

১৯৬৯ সালের শুরুতে পূর্ব-বাংলার স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে ওঠে। আন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। পুলিশের গুলিতে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় ছাত্র আসাদুজ্জামান আসাদ মৃত্যুবরণ করেন। সহযোদ্ধারা আসাদের রক্তমাখা শার্ট নিয়ে মিছিল করে। পরে শেরে বাংলা নগর ও মোহাম্মদপুরের সংযোগ স্থলে আইয়ুব গেটের নাম পরিবর্তন করে আসাদগেট নামকরণ করা হয়। বিস্তারিত

১৯৭০: ঘূর্ণিঝড় ও সাধারণ নির্বাচন

১২ নভেম্বর, ইতিহাসের অন্যতম প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ভোলার সাইক্লোনকে মোটেও গুরুত্ব দেননি, আর বিষয়টি এ অঞ্চলের মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলেছিল, যা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয় ত্বরান্বিত করেছিল।

৭ ডিসেম্বর তৎকালীন অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রথম এবং শেষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যাতে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের ৩১৩ টি আসনের মধ্য ১৬৭ লাভ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এতে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় আওয়ামী লীগের আসার কথা ছিল।

১৯৭১: জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত, পতাকা উত্তলোন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও স্বধীনতা সংগ্রামের সূচনা

১ মার্চ পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান অনির্দিষ্টকালের জন্য জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন।

২রা মার্চ কারফিউ ভেঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে আয়োজিত ছাত্র-জনতার বিশাল এক সমাবেশে তৎকালীন ডাকসু ভিপি আসম আব্দুর রব ও ডাকসু নেতারা উত্তোলন করেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা।

তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে শেখ মুজিবুর রহমান প্রায় ১৮ মিনিট ব্যাপী ভাষণ দেন। ভাষণে সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলেও, সেখানেই শেখ মুজিব বলেছিলেন, “এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।

২৫ মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর গণহত্যার শুরু হয়েছিল ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে। ওই রাতে হামলার সামরিক নাম ছিল অপারেশন সার্চলাইট। সেই রাতেই গ্রেপ্তার করা হয় শেখ মুজিবুর রহমানকে।
ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস বা ইপিআর সদর দফতর, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, তেজগাঁও বিমানবন্দর, মোহম্মদপুর, রায়েরবাজার, আজিমপুর, জগন্নাথ হল ও ইকবাল হল (এখনকার সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) সহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর নির্বিচার হামলা চালায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।

২৬শে মার্চ সন্ধ্যা ৭.৪০ মিনিটে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে স্থাপিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ হান্নান শেখ মুজিবুর রহমানের লিখিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন। এর আগে দুপুর বেলাতেও তিনি সেটি পাকিস্তান রেডিওর চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে পাঠ করেছিলেন।

পরদিন ২৭শে মার্চ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে রাতের অধিবেশনে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর জিয়াউর রহমান শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে লিখিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন।

আরও দেখুন – মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: ১৯৭১

গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

একটি রাষ্ট্রে একাধিক প্রদেশ থাকলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রত্যেক প্রদেশে আলাদা সরকার থাকে। এসব সরকারের হাতে বেশ কিছু ক্ষমতা থাকে যাতে কেন্দ্রীয় সরকার হস্তক্ষেপ করে না বা করতে পারে না। প্রাদেশিক নির্বাচনের মাধ্যমে এসব সরকারে গঠিত হয়। যেমন: ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলায় প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্টিত হয়। আবার রাষ্ট্রের কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের জন্য সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এধরণের সরকারের হাতে সাধারণত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা থাকে। যেমন: ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৬০-এর দশকে জেনারেল আইয়ুব খানের শাসনামলে প্রবর্তিত একটি স্থানীয় সরকার পদ্ধতি। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আইয়ুব খান গণতন্ত্রকে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৫৯ সালে মৌলিক গণতন্ত্র আদেশ জারি করেন। অবশ্য পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোর একে জেনারেল আইয়ুব খান এবং তাঁর সহযোগী কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর ক্ষমতা কুক্ষিগত করার একটি সুনিপূণ কৌশল হিসেবেই গণ্য করত।

প্রারম্ভিক পর্যায়ে মৌলিক গণতন্ত্র ছিল একটি পাঁচ স্তরবিশিষ্ট ব্যবস্থা। স্তরগুলো ছিল-

  1. ইউনিয়ন পরিষদ (পল্লী এলাকায়) এবং শহর ও ইউনিয়ন কমিটি (পৌর এলাকায়),
  2. থানা পরিষদ (পূর্ব পাকিস্তানে), তহশিল পরিষদ (পশ্চিম পাকিস্তানে),
  3. জেলা পরিষদ,
  4. বিভাগীয় পরিষদ এবং
  5. প্রাদেশিক উন্নয়ন উপদেষ্টা পরিষদ।

এ পদ্ধতিতে ইউনিয়ন পরিষদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। চেয়ারম্যান ও সদস্যরা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হতেন। নির্বাচিত সদস্যগণকে বলা হত মৌলিক গণতন্ত্রী। তারা দেশের প্রেসিডেন্ট, জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের নির্বাচিত করতেন। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রায় ৭৬০০ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ছিলেন ৮০,০০০ মৌলিক গণতন্ত্রী। মৌলিক গণতন্ত্রীদের ভোটে ১৯৬০ ও ১৯৬৫ সারে জাতীয় পরিষদ নির্বাচন হয়।

আওয়ামী লীগ পায় ১৬৭ টি আসন ও পিপিপি পায় ৮৮ টি আসন।

Leave a Reply