১২০১ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ হিসেবে ধরা হয়। মধ্যযুগের সাহিত্য ছিল ধর্মকেন্দ্রিক। অর্থাৎ ধর্মীয় আবেশে এযুগে সাহিত্য রচিত হত। ফলে এ যুগের সাহিত্যে দেব-দেবীর প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া এযুগের সাহিত্য ছিল প্রধানত পদ্য ও গীতি নির্ভর। গদ্য সাহিত্য তখনও প্রসার লাভ করে নি বা পরিচিতি পায় নি।
১২০৪ সালে ইখতিয়ার উদ্দীন মুহম্মদ বখতিয়ার খলজি কতৃক নদীয়া বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলায় মুসলিম শাসনের গোড়াপত্তন হয়। উল্লেখযোগ্য কোন সাহিত্য রচিত না হওয়ায় মধ্যযুগের ১২০১-১৩৫০ সাল পর্যন্ত সময়কে অনেক পণ্ডিত বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। রামাই পণ্ডিতের ‘শূন্যপুরাণ’ এবং হলায়ুধ মিশ্রের “সেক শুভোদয়া” ছাড়া এসময়কালের তেমন কোন প্রধান সাহিত্যকর্ম পাওয়া যায় নি।
মধ্যযুগের কাব্যের প্রধান ৪টি ধারা লক্ষ্য করা যায়। যথা: মঙ্গলকাব্য, বৈষ্ণব পদাবলি, রোমাঞ্চধর্মী প্রণয়োখ্যান ও অনুবাদ সাহিত্য।
মধ্যযুগের শ্রেণীবিভাগ
চৈতন্যদেবের (বা চৈতন্য মহাপ্রভু) জীবনীর ভিত্তিতে মধ্যযুগকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
- প্রাকচৈতন্য যুগ (১২০১-১৫০০ খ্রি.)
- চৈতন্য যুগ ( ১৫০১ – ১৬০০ খ্রি.)
- চৈতন্য পরবর্তী যুগ (১৬০১ – ১৮০০ খ্রি.)
মুসলিম শাসনামলের ভিত্তিতে মধ্যযুগকে ৩ অংশে ভাগ করা যায়। যথা-
- তুর্কি যুগ (১২০১-১৩৫০ খ্রি.)
- সুলতানি যুগ (১৩৫১-১৫৭৫ খ্রি.)
- মোঘল যুগ (১৫৭৬-১৭৫৭ খ্রি.)
তবে সাধারণভাবে মধ্যযুগকে নিম্নোক্ত তিন ভাগে ভাগ করা যায়-
- আদি-মধ্যযুগ (১২০০-১৩৫০) বা অন্ধকার যুগ
- মধ্য-মধ্যযুগ (১৩৫০-১৭০০) এবং
- অন্ত্য-মধ্যযুগ (১৭০০-১৮০০)
আদি-মধ্যযুগ বা অন্ধকার যুগ
১২০১ থেকে ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ১৫০ বছর সময়কালকে বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ বলা হয়। সম্ভবত এ যুগে মুসলমান ও তুর্কি আক্রমনের কারণে কবি-সাহিত্যিকগণ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে থাকতেন। ধারণা করা হয় এ কারণেই কবি-সাহিত্যিকগণ উল্লেখযোগ্য কোন সাহিত্য রচনা করতে পারেননি। তবে বাংলা সাহিত্যে অন্ধকার যুগের অস্তিত্ব নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অনেক পণ্ডিতই অন্ধকার যুগকে স্বীকার করেন না। ড. মুহাম্মদ এনামুল হকের ভাষায় বাংলা সাহিত্যের তুর্কিযুগ প্রধানত ভাষা গঠনের কাল। বাঙ্গালীর মন এ সময়ে আত্মপ্রকাশের পথ খুঁজেছে নদীর ধারার মতো এঁকে-বেঁকে। নিজের পথ নিজের ভাষার খাতে কেটে চলেছে।
বাংলা সাহিত্যে তুর্কি বিজয়ের প্রভাব সম্পর্কে ড. আহমদ শরীফ এর মূল্যায়ন-
তুর্কীর ধর্ম, মনন ও সংস্কৃতির প্রভাবে যে নতুন চিন্তা চেতনার লাবণ্য এ দেশে দেখা গেল তা ছিল ব্যাপক ও গভীর-ভক্তিবাদ, সন্ত ধর্ম-প্রেমবাদ তারই প্রসুন। তাতে বিজ্ঞান, জ্ঞান, বুদ্ধি ও উচ্চমার্গের তাত্ত্বিক চেতনা ছিল, ছিল মানবতার ও সংবেদনশীলতার স্নিগ্ধতা। সেদিন নিজির্ত-নিপীড়িত নির্বিত্ত নিম্নবর্ণের মানুষের মনে মুক্তি আক্ষা ও দ্রোহের সাহস জাগিয়ে ছিল। ফলে মানুষের জীবনে জীবিকায় উন্মুক্ত হলো সম্ভাবনার অসীম দিগন্ত। তুর্কী প্রভাবে দেশী মানুষের চিন্তা চেতনায় যে বিপ্লব এলো তাতে ভারতীয় জীবন জিজ্ঞাসায় ও জগত ভাবনায় যুগান্তর ঘটিয়েছিল।
ড. আহমদ শরীফ
এযুগের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম হল রামাই পণ্ডিতের ‘শূন্যপুরাণ’ ও হলায়ুধ মিশ্রের ‘সেক শুভদয়া’।
প্রাকৃত পৈঙ্গল
আন্ধকার যুগের প্রথম সাহিত্য নিদর্শন প্রাকৃত পৈঙ্গল। এটি প্রাকৃত ভাষায় রচিত গীতি কবিতার গ্রন্থ। গ্রন্থটি মূলত বিভিন্ন কবির শ্লোকের সংকলন। এর রচয়িতা শ্রীহর্ষ।
শূন্যপুরাণ
শূন্যপুরাণ রমাই পণ্ডিত রচিত ধর্মপূজার শাস্ত্রগ্রন্থ। এটি গদ্য-পদ্য মিশ্রিত চম্পুকাব্য। এতে শূন্যময় দেবতা ধর্মঠাকুরের পূজা পদ্ধতির বর্ণনা রয়েছে। ধর্মপূজার বিবরণে বৌদ্ধধর্মের শূন্যবাদ ও হিন্দু লোকধর্মের মিশ্রণ ঘটেছে। এ গ্রন্থে ধর্মদেবতা নিরঞ্জনের যে কল্পনা করা হয়েছে তা বৌদ্ধদের শূন্যবাদের অনুরূপ।
শূন্যপুরাণ গ্রন্থটি ৫১টি অধ্যায়ে বিভক্ত যার প্রথম ৫টিতে সৃষ্টিতত্ত্বের কথা বর্ণিত হয়েছে। গ্রন্থের পরের ৪৬টি অধ্যায়ে ধর্মপূজার রীতি-পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে। শূন্যপুরাণ আবিষ্কার করেন নগেন্দ্রনাথ বসু। “নিরঞ্জনের উষ্মা” – শূন্যপুরাণ কাব্যের অন্তর্গত একটি কবিতা। এতে ব্রাহ্মণ্য শাসনের পরিবর্তে মুসলিম শাসনের কথা বলা হয়েছে।
সেক শুভোদয়া
অশুদ্ধ বাংলা ও সংস্কৃত ভাষার মিশ্রণে রচিত একটি গ্রন্থ হল সেক শুভোদয়া। শেখের শুভদয়া বা শেখদের শুভ আগমন বা মহাত্ম্য বর্ণনা করাই এ কব্যের মূল উপজীব্য। ১৯১৩-১৪ সালে মণীন্দ্রমোহন বসু গ্রন্থটির ১৩টি অনুচ্ছেদ বঙ্গানুবাদসহ কায়স্থ পত্রিকায় প্রকাশ করেন। ১৯২৭ সালে গ্রন্থটি সুকুমার সেনের সম্পাদনায় প্রথম মুদ্রিত হয়। গদ্য-পদ্য মিলিয়ে গ্রন্থটিতে ২৫টি অধ্যায় রয়েছে।
অন্ধকারযুগ পরবর্তী মধ্যযুগের সাহিত্যকর্মগুলোকে ভাষাবিদগণ দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা:
- মৌলিক সাহিত্য: উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, বৈষ্ণব পদাবলি, মঙ্গলকাব্য।
- অনুবাদ সাহিত্য: উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম হচ্ছে রামায়ণ, মহাভারত, ভগবত ইত্যাদি।
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যর প্রধান দুটি শাখা: কাহিনীমূলক ও গীতিমূলক। কাহিনীমূলক রচনায় কাহিনী বা গল্পটিই প্রাধান্য পায় এবং গীতিমূলক রচনায় ছন্দের প্রাধান্য থাকে।
প্রাকচৈতন্য যুগ ও শ্রীকৃষ্ণকীর্তন
সাধারণত খ্রিস্টীয় ১৩-১৪শ শতক পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের আদি-মধ্যযুগ বা চৈতন্যপূর্ব যুগ বলে চিহ্নিত করা হয়। এ সময়ের বাংলা সাহিত্য তিনটি প্রধান ধারায় বিকশিত হয়েছে। যথা: বৈষ্ণব সাহিত্য, মঙ্গল সাহিত্য এবং অনুবাদ সাহিত্য।
মধ্যযুগের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ নিদর্শন শ্রীকৃষ্ণকীর্তন। এটি রচনা করেন বড়ু চণ্ডীদাস। ড. মুহাম্মাদ শহীদুল্লার মতে কাব্যটির রচনাকাল ১৪০০ খ্রি.। বাংলা সাহিত্যের সর্বজন স্বীকৃত ও খঁটি বাংলায় রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ হল শ্রীকৃষ্ণকীর্তন। এটি রাধাকৃষ্ণের প্রণয়কথা বিষয়ক একটি আখ্যানকাব্য।
১৯০৯ সালে বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার কাঁকিল্যা গ্রামের দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় নামক এক ব্রাহ্মণের বাড়ির গোয়ালঘর থেকে এই পুথিটি উদ্ধার করেন। প্রাচীন পুথিগুলিতে সচরাচর প্রথম বা শেষ পাতায় পুথির নাম লেখা থাকে। কিন্তু প্রাপ্ত পুথিটির মাঝখানের এবং শেষের কয়েকটি পাতা না থাকায় এর নাম জানা যায়নি। তবে পুঁথির সাথে পাওয়া একটি চিরকুট অনুসারে এ কাব্যের নাম ‘শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ’। বসন্তরঞ্জন রায় কাব্যটির নাম দেন ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’। তার সম্পাদনায় ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে কাব্যটি প্রকাশিত হয়। উল্লেখ্য বসন্তরঞ্জন রায়-এর উপাধি ছিল বিদ্বদ্বল্লভ।
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যেটিতে মোট খণ্ড ১৩টি ও পদ ৪১৮টি। এটি পয়ার ও ত্রিপদী ছন্দে রচিত। কাব্যের প্রধান চরিত্র কৃষ্ণ, রাধা ও বড়াই। বড়াই রাধাকৃষ্ণের প্রেমের দূতি।
ভগবান বিষ্ণুর অবতাররূপে কৃষ্ণের জন্ম। বৃন্দাবনে বড়াইয়ের সহযোগিতায় রাধার সঙ্গে তার প্রণয় এবং শেষে বৃন্দাবন ও রাধা উভয়কে ত্যাগ করে কৃষ্ণের চিরতরে মথুরায় অভিপ্রয়াণ।
– ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যের মূল উপজীব্য।
গঠন নৈপুন্যের দিক থেকে শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের অধিকাংশ পদই কৃষ্ণ, রাধা ও বড়াইয়ের সংলাপ। তাই গঠনরীতি অনুসারে কাব্যটি মূলত নাট্যগীতি।
বৈষ্ণব সাহিত্য
বৈষ্ণব সাহিত্য দুইটি ধারায় বিভক্ত। যথা: বৈষ্ণব পদাবলি ও জীবনী সাহিত্য।
বৈষ্ণব পদাবলি
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ বৈষ্ণব পদাবলি। বৈষ্ণব সমাজে এটি মহাজন পদাবলি নামেও পরিচিত। এ পদগুলোর সৃষ্টি হয়েছে রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা অবলম্বনে। এর অধিকাংশ পদ ব্রজবুলি নামক কৃত্রিম কবিভাষায় রচিত। ব্রজবুলি মূলত বাংলা ও মৈথিলী ভাষার সংমিশ্রণে সৃষ্ট ভাষা।
বাংলা সাহিত্যের একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ত্ব শ্রীচৈতন্যদেব। তিনি বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার করেছেন। তার প্রচারিত বৈষ্ণব ধর্মকে উপজীব্য করেই বৈষ্ণব পদকর্তারা পদাবলি রচনা করেন। মূলত বৈষ্ণব পদাবলি হল বৌদ্ধ বা বৈষ্ণবীয় ধর্মের গূঢ় তত্ত্ব বিষয়ক সৃষ্ট পদ।
- বৈষ্ণব পদাবলির আদিকবি বিদ্যাপতি (অবাঙালি)।
- বাংলা ভাষায় বৈষ্ণব পদাবলির আদি রচয়িতা / প্রথম কবি চণ্ডীদাস। এছাড়া বৈষ্ণব পদাবলির উল্লখযোগ্য কবি- জ্ঞানদাস, গোবিন্দদাস, বলরাম দাস প্রমূখ।
- কবি জয়দেবকে সংস্কৃত ভাষায় বৈষ্ণব পাবলির প্রথম কবি বলা হয়।
- বৈষ্ণব পদাবলি সংকলন করেন বাবা আউয়াল মনোহর দাস। ষোড়শ শতকের শেষার্ধে তিনি তার ‘পদসমুদ্র’ গ্রন্থে বৈষ্ণব পদাবলি সংকলণ করেন।
বিখ্যাত উক্তি –
- এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর, এ ভরা বাদর মাহ বাদর, শূন্য মন্দির মোর – বিদ্যাপতি
- সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই – চণ্ডীদাস
- সুখের লাগিয়া এ ঘর বাধিনু, অনলে পুড়িয়া গেল – জ্ঞানদাস
- রূপ লাগি আঁখি জ্বরে গুণে মন ভোর – জ্ঞানদাস
চণ্ডীদাস সমস্যা: মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে চারজন চণ্ডীদাসের (বড়ু চণ্ডীদাস, দ্বিজ চণ্ডীদাস, দীন চণ্ডীদাস, চণ্ডীদাস) অস্তিত্ব পাওয়া যায়। কিন্তু তারা প্রত্যকেই পৃথক ব্যক্তি নাকি একই ব্যক্তি একাধিক নাম ব্যবহার করেছেন তা নিয়ে মতভেদ আছে। যেমন অনেক পণ্ডিত দ্বিজ চণ্ডীদাস ও দীন চণ্ডীদাসকে একই ব্যক্তি মনে করেন। উক্ত চারজন কবির অস্তিত্ব নিয়ে যে অস্পষ্টতা তাই চণ্ডীদাস সমস্যা নামে পরিচিত।
জীবনী সাহিত্য
কোন বিখ্যাত ব্যক্তির জীবনীকে উপজীব্য করে যে সাহিত্য রচিত হয় তাই জীবনী সাহিত্য। বাংলা সাহিত্যের একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ত্ব শ্রীচৈতন্যদেব। সাহিত্যের একটি পদ রচনা না করেও তার নামে একটি যুগের সূচনা হয়েছে। শ্রীচৈতন্যদেবের পিতৃপ্রদত্ত নাম বিশ্বম্ভর মিশ্র এবং ডাক নাম নিমাই। তার জীবনী অবলম্বনে বাংলা সাহিত্যে প্রথম জীবনী সাহিত্য রচিত হয়। শ্রীচৈতন্যদেবের জীবনী গ্রন্থকে বলা হয় কড়চা। ১৫০০-১৭০০ খ্রিস্টাব্দকে বাংলা সাহিত্যে চৈতন্যযুগ বলা হয়।
উল্লেখযোগ্য জীবনী গ্রন্থ-
রচয়িতা | গ্রন্থের নাম | তথ্য |
---|---|---|
মুরারিগুপ্ত | শ্রী শ্রী কৃষ্ণ চৈতন্য চরিতামৃত | শ্রীচৈতন্যদেবের প্রথম জীবনী কাব্য। এর অন্য নাম ‘মুরারী গুপ্তের কড়চা’। |
বৃন্দাবন দাস | শ্রীচৈতন্যভগবত | বাংলায় শ্রীচৈতন্যদেবের প্রথম জীবনী কাব্য। |
লোচন দাস | চৈতন্য মঙ্গল | |
কৃষ্ণদাস কবিরাজ | চৈতন্যচরিতামৃত | সর্বাপেক্ষা তথ্যবহুল জীবনী কাব্য। শ্রীচৈতন্যদেবের শ্রেষ্ঠ জীবনীকার কৃষ্ণদাস কবিরাজ। |
অন্যান্য জীবনী সহিত্য-
রচয়িতা | গ্রন্থের নাম | তথ্য |
---|---|---|
সৈয়দ সুলতান | নবী বংশ, শব-ই-মিরাজ, রাসূল বিজয় | |
হরকৃষ্ণ দাস | বাল্যলীলাসূত্র | বৈষ্ণব ধর্মের অন্যতম প্রধান অদ্বৈত আচার্যের জীবনী নিয়ে লেখা। |
ঈশান নাগর | অদ্বৈতপ্রকাশ | বাংলায় অদ্বৈত আচার্যের জীবনী নিয়ে লেখা প্রথম গ্রন্থ। |
হরিচরণ দাস | অদ্বৈতমঙ্গল |
মঙ্গলকাব্য
মঙ্গলকাব্য হল বিশেষ ধরনের ধর্মবিষয়ক আখ্যান কাব্য। একাব্য রচনার মূল কারণ স্বপ্নে দেব/দেবী কর্তৃক আদেশ লাভ। মঙ্গলকাব্যধারার মূল উপজীব্য দেব-দেবীর গুণগান। এ কাব্যধারার কয়েকজন বিখ্যাত কবি- কানাহরি দত্ত, বিজয়গুপ্ত, বিপ্রদাস পিপলাই, মাধব আচার্য, মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, ঘনরাম চক্রবর্তী, শ্রীশ্যাম পণ্ডিত, ভরতচন্দ্র রায়গুনাকর, ক্ষেমানন্দ, দ্বিজ মাধব, ময়ূর ভট্ট, খেলারাম, সীতারাম দাস, দ্বিজ বংশী দাস প্রমূখ।
বিভিন্ন দেবদেবীর গুণগান মঙ্গলকাব্যর মূল বিষয়; তন্মধ্যে স্ত্রী দেবীদের প্রধান্যই বেশী এবং মনসা ও চণ্ডীই এদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। মঙ্গলকাব্য প্রধানত দুই প্রকার। যথা-
- পৌরাণিক মঙ্গল কাব্য – অন্নদামঙ্গল, কমলামঙ্গল, দূর্গামঙ্গল প্রভৃতি
- লৌকিক মঙ্গল কাব্য – মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, কালিমঙ্গল, গৌরীমঙ্গল (বিদ্যাসুন্দরী), সারদামঙ্গল প্রভৃতি
উল্লেখ্য মঙ্গল শব্দটি থাকলেও ‘চৈতন্যমঙ্গল’, ‘গোবিন্দমঙ্গল’ প্রভৃতি বৈষ্ণব সাহিত্যের অংশ, মঙ্গলকাব্য নয়।
মনসামঙ্গল
মঙ্গলকাব্য ধারার সর্বাপেক্ষা প্রাচীনতম ধারা মনসামঙ্গল। এর অপর নাম পদ্মপুরাণ। এটি মূলত একটি আখ্যানকাব্য। সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় মনসামঙ্গল কাহিনী হল চাঁদ সাওদাগরের বিদ্রোহ ও বেহুলার সতীত্ব কাহিনী। কাব্যের প্রধান আখ্যানটি আবর্তিত হয়েছে ইহলোকে দেবী মনসার নিজ পূজা প্রচারের প্রয়াসকে কেন্দ্র করে। মনসামঙ্গলের উল্লেখযোগ্য চরিত্র- মনসাদেবী, চাঁদ সওদাগর, বেহুলা, লক্ষ্মীন্দর।
- মনসামঙ্গল কাব্যের আদি কবি কানাহরি দত্ত এবং সর্বশ্রেষ্ঠ কবি বিজয়গুপ্ত।
- মনসামঙ্গল কাব্য রচিত হয় সুলতান হুসেন শাহের শাসনামলে।
- মনসামঙ্গলের অন্যতম কবি নারায়ন দেবের জন্মস্থান বর্তমান কিশোরগঞ্জ; তাঁর কাব্যের নাম ‘পদ্মাপুরাণ’, ‘সুকন্নানি‘।
- মনসামঙ্গলের কবি বিজয়গুপ্তের জন্ম স্থান বরিশাল জেলার বর্তমান গৈলা গ্রামে (প্রাচীন নাম ফুলশ্রী)। বিজয়গুপ্ত ‘পদ্মাপুরাণ’ নামক মনসামঙ্গল কাব্য রচনা করেন।
- ‘মনসা বিজয়’ কাব্যগ্রন্থের রচিয়তা বিপ্রদাস পিপলাই। এটি ১৪৯৫ সালে প্রকাশিত হয়।
- মনসামঙ্গলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ক্ষেমানন্দের উপাধি ছিল কেতকা দাস।
- দ্বিজ বংশীদাস: মনসামঙ্গলের সুকণ্ঠ গায়ক হিসেবে বিশেষ খ্যাতি ছিল। দ্বিজ বংশীদাস জন্মগ্রহণ করেন কিশোরগঞ্জ জেলার পাতুয়ারী গ্রামে।
চণ্ডীমঙ্গল
মঙ্গলকাব্য ধারার শ্রেষ্ঠ কাব্য চণ্ডীমঙ্গল। এ ধারার আদিকবি মানিক দত্ত। ষোড়শ শতকে এ কাব্য ধারার সর্বাধিক প্রসার ঘটে। কাব্যটির রচনাকাল ষোড়শ থেকে আঠার শতক পর্যন্ত বিস্তৃত। চণ্ডীমঙ্গল কাব্য ধারার শ্রেষ্ঠ কবি “কবিকঙ্কন” মুকুন্দরাম চক্রবর্তী। কবি মুকুন্দরাম জন্মগ্রহণ করেন বর্ধমান জেলার দামুন্যা গ্রামে। তিনি মেদিনীপুর জেলার অড়বা গ্রামের জমিদার রঘুনাথের সভাসদ ছিলেন। জমিদার রঘুনাথ মুকুন্দরামকে ‘শ্রী শ্রী চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্য রচনার জন্য ‘কবিকঙ্কন’ উপাধি প্রদান করেন। মুকুন্দরামের চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের অন্যান্য নাম অভয়ামঙ্গল, অধিকামঙ্গল, গৌরিমঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল প্রভৃতি।
এ কাব্যধারার উল্লেখ্যযোগ্য কবি- দ্বিজমাধব (স্বভাব কবি), দ্বিজ রামদেব, মুক্তারাম সেন, হরিরাম, ভবানীশঙ্কর দাস, অকিঞ্চন চক্রবর্তী প্রমুখ।
আরও দেখুন – চণ্ডীমঙ্গল (সংক্ষিপ্ত কাহিনী)
ধর্মমঙ্গল
ধর্মমঙ্গলের উপাস্য দেবতা ধর্ম ঠাকুর বা ধর্ম দেবতা। কাব্যের প্রধান কাহিনী দুটি। যথা: (ক) রাজা হরিশ্চন্দ্রের কাহিনী এবং (খ) লাউসেনের কাহিনী। ধর্মমঙ্গল কাব্যের আদি কবি ময়ূর ভট্ট। তার কাব্যগ্রন্থের নাম ‘হাকন্দপুরান’ (বা ‘শ্রীধর্মপুরাণ’)। ধর্মমঙ্গল কাব্যধারার শ্রেষ্ঠ কবি ঘনরাম চক্রবর্তী এবং তার গ্রন্থের নাম ‘অনাদিমঙ্গল’। এছাড়া শ্যাম পণ্ডিত ধর্মমঙ্গলের অন্যতম কবি ছিলেন। তার কাব্যগ্রন্থ ‘নিরঞ্জন মঙ্গল‘।
সংক্ষিপ্ত কাহিনী: ধর্মমঙ্গল
কালিকামঙ্গল
এর মূল উপজীব্য দেবী কালির গুণ বর্ণনা। এ ধারার উল্লেখযোগ্য কবি সবিরিদ খান ও রামপ্রসাদ সেন। ‘কবিরঞ্জন’ রামপ্রসাদ সেনের উপাধি। নবদ্বীপের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তাকে এ উপাধি প্রদান করেন।
শিবমঙ্গল
দেবতা শিবের গুণ বর্ণনা এ কাব্যের উপজীব্য। এ ধারার প্রথম কবি রামকৃষ্ণ রায়। দ্বিজ রতিদেবের ‘মৃগলুব্ধ’, রামেশ্বর ভট্টাচার্যের ‘শিবকীর্তন’ এ ধারার উল্লেখযোগ্য কাব্য।
অন্নদামঙ্গল
এ ধারার প্রধান কবি ভারতচন্দ্র রায়। তিনি মঙ্গলযুগের সর্বশেষ কবি। তাকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম নাগরিক কবি বলা হয়। ভারতচন্দ্রের উপাধি ছিল রায়গুণাকর। নবদ্বীপের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তাকে এ উপাধি দেন। অন্নদামঙ্গল কাব্য ৩ খণ্ডে বিভক্ত। এ কাব্যের প্রধান চরিত্র – বিদ্যাসুন্দর, হীরামালিনী, ঈশ্বরী পটানী।
বিখ্যাত উক্তি-
- আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে
- নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়
- মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন
- বড়র পিরীতি বালির বাধ! ক্ষণে হাতে দড়ি , ক্ষণেক চাঁদ
এক নজরে-
ধারা | আদিকবি | সর্বশ্রেষ্ঠ কবি |
---|---|---|
মনসামঙ্গল | কানাহারি দত্ত | বিজয়গুপ্ত |
চণ্ডীমঙ্গল | মানিক দত্ত | মুকুন্দরাম চক্রবর্তী |
ধর্মমঙ্গল | ময়ূর ভট্ট | ঘনরাম চক্রবর্তী |
নাথ সাহিত্য
বৌদ্ধ ধর্মমতের সাথে শৈবধর্ম মিশে নাথধর্মের উদ্ভব। নাথ সাহিত্য একশ্রেণীর ধর্ম প্রচারকারী সাহিত্য। এটি শিব উপাসকদের নাথ ধর্মের কাহিনি অবলম্বনে রচিত। নাথ অর্থ ‘প্রভু’। নাথ ধর্ম মতালম্বীরা তাঁদের নামের শেষে ‘নাথ’ পদবী ব্যবহার করতেন। নাথ সাহিত্য ২ প্রকার। যথা:
- মীননাথ ও তার শিষ্য গোরক্ষনাথের কাহিনি এবং
- রাজা গোপীচন্দ্রের সন্ন্যাস
অধঃপতিত গুরু মীননাথকে গোরক্ষনাথ কর্তৃক উদ্ধারের বৃত্তান্ত বর্ণিত হয়েছে গোরক্ষনাথে কাহিনীতে। গোপীচন্দ্রের সন্ন্যাসের সাহিত্যকর্মগুলোতে বর্ণিত হয়েছে আসন্ন অকাল মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার জন্যে নাথগুরু জালন্ধরিপাদ বা হাড়িপার শিষ্যত্ব গ্রহণ করে গোপীচন্দ্রের সন্যাসীর বেশে গৃহত্যাগ এবং সময় উত্তীর্ণ হয়ে পুনরায় দেশে ফিরে সুখে শান্তিতে রাজ্য পরিচালনার কাহিনী।
নাথ সাহিত্যের কবি-
কবি | রচনা |
---|---|
শেখ ফয়জুল্লাহ (নাথ সাহিত্যের আদি কবি) | গোরক্ষ বিজয় |
শুকুর মুহাম্মাদ | গোঁপীচাঁদের সন্ন্যাস |
ভীমসেন, শ্যামদাস সেন, ভবানীদাস প্রমূখ |
মর্সিয়া সাহিত্য
মর্সিয়া আরবি শব্দ যার অর্থ শোক প্রকাশ করা। বিষাদময় কাহিনি তথা শোকবহ ঘটনার বর্ণনার মাধ্যমে মর্সিয়া সাহিত্যের উদ্ভব হয়েছে। মর্সিয়া সাহিত্যগুলো এক ধরনের শোক কাব্য।
কবি | রচনা | তথ্য |
---|---|---|
শেখ ফয়জুল্লাহ | জয়নবের চৌতিশা | মর্সিয়া সাহিত্যের প্রথম কবি শেখ ফয়জুল্লাহ। |
দৌলত উজির বাহরাম খান | জঙ্গনামা | কারবালার বিষাদময় যুদ্ধ ‘জঙ্গনামা’-র বিষয়বস্তু। |
ফকির গরীবুল্লাহ | আমির হামজা, সোনাভান | উল্লেখ্য ফকির গরীবুল্লাহর রচনা কোনগুলো তা নিয়ে মতবিরোধ আছে। |
মুহাম্মদ খান | মক্তুল হোসেন | |
রাধারমণ গোপ | ইমামগনের কেচ্ছা, আফতনামা | রাধারমণ গোপ হিন্দু কবি হয়েও মর্সিয়া সাহিত্য রচনা করেছেন। |
হায়াত মামুদ, মীর মোশাররফ হোসেন, কায়কোবাদ প্রমূখ |
লোকসাহিত্য
লোকসাহিত্য হল মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত কাহিনী, ছড়া, গান, কথা, গীতিকা, ধাঁধাঁ, গাঁথা প্রভৃতির সমষ্টি। একে বাংলা সাহিত্যের শিকড়সন্ধানী সাহিত্যও বলা হয়। সাধারণত কোন লোকালয়ের লোকমুখে প্রচলিত অলিখিত সাহিত্যই লোকসাহিত্য। বাংলার অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী এ সাহিত্যে অবদান রেখেছে। এদের একটি বড় অংশ হল লোক-কবি বা বায়তি। যেমন- মনসুর বায়তির একটি পালাগান হচ্ছে ‘দেওয়ানা মদিনা’। এছাড়া ‘হারামনি’ একটি উল্লেখযোগ্য লোকসাহিত্য। এর সংকলক মুহম্মদ মনসুউদ্দীন।
লোকসাহিত্যের আদিরূপ হচ্ছে ছড়া, প্রবাদ-প্রবচন ও ধাঁধা। এর প্রাচীনতম নিদর্শন ছড়া। ডাক ও খনার বচনকে লোকসাহিত্যের আদি নিদর্শন বলা হয়। ডাক ও খনার বচনগুলো প্রাচীন যুগে সৃষ্টি হয়, তবে মধ্যযুগে সমৃদ্ধি লাভ করে। বৌদ্ধ সমাজে ডাক-এর বচনের উৎপত্তি হয়েছিল আর খনার বচন সৃষ্টি হয়েছিল হিন্দু সমাজে। মূলত কৃষক ও কৃষাণীরা এগুলো মুখস্ত রাখত। ডাকের বচন ‘ডাকের কথা’ বা ‘ডাক পুরুষের কথা’ নামেও পরিচিত। খনার বচনগুলো কৃষিভিত্তিক। এগুলো থেকে কৃষি, আবহাওয়া ও সমাজের পরিচয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। খনার বচনের মূলভাব হচ্ছে শুদ্ধ জীবনযাপন রীতি।
উদাহরণ:
- ঘরে আখা বাইরে রাঁধে, অল্প কেশ ফুলাইয়া বাঁধে (ডাক)
- গাছে গাছে আগুন জলে, বৃষ্টি হবে খনায় বলে (খনা)
সংগ্রহ
চন্দ্রকুমার দে বাংলা লোকসাহিত্যের একজন উল্লেখযোগ্য সংগ্রাহক। ড. দীনেশচন্দ্র সেনের আগ্রহে ও স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি বাংলার লোকসাহিত্য সংগ্রহ করেন। তার সংগৃহীত সাহিত্যগুলো ড. দীনেশচন্দ্র সেনের সম্পাদনায় ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ ও ‘পূর্ববঙ্গ গীতিকা’ নামে প্রকাশিত হয়। এছাড়া বাংলা লোকসাহিত্য নিয়ে রেভারেন্ড লাল বিহারী ‘Folk Tales of Bengali (১৮৮৩)’, ড. সুনীল কুমার দে ‘প্রবাদ সংগ্রহ’ ও ড. মযহারুল ইসলাম ‘কবি পাগলা কানাই’ নামক গ্রন্থ রচনা করে লোকসাহিত্য সংরক্ষণে ভূমিকা রেখেছেন।
লোকগীতিকা
লোকগীতিকায় আবৃতির পাশাপাশি লৌকিক প্রকাশভঙ্গির গীত হয়। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল নাটকীয়তা ও সংলাপধর্মিতা। বাংলাদেশে সংগৃহীত গীতিকাগুলোকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: নাথ গীতিকা, মৈমনসিংহ গীতিকা ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা।
নাথ গীতিকা
নাথ গীতিকাগুলো একটিমাত্র ঐতিহাসিক বিষয়বস্তু অবলম্বনে রচিত। রাজা গোপীচাঁদ বা গোবিন্দ চন্দ্র মায়ের নির্দেশে যৌবনে দুই নব পরিণীকা বধূকে রেখে সন্ন্যাস অবলম্বন করেন। এই কাহিনীকে ঘিরেই রচিত নাথগীতিকা ‘গোপীচাঁদের সন্ন্যাস’। শুকুর মুহম্মাদ এর রচয়িতা। এছাড়া ভবানীদাস রচিত ‘ময়নামতির গান’ একটি নাথ গীতিকা।
মৈমনসিংহ গীতিকা
বৃহত্তম ময়মনসিংহ জেলার মানুষের মুখে মুখে যে গীতিকাগুলো প্রচলিত ছিল তার সংকলনই হল ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’। এতে মোট ১০টি গীতিকা রয়েছে। ড. দীনেশচন্দ্র সেনের সম্পাদনায় এটি ১৯২৩ সালে প্রকাশিত হয়। এটি ২৩টি ভাষায় মুদ্রিত হয়েছে। গীতিকাগুলো নিম্নরূপ-
মৈমনসিংহ গীতিকার নাম | রচয়িতা |
---|---|
মহুয়া (চরিত্র: নদের চাঁদ, মহুয়া) | দ্বিজ কানাই |
মলুয়া দস্যু কেনারামের পালা দেওয়ান ভাবনা | চন্দ্রাবতী |
কমলা | দ্বিজ ঈশান |
দেওয়ানা মদিনা (চরিত্র: আলাল, দুলাল, মদিনা) | মনসুর বয়াতি |
চন্দ্রাবতী | নয়ানচাঁদ ঘোষ |
কঙ্ক ও লীলা | দমোদর, রঘুসুত ও নয়াচাঁদ |
কাজলরেখা রূপবতী | অজ্ঞাত |
পূর্ববঙ্গ গীতিকা
ড. দীনেশচন্দ্র সেন নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে এগুলো সংগ্রহ করেন। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থানুকুল্যে তিনি ১৯২৬ সালে ৩ খন্ডে ‘পূর্ববঙ্গ গীতিকা’ প্রকাশ করেন। এতে ৫০টির অধিক পালাগান রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কিছু পূর্ববঙ্গ গীতিকা হল- নিজাম ডাকাতের পালা, কাফন চোর, কমল সদাগর, চৌধুরি লড়াই, কাঞ্চন মালা, আয়না বিবি, ভেলুয়া, কমলা রাণীর গান ইত্যাদি।
টপ্পাগান: কলকাতা অঞ্চলের একটি লৌকিক গান। বাংলায় এটি রাগাশ্রয়ী গান হিসেবেও পরিচিত। রামনিধি গুপ্ত (নিধু বাবু) বাংলা টপ্পাগানের উদ্ভাবক।লোককথা বা লোক কাহিনী
কোন কাহিনী গদ্যের মাধ্যমে বর্ণিত হলে তাকে লোককথা বা লোককাহিনী বলে। এই কাহিনীগুলো কাব্যে রূপায়িত হলে ‘গীতিকা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। অর্থ্যাৎ মানুষের মুখে প্রচলিত কাহিনী গদ্যে বর্ণিত হলে ‘কথা’ এবং কাব্যে বর্ণিত হলে ‘গীতিকা’। ড. আশুতোষ মুখপাধ্যায়ের মতে লোককথা ৩ প্রকার। যথা: রূপকথা, উপকথা ও ব্রতকথা।
রূপকথা: অবাস্তব ও অবিশ্বাস্য কাহিনী নিয়ে রচিত সাহিত্য হচ্ছে রূপকথা। বাংলা সাহিত্যে কিছু জনপ্রিয় রূপকথা হল – দক্ষিণারঞ্জন মিত্রের ‘ঠাকুমার ঝুলি’, ‘ঠাকুরদাদার ঝুলি’, ‘কিশোরের মন’ , উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরির ‘টোনাটুনির বই’।
উপকথা: পশুপাখি মানবচরিত্রের মত কথা বলে এমন ভাবে সাহিত্যের বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। কৌতুক সৃষ্টি এবং নীতি প্রচারই এগুলো সৃষ্টির উদ্দেশ্য।
ব্রতকথা: বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মেয়েলি ব্রতের সাথে সম্পর্কিত কাহিনি অবলম্বনে ব্রতকথা নামে এক ধরনের সাহিত্য বিকাশ ঘটেছে।
ড. দীনেশচন্দ্র সেন
দীনেশচন্দ্র সেন একজন স্মরণীয় লোক-সাহিত্যবিশারদ। ১৮৬৬ সালে মানিকগঞ্জ জেলার বগজুরি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত বৈদ্যব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা জেলার সুয়াপুর গ্রামে তার পৈত্রিক নিবাস। তিনি ১৮৯০-এ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনকালে গ্রামবাংলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে প্রাচীন বাংলার পুঁথি সংগ্রহ করেন। সেসব উপকরণের সাহায্যে ১৮৯৬-এ “বঙ্গভাষা ও সাহিত্য” শিরোনামে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসগ্রন্থ রচনা করেন। ১৯১১ সালে তার সুবিখ্যাত গ্রন্থ “হিস্ট্রি অব বেঙ্গলি লিটেরেচার” প্রকাশিত হয়। তিনি মৈমনসিংহ গীতিকা ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা সম্পাদনা করেন।
এক নজরে লোকসাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি
- লোকসাহিত্য হল – লোকের মুখে মুখে প্রচলিত কাহিনী, গান, ছড়া ইত্যাদি
- বাংলার লোক সাহিত্যগুলোর একজন সংগ্রাহক হলেন – চন্দ্রকুমার দে। ড. দীনেশচন্দ্র সেনের আগ্রহে ও স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি বাংলার লোকসাহিত্য সংগ্রহ করে।
- ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ ও ‘পূর্ববঙ্গ গীতিকা’ এর সম্পাদনা করেন – ড. দীনেশচন্দ্র সেন
- নাথ গীতিকা – একটিমাত্র ঐতিহাসিক বিষয়বস্তু অবলম্বনে রচিত হয়।
- লোকমুখে প্রচলিত কাহিনী গদ্যের মাধ্যমে বর্ণিত হলে – লোক কথা বা কাহিনী
- লোকমুখে প্রচলিত কাহিনী কাব্যে মাধ্যমে বর্ণিত হলে – গীতিকা
- অবাস্তব ও অবিশ্বাস্য কাহিনী নিয়ে রচিত সাহিত্য – রূপকথা
অনুবাদ সাহিত্য
মধ্যযুগের অনুবাদ সাহিত্যগুলো মূলত ভাবানুবাদ। এযুগের কবিরা পয়ার ছন্দে ভাবানুবাদগুলো রচনা করেছেন। উল্লেখযোগ্য অনুবাদ সাহিত্যগুলো হল – রামায়ণ, মহাভারত, ভাগবত ইত্যাদি।
মহাভারত
মহাভারত কথাটির অর্থ হল ভরত বংশের মহান উপাখ্যান। প্রায় ২৫০০ বছর পূর্বে কৃষ্ণ দ্বৈপায়ণ বেদব্যাস সংস্কৃত ভাষায় মহাভারত রচনা করেন। বেদ বাক্য ব্যাখ্যা করার জন্য তার নাম ‘বেদব্যাস’। তিনি হিমালয়ের এক পবিত্র গুহায় তপস্যার পর মহাভারতের কাহিনী স্মরণ করেন এবং গণেশ সেই কাহিনী লিপিবদ্ধ করেন। মোট ১৮টি খণ্ড ও ৮৫০০০ শ্লোক রয়েছে মহাভারত মহাকাব্যে। এতে পাণ্ডব বংশের পাঁচ ভাইয়ের সঙ্গে কুরু বংশের ১০০ ভাইয়ের যুদ্ধের কাহিনী বিদ্ধৃত হয়েছে।
ষোড়শ শতাব্দীতে কবি কবীন্দ্র পরমেশ্বর প্রথম মহাভারত বাংলায় অনুবাদ করেন। তিনি তার কাব্যের নাম দিয়েছিলেন বিজয়পান্ডবকথা বা ভারত পাঁচালী। তিনি পরাগল খানের (নবাব হোসেন শাহের সেনাপতি) পৃষ্ঠপোষকতায় এটি অনুবাদ করেন বলে তার অনুদিত মহাভারত গন্থকে ‘পরাগালী মহাভারত‘ও বলা হয়। মহাভারতের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক কাশিরাম দাস।
রামায়ণ
বাল্মীকি সংস্কৃত ভাষায় রামায়ণ রচনা করেন। এটি ৭টি কাণ্ড বা খণ্ডে বিভক্ত ও ২৪০০০ শ্লোকে রচিত মহাকাব্য। শ্লোকগুলো ৩২ অক্ষরযুক্ত ‘অনুষ্টুপ’ ছন্দে রচিত। এ কাব্যের মূল উপজীব্য বিষ্ণুর অবতার রামের জীবনকাহিনী।
রামায়ণের রচয়িতা বাল্মীকির মূল নাম দস্যু রত্নাকর। তিনি এই নামে দস্যুবৃত্তি করতেন। বাল্মীক শব্দের অর্থ উইপোকা। দস্যু রত্নাকর উইপোকার ডিবির ওপর বসে তপস্যা করতেন বলে তিনি বাল্মীকি নামে পরিচিত।
রামায়ণের প্রথম বাংলা অনুবাদক কৃত্তিবাস ওঝা। তার রচিত রামায়ণের নাম শ্রীরাম পাঁচালী।
ভগবত
এটি একটি ভক্তিবাদী ধর্মগ্রন্থ। মালাধর বসু একে ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ নামে অনুবাদ করেন।
পুঁথি সাহিত্য
পুঁথি সাহিত্য বলতে ইসলামী চেতনা সম্পৃক্ত সাহিত্যকে বোঝায়। আঠারো থেকে উনিশ শতক পর্যন্ত আরবি, উর্দু, ফারসি ও হিন্দি ভাষার মিশ্রণে রচিত এক শ্রেণির বাংলা সাহিত্যের নাম পুঁথি। এ সাহিত্যের অধিকাংশ রচয়িতা এবং পাঠক উভয়েই ছিল মুসলমান সম্প্রদায়ের। একসময় বাংলায় সন্ধ্যা নামলেই বসত পুঁথি পাঠের আসর। মধ্যযুগের ধর্মভিত্তিক সাহিত্যধারা থেকে মুসলিম কবিরাই প্রথম পুঁথি সাহিত্যের মাধ্যমে সাহিত্যকে নিয়ে আসেন মানুষের কাছে। তারা তুলে ধরেন মানুষের প্রেম, দুঃসাহসিক অভিযান, অনুভূতির অনাবিল উচ্ছ্বাস।
দোভাষী পুঁথি রচয়িতাদের শায়ের বলা হত। ‘শায়ের’ আরবি শব্দ যার অর্থ কবি। মূলত মুসলমান সমাজের শায়েরগণ ‘দোভাষী পুঁথি’ রচনা করতেন। শায়েরদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ফকির গরীবুল্লাহ, সৈয়দ হামজা, মোহাম্মদ দানেশ, মালে মুহম্মদ, আব্দুর রহিম, আয়েজুদ্দিন, জনাব আলী, মনিরুদ্দিন, মুহম্মদ খাতের, মুহম্মদ মুনশী প্রমুখ। পুঁথি সাহিত্যের প্রাচীনতম কবি সৈয়দ হামজা এবং প্রথম সার্থক ও জনপ্রিয় কবি ফকির গরীবুল্লাহ।
কবিওয়ালা ও কবিগান
শায়েরদের সময়েই হিন্দু সমাজে কবিওয়ালা বা সরকারদের আবির্ভাব ঘটে। কবিওয়ালারা ‘কবিগান’ রচনা করতেন। কবিগানের আদিগুরু গোঁজলা গুই।
কবিগান এক ধরনের প্রতিযোগিতামূলক গান। দুটি দলের মধ্যে এ প্রতিযোগিতা হয়। কবিগানের আসরে একজন প্রধান গায়ক এবং কয়েকজন সহকারী থাকত। প্রধান গায়ককে ‘কবিয়াল বা সরকার’ এবং সহকারীদের বলা হতো ‘দোহার’। সহকারীরা সাধারণত প্রধান গায়কের কথাগুলি পুণরাবৃত্তি করতো। ১৮৫৪ সালে কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত সর্বপ্রথম কবিগান সংগ্রহ করেন এবং ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় প্রকাশ করেন।
কবিওয়ালাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- গোঁজলা গুই, রাসু-নৃসিংহ, হরু ঠাকুর, নিলু ঠাকুর, নিতাই বৈরাগী, রাম বসু, এন্টনি ফিরিঙ্গি, নিধুবাবু, দাশরথি রায় প্রমুখ। চারণকবি মুকুন্দ দাস প্রকৃতপক্ষে ছিলেন একজন কবিয়াল। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ কবিয়াল চট্টগ্রামের রমেশ শীল। তিনি মাইজভান্ডারী গানের কিংবদন্তি গায়ক ছিলেন।
রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান
মুসলমান কবিগণ বাংলা সাহিত্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান রচনায়। মুসলমান কবিদের রচনাতেই প্রথম মানুষ প্রাধান্য পায়। চর্তুদশ শতকের শেষে ও পঞ্চদশ শতকের শুরুতে শাহ মুহম্মদ সগীর রচিত “ইউসুফ-জোলেখা” কাব্যের মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যে রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান রচনার সূচনা হয়।
ইউসুফ জুলেখা
বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম কবি ও রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান ধারার প্রথম কবি শাহ মুহম্মদ সগীর। তিনি ফারসি কবি ফেরদৌসির “শাহনামা” কাব্য অবলম্বনে “ইউসুফ-জোলেখা” কাব্য রচনা করেন। এ কাব্যের পটভূমি ইরান। উল্লেখ্য আব্দুর হাকিম, ফকির গরিবুল্লাহ, ফকির মুহম্মদ প্রমূখ পৃথকভাবে “ইউসুফ-জোলেখা” কাব্য রচনা করেছেন।
লাইলী-মজনু
এটি ফারসি কবি জামির “লায়লা ওয়া মাজনুন” কাব্যের ভাবানুবাদ। রচনা করেন দৈলত উজির বাহরাম খান।
এক নজরে উল্লেখযোগ্য অনুবাদ সাহিত্য ও রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান
গ্রন্থ | অনুবাদক | তথ্য |
---|---|---|
মহাভারত | কবীন্দ্র পরমেশ্বর, কাশীরাম দাস, শ্রীকর নন্দী প্রমূখ | মূল গ্রন্থের রচয়িতা বেদব্যাস। |
রামায়ণ | কৃত্তিবাস ওঝা, চন্দ্রাবতী, দ্বিজ ভবানী দাস প্রমূখ | মূল গ্রন্থের রচয়িতা বাল্মীকি। |
শ্রীকৃষ্ণবিজয় | মালাধর বসু | মূল গ্রন্থের নাম ভগবত, রচয়িতা বেদব্যাস। |
ইউসুফ জুলেখা | শাহ মুহাম্মদ সগীর, আব্দুল হাকিম, ফকির গরীবুল্লাহ প্রমূখ | |
লাইলী মজনু | দৌলত উজির বাহরাম খান | |
জঙ্গনামা | ফকির গরীবুল্লাহ | |
হপ্তপয়কর সিকান্দারনামা তোহফা সয়ফুলমূলক-বদিউজ্জামাল পদ্মাবতী | আলাওল | |
সতীময়না ও লোরচন্দ্রানী | দৌলত কাজী |
আরকান রাজসভা
সপ্তদশ শতকে বাংলা সাহিত্যের ব্যাপক প্রসারে আরকান বিশেষ অবদান রাখে। বার্মার অন্তর্ভুক্ত “মগের মুল্লুক” -এ আরকানের বৌদ্ধ রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা অনুবাদ সাহিত্যের বিকাশ সাধিত হয়। বাংলা সাহিত্যে আরকানকে “রোসাঙ্গ” বলা হয়। আরাকান রাজসভার আদি কবি ও প্রথম বাঙালি কবি দৌলত কাজী। তিনি লৌকিক কাহিনীর প্রথম রচয়িতা। আরাকান রাজসভার শ্রেষ্ট কবি আলাওল। আরাকান রাজসভায় বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যিক- দৌলত কাজী, আলাওল, কোরেশী মাগন ঠাকুর, মরদন, আব্দুল করিম খোন্দকর।
সাহিত্যিক | রচনা |
---|---|
দৌলত কাজী | সতীময়না ও লোরচন্দ্রানী |
আলাওল | পদ্মাবতী, হপ্তপয়কর, সিকান্দারনামা, তোহফা, সয়ফুলমূলক বদিউজ্জামান |
কোরেশী মাগন ঠাকুর | চন্দ্রাবতী |
মরদন | নসীরানামা |
আব্দুল করিম খোন্দকর | দুল্লা মজলিস, নূরনামা |
একনজরে বিভিন্ন সাহিত্যধারার উল্লেখযোগ্য কবি/লেখক
ধারা | কবি/লেখক |
---|---|
বৈষ্ণব পদাবলি | বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, জ্ঞানদাস, গোবিন্দদাস, বলরাম দাস, জয়দেব (সংস্কৃত) প্রমূখ। |
জীবনী সাহিত্য | শ্রীচৈতন্যদেবের জীবনী: মুরারিগুপ্ত, কৃষ্ণদাস কবিরাজ, বৃন্দাবন দাস, লোচন দাস প্রমূখ। অন্যন্য জীবনী: সৈয়দ সুলতান, হরকৃষ্ণ দাস, ঈশান নাগর, হরিচরণ দাস। |
মঙ্গলকাব্য | মানসামঙ্গল: কানাহরি দত্ত, বিজয়গুপ্ত, বিপ্রদাস পিপলাই, ক্ষেমানন্দ, দ্বিজ বংশীদাস প্রমূখ। চণ্ডীমঙ্গল: মানিক দত্ত, মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, দ্বিজমাধব বা মাধব আচার্য (স্বভাব কবি), দ্বিজ রামদেব, মুক্তারাম সেন, হরিরাম, ভবানীশঙ্কর দাস, অকিঞ্চন চক্রবর্তী প্রমুখ। ধর্মমঙ্গল: ময়ূর ভট্ট, শ্রী শ্যাম পণ্ডিত, ঘনরাম চক্রবর্তী, খেলারাম চক্রবর্তী, সীতারাম দাস প্রমূখ। কালিকামঙ্গল: সবিরিদ খান, রামপ্রসাদ সেন প্রমূখ। শিবমঙ্গল: রামকৃষ্ণ রায়, দ্বিজ রতিদেব, রামেশ্বর ভট্টাচার্য প্রমূখ। অন্নদামঙ্গল: ভরতচন্দ্র রায় গুনাকর। |
নাথ সাহিত্য | শেখ ফয়জুল্লাহ, শুকুর মুহাম্মাদ, ভীমসেন, শ্যামদাস সেন, ভবানীদাস প্রমূখ। |
মর্সিয়া সাহিত্য | শেখ ফয়জুল্লাহ, দৌলত উজির বাহরাম খান, গরীবুল্লাহ, মুহাম্মাদ খান, হায়াত মামুদ, মীর মোশাররফ হোসেন, কায়কোবাদ, রাধারমণ গোপ প্রমূখ। |
লোকসাহিত্য | নাথ গীতিকা: শুকুর মুহাম্মদ, ভবানীদাস প্রমূখ। মৈমনসিংহ গীতিকা: মনসুর বায়তি, দ্বিজ কানাই, চন্দ্রাবতী, দ্বিজ ঈশান, নয়ানচাঁদ ঘোষ প্রমূখ। লোককথা: দক্ষিণারঞ্জন মিত্র, উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরি প্রমূখ। |
অনুবাদ সাহিত্য | কবীন্দ্র পরমেশ্বর, কাশিরাম দাস, কৃত্তিবাস ওঝা, মালাধর বসু প্রমুখ। |
রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান | শাহ মুহম্মদ সগীর, আব্দুল হাকিম, ফকির গরীবুল্লাহ, দৌলত উজির বাহরাম খান, দৌলত কাজী প্রমূখ। |
খুবই সুন্দর হয়েছে….
অসাধারণ উপস্থাপনা, অনেকটা জানা হয়েছে।
জানিনা কে লিখেছেন? তবে বলব যতই পড়েছি ততই তাঁর প্রতি মুগ্ধ হয়েছি আর ধৈর্য্য ধরা কাকে বলে সেটা শিখেছি। লেখকের প্রতি অনেক ভালোবাসা ও ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা রইল।
কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। 🙏🙏🙏
খুব-ই গোছানো এবং ধারাবাহিক উপস্থাপনা! কৃতজ্ঞতা আপনাদের প্রতি
খুবই সুন্দর গোছানো উপস্থাপন