বাক্য ও বাক্য প্রকরণ

Estimated Reading Time: 41 Minutes

বাক্য কি?

বাক্য শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কথ্য বা কথিত বিষয়। একাধিক পদের সমন্নয়ে বক্তার মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হলে সেই অর্থবোধক পদসমষ্টিকে বাক্য বলে। অর্থ্যাৎ বাক্য হল সুবিন্যস্ত পদসমষ্টি তথা শব্দসমষ্টি যা দ্বারা বক্তার মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয়। যেমন: রহিম ঢাকা গেছে। এখানে উল্লেখ্য-

যে কোন শব্দসমষ্টিই বাক্য নয়। বাক্য গঠনের জন্য শব্দসমষ্টির-

  • বিভিন্ন পদের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক বা অন্নয় থাকতে হবে এবং
  • পদগুলো দ্বারা মিলিতভাবে একটি অখণ্ডভাব পূর্ণরূপে প্রকাশিত হতে হবে।

ভাষার মূল উপকরণ হল বাক্য এবং বাক্যের মৌলিক উপাদান শব্দ। শব্দকে বাক্যের বাহনও বলা হয়। প্রতিটি বাক্যের ২টি অংশ থাকে: উদ্দেশ্য ও বিধেয়।

উদ্দেশ্য: বাক্যের যে অংশে কাউকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলা হয় তাকে উদ্দেশ্য বলে। যেমন: আব্দুর রহিম স্কুলে যায়। এখানে ‘আব্দুর রহিম’ উদ্দেশ্য। উদ্দেশ্য আবার ২ প্রকার। একটিমাত্র পদবিশিষ্ট কর্তৃপদকে সরল উদ্দেশ্য এবং উদ্দেশ্যের সাথে বিশেষণাদি যুক্ত থাকলে তাকে সম্প্রসারিত উদ্দেশ্য বা উদ্দেশ্য প্রসারক বলে।

সম্প্রসারিত উদ্দেশ্যসরল উদ্দেশ্যবিধেয়
কুখ্যাতদস্যুদলধরা পড়েছে

বিধেয়: বাক্যের যে অংশে উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বলা হয় তাই বিধেয়। যেমন: কুখ্যাত দস্যুদল ধরা পড়েছে। এখানে ধরা পড়েছে বাক্যের বিধেয়, কারণ এর দ্বারা দস্যুদল সম্বন্ধে বলা হয়েছে। বিধেয়কে প্রসারিত করে বাক্যে যে শব্দাংশ বা বর্গ বসে তাকে বিধেয় প্রসারক বলে। বিধেয় ক্রিয়াপদের বিশেষ্য অংশকে বলা হয় বিধেয়ের পূরক।

উদাহরণ: করিম সাহেবের ছেলে সুমন গাছতলায় বসে বই পড়ছে; এখানে উদ্দেশ্য ‘সুমন’ ও ‘করিম সাহেবের ছেলে’ উদ্দেশ্য প্রসারক; আবার বিধেয় ‘গাছতলায় বসে বই পড়ছে’ যার মধ্যে ‘গাছতলায় বসে’ বিধেয় প্রসারক এবং ‘বই’ বিধেয়ের পূরক।

একটি শব্দ দিয়ে কি বাক্য তৈরি করা যায়?

বাক্য তৈরির জন্য দুই বা ততোধিক পদ বা শব্দের প্রয়োজন হয়। কথোপকথনের ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রে মাত্র একটি শব্দ বা পদ দ্বারা বাক্য গঠিত হতে দেখা যায়। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে বাকি শব্দগুলো উহ্য থাকে। যেমন: 

ব্যক্তি ১: তুমি কাকে বেশি সম্মান কর?
ব্যক্তি ২: শিক্ষককে। (আমি আমার শিক্ষককে বেশি সম্মান করি)

এখানে ‘শিক্ষককে’ শব্দটি দ্বারা একটি বাক্য নির্দেশ করছে। কারণ বাকি শব্দগুলো এখানে উহ্য থাকে।

বাক্যের গুণ

একটি সার্থক বাক্যের তিনটি গুণ থাকা প্রয়োজন। যথা: আকাঙ্ক্ষা, আসত্তি ও যোগ্যতা।

আকাঙ্ক্ষা: বাক্যের এক পদের পর অন্যপদ শোনার যে ইচ্ছা তাই আকাঙ্ক্ষা। যেমন: চন্দ্র পৃথিবীর চারদিকে– এই পদসমষ্টিটুকু দ্বারা মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায় না, শ্রোতার আরও কিছু জানার/শোনার ইচ্ছা থাকে। অপরদিকে চন্দ্র পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে পদসমষ্টিটি দ্বারা শ্রোতার শোনার ইচ্ছা সম্পূর্ণ হয় (বা বাক্যটি সম্পূর্ণ হয়), কারণ বাক্যটি দ্বারা শ্রোতার আকাঙ্ক্ষা নিবৃত হয়েছে। অর্থ্যাৎ কোনো বাক্য শ্রবণ করে যদি বক্তার উদ্দেশ্য বোঝা যায়, তাহলে বাক্যটি আকাঙ্ক্ষা গুণসম্পন্ন।

আসত্তি: বাক্যের অর্থসঙ্গতি রক্ষার জন্য সুশৃঙ্খল পদবিন্যাসই আসত্তি। যেমন: কাল বিতরণী হবে উৎসব আমাদের পুরস্কার স্কুলে অনুষ্ঠিত – বাক্যটি আসত্তি গুণসম্পন্ন নয়। পদ সন্নিবেশ ঠিকভাবে না হওয়ায় শব্দগুলোর অন্তর্নিহিত ভাবটি যথাযথভাবে প্রকাশিত হয়নি। তাই এটি কোন বাক্য হয়নি। বাক্যের শব্দগুলোকে এমনভাবে পরপর সাজাতে হবে যাতে বক্তার মনোভাব প্রকাশ বাধাগ্রস্ত না হয়। যেমন: কাল আমাদের স্কুলে পুরস্কার বিতরণী উৎসব অনুষ্ঠিত হবে– বাক্যটি আসত্তি গুণসম্পন্ন। অর্থ্যাৎ বাক্যের পদগুলো যদি এমনভাবে সজ্জিত থাকে যে বাক্যের সম্পূর্ণ অর্থ স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, তবে বাক্যটি আসত্তিগুণ সম্পন্ন।

যোগ্যতা:বাক্যস্থিত পদসমূহের অর্থগত ও ভাবগত মেলবন্ধনের নাম যোগ্যতা। যেমন: বর্ষার বৃষ্টিতে প্লাবনের সৃষ্টি হয় – বাক্যটি যোগ্যতা সম্পন্ন, কিন্তু বর্ষার রোদে প্লাবনের সৃষ্টি হয় বললে বাক্যটি তার যোগ্যতা হারাবে। কারণ, রোদের কারণে কখনো প্লাবণ সংঘঠিত হয় না। অর্থ্যাৎ বাক্যের অর্থ যদি সত্য ও যুক্তিযুক্ত হয় তাহলেই বাক্যের যোগ্যতা গুণ থাকবে।

বাক্যের প্রকারভেদ

অর্থ অনুসারে

অর্থ অনুযায়ী বাক্য দুই প্রকার। যথা: ইতিবাচক ও নেতিবাচক বাক্য।

ইতিবাচক: যে বাক্য দ্বারা হ্যাঁ-বোধক অর্থ প্রকাশিত হয়, তাকে হ্যাঁবাচক বা ইতিবাচক বাক্য বলে। যেমন: আমি লেখালেখি করি। সে স্কুলে যায়।

নেতিবাচক: যে বাক্য দ্বারা না-বোধক অর্থ প্রকাশিত হয়, তাকে নেতিবাচক বাক্য বলে। যেমন: আমি লেখালেখি করি না। সে স্কুলে যায় না।

গঠন অনুসারে

গঠন অনুসারে বাক্য তিন প্রকার। যথা:

  • সরল বাক্য
  • জটিল বাক্য
  • যৌগিক বাক্য 

সরল বাক্য: যে বাক্যে একটিমাত্র কর্তা (উদ্দেশ্য) এবং একটিমাত্র সমাপিকা ক্রিয়া (বিধেয়) থাকে, তাকে সরল বাক্য বলে। যেমন: ছেলেরা ফুটবল খেলছে; এখানে ছেলারা বাক্যের কর্তা ও খেলছে সমাপিকা ক্রিয়া।

জটিল বাক্য: যে বাক্যে একটি প্রধান বাক্যাংশ এবং এক বা একাধিক অপ্রধান বা আশ্রিত বাক্যাংশ থাকে, তাকে মিশ্র বা জটিল বাক্য বলে। যেমন: যে মানুষের সেবা করে, সেই শ্রেষ্ঠ মানুষ। এখানে যে মানুষের সেবা করে আশ্রিত বাক্যাংশ ও সেই শ্রেষ্ঠ মানুষ প্রধান বাক্যাংশ।

যৌগিক বাক্য: পরস্পর নিরপেক্ষ দুই বা দুয়ের অধিক বাক্য যখন কোনো যোজক দ্বারা যুক্ত হয়ে একটি সম্পূর্ণ বাক্য তৈরি করে, তখন তাকে যৌগিক বাক্য বলে। যেমন: সে দরিদ্র, কিন্তু সুখী। এখানে ‘কিন্তু’ যোজক দ্বারা ‘সে দরিদ্র’‘সুখী’ বাক্যাংশদুটি যুক্ত হয়েছে।

ক্রিয়ার উপস্থিতি অনুসারে

বাক্যের বিধেয় অংশে ক্রিয়াপদের উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে বাক্যকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

সক্রিয় বাক্য: বিধেয় অংশে ক্রিয়া উপস্থিত থাকে। যেমন: তার বাবা সরকারি চাকরি করেন; এখানে বিধেন অংশ ‘সরকারি চাকরি করেন’ – এ ক্রিয়াপদ ‘করেন’ উপস্থিত আছে।

অক্রিয় বাক্য: বিধেয় অংশে ক্রিয়া উপস্থিত থাকে না। যেমন: করিম বাংলাদেশের নাগরিক; এখানে বিধেয় অংশ ‘বাংলাদেশের নাগরিক’ – এ ক্রিয়াপদ অনুপস্থিত।

বক্তব্যের লক্ষ্য বা বর্ণনা অনুসারে

বর্ণনা অনুসারে বাক্যকে নিম্নোক্তভাবে ভাগ করা যায় –

  • বর্ণনামূলক বাক্য
  • প্রশ্নবাচক বাক্য
  • অনুজ্ঞামূলক বাক্য
  • আবেগসূচক বাক্য ইত্যাদি।

বাক্যের যোগ্যতা

শব্দের যোগ্যতার সঙ্গে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো জড়িত থাকে-

রীতিসিদ্ধ অর্থবাচকতা: প্রকৃতি-প্রত্যয়জাত অর্থে শব্দ সর্বদা ব্যবহৃত হয়। যোগ্যতার দিক থেকে রীতিসিদ্ধ অর্থের প্রতি লক্ষ্য রেখে কতগুলো শব্দ ব্যবহার করতে হয়। যেমন:

  • বাধিত শব্দের রীতিসিদ্ধ অর্থ অনুগৃহীত বা কৃতজ্ঞ কিন্তু প্রকৃতি প্রত্যয়জাত অর্থ (বাধ + ইত) – বাধাপ্রাপ্ত।
  • তৈল শব্দের রীতিসিদ্ধ অর্থ তিল জাতীয় কিন্তু প্রকৃতি প্রত্যয়জাত অর্থ (তিল + ষ্ণ) তিলজাত স্নেহ পদার্থ, বিশেষ কোনো শস্যের রস

দুর্বোধ্যতা: অপ্রচলিত, দুর্বোধ্য শব্দ ব্যবহার করলে বাক্যের যোগ্যতা বিনষ্ট হয়। যেমন: তুমি আমার সঙ্গে প্রপঞ্চ করেছ। এখানে প্রপঞ্চ অর্থ চাতুরী বা মায়া কিন্তু বাংলা ভাষায় ‘প্রপঞ্চ’ শব্দটি অপ্রচলিত।

উপমার ভুল প্রয়োগ: ঠিকভাবে উপমা ব্যবহার না করলে যোগ্যতা হানি ঘটে। যেমন: আমার হৃদয়-মন্দিরে আশার বীজ উপ্ত হলো। বীজ ক্ষেতে উপ্ত করা হয়, মন্দিরে নয়। কাজেই বাক্যটি হওয়া উচিত: আমার হৃদয়-ক্ষেত্রে আশার বীজ উপ্ত হইল। অথবা, আমার হৃদয়-মন্দিরে আশার প্রদীপ জ্বলে উঠল।

বাহুল্য দোষ: প্রয়োজনের অতিরিক্ত শব্দ ব্যবহার করলে বাহুল্য দোষ ঘটে এবং এর ফলে বাক্য তার যোগ্যতা গুণ হারিয়ে থাকে।যেমন: দেশের সব আলেমগণ এ ব্যাপারে আমাদের সমর্থন দান করেন। ’আলেমগণ’ বহুবচনবাচক শব্দ। এর সঙ্গে ‘সব’ শব্দটি বাহুল্য দোষ করেছে। সঠিক বাক্য: দেশের সব আলেম এ ব্যাপারে আমাদের সমর্থন দান করেন। অথবা দেশের আলেমগণ এ ব্যাপারে আমাদের সমর্থন দান করেন।

বাগধারার শব্দ পরিবর্তন: বাগধারা ভাষাবিশেষের ঐতিহ্য। এর যথেচ্ছ পরিবর্তন করলে শব্দ তার যোগ্যতা হারায়। যেমন: ‘অরণ্যে রোদন’(অর্থ: নিষ্ফল আবেদন)-এর পরিবর্তে যদি বলা হয়,’বনে ক্রন্দন’ তবে বাগধারাটি তার যোগ্যতা হারাবে।

গুরুচণ্ডালি দোষ: তৎসম শব্দের সঙ্গে দেশীয় শব্দের প্রয়োগ কখনো কখনো গুরুচণ্ডালি দোষ সৃষ্টি করে। এ দোষে দুষ্ট শব্দ তার যোগ্যতা হারায়। যেমন: ‘গরুর গাড়ি’, ‘শবদাহ’, ‘মড়াপোড়া’ প্রভৃতি স্খলে যথাক্রমে ‘গরুর শকট’, ‘শবপোড়া’, ‘মড়াদাহ’ প্রভৃতির ব্যবহার গুরুচণ্ডালি দোষ সৃষ্টি করে।

বাক্য রূপান্তর

অর্থের কোনোরূপ রূপান্তর না করে এক প্রকারের বাক্যকে অন্য প্রকার বাক্যে রূপান্তর করার নামই বাক্য রূপান্তর। বাক্য রূপান্তরের সময় মনে রাখতে হবে বাক্যের অর্থ যেন পরিবর্তন না হয়।

সরল বাক্যকে মিশ্র বাক্যে রূপান্তর

সরল বাক্যকে মিশ্র বাক্যে পরিনত করতে হলে-

ধাপ ১

খণ্ডবাক্য

সরল বাক্যের সমাপিকা ক্রিয়া ও কর্তার পরিবর্তন না করে একে প্রধান উপবাক্য এবং অন্য অংশকে খণ্ডবাক্যে পরিণত করতে হয়।

ধাপ ১

ধাপ ২

সম্বন্ধসূচক পদ

প্রধান উপবাক্যকে এবং অপ্রধান উপবাক্যকে সম্বন্ধীয় অব্যয় দিয়ে সংযুক্ত করতে হয় যেন তারা পরস্পরের সাপেক্ষ হয়।

ধাপ ২

মিশ্র/জটিল বাক্যের সংযোগবিধানে ব্যবহৃত সম্বন্ধসূচক পদ: যদি-তবে, যে-সে, যারা-তারা, যেই-সেই, যে-তাকে/তারা, যা-তা, যেসব-তাদের/যেসকল-তারা, যাদের-তাদের/তারাই, যে-সেটি।

উদাহরণ: “ভালো ছেলেরা শিক্ষকের আদেশ পালন করে” একটি সরল বাক্য। এখানে বাক্যের কর্তা ভাল ছেলে এবং সমাপিকা ক্রিয়া পালন করে। একে মিশ্র বা জটিল করা যায় এভাবে – “যারা ভালো ছেলে, তারা শিক্ষকের আদেশ পালন করে”। এখানে “তারা শিক্ষকের আদেশ পালন করে” এবং “যারা ভালো ছেলে” যথাক্রমে প্রধান খন্ডবাক্য ও আশ্রিত বাক্য। “যারা-তারা” হল এ বাক্যের সম্মন্ধসূচক পদ যা দ্বারা বাক্য দুটিকে পরস্পরের সাপেক্ষ করা হয়েছে। অনুরূপভাবে-

সরল বাক্যমিশ্র বাক্য
তার দর্শনমাত্রই আমরা প্রস্থান করলাম।যেই তার দর্শন পেলাম, সেই আমরা প্রস্থান করলাম।
ভিক্ষুককে দান কর।যে ভিক্ষা চায়, তাকে দান কর।

মিশ্র বাক্যকে সরল বাক্যে রূপান্তর

মিশ্র বাক্যকে সরল বাক্যে রূপান্তর করতে হলে –

ধাপ ১

কর্তা ও সমাপিকা ক্রিয়া অপরিবর্তিত

মিশ্র বাক্যের প্রধান খণ্ডবাক্যের কর্তা ও সমাপিকা ক্রিয়া অপরিবর্তিত থাকবে

ধাপ ১

ধাপ ২

অব্যয় বিলুপ্তি

সম্মন্ধসূচক অব্যয় বিলুপ্ত হবে

ধাপ ২

ধাপ ৩

অপ্রধান খণ্ডবাক্য সংকোচন

অপ্রধান খণ্ডবাক্যটিকে সংকুচিত করে একটি পদ বা একটি বাক্যাংশে পরিণত করতে হয়। সংকোচনের ক্ষেত্রে সমাস, প্রত্যয় বা নতুন শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে।

ধাপ ৩

উদাহরণ: যাদের বুদ্ধি নেই তারাই এ কথা বিশ্বাস করবে। এখানে বাক্যের কর্তা হল যাদের বুদ্ধি নেই বা নির্বোধ এবং সমাপিকা ক্রিয়া হল বিশ্বাস করবে। বাক্যটিকে এভাবে সরল বাক্যে পরিণত করা যায়: নির্বোধরা/ বুদ্ধিহীনরা এ কথা বিশ্বাস করবে। অনুরূপভাবে-

মিশ্র বাক্য: যতদিন জীবিত থাকব ততদিন এ ঋণ স্বীকার করব।
সরল বাক্য: আজীবন এ ঋণ স্বীকার করব।

মিশ্র বাক্য: যে সকল পশু মাংস ভোজন করে তারা অত্যন্ত বলবান।
সরল বাক্য: মাংসভোজী পশু অত্যন্ত বলবান।

সরল বাক্যকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর

সরল বাক্যকে যৌগিক বাক্যে পরিণত করতে হলে-

ধাপ ১

নিরপেক্ষ বাক্য

সরল বাক্যের কোনো অংশকে নিরপেক্ষ বাক্যে রূপান্তর করতে হয়।

ধাপ ১

ধাপ ২

সংযোজক বা বিয়োজক অব্যয়

যথাসম্ভব সংযোজক বা বিয়োজক অব্যয়ের প্রয়োগ করতে হয়।

ধাপ ২

যৌগিক বাক্যের সংযোজক অব্যয়: এবং, কিন্তু, তথাপি, তবে, তাই।

উদাহরণ: “তিনি আমাকে পাঁচ টাকা দিয়ে বাড়ি যেতে বললেন” একটি সরল বাক্য। একে যৌগিক বাক্য করলে দাড়ায় – “তিনি আমাকে পাঁচটি টাকা দিলেন এবং বাড়ি যেতে বললেন”। এখানে “তিনি আমাকে পাঁচটি টাকা দিলেন” এবং “বাড়ি যেতে বললেন” দুটি নিরপেক্ষ অংশ ও ‘এবং’ তাদের সংয়োজক অব্যয়।

সরল বাক্য: পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য এখন থেকেই তোমার পড়া উচিত।
যৌগিক বাক্য: এখন থেকেই তোমার পড়া উচিত তবেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবে।

সরল বাক্য: আমি বহু কষ্টে শিক্ষা লাভ করেছি।
যৌগিক বাক্য: আমি বহু কষ্ট করেছি ফলে শিক্ষা লাভ করেছি।

যৌগিক বাক্যকে সরল বাক্যে রূপান্তর

যৌগিক বাক্যকে সরল বাক্যে রূপান্তর করতে হলে –

ধাপ ১

সমাপিকা ক্রিয়া

বাক্যসমূহের একটি সমাপিকা ক্রিয়াকে অপরিবর্তিত রাখতে হয় এবং অন্যান্য সমাপিকা ক্রিয়াকে অসমাপিকা ক্রিয়ায় পরিণত করতে হয়।

ধাপ ১

ধাপ ২

হেতুবোধক বাক্যাংশ

কোনো কোনো স্থলে একটি বাক্যকে হেতুবোধক বাক্যাংশে পরিণত করতে হয়।

ধাপ ২

ধাপ ৩

অব্যয় পদ

অব্যয় পদ থাকলে তা বর্জন করতে হয়।

ধাপ ৩

উদাহরণ: “সত্য কথা বলিনি তাই বিপদে পড়েছি” – একটি যৌগিক বাক্য। একে সরল বাক্যে পরিণত করলে দাড়ায়- “সত্য কথা না বলে বিপদে পড়েছি”। এখানে “পড়েছি” সমাপিকা ক্রিয়াটি অপরিবর্তিত আছে এবং ‘বলিনি’ ক্রিয়াটি অসমাপিকায় ক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে। বলিনিকে হেতুবোধক ‘না বলে’ বাক্যাংশে পরিণত করা হয়েছে এবং ‘তাই’ অব্যয় পদ বিলুপ্ত হয়েছে।

যৌগিক বাক্য: তার বয়স হয়েছে কিন্তু বুদ্ধি হয়নি।
সরল বাক্য : তার বয়স হলেও বুদ্ধি হয়নি।

যৌগিক বাক্য: মেঘ গর্জন করে তবে ময়ূর নৃত্য করে।
সরল বাক্য : মেঘ গর্জন করলে ময়ূর নৃত্য করে।

যৌগিক বাক্যকে মিশ্র বাক্যে রূপান্তর

যৌগিক বাক্যের অন্তর্গত পরস্পর নিরপেক্ষ বাক্য দুটির প্রথমটির পূর্বে ‘যদি’ কিংবা ‘যদিও’ এবং দ্বিতীয়টির পূর্বে ‘তাহলে’ (তাহা হইলে) কিংবা ‘তথাপি’ অব্যয়গুলো ব্যবহার করতে হয়। যেমন:

যৌগিক বাক্য: দোষ স্বীকার কর তবে তোমাকে কোনো শাস্তি দেব না।
মিশ্র বাক্য: যদি দোষ স্বীকার কর তাহলে তোমাকে কোনো শাস্তি দেব না।

যৌগিক বাক্য: তিনি অত্যন্ত দরিদ্র কিন্তু তাঁর অন্তঃকরণ অতিশয় উচ্চ।
মিশ্র বাক্য: যদিও তিনি অত্যন্ত দরিদ্র তথাপি তাঁর অন্তঃকরণ অতিশয় উচ্চ।

যৌগিক বাক্য: এ গ্রামে একটি দরগাহ আছে সেটি পাঠানযুগে নির্মিত হয়েছে।
মিশ্র বাক্য: এ গ্রামে যে দরগাহ আছে সেটি পাঠানযুগে নির্মিত হয়েছে।

মিশ্র বাক্যকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর

মিশ্র বাক্যকে যৌগিক বাক্যে পরিবর্তন করতে হলে খণ্ডবাক্যকে এক একটি স্বাধীন বাক্যে পরিবর্তন করে তাদের মধ্যে সংযোজক অব্যয়ের ব্যবহার করতে হয়। যেমন :

মিশ্র বাক্য: যদি সে কাল আসে তাহলে আমি যাব।
যৌগিক বাক্য: সে কাল আসবে এবং আমি যাব।

মিশ্র বাক্য: যখন বিপদ আসে তখন দুঃখও আসে।
যৌগিক বাক্য: বিপদ এবং দুঃখ এক সময়ে আসে।

মিশ্র বাক্য: যদিও তাঁর টাকা আছে তথাপি তিনি দান করেন না।
যৌগিক বাক্য: তাঁর টাকা আছে কিন্তু তিনি দান করেন না।

বাক্যের বর্গ

বাক্যমধ্যস্থ ঘনিষ্ট সম্পর্কযুক্ত একাধিক শব্দ নিয়ে গঠিত বাক্যাংশকে বর্গ বলে। বর্গকে বাক্যের একক বলা হয়, কারণ মানুষ কথা বলার সময় সাধারণত বর্গের পরে বর্গ বসিয়ে বাক্য গঠন করে। যেমন: আরিফ ও আফিফ স্কুল-বাসে উঠে পড়েছে; এখানে ‘আরিফ ও আফিফ’, ‘স্কুল-বাসে’ এবং ‘উঠে পড়েছে’ একেকটি বর্গ। বর্গ বাক্যের মধ্যে যে পদের মত আচরণ করে সেই পদ অনুসারে তার নাম হয়। যেমন:

বিশেষ্যবর্গ

  • অসুস্থ ছেলেটি আজ স্কুলে আসেনি।
  • করিম ভাই পড়তে বসেছে।

বিশেষণবর্গ

  • করিম সাহেব সত্যিকারের নির্লোভ ব্যক্তি।
  • পোকায় খাওয়া কাঠ দিয়ে আসবাব বানানো ঠিক নয়।

ক্রিয়াবিশেষণ বর্গ

  • সকাল ১১টার সময়ে সে রওনা হলো।
  • ট্রেন দশ নম্বর প্লাটফর্মে গিয়ে দাড়ালো।

ক্রিয়াবর্গ

  • রাশিয়ার সৈন্যদল এগিয়ে চলেছে
  • করিম অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর বসে পড়ল
21

বাক্য প্রকরণ

বিগত সালের প্রশ্ন

1 / 22

'তার বয়স বাড়লেও বুদ্ধি বাড়ে নি' এটি কোন ধরনের বাক্য?

2 / 22

'সকল আলেমগণ আজ উপস্থিত।' বাক্যটি কোন দোষে দুষ্ট?

3 / 22

'যদি সত্যি বল, তাহলে মুক্তি পাবে' এটি কোন ধরনের বাক্য?

4 / 22

কোনটি বাক্যের বৈশিষ্ট নয় / কোনটি সার্থক বাক্যের গুণ নয়?

5 / 22

'তার চুল পেকেছে, কিন্তু বুদ্ধি পাকে নি' এটি কোন ধরনের বাক্য?

6 / 22

কোনটি বাক্যের বাহন?

7 / 22

'সত্যি সেলুকাস, এ দেশ বড় বিচিত্র' কোন বাক্য?

8 / 22

'সে আসতে চায়, তথাপি আসে না' এটি কোন শ্রেণির বাক্য?

9 / 22

'নালিশটা অযৌক্তিক' কোন ধরনের বাক্য?

10 / 22

'গাড়িঘোড়া চড়লে লেখাপড়া কর' এই সরল বাক্যটির যৌগিকরূপ কোনটি?

11 / 22

বাক্যের মৌলিক উপাদান কোনটি?

12 / 22

'সুশিক্ষিত লোক মানেই স্বশিক্ষিত' এটি কোন ধরনের বাক্য?

13 / 22

'সত্য কথা বলিনি, তাই বিপদে পড়েছি' কোন শ্রেণির বাক্য?

14 / 22

'জ্ঞানী লোক সকলের শ্রদ্ধার পাত্র' এটি কোন ধরনের বাক্য?

15 / 22

'বল বীর, চির উন্নত মম শির' বাক্যটি কী?

16 / 22

গঠন অনুসারে বাক্য কত প্রকার?

17 / 22

'আমি যাব, তবে কাল যাব' এটি কোন শ্রেণীর বাক্য?

18 / 22

'গুরুচণ্ডালী দোষ' বলতে বোঝায়-

19 / 22

ভাষার মূল উপকরণ কী?

20 / 22

আকাঙ্ক্ষা, আসক্তি ও যোগ্যতা - এ তিনটি কিসের গুণ?

21 / 22

'আমার হৃদয় মন্দিরে আশার বীজ উপ্ত হলো' বাক্যটিতে কোন দোষ আছে?

22 / 22

প্রতিটি বাক্যের প্রধান অংশ কয়টি থাকে?

Your score is

The average score is 61%

0%

Rate this quiz

References

Leave a Reply