যতিচিহ্ন, বিরামচিহ্ন বা ছেদচিহ্ন হল সেইসব সাংকেতিক চিহ্ন যেগুলো লেখ্যমাধ্যমে ব্যবহার করে বাক্যের বিভিন্ন ভাব, যেমন: জিজ্ঞাসা, বিস্ময়, সমাপ্তি ইত্যাদি সার্থকভাবে প্রকাশের মাধ্যমে বাক্যের অর্থ সুস্পষ্ট করা হয়। মুখের কথাকে লিখিত রূপ দেওয়ার সময় কম-বেশি থামা বোঝাতে ও বক্তব্য স্পষ্ট করতে যেসব চিহ্ন ব্যবহৃত হয় সেগুলো কেই যতিচিহ্ন বলে।
যতি চিহ্নের বিরতিকাল
যতিচিহ্ন | বিরতিকাল |
---|---|
কমা (,) | ‘এক’ বলতে যে সময় প্রয়োজন |
উদ্ধরণ চিহ্ন (“”) | ‘এক’ বলতে যে সময় প্রয়োজন |
সেমিকোলন (;) | ‘এক’ বলার দ্বিগুণ সময় |
দাড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ (।) জিজ্ঞাসা চিহ্ন (?) বিস্ময় চিহ্ন (!) কোলন (:) কোলন ড্যাস (:-) ড্যাস (-) | এক সেকেন্ড |
ইলেক বা লোপচিহ্ন (‘) হাইফেন (-) ব্রাকেট ( (), {}, [] ) | থামার প্রয়োজন নেই |
যতি চিহ্ন ব্যবহারের নিয়ম
দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ (। )
বিবৃতিমূলক ও অনুজ্ঞামূলক বাক্যের শেষে দাঁড়ি ব্যবহৃত হয়। যেমন:
- বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ।
- যথাযত অনুসন্ধানের পর বলা যাবে কী ঘটেছিল।
- দেখা দরকার বাংলাদেশের উন্নয়নে অংশীদার কারা।
কমা (,)
যেখানে স্বল্প বিরতির প্রয়ােজন সেখানে কমা ব্যবহৃত হয়। কমার কিছু ব্যবহার –
- বাক্যের একাধিক অংশকে আলাদা করে প্রকাশ করতে কমার প্রয়োজন হয়। জটিল বাক্যের অন্তর্গত প্রত্যেক খণ্ডবাক্যের পরে কমা বসবে। যেমন: কাল তুমি যাকে দেখেছ, সে আমার বাবা।
- পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত একাধিক বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ একসঙ্গে বসলে শেষ পদটি ছাড়া বাকি সবগুলাের পরই কমা বসবে। যেমন: গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত বাংলাদেশের ছয়টি ঋতু।
- সম্বােধনের পরে কমা বসাতে হয়। যেমন: সুজন, এদিকে এসাে।
- উদ্ধৃতির শুরুতে ‘কমা’ বসাতে হবে। যেমন- করিম সাহেব বললেন, “আজ দুপুরে ভোজন হবে।”
- তারিখ লেখার সময় ‘কমা’ বসাতে হয়। যেমন: বৃহস্পতিবার, ২০২২ সন। ২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২।
- বাড়ি বা রাস্তার নাম্বরের পরে কমা ব্যবহৃত হয়। যেমন: ৫৮, মিরপুর রোড, ঢাকা-১০০০
- নামের পরে ডিগ্রিসূচক পরিচয় সংযােজিত হলে সেগুলাের প্রত্যেকটির পরে কমা বসবে। যেমন: ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক, এম.এ, পি-এইচ.ডি।
কোলন (:)
একটি অপূর্ণ বাক্যের পরে অন্য একটি বাক্য শুরু করতে হলে সাধারণত কোলন চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন:
- সভায় সিদ্ধান্ত হলাে: একমাস পরে নতুন সভাপতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
- ভাষার দুটি রূপ: কথ্য ও লেখ্য।
সেমিকোলন ( ; )
কমা অপেক্ষা বেশি বিরতির প্রয়ােজন হলে, সেমিকোলন ব্যবহৃত হয়। একাধিক স্বাধীন কিন্তু পরস্পর সম্পর্কযুক্ত বাক্যকে একটি বাক্যে লিখতে অথবা একই ধরণের বর্গকে পাশাপাশি লিখতে সেমিকোলন বসে। যেমন:
- সংসারের মায়াজালে আবদ্ধ আমরা; এ মায়ার বাধন কি সত্যিই দুচ্ছেদ্য?
- তিনি পড়েছেন বিজ্ঞান; পেশা ব্যাংকার; আর নেশা সাহিত্যচর্চা।
প্রশ্নবােধক চিহ্ন (?)
কোন কিছু জিজ্ঞাসা করা হলে শেষে প্রশ্নবােধক চিহ্ন বসে। যেমন:
- আপনি কেমন আছেন?
- আপনারা কোথায় যাবেন?
- বাংলাদেশের রাজধানীর নাম কী?
বিষ্ময়বোধক চিহ্ন (!)
হৃদয়াবেগ বা বিষ্ময় প্রকাশ করতে সম্বােধন পদের পরে (!) চিহ্ন বসে। যেমন:
- আহা! কী সুন্দর দৃশ্য।
- মানে কী! সে আর কাজ করবে না!
ড্যাস চিহ্ন (-)
যৌগিক ও মিশ্র বাক্যে পৃথক ভাবাপন্ন দুই বা তার বেশি বাক্যের সমন্বয় বা সংযােগ বোঝাতে ড্যাস চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন:
- তােমরা দরিদ্রের উপকার কর – এতে তােমাদের সম্মান যাবে না – বাড়বে।
- ঐ লোকটি – যিনি গতকাল এসেছিলেন – তিনি আমার মামা।
হাইফেন বা সংযােগ চিহ্ন (-)
সমাসবদ্ধ পদের অংশগুলাে বিচ্ছিন্ন করে দেখানাের জন্য হাইফেনের ব্যবহার হয়। সহজভাষায়, দুটি শব্দের সংযোগ বোঝাতে হাইফেন ব্যবহৃত হয়। যেমন:
- এ আমাদের শ্রদ্ধ-অভিনন্দন, আমাদের প্রতি উপহার।
- জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এ দেশের নাগরিক।
ইলেক (‘) বা লােপ চিহ্ন
কোনাে বর্ণ বিশেষের লােপ বােঝাতে বিলুপ্ত বর্ণের জন্য (‘) লােপচিহ্ন দেওয়া হয়। যেমন: মাথার ‘পরে (ওপরে) জ্বলছে রবি।
উদ্ধার চিহ্ন (” বা ‘‘ ’’)
সাধারণত বক্তার প্রত্যক্ষ উক্তিকে উদ্ধার চিহ্নের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। যেমন:
- ‘সিরজউদ্দৌলা’ একটি ঐতিহাসিক নাটক।
- শিক্ষক বললেন, “গতকাল ভয়ানক ভূমিকম্প হয়েছে।”
বিন্দু (.)
শব্দসংক্ষেপ, ক্রমনির্দেশ ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন:
- ড. আবদুল হাই
- ভাষার উপাদান চারটি। যথা: ১. ধ্বনি, ২. শব্দ, ৩. বাক্য ও ৪. অর্থ।
ত্রিবিন্দু (…)
কোন অংশ বাদ দিতে চাইলে ত্রিবিন্দু ব্যবহৃত হয়। যেমন: আমাদের ঐক্য বাইরের। … এ ঐক্য সজীব, সকর্মক নয়।
বিকল্পচিহ্ন (/)
একটির বদলে অন্যটির সম্ভাবনা বোঝাতে বিকল্পচিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: শুদ্ধ/অশুদ্ধ চিহ্নিত করুন।