রেনেসাঁ
Renaissance বা রেনেসাঁর অর্থ পুনর্জাগরণ। আনুমানিক চতুর্দশ থেকে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপে বিশেষ করে ইতালিতে যে সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ ঘটেছিল তাই রেনেসাঁ নামে পরিচিত। ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে এর সূত্রপাত হয়। এসময় আর্থ সামাজিক ব্যবস্থার উন্মেষ ও বিকাশের মধ্য দিয়ে ইউরোপের সামাজিক জীবনে ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা ঘটে।
- আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক নিকোলা ম্যাকিয়াভ্যালি – কে রেনেসাঁর বরপুত্র বলা হয়। তার বিখ্যাত গ্রন্থ – The Prince, Discourages on Livy.
- ইতালির চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি – কে রেনেসাঁর অগ্রদূত বলা হয়। তার উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্ম – মোনালিসা, দ্য লাস্ট সাপার, ভিত্রুভিয়ানো মানব, লেডি উইথ অ্যান এরমাইন ইত্যাদি।
Reformation ও ওয়েস্টফালিয়া শান্তিচুক্তি
ষোড়শ শতকে জার্মান ধর্ম সংস্কারক মার্টিন লুথারের নেতৃত্বে Reformation বা খ্রিস্টান ধর্মের সংস্কার আন্দোলন বা প্রোটেস্টান্ট সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। এর প্রভাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ধর্মযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। ১৬৪৮ সালে জার্মানির ওয়েস্টফালিয়ায় শান্তিচুক্তির মাধ্যমে এ যুদ্ধ শেষ হয়। এ যুদ্ধের অপর নাম ৩০ বছর ব্যাপী যুদ্ধ (১৬১৮ – ১৬৪৮)। মোট ৩টি শান্তিচুক্তি: পিস অব মুনস্টার, মুনস্টার চুক্তি ও ওসনাব্রাক চুক্তি – কে একত্রে “ওয়েস্টফালিয়া শান্তিচুক্তি” বলা হয়।
গৌরবময় বিপ্লব
ব্রিটিশ রাজা দ্বিতীয় জেমস ক্যাথোলিকতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় উদ্যত হলে তার বিরুদ্ধে ১৬৮৮-৮৯ সালে ইংল্যান্ডে গৌরবময় বিপ্লব সংঘঠিত হয়। এটি ইংল্যান্ডে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার বিপ্লব হিসেবে পরিচিত। হউস অব লর্ডেসের সদস্যরা এ বিপ্লবের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এ বিপ্লবের ফলে রাজতন্ত্রের একচ্ছত্ব ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং ব্রিটেনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া ১৬৮৯ এর ঐতিহাসিক Bill of Rights স্বাক্ষরের মাধ্যমে ইংল্যান্ডে মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে English Bill of Rights ও Virginia Declaration of Rights – এর ওপর ভিত্তি করে ১৭৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে US Bill of Rights প্রনয়ন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম ১০টি সংশোধনীকে একত্রে US Bill of Rights বলা হয়। বিলটি রচনা করেন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের জনক জেমস মেডিসন।
রাজতন্ত্রের একচ্ছত্ব ক্ষমতা হ্রাস, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং Bill of Rights এর মাধ্যমে মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা – গৌরবময় বিপ্লবের মূল উপজীব্য
শিল্পবিপ্লব
১৭৬০ এর দশকে ইংল্যান্ড শিল্পবিপ্লবের সূচনা হয়। ১৮৩৮ সালে শিল্পবিপ্লব কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন অগাস্ত ব্লাংকি (ঐতিহাসিক)। ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব সংগঠিত হওয়ার একটি বড় কারণ ছিল ঔপনিবেশিক ব্যাবসা-বাণিজ্য থেকে প্রাপ্ত পুঁজির জোগান। শিল্পবিপ্লবের ৪টি পর্যায়-
- ১ম শিল্পবিপ্লব (১৭৫০-১৮৫০): ১৭৮৪ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কৃত হয়। এছাড়া কয়লা খনি ও ইস্পাতের আবিষ্কার হওয়ার ফলে শিল্পক্ষেত্রে বিপ্লব সংঘঠিত হয়।
- ২য় শিল্পবিপ্লব (১৮৭০-১৯১৪): ১৮৭০ সালে বিদ্যুৎতের আবিষ্কার এ বিপ্লবের অন্যতম অনুঘটক।
- ৩য় শিল্পবিপ্লব (১৯৬০-১৯৯০): ইন্টারনেট ও ট্রান্জিস্টর আবিষ্কৃত হয়। এসময় যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার ঘটে।
- ৪র্থ শিল্পবিপ্লব: ২০১৫ সালে ডব্লিউইএফের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী প্রধান ক্লাউস শোয়াব চতুর্থ শিল্পবিপ্লব শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। এ বিপ্লবের অপর নাম ডিজিটাল বিপ্লব।
যুদ্ধ / বিপ্লব (সশস্ত্র)
আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ (১৭৭৫ থেকে ১৭৮৩)
মূলত ব্রিটিশ পার্লামেন্ট কর্তৃক কর আরোপের কারণে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। এই করকে মার্কিনীরা বেআইনি হিসেবে দেখত। ১৭৭৪ সালে সাফোক রিসলভস ম্যাসাচুসেটস বে প্রদেশের রাজকীয় সরকার অধিকার করলে বিদ্রোহ শুরু হয়। এর ফলে সৃষ্ট উত্তেজনার ফলে পেট্রিওট মিলিশিয়া ও ব্রিটিশ নিয়মিত সেনাবাহিনীর মধ্যে ১৭৭৫ সালে লেক্সিংটন ও কনকর্ডের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ১৭৭৬ সালের বসন্ত নাগাদ পেট্রিওটরা ১৩ টি উপনিবেশে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করে এবং ১৭৭৬ সালের ৪ জুন কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস স্বাধীনতা ঘোষণা করে।১৭৮৩ সালে প্যারিসে প্রথম ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটেন আমেরিকার স্বাধীনতা মেনে নেয়।
- স্বাধীনতা ঘোষণা: ০৪ জুলাই ১৭৭৬। ১৩টি অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধিরা স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
- স্বাধীনতা স্বনদের রচয়িতা: থমাস জেফারসন
- স্বাধীনতা আন্দোলনের নায়ক: জর্জ ওয়াশিংটন
- স্বাধীনতা ব্রিটেন কর্তৃক স্বীকৃত হয়: প্রথম ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে
বোস্টন টি পার্টি: সন অব লিবার্টিদের একটি রাজনৈতিক প্রতিবাদ (চা আইনের বিরুদ্ধে)। তারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক প্রেরিত চায়ের একটি গোটা চালান ধ্বংস করে দেয়।
আমেরিকার গৃহযুদ্ধ (১৮৬১ – ১৮৬৫)
দাসপ্রথাকে কেন্দ্র করে আমেরিকার গৃহযুদ্ধ সংঘঠিত হয়েছিল। এ যুদ্ধ মূলত মার্কিন ফেডারেল সরকার ও বিপ্লবী ১১ টি দাস-নির্ভর প্রদেশের মাঝে সংগঠিত হয়। যুদ্ধে রাষ্ট্রপতি (১৬তম) আব্রাহাম লিঙ্কন-এর ফেডেরেল সরকার জয়ী হয়। ফলে দাস প্রথা বিলুপ্ত হয় এবং Emancipation Proclamation (মুক্তির ঘোষণা)- এর মাধ্যমে দাসদের মুক্ত করে দেওয়া হয়। আব্রাহাম লিঙ্কন সৎ প্রতিবেশী নীতির প্রবক্তা। তার বিখ্যাত উক্তি –
“Government of the people, by the people, for the people, shall not perish form the earth”.
আব্রাহাম লিঙ্কন
ফরাসি বিপ্লব (১৭৮৯ – ১৭৯৯)
ফরাসি রাজা ষোড়শ লুই আমেরিকাকে তার স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্মথন দেওয়ার ফলে ফরাসি রাজকোষ অর্থের সংকটে পড়ে। এতে রাজা অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেন যা বুর্জেয়া শ্রেণীকে অসন্তুষ্ট করে। এছাড়া বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে ফরাসি সমাজের ধনী-গরিব একত্রিতভাবে বিপ্লবের সূচনা করে। এ বিপ্লবের ফলে ফ্রান্সে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয় এবং একটি প্রজাতন্ত্রিক ব্যাবস্থা চালু হয়। ১৭৯৯ সালে নেপোলিয়ান ক্ষমতা গ্রহণ করলে ফরাসি বিপ্লবের সমাপ্তি ঘটে। ফরাসি বিপ্লবের নেতা ছিলেন রোবসপীয়র। এসময় ফ্রান্সের সামন্ততন্ত্রের অবসান হয়, ফ্রান্স একটি প্রজাতন্ত্র হয় এবং ফ্রান্সে পুঁজিবাদের যাত্রা শুরু করে।
- স্লোগান: স্বাধীনতা, সাম্য, ভাতৃত্ব্য অথবা মৃত্যু। স্লোগান রচয়িতা: দার্শনিক জ্যাঁ জ্যাক রুশো।
- বিপ্লবের স্মৃতি বহন করে: আইফেল টাওয়ার (১৮৮৯ সালে নির্মিত)।
- বিপ্লব সম্পর্কিত গ্রন্থ – The Social Contract, A Tale of Two Cities, The Spirit of Laws.
ফরাসি বিপ্লবের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
ট্রাফালাগার যুদ্ধ
ট্রাফালগার যুদ্ধ ১৮০৫খ্রি. ইংল্যন্ড এবং ফ্রান্স ও স্পেনের যৌথ বাহিনীর মধ্যে সংঘঠিত হয়। এ যুদ্ধে বৃটিশরা জয়ী হওয়ায় নেপোলিয়নের ইংল্যান্ড আক্রমণের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। ট্রাফালগার স্কয়ার বর্তমান লন্ডনে অবস্থিত।
ওয়াটারলুর যুদ্ধ
১৮১৫ খ্রি. বেলজিয়ামের (ব্রাসেলসের দক্ষিণে) ওয়াটারলু নামক স্থানে ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের বাহিনী ও সম্মিলিত ব্রিটিশ-প্রুশিয়ান বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। যুদ্ধে যুক্তরাজ্য জোটের নিকট নেপোলিয়ন পরাজিত হয় এবং তাকে সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসিত করা হয়। এ দ্বীপেই নেপোলিয়ন ১৮২১ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
ওয়াটারলুর যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
আফিমের যুদ্ধ
১ম আফিমের যুদ্ধ (১৮৩৯ সাল থেকে ১৮৪২ সাল)
আফিম বাণিজ্য এবং ইংরেজদের সম্রাজ্যবাদী মনভাবের কারণে চীন ও ব্রিটেনের মধ্যে প্রথম আফিমের যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। যুদ্ধে ব্রিটেন জয়ী হয় এবং ১৮৪২ সালে নানকিং চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ হয়। এ চুক্তির ফলে হংকং দ্বীপ ১০০ বছরের জন্য ব্রিটেনের অধিকারভুক্ত হয়। এছাড়া চীনের ৫টি বন্দর বিদেশি বণিকদের ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
২য় আফিমের যুদ্ধ (১৮৫৬ সাল থেকে ১৮৬০ সাল)
চীন আফিম বাণিজ্যের সাথে যুক্ত ব্রিটিশ পতাকাবাহী একটি জাহাজ আটক করলে ২য় আফিমের যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে চীনের বিরুদ্ধে ছিল ব্রিটেন ও ফ্রান্স। যুদ্ধে ব্রিটেন ও ফ্রান্স জোট জয়ী হয়। ১৮৫৮ সালে ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ফ্রান্স ও রাশিয়ার সাথে চীনের তিয়েন্তসিন নামক ৪টি চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ হয়। এ চুক্তির মাধ্যমে পূর্বের ৫টি বন্দরের সাথে চীনের আরও ১১টি বন্দর উন্মুক্ত করা হয়।
ক্রিমিয়া যুদ্ধ (১৮৫৩ সালে থেকে ১৮৫৬ সাল)
রাশিয়া বনাম তুরস্ক, ব্রিটেন ও ফ্রান্স। যুদ্ধে তুরস্ক ও মিত্রশক্তি জয় পায়।
১৮৫৩ সালের অক্টোবর মাসে তুরস্কের নিয়ন্ত্রিত দারদানেলিস প্রণালী দিয়ে যুদ্ধ জাহাজ চলাচলের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং তুরস্কের খ্রিষ্টানদের রক্ষার অজুহাতে অটোমান সাম্রাজ্যের তুর্কি এলাকায় রাশিয়া আক্রমণ চালালে ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সূচনা হয়। রাশিয়ার সঙ্গে এই যুদ্ধ চলে তুরস্ক তথা উসমানীয় বা অটোমান সাম্রাজ্য ও মিত্রশক্তি ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং সারডিনিয়ার।
ক্রিমিয়া যুদ্ধ
এক নজরে ১২০০-১৯০০ সালের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী –
সাল | ঘটনা |
---|---|
১২১৫ | যুক্তরাজ্যে পার্লামেন্ট চালু |
১৪৫৩ | ইউরোপে রেঁনেসা শুরু। তবে সময়কাল: রেঁনেসার ১৩০০-১৬০০। |
১৬৪৮ | ওয়েস্টফেলিয়া শান্তিচুক্তি |
১৬৮৯ | ইংল্যান্ডের গৌরবময় বিপ্লব (সংঘটিত হয়: ১৬৮৮-৮৯ সালে) Bill of Rights স্বাক্ষর |
১৭০৭ | গ্রেট ব্রিটেনে পার্লামেন্ট চালু |
১৭৫০-১৮৫০ | প্রথম শিল্পবিপ্লব |
১৭৭৫-১৭৮৩ | আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ |
১৭৭৬ | আমেরিকার স্বাধীনতা ঘোষণা |
১৭৮৩ | প্রথম ভার্সাই চুক্তি |
১৭৮৯ | ফরাসি বিপ্লবের শুরু US bill of Rights রচনা |
১৭৯৯ | নেপলিওনের ফ্রান্সের ক্ষমতা দখল ও ফরাসি বিপ্লবের সমাপ্তি |
১৮০৫ | ট্রাফলাগরা যুদ্ধ |
১৮১৫ | ওয়াটার লু যুদ্ধ |
১৮২১ | নেপোলিওন মারা যান |
১৮৩৯-১৮৪২ | প্রথম আফিম যুদ্ধ |
১৮৪২ | নানকিং চুক্তি |
১৮৫৩-১৮৫৬ | ক্রিমিয়া যুদ্ধ |
১৮৫৬-১৮৬০ | দ্বিতীয় আফিম যুদ্ধ/অ্যারো যুদ্ধ |
১৮৬১-১৮৬৫ | আমেরিকার গৃহযুদ্ধ |
১৮৬৩ | আমেরিকায় দাস প্রথার অবসান |
১৮৭০-১৯১৪ | দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লব |
১৮৮৬ | ফ্রান্স কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রকে স্ট্যাচু অব লিবার্টি প্রদান |
১৮৮৯ | আইফেল টাওয়ার স্থাপন |