বৈশ্বিক ইতিহাস

Estimated Reading Time: 47 Minutes

বৈশ্বিক ইতিহাস বলতে পৃথিবী নামক গ্রহে বসবাসকারী মানবজাতির ইতিহাসকে বোঝায়। প্রগৌতিহাসিক নিদর্শনগুলো থেকে পৃথিবীতে মানুষের প্রাচীন অস্তিত্বের ইতিহাস জানা যায়। ১৮৯১ সালে ইন্দোনেশিয়ার সোলো নদীর তীরে প্রাগৌতিহাসিক মানুষের মাথার খুলি পাওয়া যায় যার নাম দেওয়া হয় ‘জাভা মানব’। এছাড়া ১৯০৭ সালে ‘হেইডেলবার্গ মানব’ নামক মানুষের নিচের চোয়ালের হাড়, ১৯২৯ সালে চিনের বেইজিংয়ের নিকট ‘পিকিং মানব’ এবং ১৯৭৪ সালে ইথিওপিয়ায় ‘লুসি’ নামক কঙ্কাল আবিষ্কৃত হয়।

সূচিপত্র

মেসোপটেমিয়া সভ্যতা

বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল মেসোপটেমিয়ায়। গ্রিক শব্দ ‘মেসোপটেমিয়া‘- এর অর্থ দুই নদীর মধ্যবর্তী ভূমি। খ্রিস্টপুর্ব ৫০০০ অব্দে টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটটিস নদীর তীরে এ সভ্যতা গড়ে ওঠে। আধুনিক তুরস্ক, সিরিয়া, ইরান ও ইরাক (বেশির ভাগ অংশ) মেসোপটেমিয়া সভ্যতার অংশ ছিল।

সুমেরীয় সভ্যতা

সুমেরীয়দের আদিনিবাস এলামের পাহাড়ি এলাকা। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ অব্দে এদের একটি শাখা দক্ষিণ মেসোপটেমিয়াতে বসতি স্থাপন করে।

মেসোপটেমিয়ার উর্বর ভূমি শস্য উৎপাদনের জন্য খুবই অনুকূল ছিল। সুমেরীয়দের আয়ের মূল উৎস ছিল কৃষি। তারা খাল খনন করে উন্নত সেচ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। সুমেরিয়রা ‘কিউনিফরম‘ নামে একটি অক্ষরভিত্তিক বর্ণলিপি উদ্ভাবন করে। সুমেরীয়দের দুইটি গণনা করার পদ্ধতি ছিল: দশমিক পদ্ধতি, যা বর্তমানে ব্যবহার করা হয় এবং ষষ্ঠিক বা ৬০ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি। সুমেরীয়রাই সর্বপ্রথম এক ঘণ্টাকে ৬০ মিনিটে ভাগ করে। এছাড়াও সুমেরীয়রা জলঘড়ি এবং চন্দ্রপঞ্জিকা আবিষ্কার করে। ৩৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সুমেরীয়রা চাকা উদ্ভাবন করে।

ব্যাবিলনীয় সভ্যতা

সিরিয়ার অ্যামেরাইট জাতি মেসোপটেমিয়ায় ব্যাবিলনীয় সভ্যতা গড়ে তোলে। এ সভ্যতার স্থপতি ছিলেন অ্যামেরাইট নেতা হাম্মুরাবি। পৃথিবীর প্রথম লিখিত আইনের প্রনয়ণ করা হয় ব্যাবিলনে। এ সময় কিউনিফরম লিপিতে লেখা হয় মহাকাব্য ‘গিলগামেশ‘। ব্যাবিলনের উত্তরে গাথুর শহরের ধ্বংসাবশেষ থেকে পৃথিবীর প্রাচীনতম মানচিত্র পাওয়া গেছে।

অ্যাসেরীয় সভ্যতা

টাইগ্রিস নদীর তীরে ‘আশুর’ নামক একটি সমৃদ্ধ নগর গড়ে উঠেছিল। অ্যাসেরীয়রা সামরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী ছিল। তারা প্রথম লোহার অস্ত্রে সজ্জিত বাহিনী গঠন করে। যুদ্ধে তারা যুদ্ধরথের ব্যবহার করত। এছাড়া অ্যাসেরীয়রা প্রথম বৃত্তকে ৩৬০ ডিগ্রীতে এবং পৃথিবীকে অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশে ভাগ করে।

ক্যালডীয় সভ্যতা

এটি ‘নতুন ব্যাবিলনীয় সভ্যতা’ নামে পরিচিত। এ সভ্যতার স্থপতি সম্রাট নেবুচাদনেজার। তিনি ‘ব্যাবিলনের শূন্যউদ্যান’ নির্মাণের জন্য বিখ্যাত। ক্যালডীয়রা প্রথম সপ্তাহকে ৭দিনে এবং প্রতিদিনকে ১২জোড়া ঘন্টায় বিভক্ত করে।

প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা

মিশরে রাজবংশের প্রতিষ্ঠা হয় আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৩২০০ অব্দে। এসময় রাজা ‘মেনেস’ সমগ্র মিশরকে একত্রিত করে একটি নগর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং মেমফিস শহরে তাঁর রাজধানী স্থাপন করেন। প্রাচীন মিশরের রাজাদের বলা হত ফারাও। ফরাওদের মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য প্রাচীন মিশরে তৈরি করা হয় পিরামিড। মিশরের সবচেয়ে বড় পিরামিড হল ফারাও ফুকুর পিড়ামিড। এছাড়া মিশরীয়রা ‘স্ফিংস‘ নামে এক ধরনের ভাস্কর্য তৈরি করে। স্ফিংসের দেহ সিংহ এবং মাথা ফারাওয়ের আকৃতির। এ ভাস্কর্যগুলোকে ফারাওদের শক্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফারাওদের মৃতদেহকে মমি রূপে সংরক্ষণ করা হত।

মিশরীয়রা একধরনের চিত্রভিত্তিক লিখনপদ্ধতি ব্যবহার করত। এককেটি চিত্র একেকটি অক্ষরের প্রতীক ছিল। এ চিত্রলিপিকে ‘হায়ারোগ্লিফিক‘ বলা হয়। এছাড়া মিশরীয়রা সাদা কাগজ তৈরি করতে পারত। তারাই প্রথম ১২ মাসে এক বছর এবং ৩০ দিনে এক মাস গণনারীতির প্রচলন করে।

সিন্ধু সভ্যতা

খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের দিকে ভারতীয় উপমহাদেশের সিন্ধু নদের অববাহিকায় (বর্তমান পাকিস্তান) বিশাল সিন্ধু সভ্যতা গড়ে ওঠে। এর অপর নাম হারপ্পা সভ্যতা। এতে দুইটি বৃহৎ নগরী ছিল যাদের নাম ছিল হরপ্পা ও মহেঞ্জোদাড়ো। মহেঞ্জোদারোর সড়কগুলি চতর্ভুজাকৃতি ছকের মত সাজানো ছিল এবং প্রতিটি বাসাবাড়ি থেকে নালার মাধ্যমে পয়ঃনিষ্কাশনের সুন্দর ব্যবস্থা ছিল। রাখালদাস বন্ধোপাধ্যায় ১৯২২ সালে বর্তমান পাকিস্তানে মহেঞ্জোদারোর ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন।

এ সভ্যতার উল্লেখযোগ্য অবদান পরিমাপ পদ্ধতি আবিষ্কার। এ সময় পরিমাপের বাটখারা এবং বিভিন্ন স্কেল ব্যবহৃত হত।

ফিনিশীয় সভ্যতা

লেবানন পর্বত এবং ভূমধ্যসাগরের মাধ্যবর্তী ভূমিতে ফিনিশীয় সভ্যতা গড়ে ওঠে। প্রাচীন ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম নাবিক এবং জাহাজ নির্মাতা হিসেবে ফিনিশীয়দের গন্য করা হয়। তারা ধ্রুবতারা দেখে দিক নির্ণয় করত। ফিনিশীয়রা ২২টি ব্যাঞ্জনবর্ণ উদ্ভাবন করে। আধুনিক বর্ণমালার সূচনা হয় ফিনিশীয় বর্ণমালা থেকেই। পরবর্তীতে গ্রিকরা স্বরবর্ণ যোগ করে বর্ণমালা পূর্ণ করে।

পারস্য সভ্যতা

ইরানের প্রাচীন নাম পারস্য। পারসীয়রা একটি দক্ষ প্রসাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলে। এসময় জরথুষ্ট্র নামে এক ধর্মগুরু ও দার্শনিকের আবির্ভাব হয় এবং তিনি ‘জরথুষ্ট্রবাদ’ নামক ধর্ম প্রবর্তিত করেন। জরথুষ্ট্রীয়রা মৃতের সৎকারের জন্য চিলঘর ব্যবহার করত।

হিব্রু সভ্যতা

প্যালেস্টাইনের জেরুজালেম নগরীকে কেন্দ্র করে হিব্রু সভ্যতা বিকশিত হয়েছেল।

প্রাচীন চৈনিক সভ্যতা

তিনটি অঞ্চলে প্রাচীন চৈনিক সভ্যতা বেড়ে উঠতে থাকে। প্রথমটি হােয়াংহাে (অন্য নাম পীত বা হলুদ) নদীর তীরে, দ্বিতীয়টি ইয়াংসিকিয়াং নদীর তীরে আর তৃতীয়টি দক্ষিণ চীনে গড়ে উঠেছিল।
চীনের প্রাচীনতম দার্শনিক ছিলেন লাওৎসে। তার মতবাদের নাম ছিল তাওবাদ। চীনের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী দার্শনিক ছিলেন কনফুসিয়াস (৫৫১-৪৭৯ খ্রি.পূ.)। কনফুসিয়াসের প্রধান অনুসারী ছিলেন মেনসিয়াস। সন সু (Sun Tzu) ছিলেন প্রাচীন চীনের একজন সমরনায়ক, যুদ্ধকৌশলী ও দার্শনিক। তাকে ‘আর্ট অব ওয়ার’ বা ‘রণকৌশল’ নামক যুদ্ধবিদ্যার প্রাচীন চৈনিক বইটির রচয়িতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
চীনের মহাপ্রাচীর (Great Wall of China): চীনের প্রাচীর মনুষ্য নির্মিত সর্ববৃহৎ স্থাপনা। এটি চীনের উত্তর সীমান্তে অবস্থিত। মিনগ শাসনামলে পরিমাপকৃত পরিখা, প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকসহ প্রাচীরের দৈর্ঘ্য ৮৮৫০ কি.মি. (৫৫০০ মাইল)। শুধুমাত্র প্রাচীরের দৈর্ঘ্য ৬২৫৯ কিমি (৩৮৮৯ মাইল)। মহাপ্রাচীরের নির্মাণকাল –

  • প্রাচীন চীনের যুদ্ধরত রাজ্যকাল (৭৭০ – ২২১ খ্রিস্টপূর্ব)
  • কিন শাসনামলে (২২১ – ২০৭ খ্রিস্টপূর্ব)
  • হান শাসনামলে (২০৬ খ্রিস্টপূর্ব – ২২০ খ্রিস্টাব্দ)
  • মিন শাসনামলে (১৩৬৮ – ১৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ)
  • কুইং শাসনামলে (১৬৪৪ – ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ)

ইজিয়ান সভ্যতা

গ্রিস ও এশিয়া মাইনরকে পৃথক করেছে ইজিয়ান সাগর। এই ইজিয়ান সাগর জুড়ে ছিল ছােট বড় অনেক দ্বীপ। ইজিয়ান সাগরের দ্বীপমালা ও এশিয়া মাইনরের উপকূলে একটি উন্নত নগর সভ্যতা গড়ে উঠে। ইতিহাসে এ সভ্যতা ইজিয়ান সভ্যতা নামে পরিচিত। গ্রিসে সভ্যতা গড়ে তােলার প্রস্তুতি ছিল এ সভ্যতা। ১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ইজিয়ান সভ্যতার পতন ঘটে।

গ্রিক সভ্যতা

প্রাচীন গ্রিক সভ্যতা গড়ে উঠেছিল ভূমধ্যসাগরকে কেন্দ্র করে। ভৌগােলিক ও সাংস্কৃতিক কারণে গ্রিক সভ্যতার সাথে দুইটি সংস্কৃতির নাম জড়িয়ে আছে: হেলেনিক’ (Hellenic) এবং হেলেনিস্টিক (Hellenistic)। গ্রিসকে হেলেনীয় সভ্যতার দেশ বলা হয়। এথেন্সে (গ্রিসের শহর) শুরু থেকেই যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল, তাকে বলা হয় হেলেনিক সংস্কৃতি। এ সময় মিশরের আলেকজান্দ্রিয়াকে কেন্দ্র করে গ্রিক সংস্কৃতি ও অগ্রিক সংস্কৃতির মিশ্রণে এক নতুন সংস্কৃতির জন্ম হয়। ইতিহাসে এ সংস্কৃতির পরিচয় হয় হেলেনিস্টিক সংস্কৃতি নামে।

‘গ্রিক’ ও ‘গ্রিস’ শব্দ দুটি যথাক্রমে জাতি ও দেশ।

প্রচীন গ্রিসে বেশ কিছু নগর রাষ্ট্রর আবির্ভাব ঘটে। এসব প্রাচীন গ্রিক নগররাষ্ট্রগুলোর মধ্যে নেতৃস্থানীয় ছিল স্পার্টা ও এথেন্স। স্পার্টা সামরিক নগর রাষ্ট্র এবং এথেন্স ছিল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।

এথেন্সে রাষ্ট্র পরিচালনায় দুইটি সংসদ ছিল। গােত্র প্রধানদের নিয়ে গড়া সংসদকে বলা হত ‘এরিওপেগাস‘ এবং সাধারণ নাগরিকদের সমিতিকে বলা হত ‘একলেসিয়া’।

৪৬০ খ্রিস্টাব্দে পেরিক্লিস ক্ষমতায় আসার পর তিনি এথেন্সে চূড়ান্তভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন পেরিক্লিস। এথেন্সের বন্ধু রাষ্ট্রগুলাের জোটের নাম ছিল ‘ডেলিয়ান লীগ’ এবং স্পার্টার বন্ধু রাষ্ট্রগুলাের জোটের নাম ‘পেলােপনেসীয় লীগ’। এক সময় এই দুই জোটের মধ্য যুদ্ধ বেধে যায় যা ইতিহাসে ‘পেলােপনেসীয় যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। ৪৬০ থেকে ৪০৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত মােট তিনবার যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে চূড়ান্ত পতন ঘটে এথেন্সের। ৩৬৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এথেন্স চলে আসে স্পার্টার অধীনে। এরপর নগররাষ্ট্র থিবস দখল করে নেয় এথেন্স। ৩৩৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ম্যাসিডনের রাজা ফিলিপস থিবস অধিকার করে নেয়। খ্রিস্টপূর্ব ৩৩৫ অব্দে দ্বিতীয় ফিলিপসের মৃত্যু হলে আলেকজান্ডার ম্যাসিডনের সিংহাসনে আরােহণ করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ অব্দে ব্যাবিলনে তার মৃত্যু হয়।

ধর্ম

গ্রিকরা বহুদেবতায় বিশ্বাসী ছিল। গ্রিকদের প্রধান দেবতা ছিলেন জিউস। দেবতা এপােলাে ও দেবী এথেনাও ছিলেন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। গ্রিকবাসী বিশ্বাস করত দেবতাদের বাস উত্তর গ্রিসে অলিম্পাস পর্বতের চূড়ায়।

গ্রিক দেবী বা দেবতার নাম ও পরিচতি:

  • আফ্রোডাইট (Aphrodite) – ভালবাসা, রােমাঞ্চ এবং সৌন্দর্যের দেবী।
  • অ্যাপােলো (Apollo) – সূর্য, আলাে, চিকিৎসাবিদ্যা এবং সঙ্গীতের দেবতা।
  • এরিস (Ares) – যুদ্ধদেবতা।
  • আরটেমিস (Artemis) – শিকার, বন, উর্বরতা এবং চাঁদের দেবী।
  • এথেন (Athena) – প্রজ্ঞার দেবী (জিউসের কন্যা)।
  • ডিমিটার (Demeter) – কৃষি বিষয়ক দেবী।
  • হারমেস (Hermes) – ব্যবসা বিষয়ক দেবতা (রােমান নাম মারকারি)।
  • হেরা (Hera) – বিবাহ বন্ধন অটুট রাখার দেব। (জিউসের স্ত্রী)।
  • জিউস (Zeus) – দেবতাদের রাজা।

ট্রয়ের যুদ্ধ: গ্রিক পুরাণের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হল ট্রয়ের যুদ্ধ। মহাকবি হোমারের দুটো মহাকাব্য ইলিয়াড, ওডিসির মাধ্যমে এই রােমান্টিক ট্র্যাজেডি অমর হয়ে আছে। ট্রোজান যুদ্ধের কাহিনী জনপ্রিয় হয়ে উঠে যখন ১৮৬৮ সালে হেইনরিখ শ্লিম্যান এবং ফ্রাঙ্ক ক্যালভার্ট নামক দুজন প্রত্নতাত্ত্বিক তুরস্কের হিসার্লিক অঞ্চলে ট্রয় নগরী খুঁজে পান।

কাহিনীর শুরুটা হয়েছিল তিনজন গ্রিক দেবীর মধ্যে ঝগড়ার কারণে। দেবী তিনজন হলেন এথেনা, হেরা এবং আফ্রিদিতি। ইনাদের মধ্যে আবার ঝগড়া লাগিয়েছিলেন আরেক দেবী ‘এরিস’ (ঝগড়া আর বিশৃঙ্খলার দেবী)। তিনি একটা সােনালী আপেল দিয়েছিলেন এই তিন দেবীকে, যাকে মাঝে মধ্যে ‘বিশৃঙ্খলার আপেল’ হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং যার গায়ে খোদাই করা ছিল এই বাক্যটি ‘শ্রেষ্ঠ সুন্দরীর জন্য’। ফলে তিনজন দেবীর প্রত্যেকেই নিজেকে এই আপেলের দাবীদার বলতে লাগলেন। দেবতারা কেউ তিন দেবীর রূপ বিচারের সাহস পেলেন না। বাধ্য হয়ে জিউস সুন্দরীতমা নির্বাচনের ভার দিলেন ট্রয় নগরীর রাজপুত্র প্যারিসকে, যিনি ছিলেন একজন মানুষ। প্যারিস আফ্রোদিতিকে সবচেয়ে সুন্দরী বললেন এবং বিনিময়ে উপহার হিসেবে আফ্রোদিতির কাছ থেকে পেলেন জগতের শ্রেষ্ঠ সুন্দরীর ভালােবাসা। সে সময় সবচেয়ে সুন্দরী মানবী ছিলেন হেলেন, যিনি ছিলেন গ্রিসের স্পার্টার রাজা মেনেলাসের স্ত্রী। যুদ্ধটা শুরু হয়েছিলাে যখন প্যারিস হেলেনকে নিয়ে ট্রয়ে পালিয়ে আসেন। মেনেলাস তার ভাই ‘মাইসিনে’ রাজ্যের রাজা আগামেমননকে আহবান করলেন যুদ্ধে যাওয়ার জন্য, হেলেনকে ফিরিয়ে আনার জন্য। আগামেমনন তার অ্যাশিয়ান্স দল নিয়ে রওনা দিলেন ট্রয়ের উদ্দেশ্যে। প্রায় দশ বছর ধরে আগামেমননের সৈন্যবাহিনী চারদিক দিয়ে ট্রয় নগরকে ঘিরে রাখলাে। রক্তক্ষয়ী সেই যুদ্ধে মারা গেলেন অ্যাশিয়ান্স বীর অ্যাকিলিস, অ্যাজাক্স এবং ট্রোজান বীর প্যারিস ও তার ভাই হেক্টর। একসময় গ্রিক যােদ্ধারা ‘ট্রোজান হর্স’ নামক একটা চাতুরীর আশ্রয় নিলাে ট্রয় নগরীতে ঢােকার জন্য। ট্রোজানরা সাধারণ কাঠের ঘোড়া ভেবে ‘ট্রোজান হর্স’কে ঢুকতে দিয়েই করে বসলাে সবচেয়ে বড় ভুল। এর ফলশ্রুতিতে যুদ্ধে হেরে ট্রয় রাজ্যের পতন ঘটে।

ট্রয় যুদ্ধের কাহিনী

দর্শন

গ্রিকদের সবচেয়ে বড় অবদান ছিল দর্শন চর্চায়। দার্শনিক থ্যালেস প্রথম সূর্যগ্রহণের প্রাকৃতিক কারণ ব্যাখ্যা করেন। গ্রিসে এক ধরনের যুক্তিবাদী দার্শনিকের আবির্ভাব ঘটে। এদের বলা হতাে সফিস্টপ্রােটাগােরাস ছিলেন সফিস্ট সম্প্রদায়ের সবচেয়ে প্রাচীন বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক। মানুষকে মানদণ্ড বিবেচনা করে সে আলােকে দর্শনের আলােচনা ও ভাষাবিজ্ঞানে অবদানের জন্য তিনি সুবিখ্যাত হয়ে আছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, ‘Man is the measure of all things’

সক্রেটিস: সক্রেটিস ছিলেন গ্রিসের দার্শনিকদের মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতিমান। অন্যায় শাসনের প্রতিবাদ করায় গ্রিসের শাসক গােষ্ঠী ৩৯৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এ মহান দার্শনিককে হেমলক লতার তৈরি বিষ খাইয়ে হত্যা করে।

Crito, I owe a cock to Asclep1LS, will you remember to pay the debt? (“ক্রিটো, অ্যাসক্লেপিয়াস আমাদের কাছে একটি মােরগ পায়, তার ঋণ পরিশােধ করতে ভুলাে না যেন”)।

মৃত্যুর পূর্বে সক্রেটিসের শেষ বাক্য

অ্যাসক্লেপিয়াস হচ্ছে গ্রিকদের আরোগ্য লাভের দেবতা। সক্রেটিসকে ‘সব জ্ঞানীদের গুরু’ বলা হয়। সক্রেটিসের বিখ্যাত উক্তি –

  • Know thyself.
  • Slanderers (যারা অপবাদ দেয়) do not hurt me because they do not hit me.
  • Education is the kindling of a flame, not the filling of a vessel.
  • I die, you to live which is better only God knows.
  • An unexamined life is not worth living.
  • Knowledge is virtue (জ্ঞানই পূণ্য)।

প্লেটো: দার্শনিক প্লেটো ছিলেন সক্রেটিসের ছাত্র। তিনি ‘দি রিপাবলিক’ নামক গ্রন্থ রচনা করে। প্লেটো ৩৮৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে দর্শনের স্কুল ‘Akademia‘ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সক্রেটিসের শিক্ষার বক্তব্যগুলাে নিয়ে ‘ডায়ালগস অব সক্রেটিস’ নামে আরেকটি গ্রন্থ রচনা করেন। প্লেটোর বিখ্যাত উক্তি- “Krlue is Knowledge and Education is the main thing to acquire virtue.”

এরিস্টটল: প্লেটোর ছাত্র দার্শনিক এরিস্টটল। তাঁর একটি বিখ্যাত গ্রন্থের নাম ‘দ্যা পলিটিক্স‘। তিনি “লাইসিয়াম”- এর প্রতিষ্ঠাতা। এরিস্টটল আলেকজান্ডারের গৃহশিক্ষক ছিলেন। এরিস্টটলের উক্তি –

  • মানুষ সামাজিক ও রাজনৈতিক জীব। যে ব্যক্তি সমাজে বাস করেনা সে হয় দেবতা না হয় পণ্ড।
  • আইন হল পক্ষপাতহীন যুক্তি।
  • সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্র কর্তৃক মনােনীত পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।
  • বল, শক্তি এবং লােভ লালসা মানুষের মধ্যে জন্মগতভাবে অসমভাবে বন্টিত।- রাষ্ট্র হল পরিবারের সম্প্রসারিত ফল।- মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই রাজনীতির কবি।

সাহিত্য

অন্ধ গ্রিক মহাকবি হােমার হাজার হাজার বছরের পুরােনাে কাহিনী নিয়ে রচনা করেন মহাকাব্য ইলিয়াড এবং ওডিসি। তাকে ‘অন্ধ পাখি’ বলা হয়।

  • গ্রিসের সবচেয়ে জনপ্রিয় নাট্যকার ছিলেন ‘এস্কাইলাস’। তাঁর বিখ্যাত দুইটি নাটকের নাম ‘প্রমেথিউস বাউন্ড’ ও ‘আগামেমনন’।
  • নাট্যকার সফোক্লিস একশটিরও বেশি নাটক লেখেন। এর মধ্যে জনপ্রিয় দুইটি হচ্ছে ‘এন্টিগনে’ ও ‘ইলেক্ট্রা’। নাট্যকার সফোক্লিসের বিখ্যাত ট্রাজেডি ‘রাজা ইডিপাস’।
  • ইউরিপিদিস ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ গ্রিক ধ্রুপদী নাট্যকার। তার আলােচিত নাটক ওরেস্তেস।

ইতিহাস

ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রেও সমান কৃতিত্ব ছিল গ্রিকদের। গ্রিক ইতিহাসবেত্তা হেরােডটাসকে ইতিহাসের জনক বলা হয়। তিনি আনুমানিক ৪৮৪ খ্রিস্টপূর্বে বর্তমান তুরস্কের বােদরামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘The Histories‘। ৪৯০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সংঘটিত গ্রিক-পারসিকদের যুদ্ধের কাহিনী এ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। গ্রিসের অন্য খ্যাতিমান ইতিহাসবিদ ছিলেন ‘থুসিডাইডিস‘। তাকে বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাসের জনক বলা হয়।

বিজ্ঞান

গ্রিক বিজ্ঞানীরা প্রথম পৃথিবীর মানচিত্র অঙ্কন করেছিলেন। গ্রিক দার্শনিক আনাক্সিমান্ডোস সর্বপ্রথম পৃথিবীর মানচিত্র অঙ্কন করেন। তারাই প্রথম প্রমাণ করেছিলেন যে পৃথিবী একটি গ্রহ এবং তা কক্ষপথে আবর্তিত হয়। বিখ্যাত গ্রিক গণিতবিদ ‘পিথাগােরাস’ খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে জন্ম নিয়েছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে জন্ম নেন বিজ্ঞানী ‘এনাক্সাগােরাস’। চিকিৎসাবিজ্ঞানী হিপােক্রেটিস যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।

অন্যান্য

খ্রিস্টপূর্ব ৭৭৬ অব্দে গ্রিসে অলিম্পিক প্রতিযােগিতার জন্ম হয়। প্রতি চার বছর অন্তর এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতাে। বিভিন্ন নগর রাষ্ট্রের খেলোয়াড়রা অংশ নিত।

কয়েকজন খ্যাতিমান গ্রিক ভাস্কর হচ্ছেন মাইনর, ফিদিয়াস এবং প্রাকসিটেলেস। প্রাচীন গ্রিসে মৃৎপাত্রের গায়ে চিত্রকর্ম অঙ্কন করা হতাে। গ্রিক স্থাপত্যের উদাহরণ হিসেবে মন্দির পার্থেনন, এথেন্সের দেবী এথেনার মন্দির ইত্যাদি উল্লেখযােগ্য।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-

  • The teri Agoraneans ancient – Greek market.
  • গ্রিক সৌন্দর্য দেবী – আফ্রোদিতি।
  • গ্রিকদের ‘ফার্টিলিটির দেবী’ বলা হয় – আরটেমিসকে।
  • সফিস্ট সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়েছে যে দেশে – গ্রিস।
  • সক্রেটিসকে হেমলক পানে হত্যা করা হয় – গ্রিসে।
  • প্লেটো যে দেশে জন্মগ্রহণ করেন – গ্রিস।
  • দার্শনিক রাজা’র শাসনের কথা কে বলেছেন – প্লেটো।
  • লজিক বা তর্কশাস্ত্রের জন্ম হয়েছে – গ্রিসে।
  • যুক্তিবিদ্যার জনক – এরিস্টটল।
  • তিনজন দার্শনিককে Wise men of the old বলা হয় – সক্রেটিস, প্লেটো ও এরিস্টটল।
  • ইদিপাস হল – নাটক।
  • History যে ভাষা থেকে উৎপত্তি – গ্রিক।

রোমান সভ্যতা

ল্যাটিন রাজা রোমিউলাস ইটালির পশ্চিমাংশে একটি নগর গড়ে তোলেন। রাজার নামানুসারে নগরের নাম হয় ‘রোম’। রোমের অর্থনীতি ছিল দাসনির্ভর। দাসদের ওপর নির্যাতনের প্রক্ষিতে স্পার্টাকাস নামক এক দাসের নেতৃত্বে দাস বিদ্রোহ সংঘঠিত হয়।

রোমের সবচেয়ে খ্যাতিমান সম্রাট ছিলেন জুলিয়াস সিজার। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ অব্দে সিজার রোমের সম্রাট হন। খ্রিষ্টপূর্ব ৫৫ অব্দে ব্রিটেন জয় করার পর তার বিখ্যাত উক্তি – “এলাম, দেখলাম, জয় করলাম”। ব্রুটাস ও ক্যাসিয়াস নামক দুই অভিজাতের হাতে সিজার নিহত হন।

সিজারের মৃত্যুর পর গৃহযুদ্ধের পরিপ্রক্ষিতে ক্ষমতায় আসেন অক্টেভিয়াস সিজার, মার্ক এন্টনি এবং লেপিডাস। এ শাসনকে ‘ত্রয়ী শাসন’ বলা হয়। পরবর্তীতে যুদ্ধে বাকি দুই শাসককে পরাজিত করে অক্টেভিয়াস সিজার একক ক্ষমতার অধিকারী হন। এসময় তিনি অগাস্টাস সিজার উপাধি নেন। তার সময় থেকে ঈশ্বর হিসেবে সম্রাটকে পূজা করার রীতি চালু হয়। তারা রাজত্বকালে খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যীশু খ্রিস্টের জন্ম হয়।

রোমের সবচেয়ে জনপ্রিয় দার্শনিক মতবাদের নাম ‘স্টোয়িকবাদ’। রোমের উল্লেখযোগ্য কবিদের মধ্যে আছেন হোরাস ও ভার্জিল। ভার্জিলের মহাকব্য ‘ইনিড’ বহুভাষায় অনুদিত হয়েছে। ‘প্যানথিয়ন’ রোমান সম্রাট হার্ডিয়ানের তৈরি ধর্মমন্দির।

রোমান সভ্যতার সবচেয়ে বড় অবদান আইনের ক্ষেত্রে। বার্জেন্টাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ান সর্বপ্রথম পুর্নাঙ্গ রোমান আইন সংকলিত করেন। তিনি ১২টি ব্রোঞ্জপাতে সর্বপ্র্রথম রোমান আইন খোদাই করেন। এমনকি আইনের ক্ষেত্রে বিশ্ব সম্পূর্ণভারে রোমান আইনের ওপর নির্ভর করে।

৪৭৬ খ্রিষ্টাব্দে জার্মান জাতির হাতে রোমান সাম্রাজ্যের পতন হয়।

ইনকা সভ্যতা

পেরুর দক্ষিণাংশে শক্তিশালী এ সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল। ‘মাচুপিচ্চু’ এই সভ্যতার নিদর্শন।

বৈশ্বিক ইতিহাস

বিগত সালের প্রশ্ন

1 / 23

বিশ্ব ঐতিহ্য 'মাচুপিচ্চু' কোথায় অবস্থিত?

2 / 23

'এলাম, দেখলাম, জয় করলাম' কথাটি বলেছেন-

3 / 23

জুলিয়াস সিজার কেন বিখ্যাত?

4 / 23

ইতিহাসের জনক বা পিতা কে?

5 / 23

The famous book (epic) 'Odyssey' is written by-

6 / 23

প্রাচীন গ্রিসের অন্ধ মহাকবীর নাম কি?

7 / 23

"Man is a political animal" - who said this?

8 / 23

সম্রাট আলেকজানডারের গৃহশিক্ষক কে ছিলেন?

9 / 23

Who said - "An unexamined life is not worth living"?

10 / 23

দার্শনিক প্লেটো রচিত বিখ্যাত পুস্তকের নাম-

11 / 23

ইতিহাস বিখ্যাত ট্রয় নগরী কোথায়?

12 / 23

সভ্যতার ইতিহাসে ফিনিশীয়দের সবচেয়ে বড় অবদান কি?

13 / 23

হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোতে প্রাপ্ত সভ্যতা ইতিহাসে কোন সভ্যতা হিসেবে পরিচিত?

14 / 23

প্রাচীন মিশরীয়রা কোন বর্ণ দিয়ে তাদের ভাব প্রকাশ করত?

15 / 23

Which one is the oldest civilization?

16 / 23

কারা সপ্তাহকে ৭দিনে বিভক্ত করে?

17 / 23

কোন জাতি বৃত্তকে প্রথম ৩৬০ ডিগ্রীতে ভাগ করে?

18 / 23

The oldest book of the world is-

19 / 23

'ব্যাবীলনের ঝুলন্ত উদ্যান' কে গড়ে তুলেছিলেন?

20 / 23

পৃথিবীর কোথায় প্রথম লিখিত আইনের প্রচলন হয়?

21 / 23

সুমেরীয় সভ্যতা কোথায় গড়ে উঠেছিল?

22 / 23

বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতা কোথায় গড়ে উঠেছিল?

23 / 23

'ব্যাবিলনের ঝুলন্ত বাগান' কোন দেশে অবস্থিত?

Your score is

The average score is 64%

0%