ভাষা আন্দোলন

Estimated Reading Time: 33 Minutes

সূচিপত্র

ভাষা আন্দোলন কি?

বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদার দাবিতে সংগঠিত গণআন্দোলন। ১৮৩৫ সাল থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে সরকারী ভাষা হিসেবে ইংরেজী ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর রাষ্ট্রভাষা কি হবে এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ চেয়েছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তোলা হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এ দাবিকে শুরু থেকেই সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে। এতে ঢাকার ছাত্র ও  বুদ্ধিজীবী মহল ক্ষুব্ধ হন। ভাষার ব্যাপারে তাদের মূল দাবিটি ছিল:

পূর্ব পাকিস্তানে শিক্ষা ও সরকারি কার্যাদি পরিচালনার মাধ্যম হবে বাংলা আর কেন্দ্রীয় সরকার পর্যায়ে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে দুটি বাংলা ও উর্দু।

প্রেক্ষাপট, সংগঠন ও সংগঠক

তমদ্দুন মজলিস

১৯৪৭ সালের ২রা সেপ্টেম্বর গঠিত হয় সাংস্কৃতিক সংগঠন তমদ্দুন মজলিস, যারা ভাষাসংক্রান্ত দাবিটিকে সামনে রেখে সর্বপ্রথম আন্দোলন সংগঠিত করে। তমদ্দুন মজলিস-এর নেতৃত্বে ছিলেন অধ্যাপক আবুল কাসেম। ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তমদ্দুন মজলিস ভাষা আন্দোলনের প্রথম পুস্তিকা ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’ প্রকাশ করে। পুস্তিকাটির লেখক ছিলেন ৩ জন; অধ্যাপক আবুল কাসেম, ড. কাজী মোতাহার হোসেন এবং আবুল মনসুর আহমেদ।

পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু
তয়দ্দুন মজলিস প্রকাশিত ভাষা আন্দোলনের প্রথম পত্রিকা

পটভূমি

ভারতভাগের পর পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার প্রচেষ্টা চালালে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রসমাজ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৪৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্রসভার আয়োজন করে। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় যার আহবায়ক ছিলেন তমদ্দুন মজলিসের অধ্যাপক নূরুল হক ভূঁইয়া। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি করাচিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের প্রথম গণপরিষদ অধিবেশনে পরিষদ সদস্যদের উর্দু বা ইংরেজিতে বক্তৃতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। পূর্ব পাকিস্তানের কংগ্রেস দলের সদস্য কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এ প্রস্তাবে সংশোধনী এনে বাংলাকেও পরিষদের অন্যতম ভাষা করার দাবি জানান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং পূর্ববাংলার মুখ্যমন্ত্রী  খাজা নাজিমুদ্দীন বিরোধিতা করলে এ দাবি বাতিল হয়ে যায়। এ খবর ঢাকায় পৌঁছলে ছাত্রসমাজ, বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিকরা বিক্ষুব্ধ হন। ১৯৪৮ সালের ২রা মার্চ কামরুদ্দিন আহমেদের (সভাপতি) নেতৃত্বে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। এ পরিষদ ১১ মার্চ থেকে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয়।

নামগঠনআহ্বায়ক
রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদডিসেম্বর ১৯৪৭অধ্যাপক নূরুল হক ভূঁইয়া
সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ২ মার্চ ১৯৪৮শামসুল আলম
সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ৩১ জানুয়ারি ১৯৫২কাজী গোলাম মাহবুব
রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ

১১ মার্চ ১৯৪৮

১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ একটি স্মরণীয় দিন। গণপরিষদের ভাষা-তালিকা থেকে বাংলাকে বাদ দেওয়া ছাড়াও পাকিস্তানের মুদ্রা ও ডাকটিকেটে বাংলা ব্যবহার না করা এবং নৌবাহিনীর নিয়োগ পরীক্ষা থেকে বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে রাখার প্রতিবাদস্বরূপ ওইদিন ঢাকা শহরে সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। ধর্মঘটের পক্ষে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ এই শ্লোগানসহ মিছিল করার সময় শওকত আলী, কাজী গোলাম মাহবুব, শামসুল হক, অলি আহাদ, শেখ মুজিবুর রহমান, আবদুল ওয়াহেদ প্রমুখ গ্রেপ্তার হন। ওইদিনের পর ভাষা আন্দোলন চলাকালে ১১ মার্চকে ভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হত।

১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল  মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ পূর্ব পাকিস্তান সফরে আসেন। তিনি ঢাকার দুটি সভায় বক্তৃতা দেন। ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহ রেসকোর্স ময়দানে ঘোষণা দেন ‘উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’। ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহ আবারো একই কথা বললে জিন্নাহর বক্তব্য তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়ে।

উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা

মুহাম্মাহ আলী জিন্নাহ
১৯৪৮ সালের ২১শে মার্চ ঢাকার জনসভায় মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ্

রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হওয়ার সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থারও অবনতি ঘটে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ মুসলিম লীগের প্রতি আস্থা হারাতে থাকে। ১৯৪৯ সালে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত হয় নতুন রাজনৈতিক দল ‘আওয়ামী লীগ’।

১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দীন পল্টন ময়দানে এক জনসভায় বলেন যে,

প্রদেশের সরকারি কাজকর্মে কোন ভাষা ব্যবহূত হবে তা প্রদেশের জনগণই ঠিক করবে। কিন্তু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে কেবল উর্দু।

তার বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় এবং ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ শ্লোগানে ছাত্ররা বিক্ষোভ শুরু করেন।

২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২

১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধিদের এক সভায় ‘সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়, যার আহবায়ক ছিলেন কাজী গোলাম মাহবুব। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন, বৃহস্পতিবার) সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল, জনসভা ও বিক্ষোভ মিছিল আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়।

পরদিন সকাল ১১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের একাংশে অবস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় ছাত্রদের সভা হয়। একসময় বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে গণপরিষদ ভবনের দিকে অগ্রসররত মিছিলের উপর পুলিশ গুলি চালায়। গুলিতে রফিক উদ্দিন আহমদ, আবদুল জববার, আবুল বরকত (রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ শ্রেণীর ছাত্র) নিহত হয়। আহতদের মধ্যে সেক্রেটারিয়েটের পিয়ন আবদুস সালাম হাসপাতালে মারা যায়। অহিউল্লাহ্ নামে আট/নয় বছরের এক কিশোরও সেদিন নিহত হয়।

পরদিন ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বিশাল শোভাযাত্রা বের হলে পুলিশ তাতেও গুলি চালায়। এতে শফিউর রহমান নিহত হন। ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা যে স্থানে গুলির আঘাতে নিহত হয় সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। ১৯৬৩ সালে ওই অস্থায়ী নির্মাণের জায়গায় একটি কংক্রীটের স্থাপনা নির্মিত হয়। ১৯৭২ সালে শহীদ মিনারটি পুনঃনির্মান করা হয়।

২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে বিশাল মিছিল।

স্বীকৃতি

১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলন অব্যাহত ছিল। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অনুমোদনের মাধ্যমে এই আন্দোলন তার লক্ষ্য অর্জন করে। ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬ জাতীয় পরিষদে বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের এক পর্যায়ে এর সদস্য ফরিদপুরের আদেলউদ্দিন আহমদের দেওয়া সংশোধনী প্রস্তাব অনুযায়ী বাংলা ও উর্দু উভয় ভাষাই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো প্যারিসে অনুষ্ঠিত ৩১ তম বৈঠকে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে।

ভাষা শহিদদের পরিচয়

রফিক উদ্দীন

জগন্নাথ কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র

ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহিদ।

আব্দুল জব্বার

পেশায় দর্জি

জন্ম পাঁচুয়া, ময়মনসিংহ।

আবুল বরকত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এমএ শ্রেণীর ছাত্র

জন্ম মুর্শিদাবাদ, ভারত। তার মা হাসিনা বেগম ১৯৬৩ সালে কেন্দ্রিয় শহিদ মিনার উদ্বোধন করেন।

আবদুস সালাম

রেকর্ড কিপার পদে চাকরি করতেন

জন্ম ফেনী জেলায়। ২১ ফেব্রুয়ারি আহত হন তবে মারা যান ৭ এপ্রিল।

শফিউর রহমান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ক্লাসের প্রাইভেট ছাত্র ও হাইকোর্টের কর্মচারী

জন্ম হুগলী, ভারত। ২২ ফেব্রুয়ারি মারা যান। তার পিতা মাহবুবুর রহমান জাতীয় শহিদ মিনার (১৯৫২) উদ্বোধন করেন।

আব্দুল আওয়াল

রিক্সাচালক

মোঃ অহিউল্লাহ

শিশু শ্রমিক

সবচেয়ে কম বয়সী ভাষা শহিদ।

অজ্ঞাত

নাম না জানা ব্যক্তি/ব্যক্তিরা

ভাষা শহিদদের স্বরণে নির্মিত স্থাপনা

কেন্দ্রিয় শহিদ মিনার

ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রঙ্গনে অবস্থিত। এর স্থপতি হামিদুর রহমান। এতে মোট ৫টি স্তম্ভ রয়েছে। সবচেয়ে বড় স্তম্ভটি মা ও বাকি স্তম্ভগুলো সন্তানের প্রতীক।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রঙ্গনে অবস্থিত শহিদ মিনার

জননী ও গর্বিত বর্ণমালা

ঢাকার পরিবাগে অবস্থিত। এর ভাস্কর মৃণাল হক।

মোদের গরব

বাংলা একাডেমি চত্তরে অবস্থিত। এর স্থপতি অখিল পাল।

অমর একুশে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত। এর ভাস্কর জাহানারা ইমাম।

সাহিত্যকর্ম

ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম

চাকরি পরিক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ রচনা।

একনজরে ঘটনাক্রম

সময়রেখা

২রা সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭

তমদ্দুন মজলিস গঠন

ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সংগঠন তমদ্দুন মজলিস গঠিত হয়।

১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭

প্রথম পুস্তক

ভাষা আন্দোলনের প্রথম পুস্তিকা- “রাষ্ট্র ভাষা বাংলা না উর্দু” প্রকাশিত হয়।

ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮

গণপরিষদে ভাষার দাবি

ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তানের গণপরিষদ অধিবেশনে বাংলাকে গণপরিষদের অন্যতম ভাষারূপে সরকারি স্বীকৃতির দাবি জানান।

২ মার্চ, ১৯৪৮

সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়

১১ মার্চ, ১৯৪৮

প্রথম ভাষা দিবস

সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয়। এদিনের পর ভাষা আন্দোলন চলাকালে ১১ মার্চকে ‘ভাষা দিবস’ হিসেবে পালন করা হত।

২১ মার্চ, ১৯৪৮

রেসকোর্সে জিন্নাহর ঘোষণা

মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা দেন ‘উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’।

২৪ মার্চ, ১৯৪৮

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জিন্নাহর ঘোষণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহ আবারো একই কথা বলেন।

৯ মার্চ, ১৯৪৯

পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটি গঠন

পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটি গঠিত হয়। কমিটির সভাপতি ছিলেন মাওলানা আকরাম খাঁ। আরবি দিয়ে বাংলা লেখা চালু এ কমিটি গঠনের অন্যতন উদ্দেশ্য ছিল।

১৯৫০

প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলীর ঘোষণা

প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ঘোষণা করেন, “উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা”

২৬ জানুয়ারি, ১৯৫২

খাজা নাজিমুদ্দিনের ঘোষণা

খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকায় এক জনসভায় ঘোষণা করেন – “উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা”।

৩১ জানুয়ারি, ১৯৫২

সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন

মাওলানা ভাষানির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় ‘সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত’ হয়। এর আহবায়ক হন কাজী গোলাম মাহবুব। সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ‘রাষ্ট্রভাষা দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নেয় এবং সারাদেশে হরতাল কর্মসুচি পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২

গুলিবর্ষণ

ছাত্রছাত্রীরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ চত্বরে সমবেত হয়। পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে সালাম, রফিক, বরকত প্রমূখ শহীদ হন।

২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২

পুনরায় গুলিবর্ষণ

বিশাল শোভাযাত্রা বের হলে পুলিশ তাতে গুলি চালায়। শফিউর রহমান নিহত হন।
ভাষা আন্দোলন অব্যহত ছিল ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত।

৩ ডিসেম্বর, ১৯৫৫

বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা

ভাষা আন্দোলনের শেষের দিকে ভাষা গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার দাবির প্রেক্ষিতে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। “বর্ধমান হাউজ”-এ এই একাডেমির সদর দপ্তর স্থাপিত হয়।

১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৬

লক্ষ্য অর্জন

ফরিদপুরের আদেলউদ্দিন আহমেদের দেওয়া সংশোধনি প্রস্তাব আনুযায়ি বাংলা ও উর্দু উভয় ভাষায় পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায়।


গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক আবুল কাসেম।

একাধিক রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হওয়ায় প্রশ্নটি কিছুটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। প্রথমবার রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছিল ১৯৪৭ সালের অক্টোবর মাসে। দ্বিতীয়বার ১৯৪৮ সালের ২রা মার্চ। আর ১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। দ্বিতীয় পরিষদের ভূমিকাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

শামসুল আলম। তবে প্রথম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন ঢাবির রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক নুরুল হক ভূঁইয়া।

১১ মার্চ ১৯৫০ সালে গঠিত হয়। এর আহ্বায়ক ছিলেন আব্দুল মতিন।

কমলা ভট্টাচার্য।

৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮। রোজ বৃহস্পতিবার।

গভর্নর জেনারেল: মালিক গোলাম মোহাম্মদ
প্রধানমন্ত্রী: খাজা নাজিমউদ্দীন
পূর্ববাংলার মুখ্যমন্ত্রী: নূরুল আমিন
পূর্ববাংলার গভর্নর: ফিরোজ খান নুন

২৩ মার্চ ১৯৫৬ তারিখে পাকিস্তানের সংবিধান কার্যকর হলে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি লাভ করে।


তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া ও অন্যান্য

Quiz: ভাষা আন্দোলন

Click 'Next' to Start

Leave a Reply