মাইকেল মধুসূদন দত্ত

Estimated Reading Time: 12 Minutes

কবি ও নাট্যকার; জন্ম: ১৮২৪, যশোর; মৃত্যু: ১৮৭৩, কলকাতা

মাইকেল মধুসূদন দত্তকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম বিদ্রোহী কবি। তাকে রোমান্টিক কবিও বলা হয়। তিনি বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার প্রবর্তক। ১৮৪৩ সালে ১৯ বছর বয়সে তিনি খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেন। ফলশ্রুতিতে তার পিতা তাকে ত্যাজ্যপুত্র করেন এবং হিন্দু কলেজ থেকে তিনি বিতারিত হন। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদান রেখে ১৮৭৩ সালে কলকাতার আলিপুর হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের–

প্রথম মহাকাব্য রচয়িতা

প্রথম বিদ্রোহী লেখক

প্রথম আধুনিক নাট্যকার

প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক

প্রথম চতুর্দশপদী কবিতা বা সনেট রচয়িতা

প্রথম সার্থক ট্রাজেডি (নাটক) রচয়িতা

প্রথম প্রহসন রচয়িতা

প্রথম আধুনিক কবি

মাইকেল মধুসূদন পাশ্চাত্য ও প্রাচ্য ধারার সংমিশ্রণে নতুন ধরণের মহাকাব্য রচনা করেছেন।

সম্পাদিত পত্রিকা: হিন্দু ক্রোনিকল
ছদ্মনাম: Timothy Penpoem

প্রথম রচনা

  • প্রথম গ্রন্থ: The Captive Lady (১৮৪৯).
  • প্রথম প্রকাশিত বাংলা গ্রন্থ: শর্মিষ্ঠা (১৮৫৯)।
  • প্রথম সনেট কবিতা: ‘বঙ্গভাষা’।

মহাকাব্য

মেঘনাবধ (১৮৬১)

  • বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক মহাকাব্য।
  • এটি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত। কাব্যের মোট সর্গ ৯টি।
  • রামায়নের কাহিনী অবলম্বনে রচিত। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবে উজ্জীবিত হয়ে রাবণকে নায়ক ও রামকে খলনায়ক হিসেবে উপস্থাপন করে কাব্যটি রচিত।
  • ইংরেজিতে অনুবাদ করেন – রাজনারায়ণ বসু।
  • উৎসর্গ করেন – রাজা দ্বিগম্বর মিত্রকে (যিনি গ্রন্থটি মুদ্রয়ণের ব্যায় বহন করেছিলেন)
  • উল্লেখযোগ্য চরিত্র: রাবণ, মেঘনাদ, লক্ষণ, রাম, প্রমীলা, বিভীষণ, সীতা

হেক্টরবধ

গ্রিক কবি হোমারের ‘ইলিয়ড’ এর অনুবাদ। এটি অসমাপ্ত গ্রন্থ।

কাব্যগ্রন্থ

তিলোত্তমাসম্ভব (১৮৬০)

অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত বাংলা সাহিত্যের প্রথম পুর্ণাঙ্গ গ্রন্থ। মহাভারতের সুন্দ-উপসুন্দ কাহিনী অবলম্বনে রচিত।

চতুর্দশপদী কবিতাবলী (১৮৬৬)

  • বাংলা সাহিত্যের প্রথম সনেট সংকলন। এতে মোট ১০২টি কবিতা রয়েছে।
  • বাংলা সাহিত্যের প্রথম সনেট কবিতার নাম ‘বঙ্গভাষা’।

ব্রাজাঙ্গনা

  • মিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত।
  • এই রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ক গীতিকাব্য।

বীরাঙ্গনা

  • অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত।
  • বাংলা সাহিত্যের প্রথম পত্রকাব্য। উল্লেখ্য প্রথম পত্রউপন্যাস কাজী নজরুলের ‘বাঁধনহারা’।
  • মোট পত্র রয়েছে ১১টি।

নাটক

শর্মিষ্ঠা

  • বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক নাটক।
  • মহাভারতের দেবযানী-যাযাতি উপখ্যান অবলম্বনে রচিত
  • উল্লেখযোগ্য চরিত্র: যাযাতি, দেবযানী, শর্মিষ্ঠা, মাধ্যব্য, পূর্ণিমা ও রাজমন্ত্রী।

পদ্মাবতী

  • বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক কমেডি।
  • মদুসূদন দত্ত এ নাটকের ২য় অঙ্কের ২য় গর্ভাঙ্কেই বাংলা সাহিত্যের প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দ প্রয়োগ করেন।
  • এটি গ্রিক পুরাণ Apple of Discord অবলম্বনে রচিত।
  • উল্লেখযোগ্য চরিত্র: পদ্মাবতী, ইন্দ্রনীল

কৃষ্ণকুমারী

  • বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ট্রাজেডি।
  • উইলিয়ার টডের ‘রাজস্থান’ থেকে এর কাহিনী নেওয়া।
  • উল্লেখযোগ্য চরিত্র: কৃষ্ণকুমারী, মদনিকা, ভিমসিংহ, বিলাসবতী।

উল্লেখ্য কৃষ্ণচরিত (প্রবন্ধ) রচনা করেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কৃষ্ণপক্ষ (গল্পগ্রন্থ) রচনা করেন আবদুল গাফফার চৌধুরী এবং কৃষ্ণপক্ষ উপন্যাস রচনা করেন হুমায়ুন আহমেদ।

মায়াকানন (১৮৭৪)

এটি একটি বিয়োগান্ত নাটক। নাটকটি অসম্পূর্ণ রেখেই মাইকেন মধুসূদন মৃত্যুবরণ করেন। অম্পূর্ণ অংশ সমাপ্ত করেন ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। নাটকটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয়।

প্রহসন

বুড়ো সালিকের ঘাড়ে রোঁ

এটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম প্রহসন। এতে রক্ষণশীল হিন্দু সমাজের আচারসর্বস্ব ও নীতিভ্রষ্ট সমাজপতিদের গোপন লাম্পট্য তুলে ধরেন।

একেই কি বলে সভ্যতা

মাইকেল মধুসূদন এতে ইংরেজি শিক্ষিত ইয়ং বেঙ্গলদের মাদকাসক্তি, উচ্ছৃঙ্খলতা ও অনাচারকে কটাক্ষ করেছেন।

উক্তি

  • নির্গুণ স্বরজন শ্রেয়ঃ, পরঃ পরঃ সদা – মেঘনাদবদ কাব্য
  • হে বঙ্গ ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন;
    তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি,
    পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ পরদেশে,
    ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচারি। – বঙ্গভাষা
  • ওরে বাছা, মাতৃকোষে রতনের রাজি,
    এ ভিক্ষারী দশা তবে কেন তোর আজি। – বঙ্গভাষা
  • কেলিনু শৈবাল; ভুলি কমল-কানন। – বঙ্গভাষা
  • অলীক কূনাট্য রঙ্গে, মজে লোক রাঢ়ে ও বঙ্গে – শর্মিষ্ঠা
  • জন্মিলে মরিতে হবে / অমর কে কোথা কবে,
    চিরস্থির কবে নীর, হায় রে জীবন-নদে। – বঙ্গভূমির প্রতি
  • সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে।
    সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে। – কপোতাক্ষ নদ
  • ঊর্ধ্বশির যদি তুমি কুল মনে ধনে;
    করিও না ঘৃণা তব নিচ-শির জনে। – রসাল ও স্বর্ণলতিকা

মইকেল মধূসুদন দত্তকে ‘দত্ত কুলোদ্ভব কবি’ বলা হয় কেন?
দত্ত কুলোদ্ভব অর্থ হচ্ছে দত্ত বংশে জন্ম। যশোরের সাগরদাড়ীর প্রতাপশালী দত্ত পরিবারে জন্ম বলেই তাকে দত্ত কুলোদ্ভব কবি বলা হয়।

Leave a Reply