নাটক, লেখক: উইলিয়াম শেক্সপিয়ার
উল্লেখযোগ্য চরিত্র- সওদাগর অ্যান্টনিও, ধূর্ত বনিক শাইলক, বাসানিও, পোর্শিয়া।
ইতালির ভেনিস শহরের সওদাগর অ্যান্টনিও। সে দয়ালু এবং উদার প্রকৃতির লোক। বিপদ-আপদে অভাবগ্রস্তরা তার কাছে ছুটে আসে। অ্যান্টনিও বিনাসুদে বিপদগ্রস্তদের টাকা ধার দিয়ে সাহায্য করে। অন্যদিকে অ্যান্টনিওর শত্রু শাইলক, সুচতুর ও অত্যন্ত কূটবুদ্ধিসম্পন্ন ইহুদি সুদ কারবারি। চড়া সুদে খ্রীষ্টান বণিকদের টাকা ধার দেয় সে। সংগত কারণেই আর সবার মত অ্যান্টনিও তাকে দেখতে পারত না। অ্যান্টনিও বিনা সুদে টাকা ধার দেওয়ায় ভেনিসে সুদের হার কমে যায়। ফলে শাইলক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অ্যান্টানিওর ঘনিষ্ট বন্ধু বাসানিও টাকার অভাবে পোর্শিয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারছিল না। তাই বন্ধু অ্যান্টনিওর কাছে সে টাকা ধার চায়। কিন্তু অ্যান্টানিওর কাছে নগদ টাকা ছিল না। সে তার সমস্ত অর্থই জাহাজে বিনিয়োগ করে ফেলেছে। তাই তারা অন্য কারো কাছ থেকে অ্যান্টানিওর নামে টাকা ধার করার পরিকল্পনা করে। অ্যান্টনিও বন্ধুর মনোবাসনা পূরণ করতে শত্রু শাইলকের কাছে টাকা ধার করে। ধূর্ত শাইলক অ্যান্টানিওকে ফাঁদে ফেলতে কৌশল আঁটে। অ্যান্টানিওর কাছ থেকে সুদ না নিয়ে বরং সে শর্ত দেয় যে- “যদি অ্যান্টিনিও সময়মতো টাকা পরিশোধ করতে না পারে তবে তার শরীরের যেকোন অংশ থেকে এক পাউন্ড মাংস কেটে দিতে হবে”। বাসানিও এতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও অ্যান্টানিও তা আমলে না নিয়ে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে। টাকা পাওয়ার পর এক পরীক্ষায় সফল হয়ে বাসানিও পোর্শিয়াকে বিয়ে করে।
একসময় অ্যান্টানিওর সবগুলো জাহাজ সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়ায় সে সময়মত শাইলকের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়। পূর্বশত্রুতা ছাড়াও অ্যান্টনিওর বন্ধু লরেনজো (খ্রীস্টান) শাইলকের মেয়ে জেসিকাকে পালিয়ে বিয়ে করলে শাইলক খ্রীস্টানদের প্রতি আরও প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে ওঠে। সময়মত টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় শাইলক চুক্তি অনুযায়ী অ্যান্টিনিওর শরীর থেকে এক পাউন্ড মাংস দাবী করে।
মৃত্যু পথযাত্রী অ্যান্টোনিও ব্যাসানিওকে চিঠির মাধ্যমে জানায় মৃত্যুর আগে সে অ্যান্টনিওকে একবার দেখতে চায়। বাসানিও বিচলিত হয়ে পরে। সে পৌর্শিয়াকে সবকিছু জানায় এবং পোর্শিয়াসহ ভেনিসে ফিরে আসে। পোর্শিয়াকে বিয়ে করায় বাসানিও এখন বিপুল সম্পত্তির মালিক। চাইলে সে এখন ধার নেওয়া টাকার কয়েকগুণ বেশি শোধ করতে পারে। কিন্তু শাইলক তাতে রাজি নয়। প্রতিশোধ পরায়ন শাইলকের চুক্তি অনুযায়ী অ্যান্টিনিওর শরীরের মাংসই চাই। এমনকি বিচারক নিজে অনুরোধ করলেও শাইলক তার অনমনীয়তা বজায় রাখে।
অ্যান্টিনিওর বিচারকার্য চলাকালে তরুণ উকিলের ছদ্মবেশে পোর্শিয়া বিচারকের সামনে এসে দাঁড়ায়। কৌশলে তরুণ উকিল শাইলককে অ্যান্টিনিওর শরীর থেকে রক্তপাতহীন এক পাউন্ড মাংস কেটে নিতে বলে কারণ রক্তের কথা দলিলে উল্লেখ ছিলনা। কিন্তু রক্তপাতহীন মাংস কাঁটা অসম্ভব। ফলে ধূর্ত শাইলক শেষ পর্যন্ত বিচারে সে হেরে যায়।
নাটকের বিখ্যাত উক্তিগুলো-
- All that glitters is not gold.
- পোর্শিয়ার বাবা মৃত্যুর আগে মেয়েকে তিনটে কৌটো দিয়েছেন তিনি। প্রথমটি সোনার, দ্বিতীয়টি রূপার এবং তৃতীয়টি সীসার তৈরি। এর মধ্যে একটি কৌটোর ভেতর আছে পোর্শিয়ার ছবি। যে প্রার্থী প্রথমে আন্দাজ করতে পারবে, কোন কৌটোয় ছবিটি রয়েছে তার সাথেই বিয়ে হবে পোর্শিয়ার। এমন একজন প্রার্থী হল মরক্কোর রাজকুমার। সে চিন্তা করে রূপা আর সীসা সন্তা জিনিস, তাই সোনার কৌটাতেই ছবি থাকবে। কিন্তু সে যখন সোনার কৌটা খোলে তাতে একটি চিরকুট পাওয়া যায় যাতে লেখা ছিল “All that glitters is not gold”. শেষ পর্যন্ত বাসানিও সঠিকভাবে কৌটা চিহ্নিত করতে পারলে তার সাথে পোর্শিয়ার বিয়ে হয়।
- Love is Blind.