ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও গদ্যরচয়িতা
জন্ম: ১৮৪৭, কুষ্টিয়া; মৃত্যু: ১৯১১; ছদ্মনাম; গাজী মিয়াঁ
মীর মোশাররফ ছিলেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান গদ্যশিল্পী ও উনিশ শতকের বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিকদের পথিকৃৎ। তার সৃষ্টিকর্ম বাংলার মুসলমান সমাজে আধুনিক সাহিত্য ধারার সূচনা করে। তিনি আরবি-ফারসি মিশ্রিত বাংলা ভাষা পরিত্যাগ করে বিশুদ্ধ বাংলায় অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন। মীর মোশাররফ ছাত্রাবস্থায় সংবাদ প্রভাকর (১৮৩১) ও গ্রামবার্তা প্রকাশিকা-র (১৮৬৩) মফঃস্বল সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন। গ্রামবার্তার সম্পাদক কাঙাল হরিনাথ ছিলেন তাঁর সাহিত্যগুরু।
সম্পাদিত পত্রিকা: আজিজননেহার (১৮৭৪) ও হিতকরী (১৮৯০)
উপন্যাস
রত্নাবতী
মীর মশাররফের প্রথম প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। এটি রচনার মধ্য দিয়ে তিনি মুসলিমদের মধ্যে প্রথম উপন্যাস রচয়িতার মর্যাদা পান। রাজপুত্র সুকুমার ও মন্ত্রীপুত্র সুমন্তের মধ্যে ‘ধন বড় না বিদ্যা বড়’ এ বিতর্কই এ উপন্যাসের উপজীব্য।
বিষাদ-সিন্দু
এটি ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস। কারবালার বিষাদময় ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাসটি তার শ্রেষ্ঠ রচনা। ‘এজিদ’ এ উপন্যাসের নায়ক। উপন্যাসটি ৩টি পর্বে বিভক্ত। যথা: মহররম পর্ব, উদ্ধার পর্ব, এজিদবধ পর্ব। উল্লেখযোগ্য চরিত্র: হাসান, হোসেন, জয়নব, এজিদ, মোহাম্মদ হানিফা, জয়নাল আবেদীন।
উদাসীন পথিকের মনের কথা
এটি আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস। তবে প্রকৃতপক্ষে এটি উপন্যাস বা আত্মজীবনীমূলক রচনা নয়। একে আত্মজীবনী নির্ভর উপন্যাসসূলভ রচনা বলা যায়। ‘উদাসীন পথিক’ ছদ্মনামে রচনা করেন ।
নাটক
- বসন্তকুমারী: বাংলা সাহিত্যে মুসলিম সাহিত্যিক রচিত প্রথম নাটক ।
- বেহুলা গীতাভিনয়
- জমীদার দর্পণ: অত্যাচারী ও চরিত্রহীন জমিদার চরিত্রকে উপজীব্য করে লেখা।
আত্মজীবনী
- গাজী মিয়াঁর বস্তানী: আত্মজীবনীমূলক ব্যঙ্গাত্মক রচনা। ‘ভেড়াকান্ত’ ছদ্মনামে সমাজের বিভিন্ন অসংগতি তুলে ধরেছেন।
- আমার জীবনী
- কুলসুম জীবনী: দ্বিতীয় স্ত্রী কুলসুমকে উপজীব্য করে লেখা।
কাব্য
- গোরাই ব্রীজ বা গৌরী সেতু
- পঞ্চনারী
- প্রেম পরিজাত
- মদিনার গৌরব
- মসলেম বীরত্ব
- বাজীমাৎ
প্রবন্ধ
- গো-জীবন: হিন্দু-মুসলিমদের একত্রিক করার প্রত্যয়ে রচনা করেন। এতে কৃষিভিত্তিক সমাজে গোহত্যা নিষিদ্ধ করার পক্ষে বলা হয়। কিন্তু মামলা ও প্রতিবাদের মুখে মীর মশাররফ এটি প্রত্যাহার করে নেন।
- এসলামের জয়
এছাড়া ‘সংগীত লাহিড়ী’ মীর মশাররফ হোসেনের গানের সংকলন।