দিল্লি তুর্কি মুসলিমদের অধিকৃত হলে বখতিয়ার খিলজি বঙ্গ আক্রমণ করেন এবং মগধরাজ্য দখল করে নেয়। রাজ্যচ্যুত রাজকুমার হেমচন্দ্র যেনো রাজ্য পুনঃধিকার করতে পারে সেজন্য তার গুরু মাধবাচার্য তাকে নির্দেশনা দেন। নারীসঙ্গ যেন তাকে(রাজকুমারের) লক্ষচ্যুত করতে না পারে সেজন্য মাধবাচার্য হেমচন্দ্রের প্রণয়ী মৃণালিনীকে গোপনে গৌরনগরে হৃষিকেশের কাছে প্রেরণ করেন। এদিকে মৃণালিনীর স্মৃতির কারণে হেমচন্দ্র কাজে মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন। একপর্যায়ে মাধবাচার্য হেমচন্দ্রকে মৃণালিনীর ঠিকানা দেন। কিন্তু এক বছরের মধ্যে সাক্ষাৎ করতে নিষেধ করে।
গৌরনগরে পোছে গিরিজায়া নামক এক ভিখারিনীর সহায়তায় হেমচন্দ্র মৃণালিনীকে গভীর রাতে সাক্ষাৎ করতে বলেন। সাক্ষাৎ করে মৃণালিনী চুপচাপ ঘরে ঢুকতে গেলে হৃষিকেশের চরিত্রহীন পুত্র ব্যোমকেশ কতৃক কু-প্রস্তাব দেয়। তাতে রাজী না হওয়ায় ব্যোমকেশ মৃণালিনীকে কুলাটা প্রমাণ করে। ফলে মৃণালিনীকে বাড়ি থেকে বের করে দেন হৃষিকেশ। মৃণালিনী গিরিজায়াকে (ভিখারিনী) সঙ্গী করে রাজকুমারের সন্ধানে বের হয়। রাজকুমার হৃষিকেশের বাড়িতে ঘটে যাওয়া ঘটনা শুনে মৃণালিনীকে কুলটা অপবাদ দিয়ে দূরে ঠেলে দেয়। পরবর্তীতে ব্যোমকেশ কতৃক যাবতীয় বিবরণ শুনে হেমচন্দ্রের ভুল ভাঙে এবং মৃণালিনীর কাছে ফিরে যায়।
মগধ রাজ্য আগেই দখল হয়ে গেছে, এখন গৌড়ের পালা। বৃদ্ধ গৌড়াধিপতি বার্ধক্যের কারণে বখতিয়ার খিলজির বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে অক্ষম হওয়ায় সে ধর্মাধিপতি পশুপতিকে যুদ্ধের ভার অর্পণ করে। গৌড়রাজ্যকে দখলের হাত থেকে বাঁচাতে এবং প্রতিশোধ নিতে মাধবাচার্য হেমচন্দ্র ও গৌড় সেনাদের নিয়ে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়তে চায়। কিন্তু ক্ষমতার লোভে পশুপতি তুর্কিদের সাথে হাত মেলায়। দৈবক্রমে পশুপতির প্রেমিকা বিধবা মনোরমা পশুপতিকে এহেন কাজ থেকে বিরত রাখে। মনোরমাই ছিল পশুপতির ছোটবেলায় বিয়ে করা বউ। এটি জানার পর পশুপতি পাগলপ্রায় হয়ে যায়। সে স্ত্রীকে গৃহবন্দি করে।
বখতিয়ার খিলজির মুহুমু্ছ আক্রমণে গৌড় রাজ্য তুর্কিদের অধীনে চলে যায়। তুর্কিরা পশুপতিকে মুসলিম হবার শর্তে রাজ্যভার অর্পণ করতে চাইলে সে প্রত্যাখ্যান করে। সিপাহি মুহাম্মাদের সহায়তায় পালিয়ে যায়। যবনদের (তুর্কিদের) জ্বালানো পোড়ানোর ফলে পশুপতির ঘরেও আগুন ধরে যায়। পশুপতি মনে করে হয়ত তার স্ত্রী মনোরমা ঘরে বন্দি অবস্থাতেই আগুনে পুড়ে মারা গেছে। তাই সেও আগুনে ঝাপ দেয় এবং মারা যায়। কিন্তু মনোরমা আগেই ঘর থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ শুনে মনোরমাও আত্মহুতি দেয়।
মৃণালিনী ও হেমচন্দ্র দক্ষিণে গিয়ে নতুন রাজ্য স্থাপন করে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে। তুর্কিদের বিরুদ্ধে হেমচন্দ্র সৈন্য তৈরি করে এবং প্রতিশোধ নেওয়ার অপেক্ষা করেতে থাকে। কিন্তু বৃদ্ধ গৌড়াধিপতি তুর্কিদের আজ্ঞাবহ রাজায় পরিণত হন।