২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয়েছে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা ‘রূপকল্প ২০৪১’। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) সভায় অনুমোদিত হয় ‘রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবে রূপায়ণ: বাংলাদেশের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১’। রূপকল্প বাস্তবায়নের রোড ম্যাপ হিসেবে প্রেক্ষিত পরিকল্পনাটি প্রণয়ন করা হয়েছে।
রূপকল্প ২০৪১ এর মূল লক্ষ্য হলো ২০৩১ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্যের অবসান ও উচ্চ-মধ্য আয়ের দেশের মর্যাদায় উত্তরণ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের দ্রুত অবলুপ্তিসহ উচ্চ-আয়ের দেশের মর্যাদায় আসীন হওয়া। ‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১’ অনুযায়ী আগামী দু’দশকে ‘মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)’-এর গড় প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯.০২ শতাংশ। পরিকল্পনায় উন্নয়নের সুফল যথাযথভাবে বণ্টনের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে যাতে ভারসাম্যমূলক দ্রুতগতির এ প্রবৃদ্ধির সুফল দরিদ্র ও অরক্ষিত জনগোষ্ঠীসহ সকলেই পায়।
রূপকল্প ২০৪১ এর ভিত্তিমূলে রয়েছে ২টি প্রধান অভিষ্ট। যথা:
- ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত দেশ, যেখানে মাথাপিছু আয় হবে ১২,৫০০ ডলারের বেশি।
- বাংলাদেশ হবে সোনার বাংলা, যেখানে দারিদ্র্য হবে সুদূর অতীতের ঘটনা।
রূপকল্পটিতে দারিদ্র দূরীকরণে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। চরম দরিদ্র, যাদের দৈনিক আয় ২.১৬ ডলারের কম, এমন লোকের সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে ০.৬৮ শতাংশে। আবার, দরিদ্র, যাদের দৈনিক আয় থাকবে ৩.২০ ডলার, এমন লোকের সংখ্যা হবে ২.৫৯ শতাংশ।
নির্দেশক | ২০২০ | ২০৩১ | ২০৪১ |
---|---|---|---|
চরম দারিদ্র্য | ৯.৪% | ২.৩% | ০.৬৮% |
দারিদ্র্য | ১৮.৮% | ৭% | ২.৫৯% |
এ লক্ষ্যে রফতানিমুখী শিল্পায়ন, কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, নগরের বিস্তার, দক্ষ জ্বালানি ও অবকাঠামো, দক্ষ জনশক্তি তৈরি ইত্যাদি কৌশলগত কাজ করার অঙ্গীকার করা হয়েছে প্রেক্ষিত পরিকল্পনায়।
পরিকল্পনাটি ৪টি প্রাতিষ্ঠানিক স্তম্ভের ওপর নির্ভরশীল। যথা:
সুশাসন
গণতন্ত্রায়ন
বিকেন্দ্রীকরণ
সক্ষমতা অর্জন
এই চারটি ভিত্তির ওপর নির্ভর করবে উন্নত জাতি হিসেবে সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা।
গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যমাত্রা
একক | নির্দেশক (২০৩১) | নির্দেশক (২০৪১) |
---|---|---|
প্রবৃদ্ধি | ৮.৫১% | ৯.৯০% |
মূল্যস্ফীতি | ৪.৭৬% | ৩.৯৬% |
জনসংখ্যা | ১৮ কোনটি | ২১ কোটি |
চরম দারিদ্র | ২.৫৫% | ০.৬৮% |
দারিদ্র | ৭% | ২.৫৯% |
মাথাপিছু জাতীয় আয় | ৩২৭১ ডলার | ১৭২২৯ ডলার |
মোট জাতীয় সঞ্চয় | জিডিপির ৩৪.৭৭% | জিডিপির ৪৩.৯৫% |
আয়ুস্কাল | ৭৫ বছর | ৮০ বছর |
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার | ১% | ১% |
শিশুমৃত্যুর হার | প্রতি হাজারে ১৫ জন | প্রতি হাজারে ৪ জন |
শিক্ষায় সরকারি ব্যায় | জিডিপির ৩.৫% | জিডিপির ৪% |
রূপকল্পে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থার (যেমন: বিচার ব্যবস্থা, গণমুখী জনপ্রশাসন, দক্ষ ভূমি ব্যবস্থাপনা এবং সুষ্ঠু অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা) কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিতে পুরোপুরি বহুত্ববাদী গণতন্ত্র প্রচলনের কথা বলা হয়েছে যেখানে সকল নীতি ও কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ সব মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা প্রতিফলিত হবে। রূপকল্প বাস্তবায়নে তৃণমূল পর্যায়ে প্রশাসনিক, আর্থিক (রাজস্বসহ) ও রাজনৈতিক ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকৃত করা হবে। এক্ষেত্রে বড় বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে রূপকল্পে। এছাড়া রূপান্তরশীল অর্থনীতির সাথে প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গতি বিধানের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কৌশলগত সম্পর্ক, সম্পদ উন্নয়ন এবং অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা ও পরিচালন পদ্ধতি। এসব বাস্তবায়নে ‘রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গুণগত মান উন্নত’ করাকে মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হয়েছে।
বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ
২০২১ সালে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ বাস্তবায়ন শুরু হয়। পরিকল্পণাটি বাস্তবায়নের কিছু চ্যালেঞ্জ-
- রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গুণগত মান উন্নত করা।
- কর-জিডিপির অনুপাত জিডিপির ২০% এ উন্নীত করা।
- মূল্যস্ফীতির কাঙ্ক্ষিত হার বছরে প্রায় ৪-৫ শতাংশে আটকে রাখা।
করণীয়
- করের ক্ষেত্রে – প্রত্যক্ষ কর (আয়কর ও কর্পোরেট কর) এবং মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট)-এর ওপর জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে সরকারি ব্যয় আরো দরিদ্রমুখী, লিঙ্গ-সংবেদনশীল ও পরিবেশ-বান্ধব করা; সরকারি ব্যয়ের কার্যকারিতা ও গুণগত মান আরো উন্নত করা; এবং সরকারি ব্যয়ে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
- মূল্যস্থিতির ক্ষেত্রে – সুসমন্বিত মুদ্রা ও আর্থিক নীতিমালা, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্ব প্রদানসহ সরবরাহ বৃদ্ধিতে জোর দেয়া, অবকাঠামোতে সরকারি খাতের বর্ধিত ভূমিকা এবং বাংলাদেশে বিনিয়ন্ত্রিত বাজার অর্থনীতিতে শক্তিশালী প্রতিযোগিতার নীতিমালা নিশ্চিত করার মাধ্যমে মূল্যস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে।