লালসালু (উপন্যাস)

Estimated Reading Time: 7 Minutes

উপন্যাসের মূল চরিত্র মজিদ নামক এক প্রতারক। স্বার্থান্বেষণে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে সে উপনীত হয় মহব্বতপুর গ্রামে। গ্রামের মাতব্বর খালেক ব্যাপারীর বাড়িতে সে ঘাঁটি গাড়ে। মহব্বতনগর গ্রামে বাঁশঝাড়সংলগ্ন একটি কবর‌ আছে। কবরটি কার তা গ্রামবাসীর জানা ছিল না। লোক জমায়েত করে মজিদ প্রচার করে কবরটি এক ‘মোদাচ্ছের’ (নাম না জানা) পীরের এবং স্বপ্নাদেশে সেই মাজার তদারকির জন্যই এ গ্রামে তার আগমন। মাজিদের প্রচারের সহজ সরল গ্রামবাসী প্রতারিত হয়। ফলে জঙ্গলাকীর্ণ কবরটি পরিষ্কার করে ঝালরওয়ালা লালসালুতে ঢেকে দেওয়া হয়। যথারীতি সেখানে আগরবাতি, মোমবাতি জ্বলে; কবরটি অচিরেই পরিণত হয় মাজারে, মজিদ হয় সে মাজারের খাদেম। গ্রামবাসীর মাজারকেন্দ্রীক ভয়-ভক্তি-শ্রদ্ধা ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে মজিদ।

কৃপাপ্রার্থীরা মাজারটিতে টাকা-পয়সা দান করতে থাকেন। ফলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মজিদ ঘরবাড়ি, জমি-জিরাতের মালিক হয়ে বসে। মাজারটি পরিণত হয় গ্রামজুড়ে মজিদের আধিপত্য বিস্তারের প্রধান কেন্দ্রে। তার ভেল্কিবাজি গ্রামবাসীর কাছে তাকে অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন করে তোলে। ফলে ধর্মকর্মের পাশাপাশি সে হয়ে ওঠে গ্রামের প্রভাবশালী কর্তাব্যক্তি। এ প্রভাব বজায় রাখতেও সে সচেষ্ট হয়। তার চক্রান্তেই তাহের ও কাদেরের বাপ নিরুদ্দেশ হয়। এছাড়া খালেক ব্যাপারীর প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেওয়ানো, যুবক আব্বাসের স্কুল প্রতিষ্ঠার আয়োজনকে বিদ্রূপ করা ও তাকে অধার্মিক হিসেবে চিহ্নিত করে গ্রামছাড়া করা প্রভূত কাজের মধ্য দিয়ে মজিদ গ্রামে নিজের প্রভাব নিরঙ্কুশ করে।

মজিদের প্রথম স্ত্রী রহিমা। স্বামী মজিদের প্রতিটি কথাতার কাছে অবশ্য পালনীয়। মজিদের ধূর্ততা, শঠতা, ভণ্ডামি তার চোখে পড়ে না। কিন্তু দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলা একেবারেই বিপরীত। প্রথম থেকেই মজিদকে জামিলা স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারে নি। মজিদ জমিলাকে শাসন করার চেষ্টা করে; কিন্তু পারে না। জমিলার থুথু নিক্ষেপের ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয় সে। জমিলাকে মাজার ঘরের অন্ধকারে খুঁটিতে বেঁধে রাখে। রহীমার হৃদয় ব্যাকুল হয়। মজিদের প্রতি যে রহীমার বিশ্বাস ছিল পর্বতের মতো অটল সে রহীমাই বিদ্রোহ করে।

একসময় শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হলে গ্রামবাসী মজিদের কাছে প্রতিকার চায়। কিন্তু মজিদের কাছ থেকে ধমক ছাড়া তখন আসে না কিছুই। পরিশেষে বিপর্যস্ত পারিবারিক জীবন, বিধ্বস্ত ফসলের ক্ষেত এবং দরিদ্র গ্রামবাসীর হাহাকারের মধ্যদিয়ে লালসালু উপন্যাসের কাহিনী শেষ হয়।

উপন্যাস, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ

Leave a Reply