লিঙ্গ (পুরুষ ও স্ত্রী বাচক শব্দ)

Estimated Reading Time: 10 Minutes

লিঙ্গ শব্দের অর্থ চিহ্ন। পুরুষ, স্ত্রী, জড় পদার্থ ও উভয় সম্প্রদায়ভুক্ত জাতি বোঝাতে যে চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে লিঙ্গ বলে। সংস্কৃত ব্যাকরণের সাথে বাংলা ব্যাকরণের এক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। সংস্কৃত ব্যাকরণের কিছু নিয়ম বাংলা ব্যাকরণের মানে না। বাংলায় মূলত বিশেষ্য পদেই লিঙ্গ পার্থক্য হয় (কিছু বিশেষণ পদেও হয়)। যেমন: সংস্কৃতে ‘সুন্দর বালক’, ‘সুন্দরী (বিশেষণ পদ) বালিকা (বিশেষ্য পদ)’ কিন্তু বাংলায় ‘সুন্দর বালক’ ও ‘সুন্দর বালিকা’ হয়।

লিঙ্গ চার প্রকার। যথা: পুংলিঙ্গ , স্ত্রী লিঙ্গ, উভয় লিঙ্গ ও ক্লীবলিঙ্গ। যে শব্দ দ্বারা পুরুষ বোঝায় তা পুংলিঙ্গ (যেমন: বাবা), যে শব্দ দ্বারা স্ত্রী বোঝায় তা স্ত্রী লিঙ্গ (যেমন: মা), যে শব্দ দ্বারা পুরুষ ও স্ত্রী উভয়কেই বোঝায় তা উভয় লিঙ্গ (যেমন: শিশু) এবং যে শব্দ দ্বারা পুরুষ ও স্ত্রী কোনটিকে না বুঝিয়ে অচেতন পদার্থ বোঝায় তাকে ক্লীবলিঙ্গ (যেমন: বই) বলে। তবে বাংলা ব্যাকরণে ক্লীবলিঙ্গ প্রচলিত নয়।

বাংলায় পুরুষ ও স্ত্রী বাচক শব্দ মূলত দুইভাগে বিভক্ত। যথা: পতি ও পত্নীবাচক অর্থে (যেমন: আব্বা-আম্মা, চাচা- চাচী ইত্যাদি) এবং পুরুষ ও মেয়ে বা স্ত্রীজাতীয় অর্থে (যেমন: বালক – বালিকা, খোকা-খুকি ইত্যাদি)।

উল্লেখ্য ‘হিজড়া’ শব্দটি ক্লীব লিঙ্গ হিসেবে বিবেচিত।

লিঙ্গভিত্তিক শব্দ গঠন

সাধারণত পুরুষবাচক শব্দের সাথে বিভিন্ন স্ত্রীপ্রত্যয় যুক্ত হয়ে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয়। নিচে তেমন কিছু নিয়ম দেওয়া হয়েছে। তবে চাকরি পরীক্ষায় এসব নিয়ম বিভ্রান্তিমূলক মনে হতে পারে। তাই পরবর্তীতে চাকরি পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ শব্দগুলো দেওয়া হয়েছে।

বাংলা স্ত্রী প্রত্যয়

পুরুষবাচক শব্দের সঙ্গে ঈ, নি, নী, আনী, ইনী, ন প্রত্যয় যোগ করে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠন করা হয়। যেমন: ভাগনা-ভাগনী (ঈ-প্রত্যয়) ইত্যাদি। আবার পুরুষবাচক শব্দের শেষে ‘ঈ’ থাকলে স্ত্রীবাচক শব্দে ‘নী’ হয় এবং পূর্বের ‘ঈ’ টি ‘ই’ হয়। যেমন: ভিখারী-ভিখারিনী।

পুংলিঙ্গস্ত্রীলিঙ্গ
কামারকামারনী
জেলেজেলেনী
কুমারকুমারনী
ধোপাধোপানী
মজুরমুজরানী
ঠাকুরঠাকুরানী/ঠাকুরুন/ঠাকুরাইন
নাপিতনাপিতানী
মেথরমেথরানী
গোয়ালাগোয়ালিনী
গুণীগুণিনী

পুরুষবাচক শব্দের আগে স্ত্রীবাচক শব্দ ব্যবহার করে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠন করা হয়। যেমন:

পুংলিঙ্গস্ত্রী লিঙ্গ
কবিমহিলা কবি
ডাক্তারমহিলা ডাক্তার / ডাক্তারনী
মাস্টারমাস্টারনী
কর্মীমহিলা/নারী কর্মী
পুলিশমহিলা পুলিশ
সভ্যমহিলা সভ্য

কতগুলো উভয় লিঙ্গ শব্দের আগে পুরুষবাচক/স্ত্রীবাচক শব্দ ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট লিঙ্গভুক্ত করা হয়। যেমন:

পুংলিঙ্গস্ত্রী লিঙ্গ
মদ্দা/হুলো বিড়ালমেনি বিড়াল
পুরুষ কয়েদিস্ত্রী কয়েদি
এড়ে বাছুড়বকনা বাছুড়
মদ্দা ঘোড়ামাদি ঘোড়া

শব্দের শেষে পুরুষ ও স্ত্রীবাচকস শব্দ যোগ করে পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গবাচক শব্দ গঠিত হতে পারে। যেমন:

পুংলিঙ্গস্ত্রীলিঙ্গ
বোন-পোবোন-ঝি
ঠাকুর-পোঠাকুর-ঝি
গয়ালগয়াল বউ
জেলেজেলে বউ

সংস্কৃত স্ত্রী প্রত্যয়

তৎসম পুরুষবাচক শব্দের পরে আ, ঈ, আনী, নী, ইকা প্রভৃতি প্রত্যয়যোগে স্ত্রী-বাচক শব্দ গঠিত হয়। যেমন:

পুংলিঙ্গস্ত্রী লিঙ্গ
মৃতমৃতা
মাননীয়মাননীয়া
অজঅজা
ক্ষত্রিয়ক্ষত্রিয়া
নিশাচরনিশাচারী
চতুর্দশচতুর্দশী
ষোড়শষোড়শী
বৈষ্ণববৈষ্ণবী
নাটকনাটিকা
গীতগীতিকা
নবীননবীনা
চতুরচতুরা
মলিনমলিনা
প্রথমপ্রথমা
চপলচপলা

বাংলার মতই তৎসম পুরুষবাচক শব্দের শেষে ‘ঈ’ থাকলে স্ত্রীবাচক শব্দে ‘নী’ হয় এবং পূর্বের ‘ঈ’ টি ‘ই’ হয়। যেমন: অভিসার-অভিসারিনী, রোগী-রোগিনী ইত্যাদি।

বিশেষ নিয়মে সাধিত স্ত্রী বাচক শব্দ

পুরুষবাচক শব্দের শেষে ‘তা’ থাকলে স্ত্রী বাচক শব্দে ‘ত্রী’ হয়। যেমন: নেতা-নেত্রী, শ্রোতা-শ্রোত্রী, ধাতা-ধাত্রী ইত্যাদি।

পুরুষবাচক শব্দের শেষে-

থাকলেহয়উদাহরণ
আত্আতীসৎ-সতী
বান্বতীগুণবান-গুণবতী
মন্মতীবুদ্ধিমান-বুদ্ধীমতী
ঈয়নঈয়সীগরীয়ান-গরিয়সী

বিশেষ নিয়মে স্ত্রী-বাচক শব্দ-

পুংবাচকস্ত্রীবাচক
সম্রাটসম্রাজ্ঞী
শ্বশুরশ্বশ্রূ / শাশুড়ি
শিক্ষকশিক্ষয়িত্রী
সভাপতিসভানেত্রী

নিত্য স্ত্রী/পুরুষ বাচক শব্দ

কিছু শব্দ শুধু স্ত্রী/পুরুষ বাচক হয়। এগুলোর যথাক্রমে পুরুষবাচক/স্ত্রী বাচক শব্দ নেই। তাই এগুলোকে নিত্য স্ত্রী/পুরুষ বাচক শব্দ বলে।

নিত্য স্ত্রী বাচক শব্দ: সতীন, সৎমা, সধবা, এয়ো, দাই, অর্ধাঙ্গিনী, কুলটা, বিধবা, অসূর্যস্পর্শা, সপত্নী, অরক্ষণীয়া ইত্যাদি।
নিত্য পুরুষ বাচক শব্দ: কবিরাজ, যোদ্ধা, ঢাকী, কৃতদার, পুরোহিত, সরকার, মওলানা, বিচারপতি ইত্যাদি।

গুরুত্বপূর্ণ পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ

পুংলিঙ্গস্ত্রীলিঙ্গ
জামাইমেয়ে
কুলিকামিন
তাঐমাঐ
শুকসারী
খানসামাআয়া
গণকগণকী
রজকরজকী/রজকিনী
মালামালিকা
সুকেশসুকেশা/সুকেশী
শ্বশুরশ্বশ্রু/শাশুড়ি
দেওরজা/ননদ
নন্দাইননদ/ননদিনী
মাতঙ্গমাতঙ্গী/মাতঙ্গিনী
গোপগোপী/গোপিনী
সুনয়নসুনয়না/সুনয়নী
সুকণ্ঠসুকণ্ঠী/সুকণ্ঠা
বিহঙ্গবিহঙ্গী/বিহঙ্গিনী
আচার্যআচার্যা/আচর্যানী
অরণ্যঅরণ্যানী
বনবনানী
কল্যাণীয়েসুকল্যাণীয়াসু
শ্রদ্ধাস্পাদেষুশ্রদ্ধাস্পাদাসু
মনুষ্যমনুষী
সৎসতী
সভাপতিসভানেত্রী
96

পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ

বিগত সালের প্রশ্ন

1 / 17

'নাটিকা' কোন অর্থে স্ত্রীবাচক শব্দ?

2 / 17

'বিদ্বান' শব্দের সঠিক স্ত্রীবাচক শব্দ কোনটি?

3 / 17

কোনটি উভয় লিঙ্গের উদাহরণ?

4 / 17

নিচের কোনটি ক্ষুদ্রার্থে স্ত্রীলিঙ্গ?

5 / 17

নিচের কোন শব্দটির কোন লিঙ্গান্তর হয় না?

6 / 17

নিচের কোনটি পুরুষবাচক শব্দ?

7 / 17

'বীর' শব্দের বিপরীত লিঙ্গ কী?

8 / 17

কোনটি নিত্য স্ত্রীবাচক বাংলা শব্দ?

9 / 17

বাংলা ব্যাকরণের কোন পদে সংস্কৃত লিঙ্গের নিয়ম মানা হয় না?

10 / 17

কোনটি পত্নী অর্থে স্ত্রীবাচক শব্দ?

11 / 17

'গণক' শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ কোনটি?

12 / 17

'কুহক' শব্দের স্ত্রীবাচক শব্দ কোনটি?

13 / 17

'কুলি' শব্দের স্ত্রীবাচক শব্দ কোনটি?

14 / 17

'মালী' শব্দের স্ত্রীবাচক শব্দ কোনটি?

15 / 17

কোনটির আগে স্ত্রীবাচক শব্দযোগে লিঙ্গন্তর করতে হয়?

16 / 17

নিচের কোন শব্দের লিঙ্গন্তার হয় না?

17 / 17

'আমি' শব্দটি কোন লিঙ্গ?

Your score is

The average score is 63%

0%

Rate this quiz

Leave a Reply