লিঙ্গ শব্দের অর্থ চিহ্ন। পুরুষ, স্ত্রী, জড় পদার্থ ও উভয় সম্প্রদায়ভুক্ত জাতি বোঝাতে যে চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে লিঙ্গ বলে। সংস্কৃত ব্যাকরণের সাথে বাংলা ব্যাকরণের এক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। সংস্কৃত ব্যাকরণের কিছু নিয়ম বাংলা ব্যাকরণের মানে না। বাংলায় মূলত বিশেষ্য পদেই লিঙ্গ পার্থক্য হয় (কিছু বিশেষণ পদেও হয়)। যেমন: সংস্কৃতে ‘সুন্দর বালক’, ‘সুন্দরী (বিশেষণ পদ) বালিকা (বিশেষ্য পদ)’ কিন্তু বাংলায় ‘সুন্দর বালক’ ও ‘সুন্দর বালিকা’ হয়।
লিঙ্গ চার প্রকার। যথা: পুংলিঙ্গ , স্ত্রী লিঙ্গ, উভয় লিঙ্গ ও ক্লীবলিঙ্গ। যে শব্দ দ্বারা পুরুষ বোঝায় তা পুংলিঙ্গ (যেমন: বাবা), যে শব্দ দ্বারা স্ত্রী বোঝায় তা স্ত্রী লিঙ্গ (যেমন: মা), যে শব্দ দ্বারা পুরুষ ও স্ত্রী উভয়কেই বোঝায় তা উভয় লিঙ্গ (যেমন: শিশু) এবং যে শব্দ দ্বারা পুরুষ ও স্ত্রী কোনটিকে না বুঝিয়ে অচেতন পদার্থ বোঝায় তাকে ক্লীবলিঙ্গ (যেমন: বই) বলে। তবে বাংলা ব্যাকরণে ক্লীবলিঙ্গ প্রচলিত নয়।
বাংলায় পুরুষ ও স্ত্রী বাচক শব্দ মূলত দুইভাগে বিভক্ত। যথা: পতি ও পত্নীবাচক অর্থে (যেমন: আব্বা-আম্মা, চাচা- চাচী ইত্যাদি) এবং পুরুষ ও মেয়ে বা স্ত্রীজাতীয় অর্থে (যেমন: বালক – বালিকা, খোকা-খুকি ইত্যাদি)।
উল্লেখ্য ‘হিজড়া’ শব্দটি ক্লীব লিঙ্গ হিসেবে বিবেচিত।
লিঙ্গভিত্তিক শব্দ গঠন
সাধারণত পুরুষবাচক শব্দের সাথে বিভিন্ন স্ত্রীপ্রত্যয় যুক্ত হয়ে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয়। নিচে তেমন কিছু নিয়ম দেওয়া হয়েছে। তবে চাকরি পরীক্ষায় এসব নিয়ম বিভ্রান্তিমূলক মনে হতে পারে। তাই পরবর্তীতে চাকরি পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ শব্দগুলো দেওয়া হয়েছে।
বাংলা স্ত্রী প্রত্যয়
পুরুষবাচক শব্দের সঙ্গে ঈ, নি, নী, আনী, ইনী, ন প্রত্যয় যোগ করে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠন করা হয়। যেমন: ভাগনা-ভাগনী (ঈ-প্রত্যয়) ইত্যাদি। আবার পুরুষবাচক শব্দের শেষে ‘ঈ’ থাকলে স্ত্রীবাচক শব্দে ‘নী’ হয় এবং পূর্বের ‘ঈ’ টি ‘ই’ হয়। যেমন: ভিখারী-ভিখারিনী।
পুংলিঙ্গ | স্ত্রীলিঙ্গ |
---|---|
কামার | কামারনী |
জেলে | জেলেনী |
কুমার | কুমারনী |
ধোপা | ধোপানী |
মজুর | মুজরানী |
ঠাকুর | ঠাকুরানী/ঠাকুরুন/ঠাকুরাইন |
নাপিত | নাপিতানী |
মেথর | মেথরানী |
গোয়ালা | গোয়ালিনী |
গুণী | গুণিনী |
পুরুষবাচক শব্দের আগে স্ত্রীবাচক শব্দ ব্যবহার করে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠন করা হয়। যেমন:
পুংলিঙ্গ | স্ত্রী লিঙ্গ |
---|---|
কবি | মহিলা কবি |
ডাক্তার | মহিলা ডাক্তার / |
মাস্টার | মাস্টারনী |
কর্মী | মহিলা/নারী কর্মী |
পুলিশ | মহিলা পুলিশ |
সভ্য | মহিলা সভ্য |
কতগুলো উভয় লিঙ্গ শব্দের আগে পুরুষবাচক/স্ত্রীবাচক শব্দ ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট লিঙ্গভুক্ত করা হয়। যেমন:
পুংলিঙ্গ | স্ত্রী লিঙ্গ |
---|---|
মদ্দা/হুলো বিড়াল | মেনি বিড়াল |
পুরুষ কয়েদি | স্ত্রী কয়েদি |
এড়ে বাছুড় | বকনা বাছুড় |
মদ্দা ঘোড়া | মাদি ঘোড়া |
শব্দের শেষে পুরুষ ও স্ত্রীবাচকস শব্দ যোগ করে পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গবাচক শব্দ গঠিত হতে পারে। যেমন:
পুংলিঙ্গ | স্ত্রীলিঙ্গ |
---|---|
বোন-পো | বোন-ঝি |
ঠাকুর-পো | ঠাকুর-ঝি |
গয়াল | গয়াল বউ |
জেলে | জেলে বউ |
সংস্কৃত স্ত্রী প্রত্যয়
তৎসম পুরুষবাচক শব্দের পরে আ, ঈ, আনী, নী, ইকা প্রভৃতি প্রত্যয়যোগে স্ত্রী-বাচক শব্দ গঠিত হয়। যেমন:
পুংলিঙ্গ | স্ত্রী লিঙ্গ |
---|---|
মৃত | মৃতা |
মাননীয় | মাননীয়া |
অজ | অজা |
ক্ষত্রিয় | ক্ষত্রিয়া |
নিশাচর | নিশাচারী |
চতুর্দশ | চতুর্দশী |
ষোড়শ | ষোড়শী |
বৈষ্ণব | বৈষ্ণবী |
নাটক | নাটিকা |
গীত | গীতিকা |
নবীন | নবীনা |
চতুর | চতুরা |
মলিন | মলিনা |
প্রথম | প্রথমা |
চপল | চপলা |
বাংলার মতই তৎসম পুরুষবাচক শব্দের শেষে ‘ঈ’ থাকলে স্ত্রীবাচক শব্দে ‘নী’ হয় এবং পূর্বের ‘ঈ’ টি ‘ই’ হয়। যেমন: অভিসার-অভিসারিনী, রোগী-রোগিনী ইত্যাদি।
বিশেষ নিয়মে সাধিত স্ত্রী বাচক শব্দ
পুরুষবাচক শব্দের শেষে ‘তা’ থাকলে স্ত্রী বাচক শব্দে ‘ত্রী’ হয়। যেমন: নেতা-নেত্রী, শ্রোতা-শ্রোত্রী, ধাতা-ধাত্রী ইত্যাদি।
পুরুষবাচক শব্দের শেষে-
থাকলে | হয় | উদাহরণ |
---|---|---|
আত্ | আতী | সৎ-সতী |
বান্ | বতী | গুণবান-গুণবতী |
মন্ | মতী | বুদ্ধিমান-বুদ্ধীমতী |
ঈয়ন | ঈয়সী | গরীয়ান-গরিয়সী |
বিশেষ নিয়মে স্ত্রী-বাচক শব্দ-
পুংবাচক | স্ত্রীবাচক |
---|---|
সম্রাট | সম্রাজ্ঞী |
শ্বশুর | শ্বশ্রূ / শাশুড়ি |
শিক্ষক | শিক্ষয়িত্রী |
সভাপতি | সভানেত্রী |
নিত্য স্ত্রী/পুরুষ বাচক শব্দ
কিছু শব্দ শুধু স্ত্রী/পুরুষ বাচক হয়। এগুলোর যথাক্রমে পুরুষবাচক/স্ত্রী বাচক শব্দ নেই। তাই এগুলোকে নিত্য স্ত্রী/পুরুষ বাচক শব্দ বলে।
নিত্য স্ত্রী বাচক শব্দ: সতীন, সৎমা, সধবা, এয়ো, দাই, অর্ধাঙ্গিনী, কুলটা, বিধবা, অসূর্যস্পর্শা, সপত্নী, অরক্ষণীয়া ইত্যাদি।
নিত্য পুরুষ বাচক শব্দ: কবিরাজ, যোদ্ধা, ঢাকী, কৃতদার, পুরোহিত, সরকার, মওলানা, বিচারপতি ইত্যাদি।
গুরুত্বপূর্ণ পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ
পুংলিঙ্গ | স্ত্রীলিঙ্গ |
---|---|
জামাই | মেয়ে |
কুলি | কামিন |
তাঐ | মাঐ |
শুক | সারী |
খানসামা | আয়া |
গণক | গণকী |
রজক | রজকী/রজকিনী |
মালা | মালিকা |
সুকেশ | সুকেশা/সুকেশী |
শ্বশুর | শ্বশ্রু/শাশুড়ি |
দেওর | জা/ননদ |
নন্দাই | ননদ/ননদিনী |
মাতঙ্গ | মাতঙ্গী/মাতঙ্গিনী |
গোপ | গোপী/গোপিনী |
সুনয়ন | সুনয়না/সুনয়নী |
সুকণ্ঠ | সুকণ্ঠী/সুকণ্ঠা |
বিহঙ্গ | বিহঙ্গী/বিহঙ্গিনী |
আচার্য | / |
অরণ্য | অরণ্যানী |
বন | বনানী |
কল্যাণীয়েসু | কল্যাণীয়াসু |
শ্রদ্ধাস্পাদেষু | শ্রদ্ধাস্পাদাসু |
মনুষ্য | মনুষী |
সৎ | সতী |
সভাপতি | সভানেত্রী |