১৯৪৬, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
জগমোহন, উপন্যাসের সূচনা-চরিত্র। সমাজের মানুষের মঙ্গলসাধনই জগমোনের প্রধান কাজ। কিন্তু অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের পেয়ে যান নাস্তিক উপাধি। তবে এই উপাধি পেয়ে তিনি বেশ আনন্দিতই ছিলেন। পাড়ার মুসলমান ও চামারদের ডেকে এনে খাওয়াতেন নিজ বাড়িতে। সমাজে কলঙ্কিনী হিসেবে পরিচিতা “ননিবালা”-কে নিজ বাড়িতে আশ্রয় দেন। শুধু তাই নয় ভ্রাতুষ্পুত্র শচীশ যখন বিয়ে করতে চায় ননিবালাকে তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন জগমোহন।
জগমোনের ভাই হরিমোহনের দুই ছেলে। পুরন্দর ও শচীশ। পুরন্দর বাবার মত, আর শচীশ জ্যাঠামশাইয়ের মত। জ্যাঠামশাইয়ের আদর্শেই চলতে থাকে সে। জগমোহন বিয়ে করেননি। শচীশকে ভালবাসতেন খুব। ছোটবেলা থেকেই শচীশ বড় হয় জ্যাঠামশাইয়ের কাছে। একদিকে খুশিই হন হরিমোহন তাতে। কারণ জগমোন শচীশের ভরণপোষণের, পড়ালেখার দায়িত্ব নেন। কিন্তু হরিমোহনের জন্য সমস্যা দাঁড়ায় তখন, যখন দাদার সাথে থেকে থেকে নিজ ছেলের নামের সাথেও “নাস্তিক” উপাধি পড়ে যায়!
শচীশ জ্যাঠামশাই বলতে পাগল। সাথে শচীশের বন্ধু শ্রীবিলাস। জগমোহন হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন, জগতের জড়ো হওয়া আঁধার একা মশাল হাতে দূর করা সম্ভব নয়। তাই তিনি অজান্তেই নিজের সঙ্গী করে নেন শচীশ-বিলাসদের। হরিমোহন হচ্ছেন দাদা জগমোনের ঠিক বিপরীত রূপ। গোঁড়া রক্ষণশীল হিন্দু। বৈষয়িক সম্পত্তির ব্যাপারে একেবারে ঝানুলোক। পরোপকারী নাস্তিক জগমোহনকে সম্পত্তির ভাগ থেকে বঞ্চিত করার কম চেষ্টা তিনি ছেলে পুরন্দরকে নিয়ে করেননি। যাইহোক, হঠাৎ করেই যেন কি এক পরিবর্তন আসে জগমোহনের স্নেহাশিস শচীশের মধ্যে। প্রায় অনেকদিন নিখোঁজ থাকে শচীশ। অনেক কষ্টের পর তাকে খোঁজে বের করে শ্রীবিলাস। অবাক বনে যায় বিলাস শচীশকে দেখে!
উপন্যাসের এক পর্যায়ে আগমন ঘটে লীলানন্দস্বামী নামক এক ব্যক্তির। যার বাড়িতেই দামিনী নামক এক বিধবার সাথে পরিচয় হয় শচীশ-বিলাসদের। বেশ ব্যক্তিত্বসম্পন্না এক মেয়ে দামিনী। যাকে বলতে গেলে মোটামুটি ভয়ই পান লীলানন্দস্বামী! দামিনী লীলানন্দস্বামীর কোন আত্মীয়া নয়, তবুও বাঁধা পড়ে যায় দামিনী লীলানন্দস্বামীর বাড়িতে। শুরু হয় ত্রিভুজ-প্রেমের কাহিনী। কে কাকে ভালবাসে আর কে কাকে যে চায় বা পাবে তা বোঝা মুশকিল।