সমার্থবোধক বা একই অর্থবিশিষ্ট শব্দ বা শব্দগুচ্ছকে সমার্থক শব্দ বলে। এর মাধ্যমে ভাষার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় এবং ভাষা সমৃদ্ধ হয়। বাংলা ভাষায় অসংখ সমার্থক শব্দ রয়েছে। তবে এখানে শুধু বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সমার্থক শব্দগুলো দেওয়া হল।
বাংলা সমার্থক শব্দ
মূল শব্দ | সমার্থক শব্দ |
---|---|
অগ্নি | বহ্নি, হুতাশন, পাবক, বৈশ্বানর, সর্বভুক, সর্বশুচি, হোমাগ্নি, কৃশানু, বিভাবসু |
অশ্ব | ঘোটক, হয়, বাজি, তুরগ, তুরঙ্গ, তুরঙ্গম, হ্রেষা |
অন্ধকার | তমঃ, তমসা, তমিস্র, তিমির, অমানিশা, আঁধিয়ার |
অন্ন | ওদন, তণ্ডল, দব্য |
আনন্দ | হর্ষ, পুলক |
আকাশ | অভ্র, অম্বর, অনন্ত, খ, নভঃ, অন্তরিক্ষ, ব্যোম, শূন্য, দ্যুলোক, ছায়ালোক, দ্যু |
অশ্রু | আখিঁ-নীর, লোর |
ইচ্ছা | অভিলাস, বাঞ্ছা, মনোরথ, আকিঞ্চন, আগ্রহ |
ইতি | বিরাম, যবনিকা, সাঙ্গ |
ঈক্ষণ | দৃষ্টি, দর্শন, লোচন, নয়ন |
ঈর্ষা | হিংসা, বৈরভাব, দ্বেষ, আসূয়া |
ঊর্মি | ঢেউ, তরঙ্গ, বীচি, কল্লোল, হিল্লোল |
উচ্ছেদ | উৎপাটন, উন্মুলন |
কর্ণ | শ্রবণ, শ্রুতি, শ্রোত্র, শ্রবনবিবর, কান |
কেশ | চুল, কুন্তল, অলক, চিকুর, কেশপাশ, কেশদাম, কবরী |
কিরণ | আলো, কর, বিভা, অংশু, ময়ূখ |
কাক | বায়স, পরভৃৎ |
কোকিল | কাকপুষ্ট, পরপুষ্ট, অন্যপুষ্ট, কলকন্ঠ, পিক, পরভৃত, বসন্তদূত, মধুস্বর, মধুসখা |
কপাল | ললাট, অলিক. অদৃষ্ট, দৈব |
কন্যা | নন্দিনী, আত্মজা, দুহিতা, সুতা, তনয়া, বালা |
কথা | উক্তি, বচন, বাচ্য, গদ্য, পরামর্শ, বিবৃতি, আখ্যান, বাক্য |
কাপড় | বস্ত্র, অম্বর, পরিচ্ছদ, দুকূল (রেশমি কাপড়) |
তলোয়ার | কৃপাণ, অসি, খড়গ, খক্ষ |
গরু | ধেনু, পয়স্বিনী |
গৃহ | নিলয়, নিকেতন, সদন, আগার, ধাম, বাটী, নিকেত |
চাঁদ | সুধাকর, সুধানিধি, কলানিধি, কলাধর, কলাভৃৎ, কুমুদনাথ, শশাঙ্ক, শশধর, শশী, শীতাংশু, শীতকর/সিতকর, হিমাংশু, হিমকর, বিধু, নিশাকর, নিশাপতি, নিশাকান্ত, রজনীকান্ত, সোম, চন্দ্রমা, ইন্দু, দ্বিজরাজ, মৃগাঙ্ক, |
জল | পানি, সলিল, বারি, অপ, উদক, অম্বু, নীর, পয়, তোয়, অম্ভঃ, অর্ণঃ |
দেহ | কায়া, কলেবর, তনু, কায় |
দোকান | আপণ, বিপণি, পণ্যশালা |
দিবস | দিনমান, তমসতাড়িনী, অযামিনী, অহন, অহ্ন |
ধন | বিভূতি, নিধি |
নদী | তটিনী, শৈবালিনী, কলম্বিনী, কল্লোলিনী, পয়স্বিনী, নির্ঝরিণী, সরিৎ |
নারী | বনিতা, ভামিনী, কান্তা, বামা, রামা, কামিনী, সামন্তিনী |
নকল | তাত |
পৃথিবী | ভূ, অবনি, অখিল, অদিতি, ক্ষিতি, মহী, বসুমতী, মেদিনী, পৃথ্বী, উর্বী, মরলোক, সংসার |
পাখি | খগ, গরুড়, শকুন্ত, খেচর, দ্বিজ, অণ্ডজ, পতত্রী |
পদ্ম | শতদল, উৎপল, নলিনী, অরবিন্দ, সরসিজ, পঙ্কজ, সরোজ, কমল, কুবলয়, তামরয়, সরোরুহ, কোকনদ, ইন্দোবর, কুমুদ, পুন্তরীক, রাজীব, পুষ্কর |
পুত্র | নন্দন, সুত, সূনু, অঙ্গজ |
পর্বত | শৈল, ভূধর, অদ্রি, শিখরী, শৃঙ্গী, শৃঙ্গধর, মহীধ্র, ভূভৃৎ, নগ |
বায়ু | অনিল, পবন, বাতাস, হাওয়া, সমীরণ, সমীর, বাত, মরুৎ, প্রভঞ্জম, মারুত, গন্ধবহ |
বৃক্ষ | পাদহ, তরু, বিটপী, দ্রুম, মহীরুহ, শাখী |
বন | অটবি, কানন, বিপিন, গহন, কুঞ্জ, কান্তার, বনানী |
বিদ্যুৎ | ক্ষণপ্রভা, সৌদামনা, চপলা, চঞ্চলা, চিকুর, দামিনী, শম্পা, অচিরপ্রভা |
বধূ | দার, কলত্র, বনিতা, ভার্যা, জায়া, দারা |
বন্ধু | সখা, মিত্র, সুহৃদ |
ভ্রমর | ষটপট, অলি, ভৃঙ্গ, শিলীমুখ, দ্বিরেফ, মধুপ, মধুলিট, মধুভৃৎ, মৌমাছি |
মা | মাতা, অম্বা |
মায়া | কুহক, প্রতারণা, ভ্রম, ইন্দ্রজাল |
ময়ূর | কলাপী, কেকা, শিখী, শিখন্ডী, কেকী, বর্হী |
মৃত্যু | পঞ্চত্বপ্রাপ্তি, ইহলীলা, সংবরণ |
মেঘ | ঘন, বারিদ, জলধর, অম্বুদ, পয়োধর, নীরদ, জলদ, জীমূর্ত, তোয়দ, পর্জন্য, পয়োদ, বলাহক, তোয়ধর |
যুদ্ধ | আহব, বিগ্রহ |
রাজা | নৃপেন্দ্র, নৃপ, নৃপতি, নরেশ, নরেন্দ্র, নরপতি, ভূপতি, ভূপাল, ভূপ, রাজ্যপাল, মহীপাল, নরপাল,দন্ডপাল, দন্ডধর, মহীধর, মহীন্দ্র, মহীপ, ক্ষিতিপ, প্রজাধিপ, ক্ষিতিপতি, মহীনাথ, বাদশাহ, ইন্দ্র |
রাত্রি | শর্বরী, যামিনী, বিভাবরী, ক্ষণদা, নিশীথিনী, ত্রিযমা |
শত্রু | অরাতি, অরি, অররু, রিপু |
সূর্য | ভানু, আফতাব, ভাস্কর, আদিত্য, দিবাকর, তপন, দিনমণি, মার্তন্ড, অর্ঘমা, অংশুমালী, অর্ক, পুষা, সবিতা, সুর, প্রভাকর, বিভাবসু, বিবস্বান, মিহির, অরুণ (নবোদিত রক্তাভ সূর্যকে বোঝায়), দিনেশ, দিননাথ, কিরণমালী, ময়ূখমালী, বিভাকর, বালার্ক (নবোদিত সূর্যকে বোঝায়; ‘সাধারণত নদীর ধারে’), দিবাবসু, হরিদশ্ব |
সমুদ্র | রত্নাকর, জলধি, সিন্ধু, বারিধি, বারীশ, উদধি, অর্ণব, অম্বুধি, পয়োধি, পারাবার, জলনিধি, নীলাম্বু, পাথার, পয়োনিধি, জলধর, অম্বুনিধি, তোয়নিধি, বারীশ, বারীন্দ্র |
সাপ | ভুজঙ্গ, ভুজগ, অহি, পন্নগ, নাগ, উরগ, অশীবিষ, ভুজঙ্গম, বায়ুভূক |
স্বর্গ | সুরলোক, অমরাবতী, দ্যুলোক |
সোনা | কনক, সুবর্ণ, হেম |
সাদা | সিত, শুক্ল, অরঞ্জিত, সুচি |
সিংহ | পশুরাজ, কেশরী, মৃগেন্দ্র, মৃগরাজ, হরি, হর্ষক্ষ |
হাত | ভূজ, কর, পাণি |
হস্তী | করী, দ্বিপ, মাতঙ্গ, বারণ, গজ, কুঞ্জন, দন্তী, দ্বিরদ |
সহজেই ভুল হয় এমন কিছু সমার্থক শব্দ
- পবন অর্থ বাতাস এবং পাবক অর্থ অগ্নি/আগুন।
- অম্ব অর্থ মা, অম্বু অর্থ পানি এবং অম্বুদ অর্থ মেঘ। অম্বর অর্থ আকাশ, বস্ত্র।
- পানির নামগুলোর শেষে ‘দ’ যুক্ত করলে মেঘের সমার্থক শব্দগুলো পাওয়া যায়। যেমন: জল অর্থ পানি, জলদ অর্থ মেঘ। উল্লেখ্য জলজ অর্থ জলে জন্মে যা; জলধি, জলনিধি অর্থ সমুদ্র। অনুরূপভাবে, মেঘ পানি ধরে রাখে। পানির সমার্থক শব্দের সাথে ‘ধর’ যোগ করলে মেঘের সমার্থক শব্দ পাওয়া যার। যেমন:
পানি | মেঘ | মেঘ |
---|---|---|
জল | জলদ | জলধর |
বারি | বারিদ | বারিধর |
তোয় | তোয়দ | তোয়ধর |
পয়ঃ | পয়োদ | পয়ধর |
নীর | নীরদ | নীরধর |
অম্বু | অম্বুদ | অম্বুধর |
- জলধর – মেঘ ও সমুদ্রের সমার্থক শব্দ।
- নিধি শব্দের অর্থ আধার বা ধনরত্ন বা গচ্ছিত ধন। পানি’র সমার্থক শব্দের সাথে ‘নিধি’ যোগ করলে তা পানির আধার বা সমুদ্রকে বুঝায়। যেমন:
পানি | সমুদ্র |
---|---|
জল | জলনিধি |
বারি | বারিনিধি |
তোয় | তোয়নিধি |
পয়ঃ | পয়নিধি |
নীর | নীরনিধি |
অম্বু | অম্বুনিধি |
- প্রভা, কিরণ, অংশু, বিভা, ময়ূখ শব্দগুলোর অর্থ রশ্মি/আলো। শব্দগুলোর সাথে যখন ‘কর/মালী’ যুক্ত হয়: প্রভাকর, কিরণমালী, অংশুমালী, বিভাকর, ময়ূখমালী তখন শব্দগুলোর অর্থ হয় সূর্য। মালী অর্থ বাগানের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তি। সূর্যও আলো দেওয়ার কাজে নিযুক্ত।
- বিভা অর্থ রশ্মি/আলো, বিভাবসু অর্থ অগ্নি/আগুন, বিভাবরী অর্থ রাত্রি।
- ভানু – সূর্য, কিরণ/আলো/দীপ্তি দুটিই বোঝায়।
- খ অর্থ আকাশ এবং খগ অর্থ পাখি।
- দ্যু অর্থ আকাশ এবং দ্যুলোক অর্থ আকাশ, স্বর্গ।
- ইন্দ্র অর্থ রাজা এবং ইন্দু অর্থ চাঁদ।
- দ্বিজ অর্থ পাখি এবং দ্বিজরাজ অর্থ চন্দ্র।
- কুমুদ অর্থ পদ্ম এবং কুমুদনাথ অর্থ চন্দ্র। কৌমুদি অর্থ জোছনা।
- পরভৃৎ অর্থ কাক এবং পরভৃত অর্থ কোকিল।
- ঊর্মি অর্থ ঢেউ এবং উর্বী অর্থ পৃথিবী।
- দ্বীপ অর্থ চারদিকে জল-বেষ্টিত ভূভাগ এবং দ্বিপ অর্থ হাতি।
- দ্বিরদ অর্থ হাতি এবং নীরদ অর্থ মেঘ।
- পুষ্কর অর্থ পদ্ম এবং পুষ্করিণী অর্থ পুকুর।
- জীমূত – মেঘ ও পাহাড় দুটোই বুঝায়।
- যামিনী অর্থ রাত্রি এবং অযামিনী অর্থ দিন। দামিনী অর্থ বিদ্যুৎ। কামিনী অর্থ নারী, পত্নী, সুগন্ধ ফুলবিশেষ।
- সরোবর – দীঘি, পদ্ম। কলেবর – দেহ।
- অটবি, বিপিন অর্থ বন এবং বিটপী অর্থ বৃক্ষ।
- কুঞ্জ অর্থ বন, নিকুঞ্জ অর্থ বাগান, কুঞ্জন অর্থ হাতি।
- শিখণ্ডী শব্দের অর্থ হলো ময়ূর। আর শিখরী শব্দের অর্থ হলো বৃক্ষ, পাহাড়। আবার শিখী শব্দের অর্থ হলো ময়ূর। আর শাখী শব্দের অর্থ হলো বৃক্ষ। শীকর অর্থ বৃষ্টির পানি, জলকণা। শিখর অর্থ শৃঙ্গ, চূড়া।
- ভূ, মেদিনী, মহী, ক্ষিতি শব্দগুলোর অর্থ পৃথিবী। শব্দগুলোর সাথে যখন ‘ধর’ যুক্ত করলে ভূধর, মেদিনীধর, মহীধর, ক্ষিতিধর শব্দগুলোর অর্থ হয় পাহাড়।
- বনিতা – বধূ, নারী।
- কান্তা অর্থ নারী এবং কান্তার অর্থ বন।
- কপাল অর্থ ললাট এবং কপোল অর্থ গাল বা গণ্ডদেশ।
- মৃগ অর্থ হরিণ এবং মৃগাঙ্ক (মৃগ চিহ্নিত যা) অর্থ চাঁদ। মৃগেন্দ্র, মৃগরাজ অর্থ সিংহ।
- কৃপাণ অর্থ তলোয়ার এবং কৃষাণু অর্থ আগুন।
- মহী অর্থ পৃথিবী। মহীরূহ অর্থ বৃক্ষ (বৃক্ষই পৃথিবীতে জীবনের প্রাণ/রূপ)।
- অর্ঘ অর্থ পূজা বা মূল্য এবং অর্ঘমা অর্থ সূর্য।
- কর – কিরণ বা আলো ও হাত দুটিই বোঝায়।
সহজে মনে রাখার কৌশল
- সূর্য ও চন্দ্রের সমার্থক শব্দ:
- সূর্য ও চন্দ্রের সমার্থক শব্দগুলোর মধ্যে চন্দ্রের সমার্থক শব্দের শেষে ‘নিধি’ আছে। এছাড়া শুরুতে শ/স যুক্ত শব্দগুলো চাঁদের।
- উভয়ের সমার্থক শব্দগুলোর শেষে ‘কর’ শব্দটি আছে। তবে চাঁদের ক্ষেত্রে হিম/শীতল/শান্ত অর্থবাচক (যেমন: হিমকর, শীতকর, সুধাকর, নিশাকর) এবং সূর্যের ক্ষেত্র তুলনামূলক উত্তপ্ত ও দিনবাচক (যেমন: ভাস্কর, দিবাকর, প্রভাকর, বিভাকর) শব্দের সাথে ‘কর’ যুক্ত হয়েছে।
- রাত্রিবাচক শব্দগুলোর চাঁদের সমার্থক শব্দের শুরুতে এবং দিবা বা দিনবাচক শব্দগুলোর সূর্যের সমার্থক শব্দের শুরুতে আছে। যেমন: চাঁদ – নিশাপতি, নিশাকান্ত। সূর্য – দিবাবসু, দিননাথ, দিনমণি ইত্যাদি।
- ভাস্কর বলতে শুধু নির্দিষ্ট শ্রেণির শিল্পী নয় বরং সূর্যকেও বোঝায়।
- আদি অর্থ পুরাতন। সূর্যও তো পুরাতন তাই সূর্যকে আদিত্য বলাও যথাযত।
- সুর শব্দ দ্বারা শুধু কণ্ঠোস্বর বোঝায় না, সূর্যেকেও বোঝায়।
- ভূ, মেদিনী, মহী, ক্ষিতি শব্দগুলোর অর্থ পৃথিবী। শব্দগুলোর সাথে যখন ‘পাল/নাথ/পতি/ধর/প’ যুক্ত করলে ভূপাল, মহীধর, ক্ষিতিপতি, ক্ষিতিপ ইত্যাদি শব্দগুলোর অর্থ হয় রাজা।
- গরুড় শব্দের সাথে গরুর (পশু) কোন সম্পর্ক নেই। এর অর্থ পাখি।
- যে শব্দগুলোর শেষে ‘ধি’ থাকবে সেগুলো সমুদ্রের প্রতিশব্দ এবং যে শব্দগুলোর শেষে ‘দ’ বা ‘ধর’ থাকবে সেগুলো মেঘের প্রতিশব্দ (কিছু ব্যতিক্রম ব্যতিত)।