সূর্য দীঘল বাড়ি (সংক্ষিপ্ত কাহিনী)

Estimated Reading Time: 8 Minutes

উপন্যাসের মূল চরিত্র জয়গুন নামক এক প্রান্তিক নারী। প্রথমপক্ষের পুত্র হাসু আর দ্বিতীয়পক্ষের কন্যা মায়মুনকে নিয়ে তার ঘর। তার প্রথম স্বামী জব্বার মুন্সী মারা যাওয়ার পর করিম বকশ নামে এক কৃষকের সাথে তার বিয়ে হয়। তেতাল্লিশের মন্বন্তরের সময় শিশুপুত্র কাসুকে রেখে কন্যা মায়মুনসহ জয়গুনকে তাড়িয়ে দেয় করিম বকশ। খিদের তাড়নায় স্বামী পরিত্যক্তা জয়গুন শহরে পাড়ি জমায়। কিন্তু শহরের নির্মম বাস্তবতায় গ্রামে ফিরে আসতে বাধ্য হয় সে।

উদ্বাস্তু জয়গুনের আশ্রয় নেয় গ্রামের পরিত্যক্ত ও ভৌতিক ‘সূর্য-দীঘল বাড়ী’তে। গ্রামীণ লোকজ বিশ্বাসে সূর্যের উদয়াস্তের দিক (পূর্ব-পশ্চিম) বিস্তারী সূর্যদীঘল বাড়িকে অপয়া বিবেচনা করা হয়। লোকজ বিশ্বাস, বহু বাসিন্দার অপঘাত মৃত্যু, ভূত-প্রেতের উপদ্রবের সাক্ষী এ বিরান বাড়িতে বাস করলে নির্বংশ হতে হবে। কিন্তু হতদরিদ্র মানুষের ভূতের ভয় করলে চলে না। তাই সাহসী জয়গুন তার ভ্রাতৃপত্নী, ভাতিজা এবং সন্তানদের নিয়ে এ ভিটাতেই বসবাস শুরু করে। পেটের তাগিদে পর্দা ঠেলে জয়গুন পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে চাল এনে আশেপাশের গ্রামে ব্যবসা শুরু করে। পাশাপাশি বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে ধান ভানা, শাক বিক্রি করাসহ যখন যে কাজ পায় তা-ই করতে থাকে।

দারিদ্র্যের কষাঘাতে সংসারের ছেলে-মেয়েগুলোও অল্প বয়স থেকেই অর্জন করে সংযম আর পরিশ্রমের শিক্ষা। হাসুর ছোট্ট কাঁধ মায়ের সাথে ভাগ করে নেয় জীবিকা নির্বাহের বোঝা, স্টেশনে-লঞ্চ-স্টিমার ঘাটে কুলিগিরি এবং অন্যান্য ছোটখাট কাজ করে সংসারের চাকা সচল রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা করে সে। আর দশ বছরের শীর্ণকায় মায়মুন তার অপুষ্ট হাতে সামলায় ঘর-গৃহস্থালির কাজ। কিন্তু বাদ সাধে রক্ষণশীল সমাজ। জয়গুনের স্বাধীন চলাফেরাকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখে সমাজপতিরা। গ্রামের মোড়ল গদু প্রধানের লালসার দৃকপাত ঘটে জয়গুনের উপর। তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে জয়গুণকে বিয়ে করতে চাইলে সে দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করে গদু প্রধানকে। নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে জয়গুনের জীবিকার পথ বন্ধ করে তাকে বশে আনবার ফন্দি করে সে।

একটা সময় সন্তানকে সুস্থ করে দেওয়ার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ জয়গুনকে আবার বিয়ের প্রস্তাব দেয় তার প্রাক্তন স্বামী করিম বকশ। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে ভিটা থেকে জয়গুনদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র করে গদু। উপন্যাসের শেষাংশে তার নিষ্ঠুর ষড়যন্ত্রে ভেঙে যায় কোনোমতে জোড়াতালি দিয়ে চলা গরিবের সংসার, প্রাণ যায় করিম বকশের। শেষ আশ্রয়টুকু ত্যাগ করে কেবল দুর্ভাগ্যকে পুঁজি করে অনিশ্চিতের পথে যাত্রা করতে বাধ্য হয় জয়গুন ও তার পরিবার।

তথ্য: সূর্যদীঘল বাড়ি (উপন্যাস, ১৯৫৫)। রচয়িতা: আবু ইসাহাক।

আরও পোস্ট

আরও দেখুন: সংক্ষিপ্ত কাহিনী

Leave a Reply