লেখক: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। এটি একটি আঞ্চলিক উপন্যাস। অন্যতম চরিত্র: কারালী, বনওয়ারী, পাখি, সুবাসী।
কোপাই নদীর প্রায় বৃত্তাকার বাঁকে (মেয়েদের গলার হাসুলীর মতো) বাঁশবাঁদি গ্রাম। এগ্রামে কাহার জাতির লোকেরা বাস করে। কাহারেরা ছিল দুটি পাড়ায় বিভক্ত: বেহারা পাড়া এবং আটপৌরে পাড়া। বেহারা পাড়ার প্রধান ছিল বনওযারী এবং আটপৌরে পাড়ার প্রধান ছিল পরম। একই জাতির অংশ হলেও দুই পাড়ার মধ্যে মাঝে মধ্যে সংঘর্ষ হত। তবুও দুই পাড়ার লোকজনই দেবতা কত্তাবাবাকে মানত। কত্তা বাবার ছিলেন হাঁসুলী বাঁকের পশ্চিম দিকের শিমুল গাছে।
উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র বয়সে প্রবীন সুঁচাদ। সমাজের নিয়ম-নীতি, আচার-আচরণ, সংস্কারগুলো তিনিই সকলকে জানান। সুচাঁদের মেয়ে বসন্ত ও তার মেয়ে পাখি।
উপন্যাসের কেন্দ্রীয় করালী। মা বাবা না থাকায় সে ছোটবেলা থেকে নিজের মত করে বড় হয়েছে। সমাজের নির্দিষ্ট আচার-আচরণ, রীতি-নীতি ও সংস্কার (বা কুসংস্কার) যেগুলো সবাইকে মান্য করতে হয় করালী তাতে প্রশ্ন তোলে। করালীই প্রথম যে এই নিয়মগুলো ভাঙ্গে। একসময় কারালী রেলস্টেশনে কুলির কাজ নেয়। এতে বেহারা পাড়ার মাতাব্বর বনওয়ারীসহ অন্যরা আপত্তি তোলে। কারণ তাদের পূর্ব পুরুষেরা বলে গেছেন চন্দনপুরের ওখানে যেতে নেই।
মাতব্বর বনওয়ারী করালীকে খুবই স্নেহ করে। কিন্তু তারা দুজন যেন দুই মেরুর চরিত্র। বনওয়ারী পুরনো রীতি নীতিকে আকড়ে ধরে থাকতে চায়, অন্যদিকে কারালী যুক্তিবাদী তরুণ যে সমাজের কুসংস্কারগুলোকে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করে। ফলে উপন্যাসের পুরোটা জুড়ে তাদের মধ্যে দ্বন্ধ লেগে থাকে। বনওয়ারী তার থেকে বয়সে অনেক ছোট সুবাসীকে বিয়ে করলে এ দ্বন্দ চুড়ান্ত রূপ নেয়। এ অসমবিয়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে কারালী সুবাসীকে বনওয়ারীর কাছ থেকে কেড়ে নেয়। সুবাসীও করালীর প্রতি আসক্ত ছিল। করালী সুবাসীকে ঘরে নিয়ে গেলে করালীর স্ত্রী পাখি আত্মহত্যা করে।
শেষ পর্যন্ত এই দ্বন্দ্বে বনওয়ারী পরাজিত হয়। করালীর প্রভাবে ধীরে ধীরে কাহার পড়ার পুরানো বিশ্বাসে ভাঙন ধরতে থাকে। কারালী কত্তা বাবার বাহন সাপটিকে পুড়িয়ে মারে যা কুসংস্কারের ভাঙ্গনকে ত্বরান্বিত করে। ধীরে ধীরে কাহার দের পুরানো বিশ্বাস ও সংস্কারের পরিবর্তন সাধিত হয়। করালী কাহার পাড়ার সবাইকে চন্দনপুরে নিয়ে যায়। কারণ সেখানে টাকা আছে, তাই কাউকে না খেয়ে থাকতে হবে না। ফলে একসময় বাঁশবাঁদি গ্রাম উজাড় হয়ে যায়। শেষের দিকে করালী মাটির টানে আবার সেই বাঁশবাঁদি গ্রামে ফিরে এসে কাহার পাড়া বসাতে চায়।